11/06/2025
মৃত শহর - ২৬ এপ্রিল, ১৯৮৬, রাত ১:২৩
সে রাতে ওরা কেউ জানত না, শহরের সময়টা সেখানে থেমে যাবে... চিরতরে।
প্রিপিয়াত শহরে রাত গভীর। জানালার বাইরে নিঃশব্দে বইছে ঠান্ডা বাতাস। শহরটা ঘুমিয়ে—শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রে জেগে আছে কিছু কর্মী, কিছু হিসেব, কিছু পরীক্ষা।
একদিকে মা গরম দুধে চিনি মিশিয়ে দিচ্ছেন ছেলের জন্য।
অন্যদিকে বাবা একটু দূরে চেরনোবিল প্ল্যান্টে রাতের শিফটে।
বাচ্চাটা টেবিলে হোমওয়ার্ক করে হাই তুলছে।
ও জানে না—আর কখনও সে ঘুম থেকে উঠবে না।
ঠিক ১:২৩।
আকাশ কাঁপিয়ে এক বিষাক্ত বিস্ফোরণ।
চেরনোবিলের চতুর্থ রিঅ্যাক্টর ফেটে গেছে।
মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে রেডিয়েশন।
দেখা যায় না, শোনা যায় না।
কিন্তু ততক্ষণে শহরের বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে মৃত্যুর গন্ধ।
পরের সকাল।
সূর্য উঠেছে, কিন্তু শহর যেন বোবা।
আকাশে কোনো পাখি নেই।
বাচ্চারা স্কুলে যায়, মা-বাবারা কাজে।
তারা জানেই না—প্রতিটা শ্বাসে ঢুকছে বিষ।
সরকার কিছু বলে না।
কাউকে সতর্ক করে না।
কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাসছে, কেউ ছবিও তুলছে ফুজি ক্যামেরায়।
সেই ছবির ফ্রেমে ধরা পড়ে শেষবারের মতো জীবনের হাসি।
৩৬ ঘণ্টা পরে—
সরকার বলে,
“শহর খালি করতে হবে। মাত্র তিন দিনের জন্য। সবকিছু রেখে যান।”
লোকজন ভাবল, ঠিক আছে—তিন দিনেই ফিরব।
কেউ স্কুলব্যাগ রেখেই চলে যায়।
কেউ রান্নার হাঁড়ির ঢাকনা দিতেও ভুলে যায়।
এক মা শিশুর ফিডিং বোতল টেবিলেই ফেলে যায়।
তারা কেউ জানে না, তারা তাদের শহরকে শেষবারের মতো দেখছে।
তারপর...
চলে গেল সময়।
থেমে গেল ঘড়ি।
বেঁচে রইল শুধু দেয়ালে জমে থাকা ছাঁচ, পুতুলের চোখ, আর একটা শহর—যেখানে জীবনের চিহ্ন আছে, কিন্তু জীবন নেই।
আজ, এত বছর পরেও কেউ যদি প্রিপিয়াতে যায়—
দেখবে এক স্কুলঘর, যেখানে ব্ল্যাকবোর্ডে শেষ লেখা পড়ে আছে।
এক হাসপাতালে টেবিলের ওপর পড়ে আছে রোগীর ফাইল।
আর একটা রোলার কোস্টার—যেটা কখনও চালুই হয়নি।
কারণ তার উদ্বোধনের আগেই শহরটা ‘মৃত শহর’ হয়ে গেছে।
প্রিপিয়াত বেঁচে আছে... শুধু ইতিহাসে।
আর আমাদের মনে—যেখানে মানুষ ভুল করে, আর সময় তার শাস্তি দেয়।
#ভয়েরগল্প #বাস্তবভয়েরগল্প #পারমাণবিকবিপর্যয়