01/07/2025
:
🔹 সপ্তাহান্তের স্বপ্নভ্রমণ – Capitola Beach 🔹
১৪ই জুন, ২০২৫, শনিবার।
এক ঝলমলে শনিবারে প্রশান্ত মহাসাগরের কূলে একটা ছুটির বেলা কাটাতে আমরা দল বেঁধে বেরিয়ে পড়লাম। এবারের গন্তব্য – ক্যাপিতোলা বীচ (Capitola Beach)! ফ্রেমন্ট থেকে স্রেফ ৮৭ কিলোমিটার, জিপিএস জানালো এক ঘন্টার সামান্য বেশি পথ। সান হোসে পর্যন্ত চেনা ফ্রিওয়ে ধরে গাড়ি ছুটল, তারপর প্রবেশ করলাম কিছুটা অচেনা কিন্তু মন মুগ্ধ করা এক নৈসর্গিক পথে। সান্তাক্রুজের রাস্তা পেছনে ফেলে এগিয়ে চললাম, মনে পড়ল আমার প্রিয় '১৭ মাইলস ড্রাইভ'-এর কথা, যেখানে দশ বছর আগে মন হারিয়েছিলাম।
পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালো অপ্রত্যাশিত এক যানজট। হয়তো সামনেই কোনো বিপত্তি ঘটেছে। বাধ্য হয়ে ফ্রিওয়ে ছাড়তে হলো। কিন্তু এ এক নতুন আবিষ্কার! লস গাটোস (Los Gatos) নামের এক ছবির মতো সুন্দর ছোট্ট শহর, যেন এক টুকরো ক্যানভাস। শহরের একটি মোড়ে দেখলাম কিছু মানুষ প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে, এক রাজনৈতিক দলের নীরব প্রতিবাদ! সমর্থকেরা গাড়ির হর্ন বাজিয়ে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে – গণতন্ত্রের এই শান্ত রূপ মুগ্ধ করলো।
এরপর শুরু হলো পাহাড়ি পথের বাঁক।খানিক চলার পরেই আমরা পৌঁছলাম বহু প্রতীক্ষিত ক্যাপিতোলা বীচে। কিন্তু প্রথম সমস্যা, পার্কিং! অসংখ্য মানুষের ভিড়ে গাড়ি রাখার জায়গা মেলা ভার। অনেক ঘোরাঘুরি করে পাহাড়ের ওপর এক চিলতে জায়গা পাওয়া গেল। সেখান থেকে ধীর পায়ে হেঁটে নেমে গেলাম ক্যাপিতোলা ওয়ার্ফ (Capitola Wharf)-এর দিকে। এই পিয়ারটি যেন সমুদ্রের বুকে এক দীর্ঘ বাহু! দেখলাম অনেকে ছিপ ফেলে মাছ ধরছে। ছোট মাছ হলে তৎক্ষণাৎ ফিরিয়ে দিচ্ছে সমুদ্রে, শুধু বড় মাছগুলোই তাদের লক্ষ্য। পিয়ারের উপরেই মাছ পরিষ্কার করার সুন্দর ব্যবস্থা! কেউ কেউ পোর্টেবল বারবিকিউ মেশিন এনেছে, তাতেই গ্রিল করছে মাছ, বিয়ারের সাথে দিব্যি চলছে খাওয়া-দাওয়া! জলে মাছের প্রাচুর্য এতটাই বেশি যে ঝাঁকে ঝাঁকে পেলিকান আর গাঙচিল উড়ে এসে মাছ শিকার করছে। এ এক অসাধারণ দৃশ্য!
পিয়ারে কিছুটা সময় কাটিয়ে গেলাম বীচে। বেলা তখন বেশ গড়িয়েছে, তাই মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। কেউ স্নান করছে, কেউ রোদ পোহাচ্ছে। নিজেদের পোষা কুকুরদের সাথে অনেকেই এসেছে, তারাও আনন্দে ছোটাছুটি করছে। বীচের ধার ঘেঁষে সারিবদ্ধ রঙিন বাড়িগুলো যেন গোয়ার ফন্টেনাস এলাকার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল – প্রতিটি বাড়ির আলাদা রং, নিজস্ব সৌন্দর্য। মজার ব্যাপার, কিছু বাড়ির নম্বর ভগ্নাংশ দিয়ে করা – সাড়ে ছয়, সওয়া বাইশ! এটা আগে কখনো দেখিনি!
ফেরার পথে দেখলাম একটা রাস্তায় গাড়ির প্রদর্শনী চলছিল। বীচে কিছু সময় কাটিয়ে সেইদিকেই রওনা দিলাম। ততক্ষণে অবশ্য বেশিরভাগ গাড়িই চলে গেছে। যে ক'টা ছিল, সেগুলো দেখে আর সমুদ্রে ঢেউয়ের সাথে সার্ফিং-এর খেলা দেখে আমরা বাড়ির পথ ধরলাম।
বাড়ি ফেরার আগে রাতের ডিনারের জন্য যাত্রা হলো পালো অল্টো (Palo Alto) শহরের দিকে। কিন্তু এ এক নতুন বিপদ! আমরা মোট সাতজন, আর শনিবারের রাতে বাইরের ডিনারের জন্য সবাই বেরিয়ে পড়েছে। কোথাও রিজার্ভেশন নেই, ফলে জায়গা পাওয়াই দুষ্কর। এক রেস্টুরেন্টে লাইনে দাঁড়ালাম, আমাদের পালা আসতে সাতজন শুনেই ফিরিয়ে দিল! সবাই তখন ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত। অবশেষে একটা গ্রীক রেস্টুরেন্টে জায়গা পাওয়া গেল। ভূমধ্যসাগরীয় সুস্বাদু খাবার দিয়ে পেটপূজা সেরে ছুটলাম আইসক্রিমের খোঁজে। সল্ট এন্ড স্ট্র (Salt & Straw) ব্র্যান্ডের আইসক্রিম এখানে ভীষণ জনপ্রিয়। দোকানে ঢোকার জন্য প্রায় ১০০ মিটার লম্বা লাইন! লাইনে দাঁড়িয়ে দোকানে ঢুকে বিভিন্ন ফ্লেভার চেখে দেখার সুযোগ পেলাম, তারপর নিজের পছন্দের ফ্লেভার অর্ডার করে সবাই তৃপ্ত! এই মধুর অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলাম।
এভাবে কেটে গেল ক্যাপিতোলা বীচের এক আনন্দময় সপ্তাহান্তের দিন । প্রতিটি মুহূর্ত ছিল নতুন গল্প আর স্মৃতির কোলাজে ভরা।