07/04/2025
প্রায় ১৫ বছর ধরে চাকরির প্রতীক্ষায়, বেকার বাংলার শিক্ষিত যুবসমাজ
একটা সমাজের সবচেয়ে বড় শক্তি কী? তার শিক্ষিত যুবসমাজ। আর বাংলার শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা গত প্রায় ১৫ বছর ধরে সেই শক্তি হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেছে— অথচ পেয়েছে শুধু অবহেলা, অবিচার আর রাজনৈতিক প্রতারণা।
২০০৯ সাল। এক তরুণ বিএ পাস করল। ২০১2 সালে এমএ শেষ করল। ভাবল, একটা স্কুলে শিক্ষকতা করবে। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষা আর হয় না, হলে ফল প্রকাশ হয় না, ফল প্রকাশ হলেও মেধার চেয়ে প্রাধান্য পায় টাকা, তদ্বির, পরিচয়। সে অপেক্ষা করল। আশ্বাস এল, আবার গেল।
২০১৬ সালে চাকরি পেয়েছিল যারা, আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তারা হারাল সবকিছু। কারণ? যারা পরীক্ষায় পাশ করেছিল, তাদের নামই তালিকায় ছিল না— ছিলো টাকা দিয়ে চাকরি কেনা লোকজনের নাম। এখন SSC বোর্ড বলছে – ৭০০০ জন অযোগ্য, বাকিদের নাম আজও তারা প্রকাশ করতে পারল না।
প্রশ্ন একটাই— যদি ৭০০০ জন অযোগ্য হয়, তাহলে বাকিদের নাম বলতেও এত বছর লাগছে কেন?
আসলে সত্যিটা হলো— এই চাকরি নিয়োগ ছিল না, ছিল এক বিশাল ‘পলিটিক্যাল মার্কেট’। এখানে চাকরি ‘দেওয়া’ হয়েছে, বিক্রি নয়। আর এই বাজারে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই তরুণ-তরুণীরা, যারা সকাল ৬টা থেকে রাস্তায় রাস্তায় প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার টানত, রাতে এসে বই নিয়ে বসত, শুধুমাত্র একটা সরকারি চাকরির স্বপ্নে।
আর আজ, তারা দেখছে— নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায় এলেও, কেউ দায় নিচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ‘আমি মানবিক’, শিক্ষামন্ত্রী বলছেন ‘আমার কিছু বলার নেই’, চেয়ারম্যান বলছেন ‘আমি জানি না’— আর এই ‘না জানা’র মধ্যে হাজার হাজার জীবনের ১৫টা বছর চলে গেল।
আজ এই রাজ্যে শিক্ষিত হওয়াটাই অভিশাপ মনে হচ্ছে। কোনো ইন্ডাস্ট্রি নেই, চাকরি নেই, পরীক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এ যেন এক ‘শিক্ষিত বেকারের স্বর্গরাজ্য’।
এটাই কি আমাদের বাংলার ভবিষ্যৎ?
এই প্রশ্ন আজ প্রতিটি রিকশা টানা যুবকের চোখে, প্রতিটি টিউশন পড়ানো মেয়ের অশ্রুতে। আর কোনো সভা, কোনো কবিতা, কোনো চাটুকারিতা সেই চোখের জল মুছিয়ে দিতে পারবে না।