গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from গপ্পের ঠেক - Gopper Thek, Digital creator, KOLKATA.

আপনাদের সকলকে আমাদের গল্পের ঝুড়ি, থুড়ি 'গপ্পের ঠেক' এ স্বাগত। ছোট থেকে বড় গল্প শুনতে বা পড়তে কে না ভালোবাসে বলুন। তাই তো আমরা নিয়ে এসেছি আপনাদের জন্য সেরা গল্পের ঠিকানা 'গপ্পের ঠেক'। এই ঠেকে আপনারা সবই পাবেন ভূত, রাজা রানী, অ্যাডভেঞ্চার এবং আরও কত কি

এক মা-কাক ও বাবা-কাক একটা বিশাল বড় বটগাছে তাদের একটা বাসা বেঁধেছিল।গপ্পের ঠেক - Gopper Thek ঐ বাসায় তারা অনেক বছর কাটিয়ে...
25/05/2025

এক মা-কাক ও বাবা-কাক একটা বিশাল বড় বটগাছে তাদের একটা বাসা বেঁধেছিল।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

ঐ বাসায় তারা অনেক বছর কাটিয়েছিল। ওখানে একে এক তাদের অনেকগুলো বাচ্চাও হয়েছিল।

একদিন হঠাৎ একটা বড় কালো সাপ সেই বটগাছের নীচে এল এবং বটগাছের নীচে একটা বড় গর্ত করে থাকতে লাগল। একটা বড় কালো সাপ তাদের প্রতিবেশী হবে মা-কাক এবং বাবা-কাকের এটা মোটেই পছন্দ হল না। কিন্তু তারা তাকে কোন কিছু বলতে পারল না।

মা-কাক আবার ডিম পাড়ল এবং শীগগীরই সেই ডিম ফুটে কাকের বাচ্চারা বেরিয়ে এল। এবার বাবা-কাক আর মা-কাক দুজন খুবই সাবধানে তাদের বাচ্চাদের বড় করতে শুরু করল।

একদিন বাবা-কাক আর মা-কাক খাবারের খোঁজে বেরোল। তখন সেই কালো সাপটা আস্তে আস্তে বুকে হেঁটে গাছে চড়ল তারপর বাসায় থাকা কাকের বাচ্চাগুলোকে মেরে খেয়ে ফেলল। যখন মা-কাক এবং বাবা-কাক বাসায় ফিরে এল, তাদের বাচ্চাদের বাসায় কোথাও দেখতে পেল না। তখন তারা খুবই আঘাত পেল। তারা তো জানত না তাদের বাচ্চাদের কি হয়েছে। কাজেই তারা আশেপাশে প্রতিবেশী যেসব পশুপাখি বাস করত তাদের সকলকেই জিজ্ঞাসা করল। কিন্তু তাদের বাচ্চারা কোথায় গেছে তা কেউই বলতে পারল না।
বাচ্চাদের শোকে তারা অনেকক্ষণ কা কা করে কাঁদল। তারপর তারা ঠিক করল এরপর থেকে বাচ্চা হলে তারা আরও সতর্ক হবে।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

এরপর বেশ কয়েক মাস কেটে গেল। মা-কাক আবার ডিম পাড়ল আর তা থেকে সময়মত বাচ্চা-কাকও বেরোল। এইবারে কাকেরা আরও সতর্ক হয়ে তাদের বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে লাগল। একজন যখন খাবারের খোঁজে বাইরে যাবে অন্যজন তখন বাসায় বাচ্চাদের পাহারায় থাকবে তারা এইস্থির করল।

একদিন মা-কাকটা দেখতে পেল যে সেই কালো সাপটা ধীরে ধীরে আবার গাছে উঠছে। সে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে লাগল এবং সাপটাকে বাধা দেবার যথাসাধ্য চেষ্টা করল। কিন্তু সে সফল ফল হল না। কালো সাপটা কাকেদের বাসায় এসে ঢুকে তাদের বাচ্চাদের মেরে খেয়ে ফেলল।

মা-কাক খুব কাঁদতে লাগল। অন্যান্য অনেক কাক যারা ওকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিল তারাও সবাই খুব কাঁদল। তারা সাপটাকে আক্রমণ করতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু কাকেরা কোন ক্ষতি করার আগেই সাপটা তার গর্তে ঢুকে গেল।

এরপর বাবা-কাক যখন বাড়ি ফিরল, অন্য সব কাকেরা তখনও কেঁদে চলেছে।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

তার বাচ্চা কাকেদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সেকথা শুনে তারও মনেও গভীর দুঃখ হল। তখন সে মা-কাককে সান্ত্বনা দেবার যথাসাধ্য চেষ্টা করল কারণ সে একেবারে ভেঙে পড়েছে। কিন্তু মা-কাক কান্নার মাঝখানে বলতে লাগল, "আমাদের এক্ষুনি এ জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। যতক্ষণ ঐ কালো সাপটা এখানে আছে ততক্ষণ আমরা এ বাসায় মোটেই নিরাপদ নই। আমরা এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাব এবং সেখানে গিয়ে বাসা বাঁধব।"

বাবা-কাক অসুখী হল। সে তখন বলল, "আমরা অনেক বছর ধরে এখানে আছি, এখন যদি এ জায়গা ছেড়ে আমাদের চলে যেতে হয় তবে সেটা খুবই দুঃখের হবে।"

"যদি তাই হয়,” মা-কাক উত্তর দিল, "তবে এখানে এই দুষ্ট কালো সাপের হাত থেকে কে আমাদের রক্ষা করবে?”

বাবা-কাক উত্তর দিল, "সাপটাকে তাড়াবার জন্য আমাদের একটা উপায় বার করতে হবে। বুড়ো খেঁকশেয়াল আমাদের বন্ধু। সে খুব বুদ্ধিমান। চল তার সঙ্গে পরামর্শ করি। সে নিশ্চয় কোন উপায় বের করতে পারবে।"

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

মা-কাক তার কথায় রাজি হল। তখন তারা দুজনে বুড়ো খেঁকশেয়ালের কাছে গিয়ে সব কথা বলল। অনুনয় করে বলল, "আমাদের সাহায্য কর। নিষ্ঠুর সাপটার হাত থেকে আমাদের রক্ষা কর, নইলে বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে।"

বুড়ো খেঁকশেয়াল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে চিন্তা করল, তারপর বলল, "তোমরা এ বাসাতে অনেক বছর ধরে আছ, তাই এ বাসা ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত হবে না তোমাদের। সাপটাকে তাড়াবার একটা উপায় আমাদের অবশ্যই বার করতে হবে।

আমার মনে হয় এ বিষয়ে আমি তোমাদের সাহায্য করতে পারব। আমি তোমাদের যা যা বলব তোমরা যদি ঠিক ঠিক সেইমত কাজ কর, তাহলে সাপটার মরবার সম্ভাবনা খুব বেশি। অতএব এখন তোমরা মন দিয়ে শোন আমি কি বলছি। আগামীকাল সকালে রাজবাড়ির মেয়েরা নদীতে স্নান করতে যাবে। নদীর তীরে তারা তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র অর্থাৎ কাপড়-চোপড় আর গয়না-গাঁচি নদীর পারে রেখে দিয়ে জলে নামবে। মূল্যবান জিনিসপত্রগুলো পাহারা দেবার জন্য তাদের লোকজন কিছুদূরে দাঁড়িয়ে থাকবে।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

