11/03/2024
ভগবান কে পাওয়া সহজ নয়! কিন্তু কেন?
দুঃখ পেয়ে কি হবে? জীবনে দুঃখ ছাড়াও অনেক কিছু পাওয়ার আছে। কিন্তু আমরা কি তা ভাবি? ভাবিনা। ইঁদুর দৌড়ের এই জীবনে নেতিবাচক চিন্তা সর্বদাই গ্রাস করে আমাদের। প্রতিদিন ছুটে চলি আমার কি নেই তার পিছনে। কখনও এটা ভাবিনা আমার কি আছে? আমার যা আছে আমি তার জন্য কার কাছে কৃতজ্ঞ?
কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে দাড়িয়ে অর্জুন যখন দেখলেন তাঁর সমস্ত আত্মীয়-স্বজনদের। তিনি অনুভব করলেন তাদের সাথে তাঁকে যুদ্ধ করতে হবে তখন তিনি ভগবান কৃষ্ণ কে বলেছিলেন,
ন চ শ্রেয়োহনুপশ্যামি হত্বা স্বজনমাহবে।
ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ং কৃষ্ণ ন চ রাজ্যং সুখানি চ।।১/৩১।।
অর্থাৎ হে কৃষ্ণ! যুদ্ধে আত্মীয়-স্বজনদের নিধন করা শ্রেয়স্কর দেখছি না। আমি যুদ্ধে জয়লাভ চাই না, রাজ্য এবং সুখভোগও কামনা করি না। সব শুনে শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন,
যং হি ন ব্যথয়ন্ত্যেতে পুরুষং পুরুষর্ষভ।
সমদুঃখসুখং ধীরং সোহমৃতত্বায় কল্পতে।।২/১৫।।
অর্থাৎ, হে পুরুষশ্রেষ্ঠ (অর্জুন)! যে জ্ঞানী ব্যক্তি সুখ ও দুঃখকে সমান জ্ঞান করেন এবং শীত ও উষ্ণ আদি দ্বন্দ্বে বিচলিত হন না, তিনিই মুক্তি লাভের প্রকৃত অধিকারী।
এই পৃথিবীর সব কিছুই প্রায় অনিশ্চিত। নিশ্চিত কেবলমাত্র মৃত্যু। গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন,
জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।
তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।। ২/২৭ ।।
যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব অপরিহার্য কর্তব্য সম্পাদন করার সময় তোমার শোক করা উচিত নয়।
কর্তব্য। এই একটি শব্দ আমাদের হাত পা বেঁধে দেয়। কিন্তু আমরা চাইলেই সব পারি। কিন্তু করি কি? পরীক্ষার রেজাল্টের দিন ঠাকুরের কথা মনে পরে। কোন বিপদে পড়লে ঠাকুরের কথা মনে পরে। কিন্তু কোন আনন্দ মুহূর্তে কি আমাদের মনে পড়ে ঠাকুরকে? কারোর কারোর হয়ত পড়ে। মন্দিরে গিয়ে আমরা কি কখনও বলি ঠাকুর আমি তোমার জন্য এটা করব। এটা অবশ্যই বলি যে, হে গোবিন্দ আমি তোমার জন্য এটা করব কিন্তু আমাকে এটা পাইয়ে দাও ওটা করে দাও।
ভগবান বলছেন, “নরকের তিনটে দরজা হয়- কামনা, ক্রোধ এবং লোভ।” ভেবে দেখুন আমরা কেউ-ই এর থেকে কি মুক্ত? কিন্তু নরকের ধারনা আমাদের কাছে স্পষ্ট। কথায় আছে না, ভগবান কে পাওয়া অত সহজ নয়? এর উত্তর ভগবান স্বয়ং নিজে দিয়েছেন। ভগবান বলেছেন- “যে প্রাণী লোভ , মায়া , ক্রোধ , অশান্তি , ঈর্ষা , থেকে মুক্তি আমি তার মধ্যে বিরাজ করি ।”
যে মানুষটা সারাজীবন ভগবান মানেনি, ঠাকুরের দিকে ঘুরেও তাকায়নি নিজেকে নাস্তিক প্রমাণ করার জন্য, তাঁরও শেষ যাত্রায় কেউ না কেউ হয়ত মনে মনে হলেও হরির নাম নেবে। কেন নেবে জানেন? এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ভগবান চার কষ্টের কথা বলেছেন। জন্ম, মৃত্যু, জরা ও ব্যাধি। চার কষ্টের মধ্যে “মৃত্যু" ব্যাতিক্ৰম। মৃত্যু সবচেয়ে ভয়ানক। জন্ম ভূমিষ্টকালীন কষ্ট। ব্যাধি, রোগজাত কষ্টসমূহ। জরা, বাধক্যজনিত কষ্টের অভিজ্ঞতা। মৃত্যু, কষ্টের মধ্যে অনন্য সাধারণ।
মৃত্যু সম্বন্ধে কারো কোন ধারণা ও অভিজ্ঞতা নেই। জরার মতো মৃত্যু নিদিষ্ট পরে আসে না। রোগের মতো বারবার আসে না। মৃত্যুর অভিজ্ঞতা জীবনে একবারই হবে। মুহুৰ্তকাল মাত্ৰ থাকবে। আমাদের জীবনের আসল লক্ষ্য “মৃত্যুবরণের কৌশল".
শ্ৰীকৃষ্ণ গীতায় শিক্ষা দিয়েছেন, কিভাবে মরতে হবে? কিভাবে মৃত্যুকে জয় করবে? তিনি আরও বলেছেন, মৃত্যুর সময়ে যিনি আমাকে স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন তিনি তৎক্ষনাৎ আমার ভাবই প্রাপ্ত হন। এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই''।
মহাপ্রভুও বলেছেন- মৃত্যু ভয়কে জয় করতে নিরন্তর কৃষ্ণনাম করুন।
বাকিটা আপনার ব্যক্তিগত।