
01/07/2025
চোখ কি শুধু দেখার জন্য? নাকি আত্মা দেখেও ফেলে অন্ধকার?
গোলকের চক্ষুদানে পা রাখার আগে… একবার চোখ ঢেকে রাখো।
পম পম ফিরেছে… রহস্যের দৃষ্টিপাতে!
গোয়েন্দা পম পম কেস 8: গোলকের চক্ষুদান
শীতকাল পড়েছে কলকাতার উপকণ্ঠে ছোট্ট একটা শহরে—নাম তার চোখাপুর। একটা সময় এই জায়গাটা বিখ্যাত ছিল "গোলক চক্রবর্তী"-র জন্য। লোকটি ছিলেন একাধারে দাতব্য চিকিৎসক, আবার তন্ত্রসাধকও বটে। মানুষ তাঁকে বলত, "চোখের গোলক ঠাকুর"। লোকমুখে শোনা, তিনি নাকি অন্ধ রোগীদের চোখ ফিরিয়ে দিতে পারতেন—কিন্তু সে চোখ কার? সেটা কেউ জানত না।
১৯৫৬ সালের ১৩ই জানুয়ারি, হঠাৎ এক রাতে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায় নিজেরই ওষুধঘরে—চোখ দুটো নেই। ফাঁকা কোটরের মধ্যে শুধু বসে আছে দুইটা পাথরের মতো লালচে বল। এরপর তাঁর দাতব্য হাসপাতালটা বন্ধ হয়ে যায়। কেউ আর এলাকাটা ঘেঁষেও যায় না।
বর্তমান দিন…
পম পম তখন বিখ্যাত হয়ে গেছে। দক্ষিণ কলকাতার দুটো ব্যাঙাচির চুরি থেকে শুরু করে কলেজে প্রফেসরের হারানো জামা অবধি সব মিস্ট্রি সে একাই ফাঁস করেছে।
একদিন বিকেলে তার কাছে ফোন এল এক বৃদ্ধার—মাধবীলতা সান্যাল, বয়স প্রায় ৭৫, ঠাকুরবাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকারী।
তিনি বললেন,
“শুনুন গোয়েন্দাবাবু… গোলকের চক্ষুদান ফের খোলা হয়েছে। আর সেখানে গিয়ে একে একে তিনজন ছেলে—যারা ভিতরে ক্যামেরা নিয়ে ভিডিও করতে গিয়েছিল—চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফিরে এসেছে। ডাক্তার কিছুই ধরতে পারছে না। আর ওরা তিনজনেই বলেছে, 'একটা বালির পুতুল… আমাদের চোখ চেয়েছিল…'।”
পম পম তখন গম্ভীর গলায় বলল,
“চোখের খেলা খেলছে কেউ। কিন্তু খেলা যে শেষ করব আমি—পম পম। দেড়শো কেজির রগে তো হাড্ডি আছে না?”
গোলকের চক্ষুদান — ঘোরের গলি
পম পম সেখানে পৌঁছনোর পর প্রথমেই সে আবিষ্কার করে, রোগীরা একটা কথা বারবার বলছে—“সে এসেছিল, তার চোখ লাল, সে বলেছিল আমি দেখতে পারছি... তোমার চোখ চাই…”
হাসপাতালের ওষুধঘরে একটি পুরনো কাঠের মূর্তি পাওয়া যায়—এক অন্ধ ব্রাহ্মণের, যার চোখে বসানো দুটো কাঁচ। কিন্তু একদিকে সেগুলো এখন শূন্য।
পম পম একরাতে গিয়ে মূর্তিটির সামনে বসে। পাশে শুধু তার বিশ্বস্ত সঙ্গী—দুধে ডোবানো রসগোল্লা আর একটা কপি দন্তচর্চা ম্যাগাজিন। আচমকাই, বাতি নিভে যায়।
ঘরজুড়ে ছায়া। একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসে—
“তুই দেখতে পাচ্ছিস... বল? আমার চোখ ফিরিয়ে দে... নয়তো আমি তোর চোখ নেব...”
পম পম জোরে বলে—
“আমার চোখে চশমা, আর মনে দৃঢ়তা! তোকে আমি খোলা চোখে দেখব—চোখের দানব!”
রহস্য উন্মোচন
পরদিন পম পম জানায়:
গোলক চক্রবর্তীর মৃত্যুর পেছনে ছিল এক ছাত্র, বিষ্ণু, যে নিজের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে চাইত। কিন্তু সে বুঝতে পারেনি গোলকের চোখ ফেরানোর পদ্ধতি ছিল আসলে এক প্রাচীন “শালগ্রাম-মন্ত্র”-নির্ভর অভিশপ্ত প্রতিস্থাপন প্রথা—যাতে মৃত চোখ বদলে জীবিতের চোখ বসানো হত।
মূর্তিটি আসলে সেই বিষ্ণুর তৈরি—সে নিজের অপরাধ লুকাতে গোলকের চোখ তুলে নিয়ে পাথর বসায়। আর সেই পাথরের মধ্যে আটকে যায় গোলকের তেজ—একধরনের আত্মিক শক্তি।
যারা সেই জায়গায় যায়, তারা যদি অন্তরে লোভী হয়, বা কিছু “দেখার ইচ্ছে” নিয়ে আসে—তাদের চোখ সে নিয়ে নেয়।
পম পম তার সোজা ভাষায় বলে—
“আসলে ব্যাপারটা সহজ। গোলকবাবুর চোখ ছিল একধরনের স্পিরিচুয়াল সিগন্যাল রিসিভার। যে লোভী, তাকেই তা চিনে নেয়। আর আমি? আমি তো দেখি না… আমি তো শুধুই ভাবি!”
শেষের টুইস্ট
শেষ দৃশ্যে পম পম ফিরে আসে নিজের ঘরে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ দেখে, তার ডান চোখটা একটু লালচে লাগছে। সে হেসে ফেলে—
“আরে না না… ওটা তো রসগোল্লার রস, দুপুরে খেতে গিয়ে পড়ে গেছিল মনে হয়…”
কিন্তু আয়নার প্রতিবিম্বটায় তার মুখটা কিছুটা বদলে গেছে…
আর আয়নার কোণায় দেখা যাচ্ছে এক অন্ধ পাথরের মুখ… মুখে অশুভ এক হাসি।
#রহস্য #ভূতেরগল্প #বাংলাগল্প