"তোমরা সকালে সেখানে গিয়ে খোঁজ কর যে, তারা তাদের মূল্যবান গয়না-গাঁটিগুলো কোথায় রাখছে। যখন কেউ কাছেপিঠে থাকবে না, তখন একটা হার কিংবা অন্য যে কোন মূল্যবান জিনিস তুলে নিয়ে উড়ে চলে আসবে। উড়ে আসার সময় জোরে জোরে চিৎকার করবে যাতে চাকরেরা দেখতে পায় যে তোমরা মেয়েদের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে উড়ে পালিয়ে যাচ্ছ। তখন জিনিসটা ফিরে পাবার জন্য তারা তোমাদের পেছনে দৌড়বে। তোমরা তখন সোজা উড়ে এসে কালো সাপের গর্তে গয়নাটা ফেলে দেবে। তারপর দেখ কি হয়।"

কাকরা বুড়ো খেঁকশেয়ালের কথামত কাজ করতে রাজি হল।

পরদিন সকালে তারা নদীর ধারে গিয়ে পৌঁছল এবং অপেক্ষা করতে লাগল।

রাজবাড়ির মেয়েরা এসে নদীর ধারে তাদের মূল্যবান সব কাপড়-চোপড় এবং গয়নাগাঁটি রেখে দিল তারপর জলে স্নান করতে নামল। তখন বুড়ো খেঁকশেয়াল যেমন যেমন বলেছিল কাকেরা ঠিক তাই করল। তারা মূল্যবান সব গয়নাগুলো খুব ভাল করে লক্ষ্য করতে লাগল। তখন মেয়েদের ঐ গয়নাগুলোর ভেতরে তারা একটা মুক্তার মালা দেখতে গেল। মা-কাক সাথে সাথে নীচে নেমে এল এবং ঐ মুক্তার মালাটা তুলে নিয়ে উড়ে পালিয়ে গেল। সেই সাথে বাবা-কাকও তার পিছনে সারাটা রাস্তা চিৎকার করতে করতে উড়ে যেতে লাগল।
রাজবাড়ির চাকরেরা কাকটাকে মুক্তার মালা নিয়ে উড়ে পালিয়ে যেতে দেখল এবং তারা তখন সেই কাকটার পিছনে দৌড়ালো। কাকেরা দুজনে সোজা সেই গর্তের কাছে গেল যেখানে ঐ দুষ্ট কালো সাপটা থাকত এবং মা-কাকটা গর্তের মধ্যে মুক্তার মালাটা ফেলে দিল।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

চাকরেরা গর্তের ভিতর একটা লম্বা লাঠি ঢুকিয়ে হারটা খুঁজতে লাগল। তাতে সাপটা গেল রেগে। সে ফণা তুলে হিহিস্ শব্দ করে বেরিয়ে এল। চাকরেরা সাপটাকে ঘিরে ফেলে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলল। তারপর তারা মুক্তার মালাটা নিয়ে চলে গেল।

বাবা-কাক ও মা-কাক কালো সাপটা মারা যাওয়াতে খুব আনন্দ পেল। তারা সবসময় বুড়ো খেঁকশেয়ালের কাছে কৃতজ্ঞ বোধ করত।

#গপ্পের_ঠেক

অনেক অনেক দূরে, ছোট্ট এক গ্রামে এক ব্রাহ্মণ আর তার বউ থাকত। ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীর ছেলেপুলে হয়নি বলে তাদের মনে একটুও সুখ ...
24/05/2025

অনেক অনেক দূরে, ছোট্ট এক গ্রামে এক ব্রাহ্মণ আর তার বউ থাকত। ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীর ছেলেপুলে হয়নি বলে তাদের মনে একটুও সুখ ছিল না। দুজনেই রোজ ঠাকুরের পূজো করে ভোগ দিয়ে মানত করত যেন তাদের একটি খোকা হয়। একসময় ব্রাহ্মণীর সত্যিই একটি সন্তান হল। কিন্তু সে দেখতে দেখতেই শিশুটি একটা সাপে পরিণত হল! এই ঘটনা দেখে ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণী দুজনেই ভয়ে শিউরে উঠল। তাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাই পরামর্শ দিল, এখনি ওই আপদকে বিদায় কর। কিন্তু ব্রাহ্মণী কারুর কথায় কান দিল না। সাপ হলে কি হবে, হাজার হোক পেটের ছেলে তো! তাকে সে কোথায় ফেলবে? ব্রাহ্মণী তাকে আদর-যত্নে মানুষ করতে লাগল। তার গায়ে একটুও আঁচড় লাগতে দিত না।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

এইভাবে দারুণ স্নেহ-মমতা দিয়ে ব্রাহ্মণী সাপটাকে লালন-পালন করতে লাগল। রোজ, তাকে সাবধানে স্নান করাত এবং সাধ্যমত ভাল ভাল খাবার খাওয়াত। তার জন্য সে সুন্দর একটা বাক্সের মধ্যে একটি নরম বিছানা বানিয়েছিল এবং তাকে তার মধ্যে শুইয়ে ঘুম পাড়াত।

এইভাবে দিনে দিনে সাপ বড় হতে থাকল। মায়ের আদরও সেইসঙ্গে তত উথলে উঠতে লাগল। প্রতিবেশী একজনের বিয়ে হল তাই দেখে ব্রাহ্মণীও তার নিজের ছেলেকে বিয়ে দেবার কথা মনে মনে ভাবতে শুরু করল। কিন্তু সাপের জন্যে সে মেয়ে পাবে কোথায়? যাই হোক, ব্রাহ্মণী তাতে মোটেই দমবার পাত্রী নয়। তার মাথায় ভাবনার শেষ নেই- তার ছেলের জন্যে কোথেকে একটি ভাল পাত্রীর সন্ধান পাওয়া যায়!

একদিন যখন ব্রাহ্মণ বাড়ি ফিরে এল দেখে ব্রাহ্মণী কাঁদছে। "কি হল, কি ব্যাপার?” ব্রাহ্মণ তখন জিজ্ঞাসা করল।

"ব্রাহ্মণী, কাঁদো কেন?'

ব্রাহ্মণী কোন উত্তর দেয় না, কেবলই কাঁদে।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

ব্রাহ্মণ আবার বলল, "কি হয়েছে আমায় বলবে তো! তোমার মনে এত দুঃখই বা কিসের?'

কিন্তু কে কার কথা শোনে? ব্রাহ্মণীর কান্না আর থামে না। সব দেখে শুনে ব্রাহ্মণ হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, সে কি করবে ভেবে গেল না।

অনেকক্ষণ পরে ব্রাহ্মণী বলল, "আমি জানি, তুমি আমাদের মা ব্যাটাকে দু'চক্ষে দেখতে পার না। তাই ছেলেটার ভাল-মন্দ নিয়েও তোমার কোন মাথাব্যথা নেই। সে এখন উপযুক্ত হয়েছে দেখছ, কিন্তু তার বিয়ে দেবার জন্যে একটি মেয়ে খোঁজারও কোনো চেষ্টা নেই তোমার!"

