Matribhasa

Home
Matribhasa

🚀 সাহিত্যের অভিযানে প্রস্তুত হন।
📜 অসীম গল্প, ⚡ ত্বরিত সরবরাহ।
🌐 আরও জানতে ভিজিট করুন matribhasa.com

22/08/2025

রাজা অমরাবতী - শ্রীনা রায়চৌধুরী

নাগপুরের পাচপাওলি এলাকায় বর্ষার মেঘ ভারী হয়ে ঝুলে আছে। সন্ধ্যার আলো-আঁধারে গলির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে উনিশ বছরের রাজা খান। তার হাতে একটা ছেঁড়া ছবি - বাবার সাথে তোলা শেষ ছবি। দুই বছর আগের কথা মনে পড়ে যায়। সেদিনও এমনই বর্ষার দিন ছিল।

রাজার বাবা নসির খান মারা গিয়েছিলেন মদের নেশায়। দিনের পর দিন মদ খেয়ে খেয়ে শরীরটা নষ্ট করে ফেলেছিলেন। রাজা চোখের সামনে দেখেছে কীভাবে একটা সুস্থ মানুষ একটু একটু করে মরে যায়। কীভাবে একজন ভালো বাবা হয়ে ওঠে অচেনা এক পরিচিত মুখ।

"ওরা তোমাকে মেরেছে, বাবা," ছবিটা বুকের কাছে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে রাজা। "যারা বিষ বিক্রি করে বোতলে ভরে, ওরাই তোমার খুনি।"

সেদিন বাবার মৃত্যুর পর রাজা একটা প্রতিজ্ঞা করেছিল। সব মদের দোকান, সব বিয়ার বার - এসব জায়গা থেকে সে প্রতিশোধ নেবে। তার বাবার মতো আরও কত বাবা যে এসব জায়গার কারণে মারা যাচ্ছে, সেটা ভেবে তার রাগ আরও বেড়ে যায়।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই প্রতিশোধের গল্পটা একটু ভিন্ন রূপ নেয়।

রাজা অমরাবতী - শ্রীনা রায়চৌধুরী

প্রথমদিকে রাজা সত্যিই বিশ্বাস করত যে সে একটা মহৎ কাজ করছে। সে নিজেকে বলত একজন যোদ্ধা, যে লড়াই করছে নেশার বিরুদ্ধে। কিন্তু বাস্তব হলো, বাবার মৃত্যুর শোকে সে নিজেই নেশার জগতে ঢুকে গিয়েছিল। প্রথমে সিগারেট, তারপর গাঁজা।

"এটা আলাদা," মনে মনে নিজেকে বোঝাত রাজা। "গাঁজা তো মদ না।" সম্প্রতি ইউটিউব এ কয়েকটা ভিডিও দেখে সে নিশ্চিত যে সিগারেট বাবসায়ীদের কথা রাখার জন্যই গাঁজাকে লিগাল করে নি সরকার! সব চক্রান্ত!

প্রথম আক্রমণটা ঘটেছিল ছয় মাস আগে। শর্মার মদের দোকানে। সেদিন সন্ধ্যায় দোকানদার একজন গ্রাহকের সাথে হাসতে হাসতে বলছিল, "এই সব মাতালরা তো নিজেদের নিয়ন্ত্রণই করতে পারে না।" কথাটা শুনে রাজার মাথায় রক্ত উঠে গেল।

সেই রাতেই দোকানের জানালা ভেঙে দিয়েছিল রাজা। একটা চিরকুট রেখে এসেছিল: "এটা সেই সব বাবাদের জন্য যাদের তুমি মেরেছ। - রাজা অমরাবতী।"

নামটা হঠাৎই মনে এসেছিল। তার নিজের নাম রাজা আর বাবার জন্মের জেলা অমরাবতী - দুটো মিলিয়ে। একটা গুপ্ত পরিচয়ের মতো লাগছিল, যেন কোনো সুপারহিরোর নাম।

স্থানীয় খবরের কাগজে ছাপা হয়েছিল, "মদবিরোধী কর্মীদের ভাঙচুর।" এই লাইনটা পড়ে রাজার খুব গর্ব হয়েছিল। সে কেবল একজন ভাঙচুরকারী না, সে একজন কর্মী, একজন যোদ্ধা।

রাজা অমরাবতী - শ্রীনা রায়চৌধুরী

দ্বিতীয় আক্রমণ হয়েছিল তিন সপ্তাহ পরে। এবার একটা বিয়ার বারে। রাজা রাতের অন্ধকারে মুখ ঢেকে ঢুকে গিয়েছিল। ক্যাশ বক্স থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে এসেছিল। টাকাটা নেওয়ার সময় সে নিজেকে বলেছিল, "এটা চুরি না, এটা ক্ষতিপূরণ। এই টাকা দিয়ে কত পরিবার নষ্ট হয়েছে।"

কিন্তু সেই টাকা দিয়ে সে কী করেছিল? গাঁজা কিনেছিল। ভালো মানের, দামি গাঁজা।

তৃতীয় আক্রমণের পর রাজা বুঝতে পারল যে এই কাজটা তার কেমন যেন ভালো লাগে। শুধু প্রতিশোধ নয়, এই রোমাঞ্চ, এই অ্যাড্রেনালিন রাশ - এসব তাকে নেশার মতোই পেয়ে বসেছে।

"রাজা অমরাবতী" এর নাম ছড়িয়ে পড়তে লাগল পাচপাওলি এলাকায়। মানুষজন কানে কানে বলাবলি করত। কেউ বলত, "ভালো করেছে, এই মদের দোকানগুলো বন্ধ হওয়া উচিত।" আবার কেউ বলত, "এ তো একটা সন্ত্রাসী।"

রাজা এসব শুনত আর নিজের মিশনের প্রতি আরও দৃঢ় হত। কিন্তু বাস্তবটা ছিল অন্য রকম।

চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ আক্রমণ - প্রতিটার পর রাজার গাঁজার খরচ বাড়তে থাকে। ভালো মানের গাঁজা, বেশি পরিমাণ। সে নিজেকে বলত, "বাবার মৃত্যুর ব্যথা সহ্য করতে গেলে এটা লাগেই।"

সপ্তম আক্রমণের সময় একটা ঘটনা ঘটল। দোকান মালিকের ছোট ছেলে সেখানে ছিল। আট-নয় বছরের একটা বাচ্চা। রাজা টাকা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে বলল, "আঙ্কেল, আমার বাবা খারাপ কাজ করে না। উনি শুধু কাজ করেন।"

রাজা অমরাবতী - শ্রীনা রায়চৌধুরী

সেই কথাটা রাজার মনে বেঁধে গেল। রাতে ঘরে ফিরে গাঁজা টানতে টানতে সে ভাবল, বাচ্চাটার বাবাও তো কারোর বাবা। তারও হয়তো পরিবার আছে, খাওয়ানোর দায়িত্ব আছে।

কিন্তু পরদিন সকালে সেই চিন্তা উড়ে গেল। গাঁজার টাকা ফুরিয়ে গেছে, আবার চাই।

অষ্টম আক্রমণ, নবম আক্রমণ। প্রতিবার রাজা আরো বেশি টাকা চুরি করত, আরো বেশি গাঁজা কিনত। তার প্রতিশোধের গল্পটা হয়ে উঠেছিল নেশার ঢাকনা।

