22/06/2025
মোহনবাগান রত্ন টুটু বোস,
আগামী বছর ভূষিত হবেন প্রয়াত অঞ্জন মিত্র
চলতি বছরের মোহনবাগান রত্ন পাচ্ছেন টুটু বোস। পরের বছর মোহনবাগান রত্ন সম্মানে ভূষিত হবেন প্রয়াত অঞ্জন মিত্র। শনিবার কর্মসমিতির বৈঠকে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকের পর সচিব সৃঞ্জয় বোস ও সভাপতি দেবাশিস দত্ত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই ঘোষণা করেন। ২০০৭ সালে কর্মকর্তা হিসেবে মোহনবাগান রত্ন পেয়েছিলেন ধীরেন দে। এবার সেই সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন স্বপনসাধন বোস। ২৯ জুলাই মোহনবাগান দিবসে টুটু বোসকে এই সম্মানে ভূষিত করা হবে। মোহনবাগান রত্ন হিসেবে টুটু বোসের নাম প্রস্তাব করেন সভাপতি দেবাশিস দত্ত। পরের বছর দেওয়া হবে প্রয়াত অঞ্জন মিত্রকে। কমিটি এই প্রস্তাবে সমর্থন করে। পরে ক্লাব সচিব সৃঞ্জয় বোস জানান, মোহনবাগান দিবস নিয়ে বাকি সিদ্ধান্তগুলো এখনও নেওয়া হয়নি। ১১ জুলাইয়ের পরবর্তী সভায় এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এবারের অনুষ্ঠান হবে নেতাজি ইন্ডোর অনুষ্ঠানে। প্রাক্তনদের মধ্যে একটি ফুটবল ম্যাচ হবে। তিনি আরও বলেন, “মোহনবাগানের জন্য তাঁর (টুটু বোসের) যা অবদান, তাতে এই সম্মান সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কর্মসমিতির কাছে কৃতজ্ঞ।”
মোহনবাগান ক্লাবে টুটু বোসের অবদান নতুন করে বলার নয়। ১৯৯১ সালে প্রথমবার তিনি মোহনবাগান ক্লাবের সচিব হন। কাজটা সহজ ছিল না। ধীরেন দে’র মতো প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তির আসনে বসেছিলেন তিনি। টুটু বোসের আমলে মোহনবাগান ক্লাবে কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিদেশি প্লেয়ার সই করানো, ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি থেকে ২০২০ সালে আরপিএসজি গ্রুপের কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা। পথ প্রদর্শক তিনি। দীর্ঘদিন মোহনবাগানের অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন অঞ্জন মিত্র। ২০১৯ সালে প্রয়াত হন তিনি। ১৯৯৫ সালে মোহনবাগান ক্লাবের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। পরে ক্লাবের সচিবও হন। টুটু বোসের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের গল্প কার্যত মিথে পরিণত হয়েছিল। সবুজ-মেরুনের বহু উত্থানপতনের সাক্ষী ছিলেন। ২০২৬-এ মরণোত্তর মোহনবাগান রত্ন সম্মানে ভূষিত করা হবে তাঁকে। এই ঘোষণার পর অঞ্জন মিত্রর স্ত্রী সুজাতা মিত্র এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “আমি আমার পরিবারের সকলের তরফ থেকে আমাদের মোহনবাগান ক্লাবের নবনির্মিত কার্যকরী সমিতির সকলকে ধন্যবাদ জানাই আমার স্বামী অঞ্জন মিত্রর নাম ২০২৬ মোহনবাগান রত্নের জন্য মনোনীত করার জন্য। আমার এবং আমার পরিবারের কাছে এই সম্মান খুবই গর্বের। একটা সময় আপনাদের সকলের প্রিয় অঞ্জনদার তত্ত্বাবধানেই মোহনবাগান দিবস উদযাপন শুরু হয়। প্রতিবছর ২৯ জুলাই মোহনবাগান দিবসে এই মোহনবাগান রত্ন নামক সম্মান প্রদানের রীতিও উনিই প্রচলন করেন। এই সম্মান প্রদানের জন্য আপনাদের সকলের প্রিয় অঞ্জনদার নাম বিবেচনা করার জন্য মোহনবাগান পরিবারের সকলকে আবারও সাধুবাদ জানাই।” ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত ক্লাবের সচিব ছিলেন টুটু বোস। তারপর ১৯৯৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ছিলেন সভাপতি। সচিবের দায়িত্ব তখন বন্ধু অঞ্জন মিত্রর কাঁধে। ২০১৮ থেকে ২০২০-র জানুয়ারি পর্যন্ত ফের সচিব হন। আর ২০২০-২২ ও ২০২২-২০২৫, দুই দফায় ফের ক্লাব সভাপতি হন। মোহনবাগান নির্বাচনের আগে সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি কোনও পদে নেই। যদিও পদে না থাকলেও টুটু বোসকেই মোহনবাগানের প্রাণপুরুষ বলে ধরেন সমর্থকরা। মোহনবাগান রত্নে ভূষিত হচ্ছেন। আজীবন মোহনবাগানের সেবা করে এসেছেন স্বপনসাধন বোস। এবার যেন তাঁর সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পেলেন। অনন্য সম্মানে ভূষিত হয়ে আপ্লুত টুটু বোস। মোহনবাগান কর্মসমিতির বৈঠকের পর নিজের অনুভূতি জানান। প্রাক্তন সভাপতি লেখেন, ‘আমি নবগঠিত কার্যকরী সমিতিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমাকে ‘মোহনবাগান রত্ন’ দেওয়ার জন্য। ১৯৯১ সাল থেকে আমার সাধ্যমতো যতদিন পেরেছি, যতটা পেরেছি, মাতৃসম মোহনবাগান ক্লাবের সেবা করে এসেছি। অগণিত মোহনবাগান সদস্য এবং সমর্থকদের জানাই আমার আকণ্ঠ সবুজ-মেরুন ভালোবাসা। পুনর্জন্ম বলে যদি সত্যিই কিছু থাকে, তাহলে সেই জন্মেও মোহনবাগানের সেবা করতে চাই। জয় মোহনবাগান।