ব্রাহ্মণ বলল, "বল কি ব্রাহ্মণী! আমাদের ছেলের জন্যে পাত্রী? তোমার কি ধারণা, সাপের সঙ্গে কেউ মেয়ের বিয়ে দেবে?”
ব্রাহ্মণী একথার কোনো উত্তর দিল না। সে কেবল কাঁদতে লাগল। শেষে তার কান্নাকাটিতে অতিষ্ঠ হয়ে ব্রাহ্মণ ঠিক করল দেশ-বিদেশে ঘুরে সে ছেলের জন্যে একটি পাত্রী যেখান থেকে হোক খুঁজে আনবে।

ব্রাহ্মণ এদেশ-সেদেশ নানা দূর-দূরান্তে বহু ঘুরে বেড়াল। কিন্তু কোথাও সাপকে বিয়ে করতে রাজি আছে এমন কোন মেয়ের সন্ধান পাওয়া গেল না। অবশেষে ব্রাহ্মণ এক বড় শহরে এসে হাজির হল। সেখানে তার এক পরম বন্ধু থাকত। ব্রাহ্মণের সঙ্গে বহুকাল যাবৎ তার বন্ধুর কোন দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। তাই ভাবল, এই সুযোগে সেই দেখাসাক্ষাৎটা সেরে নেওয়া যাক। বহুকাল পরে বন্ধু তাকে দেখে খুব খুশি হল। অনেকটা সময় গল্পগুজব করে খুব আনন্দে কাটল তাদের। তারপর ব্রাহ্মণের যখন যাবার সময় হয়ে এল তখন বন্ধু তাকে তার দেশভ্রমণ করতে আসার আসল কারণটা কি জিজ্ঞাসা করল।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

ব্রাহ্মণ বলল, "আমার ছেলের জন্যে একটি কনে খুঁজতে বেরিয়েছি।" "আরে! একথা আগে বলনি কেন?” বন্ধু তখন ব্রাহ্মণকে বলল।
"তোমাকে অন্য কোথাও দূরে যেতে হবে না। আমারই একটি মেয়ে আছে এবং সে দেখতেও যথেষ্ট সন্দরী। এই মুহূর্তে এখানেই আমি আমার মেয়ের সঙ্গে তোমার ছেলের বিয়ে দিলাম।"

বন্ধুর কথা শুনে ব্রাহ্মণ অবাক হয়ে বলল, "ভাই তা কেমন করে হবে? আগে আমার ছেলেকে দেখ তারপর বিয়ের কথা হবে।"

"না, না," বন্ধু বলল, "তার কোনও দরকার নেই। আমি তোমাকেও চিনি আর তোমার স্ত্রীকেও চিনি। কাজেই বিয়ের কথা পাকা করার পক্ষে এটাই যথেষ্ট। আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আমার মেয়ে তোমার সঙ্গেই যাবে। তাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেখানেই তোমার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর।"

ব্রাহ্মণী তো মেয়েটিকে দেখে মহা খুশি। যাই হোক, ছেলের জন্যে এতদিনে সত্যিই একটি সুন্দরী বউ পাওয়া গেছে। সে ছেলের বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিল। ওদিকে গাঁয়ের লোকে সব কথা শুনল, তারা সবাই মিলে এসে মেয়েটিকে এই পরামর্শ দিল যে, একটা সাগকে সে যেন কিছুতেই বিয়ে না করে। কিন্তু মেয়েটি কারুর কথাই শুনতে চাইল না।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

সে বলল, "আমার বাবা তার বন্ধু ব্রাহ্মণকে আমার সঙ্গে তাঁর ছেলের বিয়ে দেবেন বলে কথা দিয়েছেন। আমি মেয়ে হয়ে বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনও কোন কাজ করতে পারব না। ব্রাহ্মণের ছেলে সাপ হোক আর যাই হোক আমি তাকেই বিয়ে করবা"

পরদিন, ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণীর ছেলে সাগের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর মেয়েটি তার স্বামীর সঙ্গে একঘরেই থাকতে লাগল। স্বামীকে সে যেমন ভক্তি-শ্রদ্ধা করে, তেমনি সতী-লক্ষ্মী স্ত্রীর মতই স্বামীর জন্যে সব কিছু করে যা তার দরকার। সাগ কিন্তু তখনও বাক্সের মধ্যেই ঘুমোয়।

একদিন রাতে শুতে যাওয়ার সময় মেয়েটি তার ঘরে এক পরম রূপবান যুবককে দেখতে গেল। সে তাকে চিনত না। ফলে অচেনা লোককে নিজের শোবার ঘরে দেখে সে খুব ভয় পেল। সে তখনি সেখান থেকে দৌড়ে পালাতে চাইল।

কিন্তু যুবকটি তাকে বাধা দিয়ে বলল, “লক্ষ্মীটি, যেও না। ভয় পাচ্ছ কেন? আমিই তোমার স্বামী। আমাকে চিনতে পারলে না?"

তার কথায় মেয়েটির বিশ্বাস হল না। যুবকটি তখন তার কথা যে সত্যি তা প্রমাণ করার জন্যে আবার সাপের দেহে প্রবেশ করল। একটু পরে আবার সে সাপের খোলস ছেড়ে যুবক হয়ে বেরিয়ে এল।
যখন মেয়েটি এই দৃশ্য দেখল সে তখন আনন্দে অধীর হয়ে তার স্বামীর পায়ে লুটিয়ে পড়ল।

এইভাবে রোজ রাতে সবাই যখন শুয়ে পড়ত, তখন যুবকটি সাপের শরীর ছেড়ে বেরিয়ে আসত। তারপর সারারাত সে মেয়েটির কাছে থাকত। দিনের আলো ফুটলে সে মেয়েটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে আবার সাগের শরীরে গিয়ে ঢুকত। এইভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

একদিন রাতে ব্রাহ্মণ তার ছেলের ঘর থেকে কার যেন গলার আওয়াজ শুনতে গেল। ব্যাপারটা কি দেখার জন্য সে ঘরের একপাশে গিয়ে দাঁড়াল। ব্রাহ্মণ দেখল, তার ছেলে সাপের খোলস ছেড়ে সুন্দর এক যুবাপুরুষ হয়ে বেরিয়ে এল।

ব্রাহ্মণ তখনি ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল, তারপর সেই সাপের খোলসটা নিয়ে নিল এবং আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিল যা পুড়ে ছাইহয়ে গেল।

যুবক বলল, "আপনি আমাকে সত্যিই বাঁচালেন, পিতা। একজনের অভিশাপে আমি সাপ হয়েছিলাম। আমার অজ্ঞাতসারে কেউ যদি সাপের খোলসটা নষ্ট করে তবেই আবার আমি মনুষ্যজন্ম ফিরে পাব এই অভিশাপ ছিল। আপনি আজ আমাকে সেইশাপ থেকে মুক্ত করে দিলেন।"

যুবক আর সাপ হল না। ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী তাদের ছেলে বউ নিয়ে সুখে-শান্তিতে ঘরকন্না করতে লাগল।

#গপ্পের_ঠেক

এক কৃষকের ছিল চারটি জোয়ান ছেলে। কিন্তু হলে হবে কী, তারা মোটেই পরিশ্রম করতে চাইত না। ঘুরে বেড়িয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে দিন কা...
08/05/2025

এক কৃষকের ছিল চারটি জোয়ান ছেলে। কিন্তু হলে হবে কী, তারা মোটেই পরিশ্রম করতে চাইত না। ঘুরে বেড়িয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে দিন কাটাত।

অকর্মা ছেলেদের জন্য কৃষকের মনে মোটেই শান্তি ছিল না। সে অনেকবার ছেলেদের বোঝাবার চেষ্টা করেছে যে পরিশ্রম করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। কিন্তু ছেলেরা তার কথা কানেই তুলত না।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

কৃষকের বয়স হয়ে গিয়েছিল। কবে আছে কবে নেই এমনই অবস্থা যখন হল, একদিন সে চার ছেলেকে কাছে ডাকল। তাদের বলল, শোন বাছারা, আমার কিছু গুপ্তধন ছিল। সেসব আমি আমাদের ক্ষেতে মাটিতে পুঁতে রেখেছি। মাটি খুঁড়ে যা পাবে তোমরা ভাগ করে নিও।

কিছুদিন পরেই বৃদ্ধ কৃষক মারা গেল। তার মৃত্যুর পর ছেলেরা ঠিক করল ক্ষেতের মাটি খুঁড়ে গুপ্তধন তুলে আনবে। এই ভেবে তারা ক্ষেতের মাটি খুঁড়তে লাগল। কিন্তু গুপ্তধন আর পায় না। তবু তারা মাটি খোঁড়া বন্ধ করল না।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

