08/02/2024
" নিশানে'র উড়ন্ত পাখি "
✍️rigen...
[২০১৭ সালের প্রেক্ষাপট হতে]
পরিচয় টা ফেইসবুকের একটি ধর্মীয় গ্রুুপ থেকে। উক্ত গ্রুুপের একজন এক্টিভেট মেম্বার ছিল নিশান। বলতে গেলে টপ কন্ট্রিবিউটার ছিল সে। নিশানের করা প্রতিটি পোস্টে রিয়েক্ট দিতো সুচিলা বড়ুয়া নামের একটি আইডি । নিশান কৌতুহল বশত রিকুয়েষ্ট সেন্ড করে সুচিলা বড়ুয়া আইডিতে। রিকুয়েষ্ট এপ্রুভ করে। এপ্রুুভ করার পর নিশান মেসেজ করা শুরু করে। অপরদিকে সুচিলা বড়ুয়া ও রিপ্লাই দিতে থাকে। সুচিলা বড়ুয়ার শর্ট নাম হচ্ছে রিংকি।রিংকি বলে সবাই ডাকে।
রিংকির সাথে নিশানের চ্যাট কনভারসন ছিল অনেক মিউচুয়াল। সময়ের সাথে আলাপনার যত বয়স হচ্ছে তত মায়ায় ডুবে যাচ্ছিল নিশান।এই মায়া প্রকাশ করার জন্য এপ্রিলের শুরুর দিকে নিশান প্রপোজ করে রিংকি কে।
রিংকি প্রপোজাল রিজেক্ট করে দেয় তার প্রিয়তম আছে বলেই। তার প্রিয়তমর নাম নাকি জয়।
রিংকির উত্তর পাওয়ার পর বিষন্নতায় ধরাসয়ী নিশান।
রিংকি কে বলে-
আচ্ছা সমস্যা নাই। আমার মায়া টুকু একক ভালবাসায় পরিপূর্ণতার অপেক্ষায় থাকুক। যদি মনে হয় আমি প্রেমকান্ত তাহলে তোমার মন মন্দিরে জায়গা দিও।
প্রপোজাল এক্সেপ্ট না করলেও আলাপনার আমেজ কিন্তুু চলমান ছিল। নিশান প্রত্যাখানিত হলেও রিংকির পিছু ছাড়ে নাই।
সময় গড়িয়ে জুনের মধ্যাখানের সময়টুকুতে রিংকি নিশানের প্রপোজাল এক্সেপ্ট করছে বলে একটি বার্তা দেয়। তার প্রাক্তনের অতিরিক্ত প্রেসারে সম্পর্কের ইতি টানতে বাধ্য হয়। বার্তা পেয়ে নিশানের হৃদয়ে আনন্দের ঘন্টা জানান দেয় সময়টা এখন প্রেমকাল।
আলাপনার বিষয়বস্তুু এখন ভালবাসার অংশবিশেষ। দুজনার সময় আদান প্রদান হতো প্রেমময় প্রেমাতালে।
সময় পেরিয়ে এখন ২০১৮ আরম্ভ।
রোদন কন্ঠে নিশান কে কল দিয়ে অভিযোগ করে-
তার প্রাক্তন জয় নাকি তাকে ডিস্টার্ব করতেছে প্রচুর। তৎক্ষণাৎ দেখা করতে বলে নিশান কে। আসতেছি বলে কল রেখে রিংকির সম্মুখে রওনা দেয় নিশান। প্রথম বারের মত সামনাসামনি দেখা হবে রিংকির সাথে। নিশান খুব নার্ভাস। যদিও ভিডিও কলে কথা হয়তো দুজনার।
নিশান স্ব স্থানে এসে পৌঁছালো। রিংকি আর তার বান্ধবী জুলি দাড়িয়ে আছে কলেজের এক কর্নারে। প্রথম বারের মত রিংকি কে দেখে নিশান মহা আনন্দিত। বাস্তবের রিংকির সৌন্দর্য্যতা নিশান কে আরো গভীর ভাবে আকৃষ্ট করে। কলেজের একটি কুলিং কর্ণার থেকে রিংকি ও তার বান্ধবী জুলির জন্য কিছু চকলেট নিয়ে যায়।
ধন্যাবাদন্তে জুলিকে বিদায় দিয়ে সিএনজি একটি রিজার্ভ করে রিংকি কে বাসা পর্যন্ত আগায় দিয়ে আসে। আসার সময় কলে রিংকির মায়ের সাথে অনেক্ষন কথা বলে নিশান।
সময়ের ঘোরে নিশান আর রিংকির সম্পর্ক টা রিংকির পরিবারের সবাই জানে। রিংকি কে নিয়ে নিশান যতবার ঘুরতে যাইতো ততবার রিংকির মাকে বলেই যাইতো। কোনো বাঁধা বিপত্তির আপত্তি ছিলনা।
সময় যত গড়াচ্ছে সম্পর্ক তত বৃদ্ধ হচ্ছে।
১৯ ও ২০ সালের ঘন্টা পেরিয়ে সময়টা যখন ২০২১ সাল।
২১ সালের মার্চ মাসে রিংকির মামার এনগেজমেন্ট হয়। রিংকির মামা একজন ফ্রান্স প্রবাসী । রিংকি সহ স্বপরিবার এনগেজমেন্টে যায়। এনগেজম্যান্টের পর থেকে রিংকি অটো মিচবিহেভ শুরু করে নিশানের সাথে।