জুলাই মাসের ৩১ তারিখ। রাজার শেষ আক্রমণের দিন।

সেদিন সকালে উঠেই রাজার গাঁজার জন্য হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। পকেটে একটা পয়সাও নেই। কাজেও যায়নি কয়েকদিন, কন্ট্রাক্টর রেগে গিয়ে কাজ থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে।

"আজকেই শেষ," নিজেকে বলে রাজা। "আজ একটা বড় দোকানে মারব, অনেক টাকা নেব, তারপর আর করব না।"

সন্ধ্যার দিকে রাজা বেরিয়ে পড়ল। গায়ে একটা পুরনো জ্যাকেট, মুখে গামছা বেঁধে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে, আজকের টার্গেট কোনটা।

পান্ডে সাহেবের মদের দোকান। বেশ বড়সড়, গ্রাহকও বেশি আসে। ক্যাশ বক্সে ভালো টাকা থাকার কথা।

রাত দশটায় নিঃশব্দে ঢুকে পড়ল রাজা। দোকানে কেবল পান্ডে সাহেব আছেন, অ্যাকাউন্টের খাতা নিয়ে বসে। রাজার হৃদয়ে ধুকপুক ধুকপুক শব্দ। হাতে একটা ভাঙা বোতল তুলে মুখ ভর্তি রাগ নিয়ে চিৎকার করল, "চুপচাপ সব টাকা বের কর! একটা আওয়াজ করলে জীবন শেষ!"

পান্ডে সাহেব আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে বলেন, "ভাই, আমার পরিবার আছে। প্লিজ কিছু করো না।"

রাজা অমরাবতী - শ্রীনা রায়চৌধুরী

"তোর পরিবার?" রাজার চোখে রক্ত। "আমার বাবার কথা ভেবেছিলি যখন বিষ বিক্রি করতি? তাড়াতাড়ি টাকা বের কর!"

পান্ডে সাহেব ভয় পেয়ে গিয়ে ক্যাশ বক্স খুলে দিলেন। ছত্রিশ হাজার টাকা। রাজার চোখ চকচক করে উঠল। এত টাকা! এই টাকায় অনেকদিনের গাঁজা হবে।

টাকা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রাজার নজরে পড়ল কাউন্টারের পাশে রাখা সিগারেটের প্যাকেট। পনেরোটা প্যাকেট। ভাবল, এগুলো বিক্রি করে আরো কিছু টাকা পাওয়া যাবে।

কিন্তু রাজা জানত না যে পান্ডে সাহেবের ছোট ভাই পাশের ঘরেই লুকিয়ে ছিল। সে সব দেখেছে। রাজা চলে যাওয়ার পর সে পুলিশে ফোন করল।

"একজন যুবক এসে আমাদের দোকানে হামলা করেছে! সে নিজেকে 'রাজা অমরাবতী' বলে পরিচয় দিয়েছে। ছত্রিশ হাজার টাকা আর সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে গেছে। ও লম্বা, চিকন, গায়ে নীল জ্যাকেট আর মুখে গামছা বাঁধা।"

রাজা সেই রাতে বাড়ি ফিরে গাঁজা কিনতে গেল। টাকার বান্ডিল দেখে পেডলার অবাক হয়ে গেল।

"এত টাকা হাতে এল কোথা থেকে, বস?"

রাজার চোখে ভয়ানক দৃষ্টি। "যারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে, তাদের কাছ থেকে আদায় করা।" কথাটা বলার সময় তার গলায় ছিল গর্ব আর সন্তুষ্টি।

পরদিন সকালে রাজা গাঁজা টেনে টেনে ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ দরজায় জোর আওয়াজ। পুলিশ।

"রাজা খান, দরজা খোল!"

রাজা অমরাবতী - শ্রীনা রায়চৌধুরী

রাজার ঘুম ভেঙে গেল। বুঝতে পারল, ধরা পড়ে গেছে। কিছুক্ষণ ভাবল পালানোর কথা, কিন্তু ঘরে তো কোনো পেছনের দরজা নেই।

ভোর পাঁচটায় রাজার ঘুম ভাঙল জোরে দরজা ভাঙার শব্দে। "রাজা খান! পুলিশ! দরজা খুলে দে এখনই!"

রাজার হার্টবিট বেড়ে গেল। ঘামে ভিজে গেল পুরো শরীর। পালানোর কোনো রাস্তা নেই। ভাঙা জানালা দিয়ে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করতেই দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ল পুলিশ।

ইন্সপেক্টর শর্মা সোজা চলে গেলেন রাজার বিছানার কাছে। মাদুরের নিচ থেকে বের করলেন টাকার বান্ডিল, গাঁজার প্যাকেট, আর সিগারেটের বাক্স।

"তাহলে তুই-ই সেই বিখ্যাত 'রাজা অমরাবতী'?" ইন্সপেক্টর শর্মার কণ্ঠে তীব্র ব্যঙ্গ। "মদের দোকান লুট করিস আর গাঁজা কিনে নেশা করিস?"

রাজা ঘাবড়ে গিয়ে বলার চেষ্টা করল, "স্যার, আপনারা বুঝছেন না! আমি মদের বিপক্ষে যুদ্ধ করছি! আমার বাবা..." কথা শেষ করতে পারল না।

"তোর বাবা মরেছে মদ খেয়ে, আর তুই মরছিস গাঁজা খেয়ে!" অফিসার একটা প্যাকেট তুলে ধরে বললেন। "পার্থক্য কোথায় বল দেখি?"

রাজার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরলো না। সত্যিটা কী বলবে? যে সে নিজেই একজন নেশাখোর? যে প্রতিশোধের নাম করে সে নিজের নেশার টাকা জোগাড় করত?

থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে ভিড় জমে গেছে। কেউ চিৎকার করে বলছে, "এই শয়তানটাকে ফাঁসি দাও!" আবার কেউ দুঃখ করে বলছে, "হায় হায়, বাবার মৃত্যুতে পাগল হয়ে গেছে ছেলেটা।"

কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল সেই নীরবতা যা রাজার ভেতরে বাজছিল। সে বুঝতে পারছিল, তার গৌরবের দিন শেষ। আজ থেকে সে আর যোদ্ধা না, সে একজন সাধারণ অপরাধী।

থানার লকআপে বসে রাজা ভাবতে লাগল। কী করেছে সে? বাবার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নিজেই হয়ে উঠেছে সেই মানুষ যার বিরুদ্ধে সে লড়াই করত। মদখোর বাবা, গাঁজাখোর ছেলে - পার্থক্য কোথায়?

"বাবা, তুমি আমাকে ক্ষমা করো," চোখের জল ফেলে বলল রাজা। "তোমার নামে যা করেছি, সবই ভুল ছিল।"

ইন্সপেক্টর শর্মা কয়েক ঘণ্টা পর এসে রাজার সামনে একটা ফাইল ছুড়ে দিলেন। "দেখ, তোর সব অপরাধের তালিকা। নয়টা দোকানে ডাকাতি, দেড় লক্ষ টাকা চুরি। এতগুলো পরিবারের ক্ষতি করেছিস। সব টাকা গেল কোথায়?"

রাজা মাথা হাঁটুর উপর রেখে ফিসফিস করে বলল, "গাঁজায় পুড়ে গেছে স্যার। সব শেষ।"

রাজা অমরাবতী - শ্রীনা রায়চৌধুরী

"বাবার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তুই নিজেই তোর বাবার মতো নেশাখোর হয়েছিস। এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কী হতে পারে?"

রাজা কিছুই বলল না। কী বলবে? যে সে ভেবেছিল সে একজন যোদ্ধা, কিন্তু আসলে ছিল একজন চোর? যে সে মদের বিরুধিতা করে গাঁজার গোলাম হয়েছিল?