এমনি করে গুপ্তধনের খোঁজে গোটা জমির মাটি তারা খুঁড়ল। কিন্তু কোথাও কোন গুপ্তধন না পেয়ে শেষে ভাবল, বুড়ো বাপ কী বলতে কি বলেছে, তাদের সব পরিশ্রমই মাটি হল।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

সেই বছর, সমস্ত জমি ভালভাবে খোঁড়া হওয়াতে ফসল খুব ভাল হল। ফসলে ফসলে গোলা উপচে পড়ল। তখন কৃষকের ছেলেদের গুপ্তধন না পাওয়ার দুঃখ ঘুচল। আর তারা হাতে কলমে বুঝতে পারল, পরিশ্রমের ফল বৃথা হয় না। তাদের বাবা গুপ্তধনের গল্প বলে তাদের একথাই বোঝাতে চেয়েছিল। তারপর থেকে কৃষকের ছেলেরা পরিশ্রমী ও কর্মঠ হয়ে উঠল।

নীতিকথা: ছলে বলে কৌশলে যে কোনও উপায়ে অপরের মঙ্গল করাই প্রকৃত হিতৈষীর কাজ।

#গপ্পের_ঠেক

এক মুচির বাড়িতে একবার একপাল ইঁদুর এ আস্তানা নিয়েছিল। রাতের অন্ধকারে তারা দরকারী জিনিসপত্র নষ্ট করত।ইঁদুরের উপদ্রবে অতিষ্...
07/05/2025

এক মুচির বাড়িতে একবার একপাল ইঁদুর এ আস্তানা নিয়েছিল। রাতের অন্ধকারে তারা দরকারী জিনিসপত্র নষ্ট করত।

ইঁদুরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে মুচি একটা বেজি পুষল। বেজিটার রং ছিল সাদা। দিনভর মুচি বেজিটাকে বারান্দায় বেঁধে রাখত, সন্ধ্যার পর তাকে ছেড়ে দিত। সে তখন বাড়ির আনাচে-কানাচে ঘুরে ইঁদুর মারত।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

এক রাতে ইঁদুর ধরতে গিয়ে বেজি কী করে মুচির কাল রং রাখার পাত্রে পড়ে গেল।

কাল রংপাত্রে চুবুনি খেয়ে সাদা রং-এর বেজি হয়ে গেল কাল। বেজি কিন্তু নিজের রং বদলের কথা কিছুই বুঝতে পারল না।

ইঁদুরের দল প্রতি রাতেই আড়াল থেকে নজর

রাখত বেজির ওপর। সুযোগ সুবিধা পেলে খাবার সন্ধান করত।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

সাদা বেজির গায়ের রং পাল্টে কাল হয়ে গেলেও তাকে চিনতে ইঁদুররা ভুল করল না। কারণটা বুঝতে না পারলেও তারা ভাবল, রং যখন পাল্টে গেছে, তখন বেজির স্বভাবও নিশ্চয় আগের মতো নেই। তাদের ধরার জন্য এখন আর তাড়া করে আসবে না।

এই ভেবে ইঁদুরেরা নিশ্চিন্ত হল। তারা নির্ভয়ে গর্ত থেকে বেরিয়ে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল।

বেজি ঘাপটি মেরে বসেছিল বারান্দার কোণে। সহসা চারপাশে ইঁদুরের চলাচল বেড়ে যেতে দেখে সে অবাক হল। কিন্তু হঠাৎ করে ইঁদুরদের অমন সাহসী হয়ে ওঠার কারণ কিছুই বুঝতে পারল না। চুপচাপ বসে থেকে বেজি ইঁদুরদের দৌড়ঝাঁপ দেখতে লাগল।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

ইঁদুরের দল তো একরকম তার গা ঘেঁষেই ছুটোছুটি জুড়ে দিল। যেন তাকে চোখেই পড়ছে না কারুর।

লোভনীয় খাবার নাগালের মধ্যে রেখে কতক্ষণ

আর চুপচাপ বসে থাকা যায়। একসময় বেজি তড়াক করে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুই থাবায় চেপে ধরল দুই নেংটিকে।

অন্য ইঁদুরগুলো তখন ভয় পেয়ে প্রাণ হাতে করে দৌড়ে পালিয়ে গর্তে ঢুকে পড়ল। বেজিকে উঁকি মেরে যে দেখবে সে সাহসও কারুর রইল না।

নীতিকথা: বাইরের আদব-কায়দা বদল হলেই কারও স্বভাব বদলায় না।

#গপ্পের_ঠেক

একবার এক বানর আর এক শেয়াল দেশভ্রমণে বেরুলো। চলতে চলতে তারা নানান রকম গল্প করতে লাগল।বানর বলল, যাই বল, আমরা বানররা তোমাদে...
06/05/2025

একবার এক বানর আর এক শেয়াল দেশভ্রমণে বেরুলো। চলতে চলতে তারা নানান রকম গল্প করতে লাগল।

বানর বলল, যাই বল, আমরা বানররা তোমাদের চাইতে অনেক ভাগ্যবান। আমরা তোমাদের মতো মাটিতেও চলতে পারি আবার গাছে গাছে চলতেও আমাদের জুড়ি নেই। তোমরা তো গাছে ওঠার বিদ্যেটা শিখতে পারতে।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

শেয়াল বলল, দেখো ভাই, বিধাতা যাকে যে বিদ্যে দিয়েছেন তা নিয়েই সুখী থাকা ভাল। গাছে উঠতে পারি না বলে আমরা কিছু খারাপ নেই। তোমাদেরও এ নিয়ে জাঁক করার কিছু নেই।

বানর বলল, আসলে কি জান, আমরা হলাম গিয়ে মানুষদের পূর্বপুরুষ। মানুষরা তো সব কিছু আমাদের কাছ থেকেই শিখেছে। সত্যি কথা বলতে, বনের পশুদের সঙ্গে থাকা আমাদের মানায় না।

শেয়াল বলল, দু-পেয়ে মানুষদের কথা আর বলো না। আমাদের তো মানুষের গাঁয়ে যাতায়াত কিছু কম নেই। সবই দেখতে শুনতে পাই। তাদের মধ্যে দিনরাত কেবল ঝগড়া বিবাদ, খিটমিটি আর দলাদলি। কেউ কারো ভাল দেখতে পারে না। ছ্যাঃ ছ্যাঃ, আমরা পশুরা বনে অনেক ভাল আছি, যে যার মতো। আমার কথাই ধরো না কেন-আমাদের হল গিয়ে পণ্ডিতের বংশ। অন্যদের কথা কী বলব, পশুরাজ সিংহ পর্যন্ত আমাকে খাতির করে। দরকারে অদরকারে বুদ্ধিপরামর্শ চায়। পণ্ডিত বললে এক ডাকে বনের পশুরা আমাকে চিনতে পারে। কিন্তু ভায়া তোমাদের মধ্যে পণ্ডিত বলে তো কারুর নাম শুনিনি।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

বানর বলল, আমাদের সঙ্গে তোমাদের তুলনা টেনো না ভাই। তোমরা হলে গিয়ে চার-পেয়ে জীব-পশু। আমরা হলাম দু-পেয়ে জীব। আমাদের চলন বলন সবই আলাদা। আমরা পণ্ডিত সকলেই, সকলেই বুদ্ধিমান। কাউকে কারুর কাছে বুদ্ধি ধার চাইতে যেতে হয় না।

এমনি করে কথার কথায় শেয়াল আর বানরের মধ্যে বেশ তর্ক জমে উঠল। কেউ কারও কাছে ছোট হতে চায় না।

পথের পাশেই ছিল বাঁধানো কিছু কবর। চলতে

চলতে দুজনে সেখানে এসে পৌঁছল। কবর দেখেই বানর আচমকা চিৎকার করে কেঁদে উঠল।

শেয়াল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কী হল ভায়া, হঠাৎ কাঁদতে শুরু করলে কেন?

