
14/04/2025
"এতো ভঙ্গ বঙ্গ তবু রঙে ভরা"
Lok Khadya - লোকখাদ্য - common man's food
চৈত্র সংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখ পর্ব
ওপার বাংলার বাড়িতে চৈত্র সংক্রান্তিতে খইয়ের নাড়ু খাওয়ার একটা চল ছিল। খই সামান্য ভেজে বিশাল হামানদিস্তায় গুঁড়ো করে নেওয়া হত। তার পর সেটি গুড় দিয়ে মেখে ছাঁচে ফেলে নাড়ু তৈরি হত।
ওই একই দিনে নাকি পাঁচন খাওয়ার রীতিও ছিল। সমস্ত সবজি দিয়ে লাবড়ার মতো তরকারিকেই বলা হত পাঁচন। লাউ, কুমড়ো, এঁচোড়, বেগুন, ডুমুর, বেতের আগা— আরও যত রকমের সবজি হয়, কী থাকত না তাতে!
চৈত্র সংক্রান্তি আর বছরের শুরুতে উত্তর বাংলায় খাবারকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু প্রথার প্রচলন রয়েছে।
বিশয়া-
“বিশয়া' খাদ্যখাবারের একটি অন্যতম প্রথা। ‘বিশয়া’ অর্থ— বিশ রকম পদের রান্না। চৈত্র সংক্রান্তির দিন 'বিশয়া' উৎসব হয়। বছরের শেষ দিনটিতে যবের ছাতু দিয়ে ঠাকুর সেবা পর্ব শেষ হলে মধ্যাহ্নে যবের ছাতু দিয়ে মুড়ি খৈ খাওয়া পর্ব চলে। রাত্রিতে 'বিশয়া' হয়।
ঐ দিন রাত্রিতে রান্না করা ভাত জল দিয়ে রেখে পরের দিন সকালে অর্থাৎ ১লা বৈশাখের দিনে ঐ জল দেওয়া ভাত ( পান্তা ভাত ) বাড়ীর প্রত্যেককেই খেতে হয়। এদের বিশ্বাস যে, পুরানো বছরের ভাত খেতে পাবে। এই বিশ্বাস থেকে পুরানো বছরের খাবারের ধারাবাহিকতা বা যোগসূত্র নতুন বছরে অটুট রাখার জন্য "আগের সালের ভাত পরের সালে' খাওয়ার এদের সমাজে একটি নিয়ম ।
সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশেষ করে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আসামের গোয়ালপাড়া এবং বর্তমান বাংলাদেশের রঙপুরের ক্ষত্রীয় রাজবংশীগণ চৈত্র সংক্রান্তির দিনটিকে 'বিষুমা' স্থান ভেদে বিষুয়া' পার্বণ হিসেবে পালন করেন। বাংলার সর্বত্র এই দিনটিকে মহাবিষুব বা বিষুবসংক্রান্তি বলা হয়। কোচবিহারে এই পার্বণের নাম 'বিষ্ণুমা' হলেও জলপাইগুড়ি ও আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় এই পার্বণকে বলা হয় বিষয়া'।
বিষুমা পার্বণ ও সিরুয়া -
“ চৈত্র মাসের সংক্রান্তি হল বিষ্ণুমা সংক্রান্তি উওর পূর্ব ভারতের কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর, মালদা, আসাম - এর বিশেষ দিন।। সকলেই সকালে উঠে স্নান করেন । গোরু-মোষকে চান করাতে হয়। বাড়ির ছেলেদের পিড়া, খড়ম, চৌকি, লাঙ্গল, জোয়াল ও আরো সব যন্ত্রপাতি ধুয়ে শুকিয়ে নেয় ।