সেই রাতে লকআপে শুয়ে রাজা বাবার কথা ভাবল। নসির খান যখন মদ খেতেন, তখনও এরকমই নানা অজুহাত দিতেন। "কাজের চাপ সহ্য করার জন্য পান করি। এটা জরুরি।"

রাজাও তাই করেছে। প্রতিশোধের নাম করে নিজের নেশাকে জায়েজ করেছে।

পরদিন সকালে কোর্টে যাওয়ার পথে রাজা দেখল খবরের কাগজের হেডলাইন: "রাজা অমরাবতী: নেশার জালে আটকা পড়া এক প্রতিশোধপিপাসুর পতন।"

সেই হেডলাইন পড়তে পড়তে রাজার বুকটা ফেটে যেতে চাইল। এটাই তার পরিচয় হয়ে গেল। বাবার গৌরব ফিরিয়ে আনার স্বপ্নে সে নিজের সব মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছে।

জজ সাহেব চশমার ওপর দিয়ে রাজার দিকে তাকিয়ে কঠোর কণ্ঠে বললেন, "রাজা খান, তুমি ভেবেছিলে তুমি একজন ন্যায়ের যোদ্ধা। কিন্তু আসলে তুমি হয়ে উঠেছিলে সেই অন্যায়কারী যার বিরুদ্ধে তুমি লড়াই করতে চেয়েছিলে। মদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে গাঁজার গোলাম হওয়া - এটাই তোমার বাবার প্রতি সবচেয়ে বড় অপমান।"

রাজা সেদিন বুঝেছিল, প্রতিশোধ কখনোই সমাধান নয়। সে যদি সত্যিই বাবার স্মৃতিকে সম্মান করতে চাইত, তাহলে নিজেকে সুস্থ রাখত, কাজ করত, ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করত।

কিন্তু এখন আর খুব দেরি হয়ে গেছে। "রাজা অমরাবতী" নামটা ইতিহাসে থেকে যাবে একজন ভণ্ড যোদ্ধার পরিচয় হিসেবে। আর রাজা খান? সে এখন জেলের অন্ধকার কোঠায়, নিজের ভুলের সাথে মুখোমুখি।

তবে হয়তো এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। জেল থেকে বেরিয়ে সে হয়তো সত্যিকারের একটা নতুন জীবন শুরু করতে পারবে। বাবার স্মৃতিকে সম্মান করার প্রকৃত পথ খুঁজে পাবে।

সেটা হবে রাজা খান হয়ে, রাজা অমরাবতী হয়ে নয়।

রাজা অমরাবতী - শ্রীনা রায়চৌধুরী

এই গল্পটি একটি সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা। নাগপুরের পাচপাওলি থানার পুলিশ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে রাজা খান নামের এই যুবককে গ্রেফতার করে। তার গল্প আমাদের শেখায় যে প্রতিশোধ কখনোই সমাধান নয়, আর নেশা যে নামেরই হোক না কেন, তা সর্বদা ধ্বংসাত্মক।

12/08/2025

হপ্তাদুয়েক আগের এক রোব্বার। ঘুম থেকে উঠে বাগানে সার জল ইত্যাদি দিয়ে, স্নানটান করে চুল আঁচড়ে আগমবাগীশ সিরিজের একটা নতুন গল্প খানিকটা লিখে লাঞ্চের টেবিলে এসে দেখি ভাত আর মৌরিবাটা দিয়ে বিউলির ডাল। সঙ্গে আলুপোস্ত!

জানি গিন্নী মানে, ইয়ে, মানে ভারী শ্রদ্ধেয় ঘটি আর কি। তাই বলে দুপুরে পাঁঠা বা মুরগির বদলে মৌরিবাটা দিয়ে বিউলির ডাল...মানে ব্যাপারটা কেমন ইয়ে ইয়ে দেখায় না?

সে যাই হোক। আমি মিহি করে বললাম, 'হ্যাঁ গো এর সঙ্গে একটু ঘি দেবে? মানে তাহলে গিলতে একটু সুবিধা হত এই আর কী..."

বিশ্বাস করবেন না মাইরি। মহিলা আমাকে জংলী, ইতর, অসভ্য বাঙাল কী না কী বলে গেলেন! ঘি দিয়ে বিউলির ডাল খাওয়া নাকি ভারী গর্হিত অপরাধ, ভারতের জিডিপি দু পার্সেন্ট অবধি পড়ে যেতে পারে এই সব আগড়ম বাগড়ম আরও কত্ত কী! সে ইজ্জতের যাকে বলে ফুল ফালুদা মশাই!

সে যাই হোক। আজ কাজের সূত্রে বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর যাচ্ছিলাম৷ আর কে না জানে, বিষ্ণুপুর গেলে বনলতা রিসর্টে লাঞ্চ করার জন্য একবার পায়ের ধুলো দিতেই হয়! তা এবারেও তাই দিয়েছি। মানে ধুলো আর কি। দিয়ে টিয়ে একটা বাডওয়েইজার নিয়ে বেশ আয়েশ করে বসেছি। টুক টুক চুমুক দিচ্ছি, সঙ্গে মোবাইলে পুনম পান্ডে আর টিনা নন্দীর সমাজ সচেতনতামূলক ভিডিও চলছে, এমন সময় ওয়েটার ভদ্রলোক এসে জিজ্ঞেস করলেন, "খাবারে কী নেবেন স্যার?"

আনমনে বললাম, "মৌরিবাটা দিয়ে বিউলির ডাল আর পোস্তর বড়া।"

বলেই চমকে উঠলাম! এ কী বলে ফেললাম আমি! সেই না নিষাদ-এর পর এই প্রাণমন তোলপাড় করা এই গভীর বাণী আমার মুখ থেকে বেরোলো কী করে? ফ্রাঞ্জ কাফকার মেটামরফোসিস, তার পরেই অভীক সরকারের ঘটিমরফোসিস?

ভাবতে ভাবতে চিন্তায় পড়ে গেছি ফ্রেন্ডস... বাডওয়েইজার, বিউলির ডাল আর পোস্তবড়া... সব ঘন্ট হয়ে গেছে... এই ঘোর সঙ্কট থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনও তরিকা বাতলাতে পারেন কেউ?

মহালয়ার ভোর পর্যন্ত আমার সমস্ত বইতে ৩০% ছাড়। 🙂
বেশিরভাগ বইতে স্বাক্ষর করা আছে 🙂
https://aviksarkar.in/ এ।
চাপে এবং উত্তাপে ওয়েবসাইট কয়লায় পরিণত হলে (কাজ না করলে) কিছুক্ষণ পরে আবার চেষ্টা করবেন, ছাড়ের দাবিতে মাঝে মাঝে কাজ ছেড়ে পালাচ্ছে ওয়েবসাইট।

07/08/2025

Call for Submissions: Contemporary Indian-Language Science Fiction Anthology

We are delighted to announce a new Call for Submissions for all writers of science fiction who celebrate the linguistic and cultural diversity of India.
Following the trailblazing legacy of It Happened Tomorrow—a landmark anthology that brought together science fiction from multiple Indian languages into English—the upcoming volume seeks to explore contemporary voices in Indian science fiction from across the country.
We invite both unpublished and previously published stories for consideration.