চোখের জল মুছতে মুছতে বানর কবরের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলল, 'উ-হু-হু, দুঃখে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে ভাই। এই কবরখানার মাটির তলায় যারা শুয়ে আছে, তারা সকলেই আমার পূর্বপুরুষদের ভৃত্য ছিল। বড় ভাল ছিল তারা। তাদের কথা ভেবে আমি চোখের জল ধরে রাখতে পারছি না।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

শুনে বুদ্ধিমান শেয়াল বুঝতে পারল, তাকে টেক্কা দেবার জন্য বানরের এ এক নতুন চাল। সে মুচকি হেসে বলল, ওহো চমৎকার! ভায়া, যত পার মিথ্যা কথা বলে নাও। তোমার কথার প্রতিবাদ করবার জন্য কবরের তলা থেকে কেউ উঠে আসবে না।

নীতিকথা: ছল চাতুরি ধরার মতো কেউ যখন থাকে না প্রবঞ্চকরা তখন অহঙ্কার করার সুযোগ পায়।

#গপ্পের_ঠেক

এক বৃদ্ধের ছিল চার ছেলে। ছেলেদের নিয়ে বৃদ্ধের মনে শান্তি ছিল না। কারণ তারা প্রায়ই নানা কারণে নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি করত।...
04/05/2025

এক বৃদ্ধের ছিল চার ছেলে। ছেলেদের নিয়ে বৃদ্ধের মনে শান্তি ছিল না। কারণ তারা প্রায়ই নানা কারণে নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি করত।

তারা যখন ঝগড়া-বিবাদ করত, তখন পাড়া-পড়শীরা মজা পেত আর হাসত।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

এদিকে বৃদ্ধের দিনও ফুরিয়ে আসছিল। তার মৃত্যুর পরে ছেলেরা যে মিলেমিশে থাকতে পারবে না তা সে ভালই বুঝতে পারছিল। তাই চিন্তায় চিন্তায় তার দিন কাটছিল।

শেষে ছেলেদের মঙ্গলের কথা ভেবে বৃদ্ধ একটা বুদ্ধি ঠিক করল। একদিন সে সব ছেলেকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠাল। সকলে উপস্থিত হলে সে এক ছেলেকে কিছু কঞ্চি আনতে বলল।

ছেলেটি কঞ্চি নিয়ে এলে সে সেগুলো দিয়ে তাকে একটা আঁটি বাঁধতে বলল।

আঁটি বাঁধা হলে বৃদ্ধ ছেলেদের বলল, তোমরা চেষ্টা করে দেখো তো আঁটিটা ভাঙ্গতে পার কিনা।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

ছেলেরা একে একে সকলেই আঁটিটা ভাঙ্গবার চেষ্টা করল। কিন্তু এক আঁটি কঞ্চি ভাঙ্গা কারোর পক্ষেই সম্ভব হল না।

বৃদ্ধ তখন তার বড় ছেলেকে বলল, দেখি তুমি এবারে আঁটিটা খুলে ফেল। আর একটি একটি করে কঞ্চি বার করে ভেঙ্গে ফেল।

বাপের কথামতো বড় ছেলেটি আঁটিটা খুলে ফেলল। তারপর হাতের চাপ দিয়ে দেখতে দেখতে পটাপট সব কটি কঞ্চিই ভেঙ্গে ফেলল।

ছেলেরা বাবার উদ্দেশ্য কিছুই বুঝতে পারছিল না। কেবল তার আদেশ মতো কাজ করে গেছে। এবার বড় ছেলেটি জানতে চাইল, বাবা, কঞ্চিগুলো অমন করে ভাঙ্গালে কেন?

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

বৃদ্ধ হেসে বলল, আমি কঞ্চিগুলো দিয়ে তোমাদের বোঝাতে চেয়েছি, তোমরা প্রত্যেক ভাই মিলেমিশে থাকবে। নিজেদের মধ্যে একতা রেখে চলতে না পারলে দুঃখের শেষ থাকবে না। তখন তোমাদের অবস্থা হবে খোলা আঁটির কঞ্চির মতো। বিপদ আপদে নাজেহাল হবে। তোমাদের দুরবস্থা দেখে শত্রুরা আড়ালে হাসবে।

দেখো, একসঙ্গে আঁটিবাঁধা কঞ্চিগুলোকে চেষ্টা করেও তোমরা ভাঙ্গতে পারলে না। তোমরা যদি এমনি মিলেমিশে থাক, তাহলে কেউ তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। শত্রুরা ভয়ে দূরে সরে থাকবে। এখন থেকে আমার এই কথাটা মনে রেখো।

বৃদ্ধর ছেলেরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সেই দিনই শপথ করল, বাবার উপদেশ মতোই তারা চলবে।

নীতিকথা: একতাই মহাবল।

#গপ্পের_ঠেক

মানুষের গ্রামের কাছে থাকত এক মাছরাঙা। একবার ডিম পাড়ার সময় হলে সে চলে এল সমুদ্রের নিরিবিলি এলাকায়।মানুষরা দেখতে পেলে ছানা...
03/05/2025

মানুষের গ্রামের কাছে থাকত এক মাছরাঙা। একবার ডিম পাড়ার সময় হলে সে চলে এল সমুদ্রের নিরিবিলি এলাকায়।

মানুষরা দেখতে পেলে ছানাদের ধরে নিয়ে যায়। সেই ভয়ে সে সমুদ্রের নির্জন পাড়ে দেখেশুনে একটা গাছ বেছে নিল।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

তারপর খড়কুটো দিয়ে বাসা বানাল জলের ওপরে ঝুঁকে থাকা একটা ডালে।

দিন কয়েক পরেই মাছরাঙা ডিম পাড়ল। সে এবারে নিশ্চিন্ত, মানুষরা আর তার ক্ষতি করতে পারবে না। মনের সুখে সে ডিমে তা দিতে লাগল।

একদিন ডিম ফুটে বাচ্চা বেরলো। বাচ্চাদের কিচিরমিচির ডাকে মাছরাঙার বুক জুড়িয়ে গেল।

মনের আনন্দে এবার সে বাচ্চাদের খাইয়ে দাইয়ে বড় করতে লাগল।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

একদিন মাছরাঙা খাবারের খোঁজে বাসা থেকে বেরিয়েছে। কিছু পরেই সমুদ্রে উঠল জোয়ার। সমুদ্রের জল ফুলে ফেঁপে গর্জন তুলে তীরে আছড়ে পড়তে লাগল। বিপুল ঢেউ নিচু ডালের মাছরাঙার বাসাটিও ভাসিয়ে নিয়ে গেল। কচি বাচ্চাগুলো জলে ডুবে মারা পড়ল।

মাছরাঙা ফিরে এসে তার বাসার অবস্থা দেখে হাহাকার করে উঠল। বাচ্চাদের শোকে তার বুক ফেটে যেতে লাগল।

সে তখন বিলাপ করে বলতে লাগল, হায় হায়, মানুষের ভয়ে সমুদ্রকে বিশ্বাস করে তার তীরে বাসা বেঁধেছিলাম। সমুদ্র যে মানুষের চেয়েও অত্যাচারী তা জানলে আমার এমন সর্বনাশ হত না।

নীতিবাক্য: অসতর্ক মানুষ নিজের বোকামির ভুলের দায় অন্যের ওপরে চাপিয়ে স্বস্তি পেতে চায়।

#গপ্পের_ঠেক

একবার এক বাঘের গলায় হাড় ফুটে গিয়েছিল। অনেক চেষ্টা করেও সে নিজে হাড়টা গলা থেকে বার করতে পারল না।যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ...
02/05/2025

একবার এক বাঘের গলায় হাড় ফুটে গিয়েছিল। অনেক চেষ্টা করেও সে নিজে হাড়টা গলা থেকে বার করতে পারল না।

যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বাঘ চারদিকে ছুটোছুটি করতে লাগল। যার সঙ্গে দেখা হয় তাকেই অনুনয় করে বলে, ভাই আমার গলা থেকে হাড়টা বার করে দাও। তোমাকে আমি অনেক পুরস্কার দেব।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

বাঘ হিংস্র জন্তু। বনের কোন পশুই তার গলা থেকে হাড় বার করতে সাহস পেল না।

শেষ পর্যন্ত বাঘের দেখা হল এক বকের সঙ্গে।

তাকেও সে একই অনুরোধ জানাল।

বক ছিল খুব লোভী। বাঘের পুরস্কারের লোভ সে সামলাতে পারল না। সে বলল, তোমার গলার কাঁটা আমি সহজেই বার করে দিতে পারব। কিন্তু তুমি কথার খেলাপ করবে না তো?