বিষ্ণুমা বা বিষয়ার দিন বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, গৃহ সামগ্রীও পরিষ্কার করা হয়, প্রয়োজনে গোবর লেপা হয়। খড়িমাটির ফোঁটা, সিঁদুরের ফোটা দেওয়া হয়। অন্যান্য ঘরে ও ঠাকুর ঘরে রসুন-পেঁয়াজ, পানিমুথারি, ময়নাকাঁটা গাছের টুকরো, বেত বা গাড়ালের পাতা, কোচলোতের পাতা, হলুদের পাতা, গাঁজা, বিসতির গাছ, রসুন বা পিঁয়াজ, কানসিচা, পুন্ডি গাছের পাতা একসঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শোলার ফুল ঝোলানো হয়।
সেদিন তুলসী গাছের উপরে 'ঝরা' বসানো হয়। তুলসী গাছের গোড়ায় আতপ চাল, দুধ, দই, চিনি,কলা দিয়া পূজা দেয়। বছরের শেষ দিনটিতে মধ্যাহ্নে যবের ছাতু দিয়ে মুড়ি খৈ প্রভৃতি দিয়ে আহার পর্ব চলে। রাত্রিতে 'বিশয়া' হয়। ভাজা-ডাল-মাছ বিভিন্ন পদের তরিতরকারী প্রভৃতি ২০ রকম পদের রান্না খাদ্যবস্তু দিয়ে প্রত্যেকেই ঐ দিন রাত্রিতে খাওয়াদাওয়া করেন।
নিম পাতা,অর্জুনের বাকল ,সুরিমালার ছাল ,বাসক পাতা,শুকাতি, সাইতনের ছাল, বিস্তি নামক তিতো ফল খেতে হয়। রাজবংশী মানুষেরা এই দিনে দুপুরে ভাত খায় না। আর একটা বিশেষ আকর্ষণ হলো "আটকালাই-বাটকালাই"বা ভাজাভূজা খাওয়া। চাল, গম, মটর, তিল, কাঁচা আমের কুঁচি,আদার কুঁচি, পিঁয়াজ, চাল, চিড়ে, ছোলা ইত্যাদি আট রকমের ভাজা খাওয়া। এই ভাজার সঙ্গে কাঁচা পেয়াজ, রসুন, আদা, কচি আম, লবণ, সরষের তেল মেখে তা সুস্বাদু করা হয়। এ ছাড়াও পাটপাতা, নিমপাতা, কারিপাতা ভাজা এর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
অনেকে কিছু ভাজা হাতে বা ছোট পাত্রে নিয়ে বাড়ীর উঠোনে, ঘরের চালে ও বহির্বাড়ীতে ছিটিয়ে দেন। এই ভাজা-ভুজি খাওয়া প্রসঙ্গে কোচবিহারে প্রচলিত লোকশ্রুতি হল--- প্রথমে খাবার মুখে দিয়ে একটু চিবিয়ে ফেলে দিতে হয়। এতে সারা বছরের বিষ উদ্গীরণ হয়।'
শাক ভাজা পাট, কুমলি, ঢেকিয়া, খুড়িয়া, ঢোলা মানামানি, ক্ষুদি মানামানি, হেলেন্ঙ্চা, গন্ধ পাতা, লাউ কুমড়ার ডাটা কুলোয় ২০/২২ রকমের শাক সংগ্রহ করে শাক ভাত খেয়ে, উদ্বৃত্ত ভাতে জল দিয়ে নববর্ষে পান্তা করে খায় । এই বিশ্বাস থেকে যে, পুরোনো বছরের খাবারের ধারাবাহিকতা বা যোগসূত্র নতুন বছরে অটুট থেকে যাবে, ওই রাঢ় বাংলার "আশ্বিনে রেঁধে কার্তিকে খাবার" মতন ।
ঐ দিন বাড়ির ছেলেরা লাঠি-সোটা-বল্লম নিয়ে দুপুর বেলা শিকার করতে যায় । কামতা- কুচবিহার সাম্রাজ্যের মহারাজার শিকার যাত্রার ঐতিহ্য স্মরণ বা মহারাজাদের শিকার যাত্রা মতন বা মহারাজা থেকে সাধারণ প্রজা শিকারে যায় । সেদিন গ্রামের শিকারের নেতৃত্ব দেওয়া মানুষ "শিঙ্গা" বাজায়, আর এই শিঙ্গার শব্দ শুনেই সবাই দলবদ্ধভাবে শিকারে বেরোয় । আর রাতের বেলা চলে আমিষ খাওয়া। এছাড়াও মেলা পরব হৈ হৈ করে চলে সারাদিন ধরে । উৎসবের আকারে পাড়ায় পাড়ায় দলবদ্ধভাবে নাচ গান আনন্দ করে বছরের শেষ দিনটা পালন করে।
