29/06/2025
‘কাঁটা লাগা’ গার্ল আর নেই — আমাদের শৈশবের ঝড় এখন নিস্তব্ধ এক শীতল কক্ষে
মাত্র কিছুক্ষণ আগেই চোখে পড়ল একটি খবর। প্রয়াত হয়েছেন শেফালি জরিওয়ালা। হ্যাঁ, সেই ‘কাঁটা লাগা’ গানের তরুণী, যিনি এক সময় পুরো প্রজন্মকে উথালপাথাল করে দিয়েছিলেন। আজ তিনি মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে শুয়ে আছেন নিশ্চুপ। ঠান্ডা, নীরব। আমাদের কৈশোরের আলোড়ন তোলা সেই মুখ আজ নিঃস্পন্দ।
যে ডেনিম প্যান্ট কোমরের অনেক নিচে ঝুলিয়ে এক অভাবনীয় স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করেছিলেন তিনি, তা তখন ছিল স্কুলপড়ুয়া ছেলেদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আজ সেই একই মেয়ে জীবনের সমস্ত আলোচনার বাইরে, অন্ধকার এক জায়গায় স্থির হয়ে রয়েছেন।
একটা সময় যে শেফালির ক্লাবের মেইন গেট পেরোনোর স্ট্যাম্প হাতে থাকত, তা অনেক মেয়ের কাছে ছিল নিষিদ্ধ আকর্ষণের মতো — লুকিয়ে লুকিয়ে চাওয়া এক স্বাধীনতার প্রতীক। সেই চাবুকের মতো মসৃণ শরীরটি এখন ঠান্ডা মরচে ধরা ধাতুর মতো।
হাসপাতালের করিডোরে অদ্ভুত নিরবতা। স্ট্রেচারের চাকায় শব্দ, কর্মীদের হালকা হাঁটা— সব কিছুর মাঝে তিনি পড়ে আছেন স্তব্ধ এক ফ্রেমে। মিলেনিয়ামের শুরুর সেই বিস্ফোরণ আজ নিভে গেছে এক নিঃশব্দ ধ্বনিতে।
মাত্র ৪২ বছর বয়সে হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিল। আরেকজন সচেতন, ফিটনেস-ভক্ত মানুষ চলে গেলেন। আজকাল এটা যেন এক সাধারণ নিয়ম হয়ে উঠছে। যতই ডায়েট, যতই এক্সারসাইজ— সময় চলে গেলে ফেরানো যায় না।
ফেলে যাওয়া যায় শুধু তাঁর ‘একদিন’-এর তালিকাগুলো। “একদিন করব”, “একদিন ঘুরব”, “একদিন কিনব”, “একদিন পরব” — সেই ‘একদিন’ কখনও আর আসে না। রেখে যায় শুধু অসম্পূর্ণ স্বপ্নের বোঝা।
তাই আমি বলি — সময়কে গুনে না রেখে তাকে বাঁচুন। যেদিন হঠাৎ করে জীবনের বাস থেকে নেমে যেতে হবে, সেদিন আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে না। সেই বাস আর থামবে না, আর আপনার আসনেও কেউ বসে যাবে।
এমন না হয়ে বরং বাঁচুন নিজের মতো। ‘না’ বলার সাহস রাখুন যতদিন নিঃশ্বাস চলে। কারণ, একবার থেমে গেলে, তখন আর আপনি নন— তখন আপনি কেবল ‘বডি’।
এই জেনারেশন দিনের পর দিন ভবিষ্যতের টানাপোড়েনে পড়ে বর্তমানকে বিসর্জন দিচ্ছে। কেউ ছুটছে বাড়ি কেনার জন্য, কেউ ফোনের জন্য, কেউ গাড়ির জন্য। কিন্তু কেউ জানে না, সে স্বপ্নের সঙ্গে লোনের EMI-র বিনিময়ে ঘুমও বেচে ফেলছে কিনা।
‘ধার’ আর ‘সময় শেষ’ — এই দুইয়ের ভিতর দমবন্ধ হয়ে যাওয়া জীবনগুলো একটা অদ্ভুত মিল তৈরি করেছে। ধার থাকলে ঘুম আসে না। সময় চলে গেলে আর ঘুম ভাঙে না।
এটা কোনো কাব্যিক মৃত্যু উপলব্ধি নয়— এটা একটা সজাগবার্তা। নিজের ইচ্ছে, নিজের ভালোবাসা, নিজের সময়কে আর পিছিয়ে রাখবেন না। কারণ সবকিছুর আগে ‘বেঁচে থাকা’টা জরুরি। হঠাৎ যদি যেতেই হয়,
অন্তত আক্ষেপ যেন না থাকে আপনার নিজের কাছে।