বাঘ যন্ত্রণায় মুখ কুঁচকে বলল, আমাকে। তুমি কষ্টের হাত থেকে বাঁচাবে, আর আমি আমার কথা রাখব না-তুমি একী বলছো ভাই? আমি সারা জীবন তোমার উপকারের কথা মনে রাখব। পুরস্কার দিয়েও খুশি করব।

বাঘের কথা বিশ্বাস করে বক আর দেরি করল না। তার কাজ শুরু করে দিল।

এক গাছতলায় বাঘ বসল মুখ হাঁ করে। বক তার লম্বা ঠোঁট বাঘের গলায় ঢুকিয়ে সাবধানে হাড়টা বার করে আনল। বাঘ আরাম হয়ে আনন্দে মুখ চাটতে লাগল।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

বক বলল, ভাই, তোমার গলা থেকে তো হাড় বার করে দিলাম, এবারে আমার পুরস্কারটা দাও।

প্রথমে বাঘ যেন কথাটা শুনতেই পেল না।

অন্যদিকে মুখ করে বসে রইল।

বক দু পা তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, কী হল ভাই, আমার পুরস্কারটা?

এবারে বাঘ মুখ ঘুরিয়ে তাকাল। চোখে কটমট দৃষ্টি। প্রচণ্ড রাগে দাঁত কড়মড় করে সে বলে উঠল, মূর্খ পাখি, তোর তো সাহস কম নয়। তুই বাঘের মুখে ঠোঁট ঢুকিয়েছিস, আমি তবু তোর ঠোঁটসুদ্ধ মাথাটা কড়মড় করে চিবিয়ে খাইনি। এর বেশি পুরস্কার চাইছিস কোন সাহসে? যদি বাঁচতে চাস, এখনই এখান থেকে পালা।

বিপদ বুঝে বক আর কথা বাড়াল না। তৎক্ষণাৎ উড়ে পালাল।

নীতিকথা: দুষ্ট লোক উপকারীর উপকারের কথা মনে রাখে না।

#গপ্পের_ঠেক

গ্রীষ্মকালের এক দুপুর। প্রচণ্ড রোদের তাতে ঝলসে যাচ্ছে চারদিক। শীতল ছায়ায় বসে শ্রান্ত ক্লান্ত কয়েকজন পথিক বিশ্রাম করছিল। ...
01/05/2025

গ্রীষ্মকালের এক দুপুর। প্রচণ্ড রোদের তাতে ঝলসে যাচ্ছে চারদিক। শীতল ছায়ায় বসে শ্রান্ত ক্লান্ত কয়েকজন পথিক বিশ্রাম করছিল। নিজেদের মধ্যে নানান গল্প করতে করতে কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের ক্লান্তি দূর হল।

একজন আরামের নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, আঃ! এতক্ষণে শরীর জুড়ল। সূর্য যেন আকাশ থেকে আগুন ঢালছে।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

অন্য এক পথিক বটগাছের ঝাঁকরা মাথার দিকে তাকিয়ে বসেছিল। সে এবারে বলল, দেখো, এমন বিশাল একটা গাছ, কিন্তু না হয় ভাল ফুল, না হয় খাবার উপযুক্ত ফল। এদিকে জায়গা জুড়ে আছে কতটা!

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

পথিকের কথা শুনে বটগাছ ভাবতে লাগল, হায়রে মানুষ কী অকৃতজ্ঞ! আমার ছায়ায় বসে, বিশ্রাম করে ক্লান্তি দূর করছে। আবার আমারই নিন্দা করে বলছে আমি মানুষের কোন উপকারে লাগি না।

এক মোরগ গাছের ডালে বসে মনের সুখে গান করছিল। তার গলার স্বর শুনে এক শেয়ালের খুব লোভ হল। মোরগের মাংস খুবই সুস্বাদু। তাই সে ...
30/04/2025

এক মোরগ গাছের ডালে বসে মনের সুখে গান করছিল। তার গলার স্বর শুনে এক শেয়ালের খুব লোভ হল। মোরগের মাংস খুবই সুস্বাদু। তাই সে মনে মনে একটা মতলব এঁটে সেই গাছতলায় হাজির হল। মুখ তুলে মোরগের দিকে তাকিয়ে মোলায়েম গলায় বলল, সুপ্রভাত মোরগভায়া, সুখবরটা শুনতে পেয়েছ তো?

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

মোরগ বলল, কিসের সুখবর ভাই?

অবাক হবার ভান করে শেয়াল বলল, সেকী খবরটা তুমি এখনও পাওনি! বনের পশুরা সভা করে শপথ নিয়েছে তারা আর কাউকে হিংসা করবে না। নেকড়ে আর ভেড়ার ছানা খাবে না। আমরাও ছাগল ছানা ছোঁব না। কী আনন্দের কথা বলো তো! এখন পশুপাখি সকলেই সকলের বন্ধু।

শুনে মোরগ কি চিন্তা করল। তারপর বলল, এ তো খুব ভাল সংবাদ শেয়াল ভাই। খুব ভাল সংবাদ।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

শেয়াল বলল, এখন থেকে পাখিরাও হল পশুদের চিরকালের বন্ধু। এমন আনন্দের দিনে এসো দুজনে কোলাকুলি করি।

মোরগ বুঝতে পারল শেয়ালের মতলব ভাল নয়। ।। সে তার কথার কোন জবাব না দিয়ে কেবল ঘাড় উঁচু করে বারবার গ্রামের দিকে তাকাতে লাগল।

শেয়াল বলল, ওভাবে ঘাড় উঁচিয়ে কী দেখছো ভায়া?

মোরগ বলল, না এমন কিছু না। গ্রামের একদল শিকারী কুকুর এদিকেই ছুটে আসছে, তাই দেখছি। ওরাও নিশ্চয় সুখবরটা দেবার জন্যই তোমাকে খুঁজতে আসছে।

এ কথা শুনে শেয়াল আর সেখানে দাঁড়াতে ভরসা পেল না। সে তাড়াতাড়ি বলল, আজ উঠি ভাই, একটা দরকারি কাজের কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল। আর একদিন এসে কথা বলব।

মোরগ বলে উঠল, ও কী শেয়াল ভায়া, কুকুরদের নাম শুনে ভয় পেলে মনে হচ্ছে! ওরা তোমাকে কিছুটি বলবে না। ওরাও নিশ্চয় তোমার মতো হিংসা ছেড়ে দিয়েছে।

শেয়াল বলল, না ভাই কোঁকর-কোঁ, কুকুরদের বিশ্বাস নেই। তাছাড়া পশুদের এই প্রতিজ্ঞার কথা কুকুররা হয়তো এখনও জানতেই পায়নি।