Who Can Submit:
• Writers who can translate their own work into English are welcome to submit directly in English.
• Writers are also invited to submit original stories in Assamese, Bangla, Gujarati, Hindi, Kannada, Malayalam, Marathi, Odia, Punjabi, Tamil, Telugu, and Urdu. These will be translated into English for the anthology.
What We Are Looking For:
• Stories grounded in scientific logic and essential accuracy.
• A strong focus on human concerns, character insights, and science-society interfaces.
• While speculative elements are welcome, fantasy must not dominate the narrative.
• Preference will be given to stories with diverse voices, unexpected elements, and fresh perspectives.
Word Limit:
• Maximum 4000 words
Submission Deadline:
• Soft copies must be submitted by 31st October 2025 to: [email protected]
Editor:
• Dr. Sukanya Dutta & Dr. Bal Phondke

26/07/2025

#মাতৃভাষা_১_অন্ধকারের_গভীরে_১

প্রথম পর্ব: স্মৃতির অতলে

বাবার মৃত্যুর পর দশটা বছর কেটে গেছে। দশটা দীর্ঘ বছর। কিন্তু আজও তাঁর শেষ দিনগুলোর কথা মনে পড়লে বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হয়ে বাবা ধীরে ধীরে সবকিছু ভুলে যাচ্ছিলেন। প্রথমে ছোটখাটো জিনিসপত্র, তারপর বন্ধুবান্ধবের নাম, শেষে... শেষে আমার নামটিও।
"তুমি কে?" - এই প্রশ্নটি যখন বাবা আমাকে করেছিলেন, তখন মনে হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী একটা পাথর আমার বুকের উপর চেপে বসেছে।
আমি অভ্র। তাঁর একমাত্র ছেলে। কিন্তু সেদিন তাঁর চোখে আমি ছিলাম একজন অপরিচিত মানুষ মাত্র।

-রনদীপ দত্তচৌধুরী

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্টক মার্কেটে টানা ক্ষতির পর আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না, খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি, সারাক্ষণ মাথা ঝিমঝিম করে। ডাক্তার দেখিয়ে এলাম।
"দেখুন মিস্টার সেনগুপ্ত," ডাক্তার রায় চশমা ঠিক করে বললেন, "আপনার শরীরে চাপের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। একটানা দুই সপ্তাহ সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। কোনো কাজের চিন্তা করবেন না।"
"কিন্তু ডাক্তারবাবু..."
"কোনো কিন্তু নেই। আপনার বয়স এখন চল্লিশের কোঠায়। এই বয়সে শরীরের যত্ন না নিলে পরে আর সামলানো যায় না।"
বাড়ি ফিরে এসে ভাবলাম, এই দুই সপ্তাহ কীভাবে কাটাবো? একঘেয়েমিতে দিন কাটানোর চেয়ে কিছু একটা কাজ করা দরকার। হঠাৎ মনে পড়ল বাবার লাইব্রেরির কথা। বছরের পর বছর ধরে সেই ঘরে ঢুকিনি। ধুলোবালিতে ভর্তি হয়ে গেছে নিশ্চয়।
পরদিন সকালে লাইব্রেরির দরজা খুললাম। একটা পুরনো, বাসি গন্ধ নাকে এসে লাগল। জানালা খুলে দিয়ে আলো-হাওয়া ঢোকার ব্যবস্থা করলাম। তারপর শুরু করলাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।
বাবার সংগ্রহ দেখে অবাক হলাম। এত বই! দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য - কোনো বিষয় বাদ নেই। বেশিরভাগই বাংলা আর ইংরেজি, কিছু সংস্কৃতও আছে। একটা একটা করে বই তুলে ধুলো ঝাড়ছিলাম।
হঠাৎ হাতে এল একটা পুরনো বই - "মানুষের অতীন্দ্রিয় শক্তি ও আধ্যাত্মিক গবেষণা"। বইটার মলাট দেখেই বোঝা যাচ্ছিল খুব পুরনো। কোনো প্রকাশকের নাম নেই, লেখকের নামও স্পষ্ট নয়। যত্ন করে বইটা তুলতে গিয়ে হঠাৎ আমার হাত ফসকে গেল।
পটাং করে বইটা মেঝেতে পড়ল। আর ঠিক সেই মুহূর্তে দেখলাম, বইয়ের ভেতর থেকে একটা হলুদ রঙের কাগজ বেরিয়ে এসে মেঝেতে পড়ে গেছে।
চমকে উঠলাম। এ আবার কী?
কাগজটা তুলে দেখলাম - এটা একটা চিঠি। হাতে লেখা। হাতের লেখা দেখেই চিনতে পারলাম, এটা বাবার লেখা!
বুকটা ধক করে উঠল। এত বছর পর বাবার লেখা কিছু পেলাম! কিন্তু এই চিঠি কার জন্য? কেনই বা এটা বইয়ের ভেতর লুকিয়ে রাখা?

-রনদীপ দত্তচৌধুরী

আমার হাত কাঁপছিল যখন চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলাম...

"প্রিয় অভ্র,
আজ শরীরটা ভালো লাগছে না। মাথায় একটা চাপ চাপ ভাব। কিন্তু তোর সঙ্গে অনেক কথা বলার ছিল।
নন্দিনী চলে যাবার পর তুই ছাড়া আমার আর কেই বা আছে। কিন্তু যে কথাগুলো বলতে চাই, সেগুলো এমন কিছু নয় যা একজন এগারো বছরের ছেলেকে বলা যায়। তাই এই চিঠিগুলো লিখছি। হয়তো ভবিষ্যতে, যখন তুই বড় হবি, তখন এগুলো পড়ে কিছুটা বুঝতে পারবি।
আজকাল ঘুমাতে গেলেই অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখি। চোখ বন্ধ করতেই চারদিকে গভীর অন্ধকার। সেই অন্ধকারের মধ্যে দূরে দুটো চোখ জ্বলজ্বল করে। রাগে ভর্তি সেই চোখ আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি যেন একটা কালো সমুদ্রের উপর দিয়ে হাঁটছি। কিন্তু সেই সমুদ্রে কোনো ঢেউ নেই। স্থির, নিথর জল। আর যতই হাঁটি, সেই চোখগুলোর দূরত্ব কখনো কমে না।
এই কারণেই ঘুমাতে ভয় লাগে। তবুও আজ একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে দেখি। চিঠি লিখতে লিখতেই ঘুম এসে যাবে।"

এখানেই প্রথম চিঠিটা শেষ। কিন্তু কাগজের উল্টো পিঠেও কিছু লেখা আছে। আরও পড়ার আগে একটু থামলাম। মা নন্দিনীর কথা লেখা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মা যখন আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, আমার বয়স তখন মাত্র এগারো। কেন গিয়েছিলেন, সেটা আজও জানি না। বাবা কখনো বলেননি।
কিন্তু এই চিঠিতে এমন কী আছে যা আমাকে এগারো বছর বয়সে বলা যেত না? কৌতূহল আর উৎকণ্ঠায় পেট চুরচুর করছে।

-রনদীপ দত্তচৌধুরী

কাগজটা উল্টে আবার পড়তে শুরু করলাম...