কথা বার্তা বলে বিষাদের ন্যায়। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে যে, কিছুই না, হয়নি কিছু। এই বলে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।
সম্পর্কের রানিং এখন মান অভিমানে ভরাডুবি।
কখনো ভালো,কখনো খারাপ। এই ভাবে যাচ্ছে।
জুলাই মাসের শুরুর দিকে নিশানের এক বড় ভাই সৈকত নিশান কে বলে - রিংকির এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে ফ্রান্স প্রবাসী একজন ছেলের সাথে।
সৈকতের কথা অনুযায়ী হতাশার চাপে রিংকি কে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলে তা অস্বীকৃত জানায়।
বলে যে, যে বলছে এনগেজমেন্টের কথা তাকে বলিও কোনো প্রমাণ আছে কিনা।
যথাযত প্রমাণ না থাকার কারণে রিংকির কথা অনুযায়ী বিষয়টি এড়িয়ে যায়।
উল্টো শপথগ্রস্থ হয় এত বছরের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে সে কখনো অন্যজনকে আপন করবেনা। একসাথে অন্তিম সময় পর্যন্ত পথ চলার বন্দনায় রত রিংকি।
নিশান রিংকির এই দৃড় প্রতিজ্ঞায় অবিশ্বাসের মোহ টুকু মাটি দিয়ে দেয়।
সময় যাচ্ছে মান অভিমান,হেলা অবহেলায়।
২০২২ শুরুর দিকে-
নিশান তার বাসার কাজ সহ ছোট বোনের বিয়ের কার্যক্রম শেষ হলেই রিংকি কে বিয়ে করার অনুভূতি প্রকাশ করে ।
রিংকি নিশান কে বলে-
তাড়াহুড়ো করার দরকার নাই। সজ্ঞানে কাজ পরিপূর্ণ করো। আমি আছি।
কথাও হচ্ছে সম্পর্ক বৃদ্ধ হচ্ছে। হঠাৎ ২০২২ এপ্রিলের ২৫ তারিখ থেকে রিংকির নাম্বার অফ। রিংকিকে মেসেজ কিংবা কল দিলে কোনো রিপ্লাই আসেনা।
ফেইসবুকেও ব্যাবহার করেনা রিংকি। কারণ, নিশান ১৮ সালে রিংকির ফেইসবুক আইডি বন্ধ করে দেয়। স্বামী স্ত্রীর ন্যায় ছিল দুজনে।
খোজ খবরের অনেক প্রচেষ্টা করলেও ব্যার্থ নিশান। প্রতিদিন লাগাতার মেসেজ ও কল দেওয়ার কোনো থামতি নেয়। অপেক্ষা! অপেক্ষা! অপেক্ষা!
অবশেষে জুনের ৬-৭ তারিখের দিকে নাম্বার অন হয়। কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলে নাম্বার ডিসকানেকটেড ছিলো কেনো?
উত্তরে রিংকি বলে-
মোবাইল নষ্ট হয়ে গেছিলো নাকি। টাকা ছিলনা তাই এতদিন মোবাইল ঠিক করতে পারেনাই।
[ মিথ্যা ব্যাখা। কারণ, উক্ত সময়টুকুতে ইন্ডিয়া গিয়েছিল ফ্রান্স প্রবাসী জুবেলকে বিয়ে করার জন্য। তখনো কিন্তুু অজানায় নিশান। কিছু না হওয়ার মত অভিনয় করে নিশানের সাথে সম্পর্ক চলমানে লিপ্ত রিংকি।]
সাময়িক কথা হলেও আবার শুরু হয় মিসবিহেভ, অনীহা। রিংকির এই সব আচরণ দেখে নিশান রিংকির বাবার নাম্বার নিয়ে ডাইরেক্ট কল দেয় রিংকির বাবাকে।
কল দিয়ে জানতে চাইলে রিংকির রুগ্ন স্বভাবের কারণ কি? বাবা বলে-
মেয়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে আধারমানিক একটি ছেলের সাথে । সে জন্য এই রকম করতেছে।
= [ বিয়ের লোকেশন মিথ্যা। এত কিছু হয়ে যাওয়ার
পরেও রিংকি সব ঘটনাবহুল গৌপনে রেখেছিল ]
বিয়ের কথা শুনে রিংকির বাবাকে নিশান থ্রেট দেয়। বিষয়টি রিংকি জানতে পারলে অনেক রাফ বিহেভ করে নিশানের সাথে।
সম্পর্ক টা চলতেছে অসুস্থ পরিবেশে অসুস্থ মানসিকতাই।
২০২২ জুলাই ২৭ তারিখ রাজনৈতিক ইস্যুর কারণে নিশান এরেস্ট হয়। কারাবন্দী হওয়ার আগে মেসেজ দিয়ে রিংকি কে বলে তার নাকি ১০ বছর সাজা হয়ে গেছে। [নির্দিষ্টতা নয়]