বলে শেয়াল আর সেখানে দাঁড়াল না। দৌড়ে ঝোপের ভেতরে ঢুকে পড়ল।

শেয়াল পালিয়ে যেতে মোরগ আবার মনের সুখে গান ধরল, কোঁ-কর-কোঁ-

এক সময়ে একটি নদীর ধারে এক গোলাপজাম গাছে একটা বাঁদর থাকত। বাঁদরটা একলা থাকত; কিন্তু সে সুখেই ছিল। গোলাপজাম গাছটায় সারা ...
29/04/2025

এক সময়ে একটি নদীর ধারে এক গোলাপজাম গাছে একটা বাঁদর থাকত। বাঁদরটা একলা থাকত; কিন্তু সে সুখেই ছিল। গোলাপজাম গাছটায় সারা বছর ধরে প্রচুর পরিমাণে গোলাপজাম ফলত। আর গোলাপজামের মত প্রিয় ফল বাঁদরদের আর কিছুই নেই ।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

একদিন একটা কুমীর নদী থেকে বেরিয়ে গোলাপজাম গাছের কাছে এল। বাঁদর তাকে দেখে গাছের উপর থেকে চেঁচিয়ে বলল, “তুমি কে হে?” কুমীরটা উপরের দিকে তাকাল। গাছে বাঁদরটাকে দেখে উত্তর দিল, “আমি কুমীর | অনেক দূর থেকে আসছি। আমি খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছি।”

“খাবার খুঁজছ তুমি? এই গাছে অনেক গোলাপজাম আছে | কয়েকটা খেয়ে দেখ। যদি তোমার ভাল লাগে তবে যত তুমি চাইবে আমি ততই দিতে পারব।” এই বলে বাঁদর কয়েকটা গোলাপজাম ছিঁড়ে নীচে ফেলে দিল।

কুমীর সেগুলো খেয়ে নিয়ে বলল, “আমার খুব ভাল লেগেছে | আমি যত ফল খেয়েছি তার ভিতর এই ফলই সবচাইতে ভাল।”

বাঁদরটা আরও কতকগুলি গোলাপজাম নীচে ছুঁড়ে দিতেই কুমীরটা সেগুলো সব খেয়ে নিল।

খেয়ে সে জিজ্ঞাসা করল, “যদি আমি আবার আসি, তুমি কি তাহলে আমায় আরও ফল দেবে?”
বাঁদর বলল, “নিশ্চয়ই | তুমি সব সময়েই আসতে পার। তুমি আমার অতিথি; এখানে

এসে তোমার যত খুশি গোলাপজাম খেতে পার।” কুমীর আবার আসবে বলে, বাদরের কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

পরের দিন কুমীর আবার এল।

বাঁদর কুমীরকে দেখে খুশি হল এবং তাকে অনেক গোলাপজাম খেতে দিল। এমনি করে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেল।

কুমীর রোজই বাঁদরের সঙ্গে দেখা করতে আসত । অনেকক্ষণ তারা একসঙ্গে কাটাত | তারা যা জানে সেসব প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলত। একদিন তারা দুজনেই নিজেদের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সম্বন্ধে কথা বলছিল।

বাঁদর বলল, সে সবসময়ই একা। তার কেউ নেই। তার ভাগ্য ভাল যে সে কুমীরের মত একটি বন্ধু পেয়েছে।

কুমীর বলল, সে একা নয়। সে আর তার বউ দুজনে অনেক দূরে নদীর অন্য পারে থাকে।

“তোমার বউ?" বাঁদর বলল, “তোমার বউ আছে সেকথা আমায় আগে বলনি কেন? তাহলে তো রোজই আমি তোমার বউয়ের জন্যও অনেক গোলাপজাম তোমার সাথে দিয়ে দিতাম

কুমীর বলল, সে খুব খুশি হয়ে তার বউয়ের জন্য গোলাপজাম নিয়ে যাবে যদি বাদর তার জন্য গোলাপজাম দেয়। বাঁদর কুমীরকে তার বউকে দেবার জন্যে সেদিন অনেকগুলো গোলাপজাম ছিঁড়ে দিয়ে দিল।

বাঁদরের উপহার নিয়ে কুমীর বাড়ি ফিরে গেল। তার বউয়ের গোলাপজাম খুব ভাল লাগল। সে তখন আরও খেতে চাইল। কুমীর তার বউকে কথা দিল যে সে তার জন্য এখন থেকে রোজই গোলাপজাম নিয়ে আসবে।

বাঁদর ও কুমীরের বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে আরও গভীর হতে লাগল। এইভাবে তারা আরও বেশি সময় একসঙ্গে কাটাতে লাগল। সন্ধ্যাবেলায় যখন কুমীরের বাড়ি ফেরার সময় হত, তখন বাঁদর রোজই কুমীরকে তার বউয়ের জন্য অনেক গোলাপজাম উপহার দিত।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

কুমীর-বউ গোলাপজাম খেতে ভালবাসত বটে, কিন্তু কুমীরের রোজ দেরি করে বাড়ি ফেরাটা তার মোটেই ভাল লাগত না।

সে এটা বন্ধ করতে ইচ্ছুক হল। একদিন সে কুমীরকে বলল, “দেখো, আমার মনে হয় তুমি আমার কাছে মিথ্যা কথা বলছ। তুমি কুমীর আর সে বাঁদর, কি করে একটা বাঁদরের সঙ্গে এতটা সময় কাটাও আমাকে তা বলতে পার? আমরা তো বাঁদর পেলেই মেরে তাকে খেয়ে ফেলি।”

“আমি তোমায় সত্যি কথাই বলছি। এই বাঁদরটা আমার বিশেষ বন্ধু। সে আমায় পছন্দ করে আর আমিও তাকে পছন্দ করি। সে গোলাপজাম গাছে থাকে। আমি রোজ তার সঙ্গে দেখা করতে যাই। সে রোজ আমাকে গোলাপজাম খেতে দেয় আর তোমার জন্যও গোলাপজাম উপহার পাঠায়।"

'বাঁদরটা যদি মিষ্টি গোলাপজাম ছাড়া অন্য কিছু না খায়' কুমীর-বউ ভাবল, 'তবে তো তার মাংস খেতে খুবই মিষ্টি হবে। ওকে কোনমতে একবার এখানে আনতে পারলে ওর মাংস রাতের উপাদেয় খাবার হবে। এই ভেবে সে স্বামীকে বলল, “সত্যি যদি তুমি তার বন্ধু হও তাহলে একদিন তাকে আমাদের বাড়িতে আসবার জন্য নিমন্ত্রণ করছ না কেন? তাকে দেখবার জন্য আমারও খুব আগ্রহ।”

“না, না, আমি তাকে কোনোমতেই নিমন্ত্রণ করতে পারি না।” কুমীর তার বউকে বলল। “কারণ বাঁদর ডাঙায় থাকে। জলে চলাফেরা করতে জানে না তাই সে হয়ত ডুবে যেতে পারে।"

কুমীর-বউ বলল, “তুমি তো ওর বন্ধু। তুমি শুধু ওকে নিমন্ত্রণ কর। বাঁদরেরা খুব চালাক হয়। ও এখানে আসবার ঠিক একটা উপায় বার করবে।"

বাঁদরকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করবার ইচ্ছা কুমীরের একেবারেই ছিল না। এইভাবে কয়েকদিন কেটে গেল।

এদিকে কুমীর-বউয়ের বাঁদরের মাংস খাবার লোভ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল | অনেক ভেবে সে এমন একটা উপায় বার করল যাতে অবশ্যই বাঁদরটা ওদের বাড়িতে চলে আসে।

একদিন কুমীর-বউ খুব অসুস্থ হবার ভান করল। সে খুব কাঁদতে লাগল যেন তার শরীরে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। বউকে অসুস্থ দেখে কুমীরের মনে ভীষণ দুঃখ হল। সে বউয়ের পাশে গিয়ে বসে তাকে জিজ্ঞাসা করল, “কি করলে তোমার কষ্ট সারবে বলতে পার?”

