23/10/2025
///একটি অস্বাভাবিক মৃত্য, আরএসএস ও সম্পর্কের অধিকার///
সায়ক হালদার
আরো এক অস্বাভাবিক মৃত্যু, যা প্রমাণ করে আরএসএস-এর এখনো অবধি রমরমিয়ে চলা মোটেও স্বাভাবিক না। বছর ছাব্বিশের আনন্দু আজির শিডিউল্ড ইনস্টা পোস্ট জানায় ৩/৪ বছর বয়সে আরএসএস-এ যোগদানের সময় থেকেই তাঁর সাথে যৌন নির্যাতন শুরু হয়। বিভিন্ন ক্যাম্প চলাকালীন তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতনও চলে। তিনি বহু দিন যাবত এসকল নির্যাতনের ফলস্বরূপ OCD induced anxiety ও depression-এ ভুগছিলেন এবং গত ৯ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার তিরুবনন্তপূরম-এর থাম্পানুরের এক লজে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। ১৫ পাতার চিঠিতে তিনি তাঁর এই চরম সিদ্ধান্তের জন্য নিজের মার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং NM নামে এক ব্যক্তির সম্পর্কে অভিযোগ জানিয়েছেন যিনি আজির ওপর ক্রমাগত ও নির্যাতন চালিয়েছিলেন। তিনি ওনার প্রতিবেশী তথা 'ভাইয়ের মতো ' তথা আরএসএস ও বিজেপি-র এক সক্রিয় সদস্য। সবথেকে ভয়ঙ্কর কথা হল, আনন্দু তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেন যে কেউ তাঁর কথা বিশ্বাস করবে না কারণ তাঁর কাছে কোনো প্রমাণ নেই এবং এমন সম্ভাবনাও আছে যে তাঁর এই সিদ্ধান্তের জন্য তাঁর বোন আম্মু, যিনি ইন্টারকাস্ট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ, তাঁকে দোষারোপ করা হতে পারে। তিনি আরো জানিয়েছেন যে এমন বহু মানুষকে তিনি চেনেন যাদের সাথে এমনটা হয়েছে এবং ক্রমাগত হয়ে যাচ্ছে।
আরএসএস জাতীয় সকল আদর্শ বা ঐ মার্কা মিশনগুলির অন্যতম এজেন্ডা থাকে সিস-হেটেরো যৌনতা ছাড়া অন্য সকল কিছুকেই অস্বাভাবিক দেগে দেওয়া। যৌন শিক্ষা অস্বাভাবিক তথা ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিকর, ভালো - খারাপ স্পর্শের শিক্ষার কথা মুখে আনা যায় না, এবং লিঙ্গ সাম্যের কথা বা অন্য যৌনতার কথা তো যবন ম্লেচ্ছ অস্পৃশ্য শিক্ষকদের মতোই বর্জনীয়। এসকল দলের মধ্যে কোনো Complain Committee-র আশা করা হাস্যকর। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়, এ সকল সংগঠন ঘেঁষা স্কুলগুলোতে এমন সব বইপত্র পুরস্কার হিসেবে দেখেছি যেখানে যৌন শিক্ষার কুফল হিসেবে teenage pregnancy-কে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদঘুটে ও উদ্ভট বীর্যধারণ (পড়ুন semen retention)-এর উল্লেখ রয়েছে, তাতে নাকি গায়ে ভয়ঙ্কর জোর হয়,আর হস্তমৈথুনের মত নিরাপদতম যৌন আচরণকে ক্ষতিকারক দেগে দেওয়া আছে। কিন্তু কোথাও উল্লেখ নেই বয়সে বড় কেউ লিঙ্গ নির্বিশেষে বাজে স্পর্শ করলে কি করতে হয়, বা বাবাজিদের কেউ গা হাত মালিশের নাম করে যে অদ্ভুত আচরণ করছে, যা সেই শিশুটির সেই মুহূর্তে অদ্ভুত লাগছেও, তা আসলে কি, এবং তা হলে তার কাকে জানানো উচিৎ।
আমার এক শ্রদ্ধেয়া শিক্ষিকা, এমনই এক অল বয়েজ স্কুলে চাকুরীরতা, যেখানে তাঁকে রীতিমতো লড়াই করে আলাদা মেয়েদের ইউরিনাল ও প্যাডের বাস্কেট আদায় করতে হয়েছিল। তাঁর প্রতি উড়ে আসা মন্তব্যসমূহ ও মাঝে অন্যান্য পার্টটাইম শিক্ষিকাদের প্রতি ছাত্র - শিক্ষকদের লকার রুম বিষয়ক মন্তব্য/ইঙ্গিত একরকম প্রমাণ করে যে এ ধরনের জায়গাগুলিতে নারীবিদ্বেষ ও লিঙ্গ অসাম্য প্রায় নিশ্চিত। এবং কে না জানে, এক বিদ্বেষের হাত ধরেই আসে আরেক তীব্রতর বিদ্বেষ। চলে ধর্ষণ ও ধর্ষকামী মন্তব্য। অন্যতর স্ব অভিব্যক্তি বা যৌন অভিব্যক্তি দেখলেই তাকে চ্যালেঞ্জ জানানো এবং তাকে রীতিমতো হয়রান করাই এ সকল space-এর প্রিয় হবি হয়ে দাঁড়ায়।
রামধনু সম্প্রদায় সম্পর্কে সচেতনতাই ধর্ষকামী আচরণের বদলে সুস্থ ও পারস্পরিক সম্মতি সম্পন্ন সম্পর্ক স্থাপনে সাহায্য করতে পারে। তাই আনন্দু আর্জি জানিয়েছেন বাবা মায়েরা যেন নিজেদের সন্তানদের আরএসএস জাতীয় সংগঠনে না পাঠান। বাবা মায়েরা শুনবেন কি? নাকি কোনো অস্পষ্ট আদর্শের কাছে আরো হাজারো শিশু - কিশোর নির্যাতিত হতে থাকবে?...