অনেকে সেদিন শিকার করে ওই মাংস রাতে খেয়ে শেষ করে। কারণ, বৈশাখ মাসে মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। লক্ষ্যনীয় যে, ঐদিন রাত্রে নিমপাতা ভাজা খেতেই হয় এবং পরিবারের প্রত্যেকেই ঐ দিন একসাথে বসে খান।
"বছরের শেষে ভাল খাওয়া" এরই প্রতীকরূপে বিশয়া প্রথার প্রচলন।
পয়েলা বৈশাখে অর্থাৎ সিরুয়া -
পয়েলা বৈশাখে অর্থাৎ সিরুয়ার দিনে পান্তা ভাত খেয়ে দিনের কাজ শুরু হয়। গাছের গোড়ায়, বাঁশের গোড়ায়, আম-কাঁঠালের গোড়ায় মাটি দিতে হয়। বৈশাখ মাসের প্রতি রবিবারে (ধর্মবারে) আতপ চালের ভাত সৈন্ধব লবণ দিয়ে খেতেন বাড়ির সবাই। জলখাবারেও আতপ চিড়া ও দই খাওয়ার নিয়ম। বৈশাখী সংক্রান্তিতে স্যাবা দেওয়া হয় ঠাকুরবাড়িতে। আরও বিশ্বাস এই বিষুমার দিনে গাছ লাগালে ও গাছের গোড়ায় মাটি দিলে গাছটি ভালো থাকে ও ভালো ফলন হয়।
আগেকার দিনে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে ব্রাহ্মণকে একটি মাটির কলসী, একখানি তালপাতার পাখা, একখানি কুশাসন বা কম্বলাসন, ফল, যবের ছাতু ও আখের গুড় বা চিনি দান করাটা যে কোনও সৎ গৃহীর অবশ্যকর্তব্য মনে করানো হতো । শুধু দানের না নিজেদের ও যে খেতে হবে তা আর কে বলবে ? যবের ছাতু যে সর্বাপেক্ষা বলকর খাদ্য— এটা ব্রত পার্বণে দাঁড়িয়েছে মাত্র।
ছাতু সংক্রান্তি ব্ৰত -
চৈত্র সংক্রান্তিতে শুরু হয় এই ব্রত পালন করা হতো । ব্রত যখন শুরু হত তখন ব্রতচারিণী একটি সরায় ভর্তি করে ছাতু নিয়ে, সেই সঙ্গে আখের গুড়, ছানার সন্দেশ, পৈতে ইত্যাদি দান করত একজন ব্রাহ্মণকে। এই ব্রত পালনের মেয়াদ ছিল চারবছর। প্রতি বছর একজন করে ব্রাহ্মণ বাড়ানো হতো।
চার বছর পর যখন উজ্জাপন করা হতো তখন প্রথম ব্রাহ্মণকে একটি ছাতুভর্তি পিতলের সরা দিতে হতো। চারজনকেই একইভাবে পিতলের সরায় ছাতু, আখের গুড়, সন্দেশ, পৈতে, ধুতি, চাদর, চটি ইত্যাদি দক্ষিণা সহ দান করবার পর ব্রত শেষ হতো । "চার বছর" ধরে চলতো এই ব্রত। -- ভাবা যায়! বিনা পরিশ্রমে শুধু 'কল্যাণ হোক' এই টুকু কথার জন্যে এতো আয়োজন ! কি চালাকি !!!!
এই রকম ব্রত গুলো নিয়ে একবার আলোচনায় বসা যাবে পরে । লেখাপড়া কাজ কর্ম বাদ দিয়ে আবার এই দিনগুলো যদি ফিরিয়ে আনা হয়, তাহলে কি দাড়াবে !