"শাস্ত্রে বলে, যখন মানুষের কোনো ইন্দ্রিয় নষ্ট হয়ে যায়, তখন বাকি ইন্দ্রিয়গুলো আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই অন্ধ মানুষদের শোনার ক্ষমতা বা ঘ্রাণশক্তি সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি হয়। ধর্মশাস্ত্রে আরও বলা আছে, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বা অতীন্দ্রিয় শক্তি জাগ্রত করতে হলে আগে পাঁচটি ইন্দ্রিয়কে বিসর্জন দিতে হয়। একমাত্র তবেই ঈশ্বরের সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব।
সাধারণ মানুষের পক্ষে ধ্যানের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। কিন্তু যদি কৃত্রিমভাবে, সার্জারির মাধ্যমে পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যায়, তাহলে কী ঘটতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্যই আমরা কয়েকজন বিজ্ঞানী একসাথে এক অভূতপূর্ব পরীক্ষা করেছিলাম। সাল ছিল ১৯৮৩।"

১৯৮৩! সেই সময় আমার জন্মই হয়নি। বাবা তখন তরুণ, সবে গবেষণার জগতে পা দিয়েছেন। কিন্তু কী এমন পরীক্ষা করেছিলেন যার কথা আমাকে ছোটবেলায় বলা যেত না?
হাত কাঁপতে কাঁপতে পড়তে থাকলাম...
কিন্তু পরের অংশ পড়ে আমার মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। বাবা লিখেছেন এমন এক পরীক্ষার কথা যা শুনলে যে কারো গা শিউরে উঠবে। একজন বৃদ্ধ মানুষের সমস্ত ইন্দ্রিয় কেটে দেওয়া!

-রনদীপ দত্তচৌধুরী

কিন্তু আরও ভয়াবহ কথা বাকি ছিল। আমি জানতাম না যে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা আমার জন্য অপেক্ষা করছে চিঠির শেষ লাইনগুলোতে...

"অভ্র, এই চিঠি যদি তোর হাতে আসে, বুঝে নিস আমার কিছু একটা হয়েছে। এখন তোর জানা দরকার যে সেই বৃদ্ধ লোকটি ছিল তোর দাদু - আমার বাবা!"
চিঠি পড়ার সাথে সাথে আমার হাত থেকে কাগজটা পড়ে গেল। মাথাটা ঘুরে উঠল। কী লিখেছেন বাবা! আমার দাদু? কিন্তু আমি তো দাদুকে কখনো দেখিনি। বাবা সবসময় বলতেন দাদু আমার জন্মের আগেই মারা গেছেন।
তাহলে এই চিঠিতে যার কথা লেখা, তিনিই আমার দাদু? যার সমস্ত ইন্দ্রিয় কেটে দেওয়া হয়েছিল? যিনি মৃতদের সাথে কথা বলতে পারতেন?
না, এটা সম্ভব নয়। বাবা নিশ্চয় কোনো কারণে মিথ্যা লিখেছেন। কিংবা স্মৃতিভ্রংশ রোগের কারণে তাঁর মস্তিষ্ক কোনো কাল্পনিক গল্প তৈরি করেছিল।
কিন্তু তাহলে এই চিঠি এত যত্নে বইয়ের ভেতর লুকিয়ে রাখা কেন?
আমার হাতটা আবার কাগজের দিকে গেল। বাকি অংশ পড়তে হবে। যত ভয়ঙ্করই হোক না কেন।
চিঠির শেষাংশে বাবা লিখেছেন...

"সেই পরীক্ষার পর থেকে তাঁর শরীরে কোনো পরিবর্তন হয়নি। শ্বাস নেন না, কিন্তু মৃতও নন। আমার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত প্রতিদিন তাঁকে দেখতে যেতাম। আশ্চর্যের ব্যাপার, সেই দিন থেকে তাঁর বয়স একটুও বাড়েনি। অথচ আমি তাঁর চেয়ে অনেক বেশি বুড়ো হয়ে গেছি।
আসল কথা হল, সেই গবেষণাগারটি আমাদের নিজেদের বাড়িতেই ছিল। আমরা এমন সব পরীক্ষা করতাম যা সাধারণ মানুষ জানলে বুঝতো না। তাই সবকিছু গোপন রাখতে হতো।
অদ্ভুত ব্যাপার হল, সেই পরীক্ষায় যারা অংশ নিয়েছিল, তাদের সবাই স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
শুধু আমি ছাড়া..."

এখানেই চিঠি শেষ। কিন্তু আমার মনে হাজারো প্রশ্ন। বাবা কী বোঝাতে চেয়েছেন? আমাদের বাড়িতে গবেষণাগার? আমার দাদু এখনো জীবিত কিন্তু অচেতন অবস্থায়?
এসব কি সত্যি, নাকি একজন অসুস্থ মানুষের কল্পনা?
কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে। বাবা এই চিঠি লিখেছিলেন স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে। তখন তাঁর মস্তিষ্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল।
তাহলে কি সত্যিই...?

-রনদীপ দত্তচৌধুরী

না। আমি এসব ভাবতে পারি না। এগুলো নিশ্চয়ই কোনো গল্প বা কাল্পনিক কাহিনী।
কিন্তু তাহলে সেই গবেষণাগারের কথাটা কী? বাবা বলেছেন সেটা আমাদের বাড়িতেই ছিল। আমাদের এই বাড়িটা অনেক পুরনো। কয়েকটা ঘর আছে যেগুলোতে আমি কখনো ঢুকিনি। বাবা সেগুলো সবসময় বন্ধ রাখতেন।
হয়তো সেই ঘরগুলোতে কোনো সূত্র পাওয়া যেতে পারে।
কিন্তু যদি সত্যিই কিছু পাই, তাহলে?
যদি আবিষ্কার করি যে আমার দাদু সত্যিই কোথাও জীবিত আছেন, তাহলে কী করব?
এসব ভাবতে ভাবতে বুঝলাম, আমার হাত কাঁপছে। মুখ শুকিয়ে গেছে।
কিন্তু সত্যটা জানতেই হবে। যা-ই ঘটুক না কেন।
সিদ্ধান্ত নিলাম, আজই বাড়ির সেই বন্ধ ঘরগুলো খুলে দেখব। যদি সত্যিই কোনো গবেষণাগার থেকে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই কোনো চিহ্ন পাব।
কিন্তু আমি জানতাম না যে সেই অনুসন্ধান আমাকে এমন এক সত্যের মুখোমুখি করবে, যা আমার পুরো জীবনটাই পাল্টে দেবে...

-রনদীপ দত্তচৌধুরী

[প্রথম পর্ব সমাপ্ত - দ্বিতীয় পর্বে দেখুন: অভ্র কি খুঁজে পাবে সেই রহস্যময় গবেষণাগার? আর যদি পায়, তাহলে সেখানে তার জন্য কী অপেক্ষা করছে?]

