29/11/2023
গতকাল থেকে এষা একটু জোড় দিয়েই ওদের বাড়িতে যেতে বলছিলো।
এষা আমার সেই বন্ধু যার সঙ্গে কথা বললে অনেকটা মনের ক্ষিদে মেটানো যায়। তো ভাবলাম ফাঁকা আছি যখন,ঘুরেই আসি। ব্যস্ততার মাঝে এটুকু অবসর নেওয়া যেতেই পারে।দুপুরে এষা ফোনে জানালো "একটু তাড়াতাড়ি চলে আয় ,অতীশেরও আজ ছুটি ,জমিয়ে গল্প করবো।তবে তোকে একটা দায়িত্ব নিতে হবে।"
নির্ভেজাল আড্ডায় আবার কীই দায়িত্ব এসে পড়বে কে জানে।
বিকেল বিকেল বেরিয়ে পড়লাম।এষার বাড়িতে ছাদ বাগানে বেশ ভালোই সময় কাটে।
এষার প্রিয় ফুল নীল অপরাজিতা আর থোকা লাল জবার গাছ নিয়ে গেলাম ওর বাড়ি। ঢুকতেই ও বলল "বাব্বা! একেবারে শিব-কালীকে নিয়ে ঢুকলি!! তোকে যে কোথায় রাখবো!" বললাম "তুই এতো গাছ পাগল... আপাততো সামনে এক কাপ গরম কফী তো রাখ্...." এষা বললো, "আচ্ছা, সে দিচ্ছি, আগে তো বোস...."
হাতের জিনিসগুলো রেখে বসতেই হঠাৎ মনে পড়তে বললাম "কী দায়িত্বের কথা বলছিলি..." এষা বলল "নাহ্, তেমন কিছু নয়, দাঁড়া, কফীটা নিয়ে আসি..."
গরম কফীতে চুমুক দিতেই এষা বললো, "তোকে কিছু বলার আছে..." বললাম "হ্যাঁ বলনা, শুনতেই তো চাইছি..." ও আমতা আমতা করছিল....অতিশদা বললেন আচ্ছা সে সব পরে হবে,আগে আমার ঈর্ষান্বিত ব্যক্তির সাথে কিছু গল্প তো করি।যার জন্য আমার সহধর্মিনী আমাকেও ভুলে যান। আমি বললাম, "আচ্ছা, চলুন ছাদে বসে গোধূলী আলো-এ গল্প করতে করতে সব শুনবো..."
কফী খাওয়া শেষে আমরা উঠলাম.... অতিশদা বললেন, তোমরা যাও আমি একটু পরে যাচ্ছি।
আলো আঁধারি লাইটের খেলায় ওর ছাদ্ বাগান যেন স্বর্গপুরী হয়ে উঠেছে... হঠাৎ পশ্চিমের কোনে একজন পুরুষকে দেখে আঁত্কে উঠলাম।এষার শ্বশুর, ভাসুর কেউ আছেন বলে তো জানিনা। তাহলে ইনি কে?।নিমেষের মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্ন তোলপার করে উঠলো।চেঁচিয়ে বলে উঠলাম "কে? কে ওখানে?"
এষা কিছু বলার আগেই ঐ লোকটা ছুটে এসে আমার গাল দুটো ধরে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বললেন "কোথায়,কোথায় ছিলিস তুই? আর কখনো আমায় ছেড়ে চলে যাবিনাতো?" প্রচন্ড ভয়ে ওনার হাত থেকে বাঁচার জন্য বললাম "না যাবনা, এখন ছাড়ুন।" জোড় করেই হাত ছাড়িয়ে এক ছুটে নীচে।এষার ওপর ভীষণ রাগ হলো।তখনো হাত পা কাঁপছে আমার। অতীষদাকে বলে বেরতে যাব --এষা চিৎকার করে অতীষদাকে ডাকলো।অতীষদাও ছুটলেন ওপরে।ওদের না বলে বেরিয়ে যাব তাতেও মন সায় দিলনা।
কিছুক্ষন পর ওনাকে ধরে ওরা আস্তে আস্তে নামিয়ে পাশের ঘরে নিয়ে গেল।
এষা ফিরে এসে আমার হাত দুটো ধরে বলল "অপরাধ্ নিসনা। ভেবেছিলাম তোকে আগেই সবটা বলে নেব, কিন্তু তুই যদি রাজি না হোস। এই দোটানার মাঝেই এত কান্ড ঘটে যাবে সেটা আমিও বুঝতে পারিনি..."