"সূরা, গরম দুধে দই ফেলে তার আমিক্ষা অর্থাৎ ছানা, গরম দুধে ঘৃত সহ অত উৎকৃষ্ট ধানের খৈ, দই সহ যবের ছাতু, সৌত্রামণী যজ্ঞের বিপুল আয়োজনে পুরোডাশ অর্থাৎ পিঠে প্রস্তুত করা হোক। যবের চূর্ণ, যবের ছাতু, যবের লোপসি - আমাদের আর্য ভারতের সুপথ্য, সুখাদ্য, সুপেয় এবং যবের সঙ্গে উৎকৃষ্ট দ্রব্য সংযোগে যবজাত সুরাও ছিল সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য আহার্য ও পানীয়। তবে একথা ঠিক যে, যবের ভৈষজ্যশক্তি কতখানি আছে অর্থাৎ রোগবারণীশক্তি তাতে কতখানি নিহিত আছে, সে তথ্য আয়ুর্বেদ সংহিতা না দেখলে বোঝা যায় না "
--- "শিবকালী ভট্টাচায্য" মশাই ওঁনার "চিরঞ্জীবী বনৌষধি" তে জনসাধারণের জন্যে লিখে দিয়ে গেছেন ।
যবের ছাতুর সঙ্গে তেল, নুন, মরিচ গুঁড়া, নারিকেল কোরা, চিনাবাদাম ভাজা প্রভৃতি মেখে খেতে যেমন মুখরোচক, তেমনই বলকারক। কোন দিন বা জলে গুলে মিষ্টির সঙ্গে, কোন দিন বা দইয়ের সঙ্গে মেখে, কোন দিন বা দুধে গুলে আম কলা বা আমসত্ত্বর সঙ্গে মেখে খেতে অসাধারণ ।
অশোক-অষ্টমী -
অনেক ভারতীয় মহিলা আজও চৈত্রের শুক্লা ষষ্ঠীতে অশোক-ষষ্ঠী ও শুক্লা অষ্টমীতে অর্থাৎ বাসন্তী অষ্টমীতে অশোক-অষ্টমী ক'রে থাকেন | এই দুই দিন কয়েকটি ক'রে অশোক ফুলের কুড়ি কাঁচা দুধ দিয়ে খেয়ে থাকেন, এটাও একটা ব্রতোপচারের মধ্যে ধরে রাখা হয়েছে।
কিন্তু কারণটা একটু খতিয়ে দেখলে ভালো হতো । শিবরাত্রি হলো পুরুষের সংযম পুরুষের ব্রত আর তার পরই নারীর অশোকষষ্ঠী এবং অশোকষ্টমীর মাধ্যমে আজকের দিনের জন্যে উল্লেখ্যযোগ্য কোনো সমাধান লুকিয়ে আছে ! কৌতূহল রইলো ।
শিব-গাজনের উৎসব -
জেলায় জেলায় গ্রামে গ্রামে চৈত্র সংক্রান্তি থেকে জ্যৈষ্ঠের শেষে বর্ষা নামা পর্যন্ত চলতে থাকে শিব-গাজনের উৎসব | লোক উৎসব । শহুরে বাহুল্যময় উৎসবের থেকে একেবারে আলাদা ।
---এবার জেলায় ঘুরতে গেলে একটু দেখে আশা ভালো । ডীস্কো আর মাচার বাইরে এই গ্রাম বাংলার উৎসব গুলো দ্রুত হারিয়ে যাবে ।---
মাছনি -
কতদিন থেকে পুরুলিয়াতে লোকনাট্য “মাছনি” অনুষ্টিত হোত একথা অবশ্যই এখন নিশ্চিত করে বলা যায় না তবে বিগত পনেরো কুড়ি বছর থেকে “মাছানি” প্রায় অবলুপ্তির পথে পা বাড়িয়েছে। চৈত্র সংক্রান্তি থেকেই মাছানি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। “মাছানি” অনুষ্ঠানে মাছানি কথাটা যেভাবে ব্যবহৃত হয় তাতে “মাছানি” বলতে অভিনয়কে বোঝায় । মাছানির গানে ঝুমুর ও প্রচলিত বিভিন্ন লৌকসঙ্গীতের সুর ব্যবহৃত হয়। মাছানিতে সাজগোজ হিসেবে ছেঁড়া কাথা ছেড়া জামা-কাপড় ব্যবহৃত হয়। মেকআপের ক্ষেত্রে খড়িমাটি, চুন, কালি, লাল রং ইত্যাদিকেই যথেষ্ট মনে করা হয়।
গলৈয়া -
এছাড়া চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে নানা জায়গায় একদিন-ব্যাপী মেলা বা গলৈয়া বসে । অনেক দিনের মেলা যে সব জায়গায় হয়, তা পরে বলা যাবে ।
চড়ক -