26/07/2025

https://matribhasa.com/product/deep-sahitya-patrika-1432/

24/07/2025

আজ শ্রাবণ মাসের চিতালগী অমাবস্যা বলে।

আমার ছোটোবেলার ঠাকুমার কথা মনে পড়ছে। তিনি বলতেন, “আজকের রাতে বাইরে বেরোবি না। আজ জগন্নাথ সাজছে। কেউ যদি উঁকি মারে, তার চোখ নষ্ট হয়ে যাবে।” আমি তখন ভয়ে দরজা বন্ধ করে দিতাম।

“চিত” মানে অলঙ্কার, আর “লাগি” মানে বসানো।

রথযাত্রা, স্নানযাত্রা, হেরা পঞ্চমী—এসবের ভিড়ভাট্টার পর জগন্নাথ, বলভদ্র আর সুভদ্রা থাকেন সাধারণ সাজে। স্নানযাত্রার সময়ে তাঁদের শরীরের সব রত্ন, সব অলঙ্কার খুলে ফেলা হয়। তারপর ভক্তদের সামনে তাঁরা থাকেন একেবারে সহজ সরল বেশে। পরে আজকের রাতে, অমাবস্যার আঁধারে, শ্রীমন্দিরের অন্তঃপুরে দেবতারা ফের তাঁদের রত্নময় সাজ পরে নেন।

জগন্নাথের “ব্রহ্মজ্যোতি” হীরার চিতা, বলভদ্রের “নীলচিতা”, সুভদ্রার “মানিকচিতা”—এই অলঙ্কারগুলো বছরের বাকি সময়ে একেবারে তোলা থাকে। রথযাত্রা থেকে শুরু করে যত অনুষ্ঠান শেষ হোক না কেন, এগুলো আর ব্যবহার করা হয় না।

শুধু আজকের এই রাতেই দাইতা-পাণ্ডারা সেই অলঙ্কারগুলো বের করে নিয়ে আসেন। কেউ দেখতে পায় না, কেউ দেখতেও পায় না—তবু সবাই জানে, আজকের রাতেই দেবতারা গোপনে সাজছেন।

শোনা যায়, এই রত্নচিতা এসেছে সমুদ্র মন্থনের রত্নভাণ্ডার থেকে। কালের পর কাল ধরে চলে আসা এই অলঙ্কার কেবল গয়না নয়—এ এক আশীর্বাদের প্রতীক। তৃতীয় নয়নের মতো আকারে গড়া সেই অলঙ্কার যখন জগন্নাথের গায়ে বসানো হয়, তখন যেন তিনি আমাদের ভেতরের অন্ধকারও দেখে নিচ্ছেন আর আলোর বর্ষণ করছেন। — রনজিৎ দত্তচৌধুরী

আজকের দিনের আরেকটা গন্ধও আছে—চিতৌ পিঠার গন্ধ।
ওড়িশার বাড়িতে বাড়িতে আজও ভক্তেরা নতুন ধানের প্রথম দানা থেকে তৈরি চালের ওই পিঠা উঠোনে রেখে বলেন—
“মহাপ্রভু, এই পিঠা তুমি গ্রহণ করো।”
বিশ্বাস করা হয়—এই নিবেদন করলে ক্ষেতের পোকামাকড় দূরে থাকে, ফসল ভালো হয়, আর ঘরে শান্তি নেমে আসে।

মন্দিরের ইতিহাসে লেখা আছে—এক সময় এই রত্নঅলঙ্কারগুলো ব্যবহার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
অনেক বছর পরে স্বয়ং শঙ্করাচার্য এসে বলেছিলেন— “এগুলো তো দেবতার নিজের দান, এদের পরানো বন্ধ কেন? এগুলোই তো তাঁর ঐশ্বর্য।”
সেই কথার পর থেকেই আবার এই অলঙ্কারগুলো প্রতি বছর দেবতাদের গায়ে বসানো শুরু হয়।

— রনজিৎ দত্তচৌধুরী

ভাবো তো, আজকের রাতে একদিকে শ্রীমন্দিরের অন্তঃপুরে রত্নচিতা বসানোর গোপন আচার, আর অন্যদিকে কৃষকের মাঠে নতুন ধানের পিঠার গন্ধ। দেবতা আর মানুষ, মন্দির আর মাঠ—এক সুতোয় বাঁধা পড়ে আছে।

এক গ্রামীণ গল্পও আছে—এক কৃষক পাকা ধানের প্রথম শিষ আজকের দিনে জগন্নাথের পায়ে দিলেন। রাতে স্বপ্নে দেখলেন, মহাপ্রভু তাঁর ক্ষেতে দাঁড়িয়ে হাসছেন। পরের বছর তাঁর ক্ষেতের ফসল দ্বিগুণ হলো। এই গল্প আজও ঘুরে বেড়ায় গ্রামের মানুষের মুখে মুখে।

তুমি যদি ভাবো—আমি তো শ্রীমন্দিরে নেই, আমার কী?

তবে জানো, এই বিশ্বাসের কোনও দূরত্ব নেই। তুমি তোমার ঘরের ঠাকুরঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে দাও, রান্নাঘরে চিতৌ পিঠা বানাও, আর মন থেকে একবার বলো—“জয় জগন্নাথ।” তুমি তখনই এই অলঙ্কার বসানোর গোপন আচারটিতে যুক্ত হয়ে যাবে।

আজকের রাতে আমার একটাই প্রার্থনা—যে অলঙ্কার আজ মহাপ্রভুর গায়ে বসেছে, সেই অলঙ্কারের আলো যেন তোমার জীবনে পৌঁছায়। তোমার জীবনের অন্ধকার যেন সেই আলোয় কেটে যায়। তোমার ঘরের অন্ন, তোমার ক্ষেতে ধান, তোমার মুখের হাসি যেন সেই আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

জয় জগন্নাথ। জয় মা।

— রনজিৎ দত্তচৌধুরী

10/06/2025

বাতিঘরের ধারে –

কলকাতার এক পুরোনো নদীতীরে, গঙ্গার ধারে একটা কাঠের বেঞ্চ। আলো-আঁধারি ভরা গোধূলির আকাশ। শহরের ল্যাম্পপোস্টগুলো যেন প্রাচীন প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে, তাদের হলুদ আলো নদীর জলে ঝরে পড়ে, ঠিক যেন কোনো চিঠি—যা কখনো পাঠানো হয়নি।

সে বসে আছে সেখানে। একা।

চাকরির ব্যস্ততা, শহরের হট্টগোল, বন্ধুবান্ধবের উপচে পড়া স্মৃতি—সবকিছুর মাঝেও আজ সে নিঃসঙ্গ। তার চোখের নিচে ক্লান্তির ছায়া, ঠোঁটে জমে থাকা কিছু না-বলা কথা, আর বুকের ভিতর একখণ্ড জমাট যন্ত্রণা।

জলরেখার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে সে যেন সময়কে ছুঁয়ে ফেলল।

অনির্বাণের ঠোঁটে ব্যথা মেশানো হাসি খেলে যায়। একটা সময় ছিল, যখন তারা দু’জনে এখানেই বসত। হাঁটত, হাসত, স্বপ্ন দেখত।

কিন্তু সে জানত না, তারই অন্যমনস্ক এক বিকেলে, তিস্তা সত্যিই কবিতা হয়ে যাবে—একটি বন্ধ খামে, একটি শেষবার দেখা চিঠিতে।

চোখ দুটো অদ্ভুতভাবে টলমল করে উঠল।

চারপাশে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। পাখিরা থেমে গেছে। শহর গুঞ্জন ফেলে নিস্তব্ধতায় জড়িয়েছে নিজেকে।

আর সেই নীরবতার মাঝে অনির্বাণের মনে হলো—নদী যেন ফিসফিস করে ডাকে, তিস্তার গলায়। সেই স্বর, যা শুধু ভালোবাসার মানুষ শুনতে পায়।

সে উঠে দাঁড়ায় না।

সে কিছু বলে না।

শুধু নদীর জলে চোখ রেখে ভাবে—

"ভালোবাসা মরেনা। সে কেবল অন্য আলোয়, অন্য জলে, অন্য বুকে বেঁচে থাকে..."

#নিজেকে_পড়া #স্মৃতি #নদী_ও_নিঃসঙ্গতা

কলমে - অনির্বাণ গুহ

04/06/2025

Due to non-exclusive licensing, multiple audio adaptations of the same story exist. The one with the highest views is selected.

https://aviksarkar.in/audio/

Note: The Sunday Suspense team has combined the stories ভোগ and শোধ into a combined audio adaptation, replacing the previous separate versions.

