24/06/2025
আজ থেকে শুরু হলো অম্বুবাচী—শুধু কোনও আধ্যাত্মিক উৎসব নয়, এটি এক মহানারীর প্রাণ-উৎসারিত সময়, এক সৃষ্টিশক্তির অভ্যন্তরীণ মেলবন্ধন।
আসামের গুয়াহাটির নীলাচল পর্বতে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দির হল হিন্দুধর্মের অন্যতম রহস্যময় এবং শক্তিপূজার প্রধান তীর্থস্থান। এটি ৫১টি শক্তিপীঠের অন্যতম, যেখানে বলা হয় সতীর যোনিভাগ পতিত হয়েছিল। এই মন্দিরে কোনও মূর্তি নেই—পূজা হয় একটি যোনি-আকৃতির শিলাখণ্ডে, যা সারাবছর জলে ভেজা থাকে। এই জলই প্রতীকি, পবিত্রতা ও শক্তির বহিঃপ্রকাশ।
প্রতিবছর অম্বুবাচীর সময়, অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠের শেষ থেকে আষাঢ়ের শুরু পর্যন্ত চারদিন দেবী কামাখ্যা ঋতুমতী হন। এই চার দিন মন্দির সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে—না হয় কোনও পূজা, না হয় দর্শন। ভক্তেরা বাইরে অপেক্ষায় থাকেন, আর ভিতরে দেবী বিশ্রাম গ্রহণ করেন। এই চারদিন ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে ওঠে এক রহস্যের বার্তাবাহক। অনেকের বিশ্বাস, নদীর জল এই সময়ে লালচে রঙ ধারণ করে—যা দেবীর রজঃস্রাবের প্রতীক। যদিও বিজ্ঞানীরা একে মাটির রাসায়নিক বিক্রিয়া বলেন, কিন্তু বিশ্বাসের কাছে সব যুক্তি হার মানে।
এই সময় বিশেষভাবে কামাখ্যার ধাম ঘিরে থাকে নিঃসীম নীরবতা, অথচ বাতাসে থাকে এক অব্যক্ত শক্তির উত্তাল প্রবাহ। সাধক, তান্ত্রিক ও যোগীরা এই সময় চলে আসেন নানা প্রান্ত থেকে। কেউ কেউ ধ্যানস্থ, কেউ বসে আছেন আগুন ঘিরে তন্ত্রসাধনায়, আবার কেউ রাতভর জপ করছেন কেবল এক লক্ষ্য—দেবীর সঙ্গে অন্তরাত্মার সংযোগ।
চতুর্থ দিনের শেষে হয় ‘শুদ্ধি’। এই দিনকে বলা হয় "দেবী জাগরণ"। মন্দির আবার খোলে, আর শুরু হয় দর্শন, পূজা, প্রসাদ বিতরণ ও উল্লাস। লক্ষ লক্ষ ভক্ত তখন প্রবল আবেগে ভেসে যান। মন্দিরে ঢোকার আগে সবাই পবিত্রজল দিয়ে স্নান করে, কারণ এই দিন থেকে দেবী আবার সক্রিয়, সৃষ্টিশীল, আশীর্বাদদাত্রী। বিশেষ একটি কাপড়ে মুড়ে রাখা সেই পবিত্র "রক্তাভ" শিলাখণ্ড আবার উন্মুক্ত হয়ে ওঠে সকলের জন্য।
অম্বুবাচী আমাদের মনে করিয়ে দেয়—রজঃস্রাব কোনো নিষিদ্ধ বিষয় নয়। এটি এক পরম শক্তির প্রকাশ, এক নারীর প্রকৃতি-সংযুক্ত জীবনীশক্তির প্রতীক। প্রকৃতিও তো রজঃবতী হয়—বর্ষায় জলে ভিজে সে জন্ম দেয় নতুন শস্যের, নতুন জীবনের।
এই উৎসব একটি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর শিক্ষা দেয়। নারীত্ব লজ্জার নয়, বরং পূজার, সৃষ্টির উৎস, আত্মার উত্থান।
★★পঞ্জিকা অনুসারে এইবছর অম্বুবাচীর সময়সূচি :--- শুরু হবে ২২ জুন অর্থাৎ ৭ আষাঢ় দুপুর ২.৫৭ মিনিটে এবং ২৫ জুন অর্থাৎ ১০ আষাঢ় রাত ৩.২১ মিনিটে এর নিবৃত্তিঃ অর্থাৎ সমাপ্তি হবে।
জয় মা কামাখ্যা!
জয় অম্বুবাচী জননী!
শক্তিরূপিণী, রক্তরূপিণী, আদ্যাশক্তি কামাখ্যা দেবী, আমাদের চেতনায় থাকো চিরকাল।
তোমার রজঃতিথি আমাদের শিক্ষা দিক সম্মান, সহমর্মিতা আর শক্তির প্রকৃত উপলব্ধি।