কুমীর-বউ বলল, “আমি খুবই অসুস্থ। আমি ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেছি, সে বলেছে, একমাত্র বাঁদরের হৃৎপিন্ড খেলেই আমি ভাল হয়ে যাব।"

"বাঁদরের হৃৎপিণ্ড" কুমীর জিজ্ঞাসা করল।

কুমীর-বউ উত্তরে বলল, “হ্যাঁ, বাঁদরের হৃৎপিণ্ড। তুমি যদি চাও যে আমি আবার আগের মত ভাল হয়ে উঠি তবে তোমার বন্ধুর হৃৎপিণ্ডটা আমাকে এনে দাও।”

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

কুমীর বলল, “তা কি করে সম্ভব? সে আমার একমাত্র বন্ধু। তার কোন ক্ষতি করার কথা আমি চিন্তাও করতে পারি না।”

একথা শুনে কুমীর-বউ বলল, “তাহলে তুমি গিয়ে তোমার বন্ধুর সঙ্গেই থাক। তুমি আমাকে ভালবাস না, শুধু বন্ধুকেই ভালবাস। তুমি চাও যে আমি মরে যাই, তা হলেই তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে সবসময় বন্ধুর কাছে থাকতে পার।”

কুমীরের খুব দুঃখ হল। কারণ সে যেমন বন্ধুর ক্ষতি করার কথা চিন্তা করতে পারে না, তেমনি বউ মরে যাবে একথাও সে ভাবতে পারে না।

“আমার বন্ধুকে কি করে মারব?” কুমীর কাঁদতে কাঁদতে একথা বলতে লাগল । কুমীর-বউ জিজ্ঞাসা করল, "কেন তুমি বাঁদর মারতে পারবে না? কুমীরেরা তো বাঁদর মেরেই থাকে।" একথায় কুমীর আরও কাঁদতে লাগল। তার কি করা উচিত সে তা ভেবে ঠিক করতে পারছিল না।

কুমীর-বউ বলল, “তুমি আমাকে ভালবাস না। স্বামীর ভালবাসা ছাড়া বউয়ের বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না। তাই আমি আমার জীবন শেষ করে দেব বলে ঠিক করেছি। আজ তুমি বন্ধুর ওখান থেকে ফিরে এসে আমাকে মৃত দেখতে পাবে।”

কুমীর চিন্তা করতে শুরু করল। স্বামীর প্রথম কর্তব্য হল তার বউকে রক্ষা করা। সে বউয়ের জীবন বাঁচাবে স্থির করল। তাই সে বউয়ের জন্য হৃদপিণ্ড আনতে বাঁদরের কাছে গেল।

এদিকে কুমীরের আসতে দেরি হচ্ছে দেখে বদির চিন্তা করছিল। কুমীরকে দেখতে পেয়ে সে জিজ্ঞাসা করল, "বন্ধু, তোমার এত দেরি হল কেন? রাস্তায় কোনো বিপদ ঘটেনি তো?"

কুমীর বলল, “না কোনো বিপদ ঘটেনি। তবে আমার সঙ্গে আমার বউয়ের খুব ঝগড়া হয়েছে। বউ বলেছে, আমি মোটেই তোমার বন্ধু নই। তুমি আমাদের জন্য এত করেছ কিন্তু আমি একদিনও তোমাকে আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করিনি। আজ তোমাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য ও আমাকে অনেক করে বলেছে । সে তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায় । "

বাঁদর উত্তর দিল, “তোমার বউ যে আমায় তোমাদের বাড়ি যেতে বলেছে এতে আমি খুব খুশি। আমারও তোমার বউয়ের সঙ্গে দেখা করার খুব ইচ্ছা। কিন্তু কি ক'রে যাই বল? আমি সাঁতার জানি না তাই যাবার চেষ্টা করলে ডুবে যাব।”

কুমীর বলল, "আমরা নদীর তীরে থাকি। আমি সহজেই তোমায় ওখানে নিয়ে যেতে পারব। তুমি আমার পিঠে বসবে আর আমি সাঁতরে নদী পার হয়ে যাব।” বাঁদর ভাবল এটা একটা ভাল উপায়। সে খুশি হল এই ভেবে যে, কুমীরের মত এত ভাল বন্ধু পেয়েছে ।

বাঁদর এবার কুমীরের বাড়ি যাবার জন্য তার পিঠে চড়ে বসল, আর কুমীর সাঁতরে নদী পার হতে লাগল। যখন তারা মাঝনদীতে পৌঁছাল তখন কুমীর জলের নীচে যেতে লাগল। বাঁদর ভয় পেয়ে গেল।

গপ্পের ঠেক - Gopper Thek

সে চেঁচামেচি শুরু করে দিয়ে বলল, “আরে তুমি এ কি করছ? তুমি আরও জলের নীচে গেলে আমি তো ডুবে যাব।”

“আমি আরও নীচে যাবো কারণ আমি তোমাকে মেরে ফেলতে চাই।"

বাঁদর কুমীরের কথা শুনে খুব অবাক হয়ে বলল, “আমাকে মেরে ফেলবে কেন? তুমি আমাকে মেরে ফেলতে চাও কেন?”

কুমীর বলল, "আমার বউয়ের অসুখ। ডাক্তার বলেছে, বাঁদরের হৃৎপিণ্ড খেলে ও ভাল হয়ে যাবে। বাঁদরদের মধ্যে আমি তোমাকেই কেবল চিনি। কাজেই তোমাকে মেরে ফেলতে হবে এবং তোমার হৃৎপিণ্ড আমার বউকে খেতে দেব।”

কুমীরের একথা শুনে বাঁদর খুবই আঘাত পেল। সে বুঝতে পারল তার প্রাণ বাঁচান মুশকিল। সে বাঁচবার একটা উপায় বার করতে চেষ্টা করল।

কিছুক্ষণের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করে কুমীরকে সে বলল, “বন্ধু তুমি আগে আমাকে একথা বলনি কেন? তোমার বউয়ের প্রাণ বাঁচাবার জন্য আমি খুব আনন্দের সঙ্গে আমার হৃৎপিন্ড তাকে দিতাম। কিন্তু এখন তো দিতে পারব না, কারণ গোলাপজাম গাছের একটা গর্তের মধ্যে আমি আমার হৃৎপিণ্ডটা সাবধানে রেখে দিই। আজ সঙ্গে আনতে ভুলে গেছি। যদি রওনা হবার আগে বলতে যে তুমি আমার হৃৎপিণ্ড চাও, তাহলে তখনি তোমায় দিয়ে দিতাম।”

কুমীর বলল, “তাহলে তো আমাদের আবার ফিরে গিয়ে তোমার হৃৎপিণ্ড নিয়ে আসতে হবে।”

"হ্যাঁ, তোমার বউয়ের অসুখ বাড়বার আগেই চল, হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসি।”

বাঁদরের কথা শুনে কুমীর পিছনে ফিরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাঁতরে গোলাপজান গাছের নীচে ফিরে গেল। গোলাপজাম গাছের কাছে পৌঁছেই বাঁদর একলাফে কুমীরের পিঠ থেকে নেমে তাড়াতাড়ি গোলাপজাম গাছে উঠে গেল, আর একটা উঁচু ডালে উঠে গিয়ে নিরাপদ দূরত্বে বসল।

তারপর নীচে কুমীরের দিকে তাকিয়ে বলল, “এখন তুমি তোমার নিঠুর বউয়ের কাছে ফিরে যেতে পার। তাকে গিয়ে বোলো যে তার স্বামীর মত মস্ত বোকা দুনিয়ায় আর নেই।”

#গপ্পের_ঠেক

Address

Kolkata

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when গপ্পের ঠেক - Gopper Thek posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share