"তাই বলে তোর বাড়ীতে যে এমন একজন আছেন সেটা তুই আমাকে আগে জানাবিনা??"
এষা বলে চলল, উনি আমার কোনো আত্মীয় নন্ ।পাশের বাড়িতেই থাকেন। কিন্তু মেশোমশাই আমার কাছে আত্মীয়র থেকে ও অনেক বেশী রে। বছর তিরিশের মেয়ে জয়িতাই ছিল ওনার একমাত্র সম্বল।গতো মাসে রোজকার মতোই সেদিনও কাজে বেড়িয়েছিল জয়িতা, কিন্তু আর ফেরেনি। রোড্ এক্সিডেন্ট। জয়িতা চলে গেলো। মেশোমশাই কাঁদেননি,শুধু খুঁজে চলেছেন সেই মেয়েকে।এখন তাঁর বাকি আত্মিয়দের কাছে উনি বোঝা। তাঁর দায়িত্ব থেকে বাঁচতে তাঁকে এসাইলামে পাঠান হচ্ছে।
তোর অতীশদা ,আর আমি এটা কিছুতেই মানতে পারিনি।নিজেদের ভীষণ অপরাধী লাগছিল ।তারপর অনেক ভেবে ওঁদের পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসলাম। ভাবলাম শেষ চেষ্টা তো একটা করতে পারি। তোর সঙ্গে জয়িতার মুখের এবং আদবকায়দার-ও অনেক মিল আছে। যদি কোনভাবে একবার ওনার স্মৃতিটাকে ফেরানো যায়।তারপর না হয় সবটা বুঝিয়ে বলা যাবে ওনাকে। কিন্তু এইভাবে একটা ভালো মানুষ চোখের সামনে দিয়ে অ্যাসাইলামে চলে যাবে সেটাতো হয়না বল।
বললাম "তো আমি করবো বলতো? আজ এই একদিনেই কি উনি ঠিক হয়ে গেলেন!"
না তা কেন,তুই রাজি থাকলে বলতাম একটু সময় দিতে মানে কটা দিন যদি তুই একটু আসতিস।তোকে জয়িতা ভেবে কথা বলতে বলতে হয়তো কিছুটা স্বাভাবিক হতেন,আর ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট তো চলছেই। পরিস্হিতি একটু সামলে নিয়ে ওনাকে সবটা বুঝিয়ে বলতাম।তারপর তো সবটাই ওপরওয়ালার হাতে বল্।
রাতে আর ঘুম এলোনা। এলোপাথারি নানা চিন্তায় খুব বাবার কথা মনে পড়ল। সেই অসহ্য মানষিক যন্ত্রনার দিনগুলো। যা আজও আমায় দগ্ধায়।আজ চোখের সামনে মেয়ে হারানো এক বাবার আকুতি......
রাত গভীর,ঘুম আসছেনা।আমার পাশের মানুষটা বলল পৃথিবীতে আজও কিছু ভালো মানুষ আছেন।
যা করলে বাকি রাতগুলো একটু ঘুমতে পারবে ,সেটাই করো।
রাত তিনটে.... "কাল অফীস ফেরত যাচ্ছি তোর বাড়ি"
এষা বলল "জানতাম... দায়িত্বটা তুই নিজেই নিবি।" কাল বাকী সব কথা হবে, এখন ঘুমো একটু...😘😘
কলমে:- সুপ্তি সান্তারা❤️ Supti R Andarmahal-সুপ্তির অন্দরমহল
Photo for Attention🌿