
04/03/2024
‘তাঁত’-পর্য | হ্যান্ডলুম নাকি পাওয়ারলুম?
কুটির শিল্পের এক অন্যতম ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো তাঁত শিল্প। আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার শান্তিপুরের সূচনা হয় তাঁত শিল্পের। অতীতকাল থেকে শুরু করে বহুল পরিবর্তনের মাধ্যমে তাঁত শিল্প বর্তমানে এক অন্যতম দৃষ্টান্ত ও পরম্পরা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। মূলত মুঘল ও প্রাচীন হিন্দু শিল্প দ্বারা একত্রিত প্রভাব থেকেই এর জন্ম হয় এবং ১৬০০ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মসলিন ও জামদানি সহযোগে এই শিল্পের প্রস্ফুটন ঘটে। ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার সমকাল থেকে বস্ত্র বিপণের দ্রুত উৎপাদন বজায় রাখার তাগিদে হস্তচালিত তাঁতকলের পাশাপাশি সূচনা হয় পাওয়ারলুমের, যা হস্তশিল্পের কাছে এক প্রকার বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। অতএব শিল্পীরা সেই সামঞ্জস্যতা বজায় না রাখতে না পেরে বাধ্য হন বিদ্যুৎ চালিত তাঁতকলে যোগদান করতে। এবং এর ভিত্তিতে ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে হস্তচালিত তাঁতশিল্পের প্রচলন। অথচ তা সত্ত্বেও শিল্পীরা খুবই নিষ্ঠা ভরে হস্তচালিত কুটির শিল্পের প্রচলন ধরে রাখতে সম্ভবপর হন। ওদিকে দেশভাগের সময় ওপার বাংলা থেকে আগত সমস্ত তাঁত শিল্পীরা এপার বাংলায় এক নতুন তাঁত শিল্পধারার পুননির্মাণ করেন। কিছু নির্দিষ্ট এলাকা যেমন - নদীয়ার শান্তিপুর-ফুলিয়া (ফুলিয়া-টাঙ্গাইল), হলদিয়ার ধনেখালি (ধনেখালি), বর্ধমানের কালনা (টাঙ্গাইল), অটপুর (আটপৌরে) এবং প্রচলিত কিছু নকশা, যেমন - ভ্রমরা, তাবিজ, রাজমহল, অর্ধচন্দ্র, চাঁদমালা, নীলাম্বরী, এবং রতন চোখ ইত্যাদি তাঁতশিল্পে জায়গা করে নিতে থাকে এবং শুরু হতে থাকে তাঁতশিল্পের আমূল পরিবর্তন। অতীতকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত আজ তাঁত শিল্পকলার এক ভিন্ন রূপ ও প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই। শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা যে ঐতিহাসিক অতীত রয়েছে তা আমাদের এক অন্যতম বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কথা বলে। পাশাপাশি কথা বলে এক অকথ্য সাহসিকতার এবং নির্ভীক মানুষদের যাদের নিয়ে লিপ্ত এই শিল্প - গ্রাম বাংলার নারীদের। তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের অঙ্গীকার হয়ে উঠেছে এই শিল্প এবং তার ভূমিকা। সুতরাং এ শিল্পের হারিয়ে যাওয়া যে শুধুমাত্র শিল্পীসত্ত্বার উচ্ছেদ ঘটাবে না তা নয়, বরং মুছে ফেলবে মানুষের লড়াই করে বেঁচে থাকার প্রবণতার ইতিহাসকে, তা বলাই বাহুল্য।
পুরো ভিডিওর লিংক - https://youtu.be/tA7h-4qekv0?si=VPL6-I-gESP-mYem
Kaninika Majumdar
Debdatta Ghosh
Sayan Mondal