17/06/2025
Blood Donation Camp : গ্রীষ্মকালীন রক্তসঙ্কট মেটাতে রক্তদান শিবিরের আয়োজনে চন্দ্রকোনা রোড – ডাবচা ব্যবসায়ী সমিতি
https://newsbanglaonline.in/blood-donation-camp-chandrakonaroad-summer-crisis/
নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, অভিজিৎ সাহা, চন্দ্রকোনা রোড, পশ্চিম মেদিনীপুর : ১৬.০৬.২০২৫: প্রতি বারই গ্রীষ্মকালে এবং উৎসবের সময় ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে (Blood Bank) রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। গরমের মরসুমে রক্তদান শিবিরের আয়োজন কমেছে। রক্তদাতার সংখ্যাও কম। এই অবস্থায় গ্রীষ্মকালীন রক্তসঙ্কট মোকাবিলায় এক মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করল চন্দ্রকোনা রোড – ডাবচা ব্যবসায়ী সমিতি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা রোডে আয়োজিত হল এক স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রক্তদাতার উপস্থিতি নজর কাড়ে। সমিতির সমস্ত কর্মকর্তাসহ সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন এই মহতী কর্মে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোড শহরে চন্দ্রকোনা রোড – ডাবচা ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে বিগত ৩৭ বছর ধরেই রক্তদান শিবিরের আয়োজিত হয়ে আসছে ।
চন্দ্রকোনা রোড – ডাবচা ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এই রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করেন, রাজ্যের মন্ত্রী তথা শালবনি বিধানসভার বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাত। সোমবার আয়োজিত এই শিবিরে মোট ১০০ জন রক্তদান করেন। উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাত বলেন, “এক ব্যাগ রক্ত একজন মৃত্যুপথযাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে পারে। এই পৃথিবীতে এমন মানবিকতা খুব কমই আছে, যেখানে আপনি কারও জীবন রক্ষা করতে পারেন, অথচ তাকে না চিনেও।”
এছাড়াও এই রক্তদান শিবিরে উপস্থিত ছিলেন, গড়বেতা-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিন্ময় সাহা, সমাজসেবী বিশ্বজিৎ সরকার, রাজীব ঘোষ, সুশান্ত সিংহ, প্রসেনজিৎ ভুঁইয়া, স্মৃতিরঞ্জন দত্ত, দেবকুমার দে এবং আরোও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
চন্দ্রকোনা রোড – ডাবচা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সন্দীপ চৌধুরী বলেন, ” মানব কল্যানে রক্তদানের সেবায় বিগত ৩৭ বছর ধরে আমাদের সমিতি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে আসছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই শিবিরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রক্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।”
সমিতির সেক্রেটারি দেবাশীষ মূলা বলেন, ” শধু রক্তদান শিবির নয়, সমাজের বিভিন্ন সেবামূলক কর্মে আমাদের সমিতি অবদান রাখার চেষ্টা করে “।
সমিতির কোষাধাক্ষ সমর দত্ত বলেন, “চলুন, আজ আমরা শপথ নিই—রক্ত দিয়ে মানবতার সেবা করব। কারণ, রক্তদানই হল প্রকৃত জীবনদান।”
গড়বেতা-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিন্ময় সাহা বলেন,”স্বেচ্ছায় রক্তদান একদিকে যেমন মানুষের জীবন বাঁচায়, তেমনই সমাজে সহমর্মিতার বার্তা দেয়। রক্তদানের মাধ্যমে আমরা একে অপরের সঙ্গে অদৃশ্য এক বন্ধনে জড়িয়ে পড়ি।”
সমাজসেবী বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, “আপনার দেওয়া এক ব্যাগ রক্ত কারও মা, বাবা, সন্তান বা প্রিয়জনের প্রাণ বাঁচাতে পারে। এমন সুযোগ জীবনে খুব কমই আসে, যেখানে আপনি অচেনা কারও জীবনরক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারেন।”
সমাজসেবী রাজীব ঘোষ বলেন, “রক্তদান শুধুমাত্র দান নয়, এটি এক মানবিক বন্ধনের প্রতীক। একজন মানুষ যখন নিঃস্বার্থভাবে রক্ত দেন, তখন সেই রক্তে শুধু হিমোগ্লোবিন নয়—থাকে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং দায়িত্ববোধ।”
সমাজসেবী সুশান্ত সিংহ বলেন, “গ্রীষ্মকালে রক্তের ঘাটতি চরমে পৌঁছায়। বিশেষ করে দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার কিংবা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য তখন রক্ত সংগ্রহে সমস্যা হয়। এই সময়ে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত, সচেতনভাবে এগিয়ে এসে রক্তদান করা।”
শিক্ষক স্মৃতিরঞ্জন দত্ত বলেন, “চন্দ্রকোনা রোড-ডাবচা ব্যবসায়ী সমিতির এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই শিবির অনুপ্রেরণা হয়ে থাকুক।”
বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডঃ সুভাষ চট্টোপাধ্যায় বলেন,
“রক্তদান কেবল একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, এটি এক মানবিক অঙ্গীকার। একফোঁটা রক্ত—যা আমাদের শরীর থেকে সামান্যই বেরিয়ে যায়, কিন্তু অন্য একজন মানুষের জীবনে নিয়ে আসে নতুন আলো, নতুন আশা।
আমি বারবার বলি—’রক্তদান মানে জীবনদান’। এই বক্তব্য শুধু প্রতীকী নয়, একেবারে বাস্তব। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ রক্তের অভাবে প্রাণ হারান। অথচ আমাদের একটু সচেতনতা, একবার এগিয়ে আসা সেই মৃত্যুকে ঠেকাতে পারে।
আজকের এই রক্তদান শিবির কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং আমাদের মানবিক চেতনার জাগরণ। বিশেষ করে আমাদের যুব সমাজ যদি নিয়মিত রক্তদানকে নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করে, তাহলে আমাদের দেশে রক্তের ঘাটতির মতো কোনও সমস্যা থাকবে না।
রক্তদান নিরাপদ, সহজ এবং স্বাস্থ্যকর একটি প্রক্রিয়া। বছরে অন্তত দু’বার রক্তদান করলে শরীরেও কোনও ক্ষতি হয় না—বরং এটি শরীরের অপ্রয়োজনীয় রক্তকণিকাগুলিকে প্রতিস্থাপনের সুযোগ দেয়।
আমার আন্তরিক অনুরোধ, সবাই যেন এগিয়ে আসেন—নিজের পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য।”
সমিতির সচিব শ্যাম মুখার্জী বলেন, ‘রক্ত দিন, জীবন বাঁচান’—এই শ্লোগান হোক আমাদের পথচলার প্রেরণা।”