02/10/2024
#বৈঠকখানার_গল্প
পুজো তো এসেই গেল। আর দুর্গাপুজোর সাথে সাথেই কিছু বিষয় মনে-মাথায় উঁকি দেয়। যেমন - মহালয়া, পিতৃপক্ষ, দেবীপক্ষ, তর্পণ, মহিষাসুরমর্দিনী, অকাল বোধন, নবপত্রিকা স্নান, সন্ধি পূজা, কুমারী পূজা ইত্যাদি। বছরের অন্য সময় এই শব্দ গুলো খুব একটা মুখে মুখে ঘোরেনা। কিভাবে এই বিষয় গুলো একেঅপরের সাথে যুক্ত আর এর পিছনের পৌরাণিক ব্যাখ্যাই বা কি !!
#পর্ব_১_পিতৃপক্ষ_দেবীপক্ষ
শাস্ত্র মতে, সারা বছর, অৰ্থাৎ ১২ মাসকে ২৪ টা পক্ষে ভাগ করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষ ।
পৌরাণিক মতে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কুন্তী পুত্র কর্ণ মারা যাবার পর স্বর্গে গেলেন। কিন্তু সেখানে তাকে খেতে দেওয়া হলো মণিমুক্ত সোনাদানা। তিনি জানতে চাইলেন এর কারণ। তখন দেবরাজ ইন্দ্র বলেন, কর্ণ নিজের জীবদ্দশায় দাতা হিসেবে অনেক অর্থ, সম্পদ দান করেছেন কিন্তু তার পূর্বপুরুষ দের অন্নজল দান করেন নি। তাই মৃত্যুর পর তিনিও অন্নজল থেকে বঞ্চিত হবেন। কর্ণ প্রতিবাদ করলেন, বললেন তিনি জন্ম থেকেই পিতৃপরিচয় হীন, মৃত্যুর কিছুদিন আগেই মাত্র তার নিজের জন্মপরিচয় জানতে পেরেছেন। তাই তিনি সুযোগই পাননি।
দেবরাজ ইন্দ্র সেই কথা মেনে নিলেন। অনুমতি দিলেন কর্ণ কে আবার মর্ত্যধামে ফিরে আসার জন্য। সেই নির্দেশে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপ্রতিপদ তিথিতে কর্ণ আবার মর্ত্যে ফিরে এসে একপক্ষকাল(১৫ দিন) থেকে পিতৃপুরুষ কে অন্নজল দান করে পাপস্খলন করেন। আশ্বিনের অমাবস্যা তিথিতে শেষ জল দান করে আবার স্বর্গে ফিরে যান। এই বিশেষ ১৫ দিন সময় কাল যে সময় কর্ণ মর্ত্যে ছিলেন, তাকে বলা হয় পিতৃপক্ষ। পিতৃপক্ষের শেষ দিন হল মহালয়া। মহালয়ার পরের দিন থেকে কোজাগরী পূর্ণিমার দিন পর্যন্ত সময় কাল কে বলা হয় দেবীপক্ষ। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মহালয়ার সাথে দুর্গাপুজোর সেরকম কোনো যোগ নেই।
#পর্ব_২_মহালয়া_ও_তর্পণ
মহালয়া শব্দটি এসেছে মহালয় থেকে। মহালয় শব্দের অর্থ হলো মহান আলয়। আলয় শব্দের অর্থ গৃহ বা আশ্রয়। বলা হয় যে, মহালয় বলতে পিতৃলোককে বোঝানো হচ্ছে, যেখানে আমাদের পিতৃপুরুষেরা অবস্থান করেন। এখন প্রশ্ন তাহলে আ-কার যোগ করে মহালয়া কেন? এর ব্যাখ্যা হিসেব এ বলা হয়, অমানিশার অন্ধকার শেষে আমরা যখন দেবীপক্ষের আলোকবৃত্তে প্রবেশ করি সেই সময় কে আমরা মহালয়া হিসেবে উদযাপন করি, এখানে দেবীকেই আশ্রয় রূপে মান্য করা হয়।
তাহলে মহালয়ার সাথে তর্পণের সম্বন্ধ কি?
তর্পণ শব্দের অর্থ হলো তৃপ্তিসাধন। সাধারণ ভাবে পূর্বপুরুষকে জলদান করে তাদের তৃপ্তিসাধন করাকেই তর্পণ বলা হয়।
হিন্দু পুরাণে, স্বর্গলোক ও মর্ত্যলোকের মাঝে পিতৃলোক বলে আরো একটি লোকের উল্লেখ আছে, যেখানে জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ বাস করেন। বলা হয় পিতৃপক্ষের একপক্ষ (১৫দিন) সময় কালে পূর্বপুরুষেরা পিতৃলোক ত্যাগ করে তাঁদের উত্তরপুরুষদের গৃহে অর্থাৎ আমাদের মধ্যে অবস্থান করেন। এই সময় তাদের 'তৃপ্ত' করার যে পদ্ধতি বা রীতি, তাকেই বলে তর্পণ। পিতৃপক্ষের শেষ দিন হলো মহালয়া। তাই ওই শেষ দিনে বিশেষ ভাবে তর্পণের রীতি পালন করা হয়।
পুরাণের এই সব কথা সংস্কার, কুসংস্কার বা অন্ধসংস্কার যাই হোক না কেন, এর থেকেই বোধহয় কোনো ভালো কাজের আগে বাবা মা ও পূর্বপুরুষদের প্রণাম ও স্মরণের ধারা প্রচলিত হয়েছে।
শুভ মহালয়া 🙂