15/03/2025
মৌমাছির চাক, চুরি, আর প্রবাসী জীবনের যন্ত্রণা
গ্রীষ্মের দাবদাহে গলদঘর্ম আমার স্ত্রী হঠাৎ একটা ছবি পাঠাল। ছবিটা দেখেই আমি স্তব্ধ। আমাদের বাড়ির বেলকনির স্লাবে ঝুলছে বিশাল দুইটি মৌচাক, আর জানালার সানসেটেও আরেকটি। মৌমাছিরা যেন পুরো বাড়িটাকেই নিজেদের রাজত্ব বানিয়ে ফেলেছে।
স্ত্রী বিরক্ত কণ্ঠে লিখল, "মৌচাকের জন্য জানালা খুলতে পারছি না। গরমে টিকতে পারছি না! কী করবো?"
আমি হালকা মজা করে উত্তর দিলাম, "মধু খেলে গরম কমে যাবে!"
কিন্তু সে একটুও হাসল না। একটু থেমে গভীর বেদনার সাথে লিখল,
"গত সপ্তাহে যদি চোরদের কামড়ে দিতো, তাহলে আমাদের সোনা-টাকা ভর্তি মাটির ব্যাংক আর ছেলেদের ল্যাপটপ চুরি হত না!"
এই কথাগুলো পড়ে আমার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। প্রবাসে বসে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে এই কথা শুনে আমি যেন একদম নিঃশব্দ হয়ে গেলাম।
একটি ভয়ংকর সকাল
সেদিন সকালে স্ত্রী যখন বাড়ি ফিরে এল, তখনো কিছু বুঝতে পারেনি। কিন্তু গেটের তালা কাটা দেখেই বুক ধক করে উঠল। দ্রুত দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই চারদিকে ছড়ানো-ছিটানো জিনিসপত্র, খালি আলমারি, উল্টানো বিছানা—সবকিছু দেখে সে এক মুহূর্তের জন্য দিশেহারা হয়ে গেল।
সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছিল যখন দেখল আমাদের ছেলেদের মাটির ব্যাংকটাও উধাও। সেটা ভাঙা অবস্থায় পড়ে নেই, বরং চোররা পুরো ব্যাংকটাই সঙ্গে করে নিয়ে গেছে!
নাঈম (১৯) আর নাজমুল (৯) ছোটবেলা থেকেই টুকটাক টাকা জমাতো। আমার পাঠানো টাকার একটা অংশ স্ত্রী ওই ব্যাংকে রেখে দিত, যাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ না হয়। আর নাজমুলের তো একটা ছোট্ট স্বপ্ন ছিল—সে টাকাগুলো দিয়ে নিজের জন্য নতুন সাইকেল কিনবে!
কিন্তু সেই ব্যাংক এখন চোরের হাতে। সেই ছোট্ট সঞ্চয়টুকুও কেউ নিষ্ঠুরভাবে কেড়ে নিয়ে গেছে।
ছেলেদের প্রতিক্রিয়া ও আমার অসহায়তা
স্ত্রীর ফোন পেয়ে আমি চুপচাপ শুনছিলাম। কিছু বলার শক্তিও পাচ্ছিলাম না।
নাজমুল স্তব্ধ হয়ে ছিল, কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে বলল, "বাবা, চোররা কি খুব গরিব ছিল? ওরা যদি আমার টাকা দিয়ে খাবার কিনে খায়, তাহলে ওদের কি একটু ভালো লাগবে?"
এই সরল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না।
নাঈম রাগে ফুঁসছিল, সে বলল, "বাবা, আমি যদি তখন বাড়িতে থাকতাম, তাহলে চোরদের ঢুকতেই দিতাম না!"
কিন্তু আমি জানতাম, চোরেরা কখনো খালি হাতে আসে না। তারা শুধু চুরি করতেই আসে না, দরকার পড়লে প্রাণঘাতী হামলাও করতে পারে।
আমি আর কিছু বলতে পারছিলাম