নিশানের যে কোনো মুহুর্তের কারাবন্দীর বিষয় টা রিংকি জানতো। কারণ, রাজনৈতিক ইস্যুর মামলা টা ২০১৬ সাল থেকে ঘুরতেছিল।
ভালো থেকো বলে বিদায়ী মেসেজে সাময়িকী ইতি টানলো নিশান।
নিশানের কারাবন্দী জীবনের কোনো মাথা ব্যাথা নাই রিংকির। কারাগার থেকে কল দিয়ে রিংকির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে রিংকি কোনো কল রিসিভ করেনা।
কারাবন্দী মুহূর্ত গুলো তুচ্ছ রিংকির কাল্পনিক স্বরণে। যদিও একটু কথা বলতে পারতো নয়ন তার বিষাদের অশ্রুু জমাইত না।
দীর্ঘ ৫ মাস পর জানুয়ারি ১৩ তারিখ নিশানের জামিন হয়।
কারামুক্ত নিশান কারাগার থেকে বের হয়ে কল দেয় রিংকি কে। সব দিক দিয়ে ডিসকানেক্ট করে দেয় নিশান কে। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে তার বড় ভাই সৈকতের বলা এনগেজমেন্টের ঘটনাটি সত্য। উখিয়া, কোর্টবাজার কক্সবাজার, একজন ফ্রান্স প্রবাসীর সাথে বিয়ে হয়ে গেছে রিংকির। নাম তার জুবেল। সেও নাকি বিবাহিতা। কোনো এক কারণে ডিভোর্স হয়ে গেছিলো। জুয়েল স্বাবলম্বী ও অর্থবিক্ত।
= [ বিয়ে হয়ে গেছিলো ২০২২ এপ্রিলে। জানতে পারে
২০২৩ জানুয়ারী তে। এতদিন পর্যন্ত সম্পর্কের
চলমান ছিল মিথ্যা মায়ায়। ]
বিয়ের আগে কোনো আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইলে রিংকি ও রিংকির পরিবার বলে তাদের কোনো আপত্তি নাই। কেননা, এনগেজড এর পর থেকে রিংকির ভরনপোষণের জন্য টাকা পাটাইতো জুবেল। যা রিংকি ও রিংকির পরিবারের মন মানসিক লোভ লালসায় পরিণত করেছে।
নিশান রিংকির হাসবেন্ড ও তার দেবরের কন্টাক্ট নাম্বার কালেক্ট করে ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে হলো জানার জন্য।
অবশেষে জানতে পারে-
ঘটনার মূল সূত্র শুরু হয় রিংকির মামার এনগেজমেন্ট থেকে। রিংকির মামি নাকি সব টিক করে দিছে।
রিংকির মামি নিশানের ঘটনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবগত ছিলনা। যদি জানতো রিংকি আর নিশানের মিউচুয়াল সম্পর্কের কথা তাহলে কোনোদিন ও নাকি এনগেজড হতে দিতনা।
এই দিকে জুবেল সব ঘটনা সম্পর্কে অবগত হলেও অতীতের মরিচীকা বলে বিষয় টিকে এড়িয়ে চলে। কারণ, রিংকি ছিল অনেক সুন্দরী। তার মধ্যে একজন সহধর্মীনি খুব প্রয়োজন ছিল জুবেলের।
কেননা, সে বিবাহ বিচ্ছেদী।
অথচো, নিশানের সম্পর্ক টা রিংকির পরিবারের অজানা ছিলনা। রিংকির ছোট বোন গুলাও নিশানের সাথে শ্রদ্ধার সহিতে কথা বলতো। রিংকির মা আদর করে নিশান কে বাবা বলেও ডাকতো। সব কিছু নিমিষেই হারিয়ে গেলো মোহের অন্ধকারে।
[ এই বুঝি দাসপ্রথার আধুনিক রুপের সংজ্ঞা ]
তবুও নিশান একটুর জন্য হলেও রিংকির সাথে কথা বলতে চাই। শত প্রচেষ্টায় কথা বলার সুযোগ হলেও নানা রকম অকথ্য ভাষায় ব্যাবহার করে তার পথ থেকে দূরে থাকার আকুতি জানায়।
নিরব আর্তনাদে কল কেটে দেয় নিশান। প্রেমের রসাতলে জীবনের নির্মম পরাজিত পাগলপ্রায় নিশান। ফিরানোর তরে শত প্রচেষ্টা প্রতিঘাতে রুপ নিল শূণ্যতায়। নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও কষ্টটা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে নিশানের।
[ সত্য ঘটনার অবলম্বনে ]