Note: Chakrasambarer Puthi does not mention "Nibaran Chakrabarty"; It's based on characters you will find in the same arc.

27/05/2025

(স্থান: কলেজ ক্যান্টিন, বিকেল বেলা)

সায়নী: "তুই আজ ক্লাস করলি না?"
অর্ক: "না রে, ঘুম ভাঙতেই ১১টা বাজে। তার ওপর বৃষ্টি দেখেই মনটা ঢিলে হয়ে গেল।"
সায়নী: "ভালো বাহানা। তবে ক্যান্টিনে ঠিক টাইমে হাজির!"
অর্ক: "তুই থাকলে না আসি? অসম্ভব।"
সায়নী: "ধুস। এইসব বুলি রাখ তোর প্রেমপত্রের জন্য।"
অর্ক: "তা হলে লিখে দিই একটা?"
সায়নী: "তুই যদি প্রেমপত্র লেখিস, আমি সেটা ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে দোব।"
অর্ক: "তা দে। caption লিখব — ‘The day she finally noticed me’।"
সায়নী: (হেসে) "তুই একটা কেস! সারাদিন ফাজলামি ছাড়া কিছু বুঝিস না?"
অর্ক: "সত্যি বলছি সায়নী, তোর সাথে কথা না বললে দিনটাই ফাঁকা ফাঁকা লাগে।"
সায়নী: (চুপ করে, একটু সময় নিয়ে) "আমারও।"

(একটু চুপচাপ। দুজনেই কফির কাপ ঘাঁটছে।)

অর্ক: "তুই হঠাৎ থেমে গেলি কেন?"
সায়নী: (হালকা হাসি) "ভাবছিলাম, বলবো কি না…"
অর্ক: "কি?"
সায়নী: "একটা জিনিস… ভাবছিলাম, বললে হয়তো তুই রেগে যাবি, বা..."
হঠাতই সায়নী কি যেন ভেবে থমকে গেল।

অর্ক: "উফ্, বল না। এরকম করলে আমার এবার টেনশন করবে…"
সায়নী: (ধীরে) "আমার ..."
অর্ক: "তুই আবার হঠাৎ থেমে গেলি কেন?"
সায়নী: (হালকা হাসি) "ও কিছু না… হঠাৎ মাথায় একটা পুরনো কথা চলে এল।"
অর্ক: "তুই আবার এত শত ভাবনা-চিন্তা করা শুরু করে দিলি কবে থেকে?"
সায়নী যেন শুনেও শুনতেও পেল না।

সায়নী: (খুবই আস্তে) "হয়তো হচ্ছি ধীরে ধীরে।"
অর্ক: "বুঝলাম না।"

(ঠিক তখনই তাদের টেবিলের পাশে এসে দাঁড়ায় তনিমা — সায়নীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী)

তনিমা: "দুজন এত গম্ভীর কেন? মনে হচ্ছে যেন কেউ ব্রেকআপ করে বসে আছে!"
অর্ক: (হেসে) "আমি তো শুরুই হল না, ব্রেকআপ কোথা থেকে হবে?"
সায়নী: (ম্লান হাসি দিয়ে) "তুই চুপ থাক, বেশি কথা বলিস না।"
তনিমা: "আচ্ছা সায়ু, তুই কাল হাসপাতালে যাবি তো? তোর রুটিন চেকআপ ছিল না?"
সায়নী: (এক মুহূর্ত থেমে) "হ্যাঁ... যাব। কাল দুপুরে।"
অর্ক: "তুই অসুস্থ? কিছু বলিসনি তো কখনো?"
সায়নী: (হেসে) "না, না... ছোটখাটো জিনিস। সিরিয়াস কিছু না। মেয়েদের চেকআপ... তোকে জানতে হবে না।"
তনিমা: (চোখে তাকিয়ে) "সিরিয়াস কিছু না, এই বলে কথা ঘোরাতে চাস না... ওকে তো কিছুই বলিস না!"
সায়নী: "তুই একটু চুপ করবি?"
প্রায় চোখ রাঙিয়ে সায়নী বলে ওঠে। তনিমা মুখ নিচু করে চুপ করে যায়।

*****************************************************************

নিরব ভালোবাসার যে গল্পটা কলেজ ক্যান্টিনে শুরু হয়েছিল, সেটা শেষ হয়নি সেখানেই। এই গল্পের পটভূমি গড়েছিল ইউপিএসসি কোচিং সেন্টারের ক্লাসরুমে। সায়নী আর অর্ক — দুজন ভিন্ন বিভাগে, ভিন্ন স্বপ্ন নিয়ে কলেজ শুরু করেছিল। একজন ইংরেজি সাহিত্যের, অন্যজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের। সরাসরি পরিচয় কলেজ ক্যান্টিনে, কিন্তু বন্ধু হয়ে ওঠা হয়েছিল একটা বিকেলের কোচিং ক্লাসে।

দুজনেই তখন ইউপিএসসির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। পুরোনো বন্ধুতা নতুন এক সমান্তরাল জীবনের দিকে এগোচ্ছিল। একসাথে নোটস বানানো, মক টেস্ট দেওয়া, ক্লাস শেষে ঘুরতে যাওয়া — জীবনের একটা প্রান্তে এসে, একে অপরের মতো কাউকে এত কাছের মনে হয়নি।

প্রথম ধাপ, রিটেন এক্সাম — দুজনেই পাস করল। সেলিব্রেশনের দিনটা ছিল কলেজ ক্যান্টিনেই। টেবিলের উপর দুটো কাপে ধোঁয়া ওঠা চা, আর হাসির শব্দে ভরে উঠেছিল সেই বিকেল।

তারপর দিল্লি।

ইন্টারভিউর আগে অনেকেই আসে রাজেন্দ্র নগর, করপতি কোচিং সেন্টারে। অর্ক এসে উঠেছিল এক ছিমছাম হোস্টেলে। সায়নী বলেছিল, "আমি দুদিন পর পৌঁছচ্ছি।" ওদের আবার দেখা হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু সায়নী এল না।

প্রথম এক-দুদিন ফোনে টুকটাক কথা হয়। তারপর সায়নী ফোন ধরতে থাকে কম, মেসেজের উত্তর হয় দেরিতে। অর্ক জানে, ও এমন না। কিন্তু ওর কাছে এত ভাবার সময় তখন কোথায়।

ইন্টারভিউর আগের রাতে, অর্ক লিখেছিল:

"কাল ইন্টারভিউ, ভয় করছে। কি করছিস তুই এখন!"

