08/06/2025
অচেনা পথ আয়োজিত অনলাইন কম্পিটিশন প্রয়াস (২০২৫)
গল্পের নাম: "মানুষ বাঁচে মানুষের জন্য", মানুষ মরে মানুষের জন্য।
পেজ: পূর্ণতা।
কলমে আমি: ঋতব্রত ঘোষ।
বয়স -১৯
বিঙাগ - খ
বিষয় - লেখালেখি
“মানুষ বাঁচে মানুষের জন্য, মানুষ মরে মানুষের জন্য।”
বর্ষার শেষ দিক। ঢাকার এক উপশহরে ছোট্ট একটি হাসপাতাল—নাম মানবসেবা ক্লিনিক। বড় কিছু না, মাত্র দশটা শয্যা, একজন ডাক্তার, দুজন নার্স। এই হাসপাতালের সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয়—এখানে চিকিৎসা প্রায় বিনামূল্যে। চালান এক বৃদ্ধ মানুষ—নাম রফিক চাচা।
বয়স সত্তর পেরিয়েছে। মাথায় সাদা টুপি, মুখে সদা হাসি। নিজের ঘরবাড়ি বেচে দিয়ে এই ছোট হাসপাতাল গড়েছেন। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলেন,
“মানুষ বাঁচে মানুষের জন্য। আমি যদি কারও একটু উপকার করতে পারি, তবেই তো আমি মানুষ।”
একদিন...
এক সন্ধ্যায় এক কিশোর ছেলেকে নিয়ে আসা হলো—নাম তুহিন। রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্টে আহত। সঙ্গে কেউ নেই। কোনো কাগজপত্র নেই। আর্থিক অবস্থাও দুর্বল। অন্যান্য হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছে।
রফিক চাচা চুপচাপ ছেলেটাকে ভর্তি করালেন, নিজের টাকায় ওষুধ আনালেন। ডাক্তার কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন,
“চাচা, আপনি তো জানেন না এ কে! যদি চোর-ডাকাত হয়?”
চাচা হেসে বললেন,
“হোক না! মানুষ তো! মানুষ মরে মানুষের জন্য—এই ছেলেটা যদি আমার কারণে বেঁচে যায়, তার চেয়ে বড় কিছু আর হয় না।”
তুহিনের জেগে ওঠে,
তিন দিন পর ছেলেটার জ্ঞান ফিরল। সে চোখ খুলেই দেখল একজন বৃদ্ধ তাকে পাখা করছে। চোখে জল চলে এলো। ফিসফিস করে বলল,
“আমি... আমি চুরি করতাম... ওই দিন পালাতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। আপনারা কেন আমাকে বাঁচালেন?”
রফিক চাচা বললেন,
“কারণ তুমি মানুষ, আর মানুষ ভুল করেই। কিন্তু ঠিক পথে ফেরানোই তো আসল কাজ।”
তুহিন কাঁদতে কাঁদতে প্রতিজ্ঞা করল—সে আর কখনো অপরাধ করবে না।
কয়েক বছর পর...
রফিক চাচা মারা গেলেন এক শীতের সকালে, নিঃশব্দে। শেষকৃত্যে শহরের সব ধরণের মানুষ এসেছিল—রিকশাচালক, ভিক্ষুক, ব্যবসায়ী, ছাত্র, এমনকি তুহিনও।
তুহিন এখন একজন কমিউনিটি চিকিৎসক, রফিক চাচার স্বপ্নের হাসপাতাল আগলে রেখেছে। দেয়ালে বড় করে ঝোলানো রফিক চাচার ছবি, নিচে লেখা:
“মানুষ বাঁচে মানুষের জন্য, মানুষ মরে মানুষের জন্য।”
#প্রয়াস #অচেনাপথ