চড়ক পুজা উপলক্ষে চৈত্র মাসের শেষ কদিন যে ধর্মানুষ্ঠান হয় তা এই বাংলার সর্বসাধারণের একটি বড় উৎসব। এর বৈশিষ্ট্য এই যে এর পৌরোহিত্যে ব্রাহ্মণ ছাড়াও প্রায় সর্বসম্প্রদায়ের লোকেরই হাত আছে। এদেরকে "সন্ন্যাসী" বা চলিত ভাষায় “সাঙ্গ' বলে। পাট পূজার যাবতীয় বাংলা মন্ত্র সুর করে গান করে এবং সঙ্গে সঙ্গে নাচ করে, এই খাটুনী বলে। যে ৬/৭ দিন পাটপূজা চলে, তাহার কয়েকদিন ঘরে ঘরে পাট যায় এবং সেই সব ঘরে পূজা হয়।
সংক্রান্তির দিন ও তারপর দিন নানা লোক সং সেজে বহুরূপী বেশে বাড়ি বাড়ি নাচ গান করে। এই চড়ক পূজা এদেশের সর্বশ্রেণির লোকের বিশেষ আনন্দের উৎসব। বৈশাখ মাসের প্রথম ভাগে বিভিন্ন দিনে অন্যান্য অনেক গ্রামেও মেলা হয়।
গমিরা -
গম্ভীরা শব্দটির সঙ্গে আমরা অনেকই পরিচিত ; কিন্তু, 'গমিরা' আমাদের অনেকেরই অপরিচিত । চৈত্র সংক্রান্তি কি তারও দু' চারদিন আগে থেকেই উত্তরবঙ্গের গাঁয়ে গাঁয়ে বিশেষতঃ পশ্চিম দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে এই ‘গমিরা' শুরু হয়ে যায়।
রাজবংশী, পলিয়া অধ্যুষিত গাঁ গুলোতে গমিরা চলে আষাঢ় মাসের অম্বুবাচী তিথি পর্যন্ত। কাঠের মোখা বা মুখা পরে ভক্তের দল বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাচে। এর নাম ফুল ঝারি। তারপর গমিরা তলায় জড়ো হয় । পূজো দেয় ।
চামাড় কালী, মাশনি ও মাশনি কালী, বুড়া-বুড়ি, চণ্ডীও শিকনি ঢালের মুখোশ তো একান্তই আবশ্যক । বাঘ, ভালুক আরো হরেক রকমের মুখোশ পরে, এমন কি দুর্গা-অসুরও সাজতে দেখা যায় কোন কোন গাঁয়ে ৷ ঢাক বাজে, কাসি বাজে এই নাচের সঙ্গে । একজন দেবাংশী বা পুরোহিত নাচের সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রপূত ফুল জল নিয়ে ভক্তদের পাশে পাশে প্রস্তুত থাকে ।
চৈত্র মাসের শেষের গাজনের অনুষ্ঠান।
বুড়োশিবের গাজন -
চৈত্র সংক্রান্তি ও চড়কের তিনদিন আগে থেকেই গাজনের অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়ে যায়। এই গাজনের যাঁরা 'সন্ন্যাসী' হন তাঁদের কঠিন কৃচ্ছ্র সাধন ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই ব্রত পালন করেন ।
সংক্রান্তির পাঁচদিন আগে গঙ্গাস্নান, তার পরদিন নিরামিষ আহার, তৃতীয় দিনে একবার মাত্র হবিষ্যান্ন, - তার পরদিন শুধুমাত্র ফলমূল আহার তার আগে শিবের পূজা সম্পন্ন করা এবং রাত্রে গ্রামের দক্ষিণ পূর্ব কোনে পুকুর থেকে 'কামাখ্যা' নিয়ে আসা, সাধারণত মূল বা প্রধান সন্ন্যাসী একটি মাটির হাঁড়িতে করে ঐ পুকুর ঘাট থেকে মাথায় করে কামাখ্যা ঠাকুর নিয়ে আসেন বুড়ো শিব মন্দির প্রাঙ্গণে।
নীল পূজা -
এর পরদিন নীল পূজা, সারাদিন উপবাস করতে হয় গাজনের সন্ন্যাসীদের। এই দিন সকাল থেকেই চলে সন্ন্যাসীদের কৃচ্ছ সাধান আর দেবতার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার কঠিন কঠিন অনুষ্ঠান। তারপর আরম্ভ হয় নীলের পূজো। প্রায় সারাদিন চলে নীলের পূজো ও বাতি দান। পরের দিন চৈত্র সংক্রান্তি বা মহাবিষুব সংক্রান্তি ও চড়কপূজা ।
"এতো ভঙ্গ বঙ্গ তবু রঙে ভরা"
Prasadam
https://www.foodcooking-inspiration.in/2022/05/fiber-rich-jaber-chhatu-makha-on.html