*****************************************************************

রাত তখন প্রায় এগারোটা। ফোনের স্ক্রিনে একটা পরিচিত নাম জ্বলজ্বল করে উঠল — “সায়নী কলিং”।

প্রায় এক সপ্তাহ পর ওর ফোন। বুকের ভিতরটা ধড়াস করে উঠল। অর্ক তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করল।

অর্ক: "সায়নী?"
সায়নী: (হালকা গলা, কাশির শব্দ ফাঁকে) "হ্যাঁ... তুই ঘুমিয়ে পড়িসনি তো?"
অর্ক: "না রে, তোকে নিয়েই ভাবছিলাম। তুই এলি না... কিছু বলিসও না। হঠাৎ করেই..."
সায়নী: (হালকা হাসি) "এই জন্যই তো কল করলাম। অনেকদিন বাদে তোর ভয়েসটা শুনে ভালো লাগল।"
অর্ক: "তুই কাশছিস? শরীর ঠিক তো? আমি সত্যিই চিন্তা করছিলাম।"
সায়নী: (একটু থেমে) "একটু সর্দি লেগেছে... হাসপাতালেও গিয়েছিলাম। এখন ঠিক আছি। বিশ্রাম নিচ্ছি।"
অর্ক: "তুই বললি না যে তুই দুদিন পর আসবি!"
সায়নী: "হ্যাঁ, প্ল্যান ছিল। কিন্তু শরীরটা গড়বড় করল। তারপর ভাবলাম, এইবার বাদ দিই... তুই তৈরি তো কালকের জন্য?"
অর্ক: "হ্যাঁ। ভয় করছে... তুই থাকলে দু এক কেজি কম ভয় হত।"
সায়নী: (কেশে) "তুই দে। তোর হয়ে আমারও স্বপ্ন। আমি জানি তুই পারবি। আমি হয়তো এবার পারলাম না... কিন্তু আমি ঠিক করব। পরের বার আমি আসব। তখন তুমি স্যারের মতো বসে থাকবে, আর আমি বলব — 'স্যার, আমার সিভিল সার্ভিসে চান্স হয়েছে'।"
অর্ক: (চোখ ভিজে আসে) "ধুর পাগল। সব সময় নাটক করে..."
সায়নী: "সব হবে অর্ক। তুই এখন শুধু কালকের দিনটা নিয়ে ভাব। আর একটা কথা — ইন্টারভিউ শেষ হলে, কালকে তুই ফিরে এলে, ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ চা খাব তোর সাথে, আমাদের জায়গাটায়।"
অর্ক: "ঠিক আছে... "
সায়নী: (খুব নরম গলায়) "দেখা হবে অর্ক... কথা দিচ্ছি।"

কলটা কেটে গেল। অর্ক জানত না, ওটাই ছিল শেষ কথা।

পরদিন তনিমার ফোন এল...
*****************************************************************

বৃষ্টিভেজা এক দুপুর।
কলেজ অনেক পাল্টে গেছে — ক্যান্টিনে এখন প্লাস্টিকের চেয়ার, দেয়ালে LED ডিসপ্লে। চা-ও এখন পেপার কাপে মেলে।
তবু একটা টেবিল, জানালার ধারে, এখনও টিকে আছে।

টেবিলের পাটায় একটু ঝাপসা করে খোদাই করা আছে — S+O।
একটা ভোতা পেনের ডগা দিয়ে ঘষতে ঘষতে সায়নী হেসে বলেছিল — "S আর O — Sulfur আর Oxygen জানিস তো? S₂O হয় Sulfur monoxide। খুবই instable, একসাথে থাকে না বেশি সময়।"

অর্ক চুপ করে শুনেছিল। তারপর হেসে বলেছিল — "তাহলে কি আমাদেরকে chemistry এতটাই ভুল?"

সায়নী তখন জানালার বাইরে তাকিয়ে বলেছিল — "না রে... ঠিকই আছে chemistry । শুধু compound টা instable।"

তারপর কত কী বদলেছে।
ইন্টারভিউটা পাশ করেছিল অর্ক।
পরের বছর সায়নী কিন্তু পারেনি — কারণ চুপিচুপি হারিয়ে গিয়েছিল সায়নী। এক কাপ চা, একটা খালি চেয়ার, আর না বলা কিছু কথা রেখে… সবটাই রেখে।

*****************************************************************
ইন্টারভিউ শেষ হয়েছিল বিকেল পাঁচটা নাগাদ। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে অর্ক প্রথমবার যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল অনেকদিন পর।

বেরিয়ে এসে প্রথম যে কাজটা করেছিল, সেটা ছিল ফোনটা হাতে নেওয়া।

সায়নী।

ওর ইন্টারভিউটা খুবই ভালো হয়েছে! এই আনন্দটা সায়নীকে না বলেই আর রাখা যাচ্ছে না।

ইন্টারভিউয়ের দিন বলে ফোনটা সাইলেন্টে রেখেছিল। সে কল করল — একবার, দু’বার, তিনবার…
বারবার একই ভেসে ওঠে — Switched off.

হয়তো বিশ্রাম নিচ্ছে Airplane Mode করে দিয়ে, বা হয়তো ফোনটা চার্জে নেই — এই ভেবে নিজেকে বুঝিয়েছে বারবার। তবু, কোনো এক অদৃশ্য টান বলে দিচ্ছিল, কিছু একটা ঠিক নেই।

বিকেলে কফি হাতে হোস্টেলের ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতেই ফোনটা কাঁপল।
তনিমা কলিং...

ফোনটা ধরতেই ওপ্রান্তে তনিমার কণ্ঠ — গলা ভারী, শ্বাস ভার।

তনিমা: "...অর্ক... শুনতে পারছিস?"
অর্ক: "হ্যাঁ, বল! কী হয়েছে?"
তনিমা: "সায়নী... আজ ভোরে চলে গেছে।"
অর্ক: "...কি... কি বলছিস তুই?"
তনিমা: "তুই জানতিস না... জানার কথাও না। ও কাউকে বলতে দেয়নি... এমনকি তোকে তো একেবারেই না। ওর ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়েছিল মাস ছয় আগে। প্রথম থেকেই ক্রিটিক্যাল স্টেজে ছিল, তারপর ধীরে ধীরে আরো ছড়িয়ে পড়ে। ইদানীং খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। কিন্তু সব চাপা দিয়ে রেখেছিল — শুধু একটাই কারণে, তুই যেন ফোকাস হারাস না।"
অর্ক: (নিস্তব্ধ হয়ে) "তাই সে... তাই ফোন কম করত..."
তনিমা: "তোর ইন্টারভিউর আগের রাতে, ওকে জোর করেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।
কিন্তু সে তোর সঙ্গে একটা শেষবার কথা বলতে চেয়েছিল।
ও বলেছিল, যদি পারে, ফোন করবে... "
অর্ক: (চোখ ভেজা গলায়) "হ্যাঁ, আমায় ফোন করেছিল।... বলেছিল, সে ভালো আছে। বলেছিল, পরের বছর সে পাশ করবে। বলেছিল... দেখা হবে কিন্তু ও তো জানত, সেটা হবে না...।"

*****************************************************************

সেই টেবিলে প্রতি বছর, ঠিক এই দিনে, ১ জুলাই, অর্ক ফিরে আসে।

বয়স এখন তিপ্পান্ন। পেছনে দুই দশকের প্রশাসনিক জীবন, পদক, সম্মান — সবকিছুর ভেতরে একটা দিনই ক্যালেন্ডারে আলাদা করে গোল করে রাখা।

আজও এসেছে। ধূসর পাঞ্জাবি, চোখে পাতলা চশমা, হাতে নোটবুক।
সামনে এক কাপ লিকার চা।

চুপচাপ বসে থাকে।

চারপাশে কোলাহল, ক্যাম্পাসে নতুন মুখ, প্রেম, হাসি, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা।
তবু অর্কের কাছে সময় যেন আটকে আছে —
সেই একটা ফোনকলে।

কলমে - অনির্বাণ গুহ

Address

Shyama Charan Dey St, College Street

700073

Website

https://www.matribhasa.com/

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Matribhasa posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Matribhasa:

Shortcuts

Want your business to be the top-listed Media Company?

Country:

City:

22/08/2025

12/08/2025

07/08/2025

26/07/2025

26/07/2025

24/07/2025

10/06/2025

04/06/2025

27/05/2025

Address

Website

Alerts

Contact The Business

Shortcuts

Share