Golu's Activities

Golu's Activities আনন্দ সফর..

17/05/2025

শুভ সকাল ... স্নিগ্ধ সুন্দর বুদ্ধ জুঁই ফুলের শুভেচ্ছা...





17/05/2025

#মুক্তি #সামাজিকগল্প "তুই কিন্তু ভুল করছিস ঈশিতা.. তুই এখনও অবুঝ..বাস্তব অতটা সোজা নয়.."
--"না বাবা প্রভাস খুব ভালো ছেলে ..বহুদিন ধরে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি.."
--"এত সাহস হয়েছে তোমার ! তুমি আমার সামনে ভালোবাসার কথা বলছ ! তাছাড়া সংসার করার জন্য শুধু ভালবাসা যথেষ্ট নয়..তোমার যা স্ট্যাটাস..তোমার যা কালচার সেখানে প্রভাসের মত সাধারণ পরিবারের ছেলের সঙ্গে তুমি মানিয়ে নিতে পারবে ?"
--"হ্যাঁ পারব বাবা.."
--"আবেগের বশে আমি তোমাকে ভুল করতে দিতে পারি না..বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা নয়..সবকিছু যত সোজা মনে কর তত সোজা নয়..এই সম্পর্ক আমাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়.."

শহরের স্বনামধন্য ধনী পরিবারের মেয়ে ঈশিতা বাবা মায়ের অমতে ভালোবেসে বিবাহ করেছিল প্রভাসকে। ঈশিতা ও প্রভাস একসাথে কলেজে বাংলা বিষয়ে অনার্স পড়ত।ঈশিতা ভীষণ আবেগপূর্ণ ও সহজ সরলমেয়ে।দেখতে সে ভারী সুন্দরী না হলেও বেশ সুশ্রী ও মিষ্টি।প্রভাসও মেঠো ঘ্রাণে পূর্ণ সহজ সরল লাজুক ছেলে।ঈশিতাদের শহর ঘেঁষা প্রান্তীয় গ্রাম থেকে সে কলেজে পড়তে আসত।বড়লোক বাবার একমাত্র আদুরে মেয়ে ঈশিতার মন চুরি করে প্রভাসের সৃজনশীল মন।খুব ভালো কবিতা লিখত সে।কলেজে ঈশিতাই প্রথমদিন আলাপটা করে।তারপর পড়াশোনা ও কবিতা নিয়ে আলোচনা ও শেষে বন্ধুত্ব।বন্ধুত্ব যে কখন ভালোবাসায় পরিণত হয়।বুঝিনি ঈশিতা।পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করে প্রভাস স্থানীয় একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেলেই দুজনে বিবাহ বন্ধনের সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে মনস্থ করে।ঈশিতা তখনও চাকরি করার বিষয়ে ভাবিনি। প্রভাসের ভালোবাসায় সে ছিল বিভোর।ভবিষ্যৎ নিয়ে একদম উদাসীন।

"পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা..প্রভাসকে ছাড়া আমার জীবন আমি কল্পনা করতে পারি না.."একটি চিরকুট নিজের ঘরে রেখে পালিয়ে এসেছিল ঈশিতা।তারপর বন্ধুবান্ধব সহযোগে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে কাগজ কলমে বিয়ে। ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে ঈশিতা সেদিন বাবা মায়ের মুখের দিকে একবারও পিছন ফিরে আর তাকায়নি।কিন্তু ভুল ভাঙতে দেরী হয়নি।

"বৌমা তুমি কি কিছুই জানো না..সংসারের কোনো কাজ জানো না..সামান্য রান্নাটুকুও ঠিকমত পারো না..দিনরাত মোবাইল নিয়ে বসে থাকলেই চলবে..."
--"মা তুমিএকটু দেখিয়ে দিও আমি ধীরে ধীরে ঠিক শিখে নেব.."
মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে প্রভাসের মা সবিতা বলেছিল,"সবই যদি আমি শিখিয়ে দিই তবে তুমি পরের ঘরে এসেছ কেন..জানতে না শ্বশুরবাড়ি সংসারের কাজ করতে হয়..শুধু ভালোবাসা দিয়ে সংসার চলে না..সবই আমার কপালের দোষ..অমন চাকরি করা ছেলে আমার সে কিনা শ্বশুরবাড়ি মান পেলো না..তোমাকে তো আমরা মেনে নিয়েছি.."
অভিমানে ঈশিতার দুচোখ ফেটে জল আসে। সামলে নেয়।দোষ তার।স্বার্থপর সে।বাবা মায়ের কথা শোনেনি।কোনো কিছু তলিয়ে ভাবিনি।শুধু আবেগের বশে জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।বিবাহের কিছুদিনের মধ্যে ঈশিতার ভুল ভাঙে।সে উপলব্ধি করে তার পারিবারিক শিক্ষা চিন্তাধারা আচার বিচার ও তার শ্বশুরবাড়ির পরিবেশের সঙ্গে বিস্তর ফারাক।তাদের সন্তান ভুল করেছে।সেই ভুল তারা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।তা নাহলে ভালোবাসার বিয়ে !
তাদের বিবাহের পরদিন থেকেই ছোটো খাটো সাধারণ বিষয়ে ঈশিতার খুঁত ধরে প্রভাসের পরিবারের সকলে তার প্রতিটি পদক্ষেপ বেঁধে দিয়েছিল।একপ্রকার বন্দীজীবন।তার উপর উপরি পাওনা উঠতে বসতে সবিতার অপমানজনক কথা "বাবার বাড়ি থেকে কিছুই নিয়ে আসনি।আহামরি রূপও নেই।মাঝখান থেকে আমার ছেলেটা শ্বশুরবাড়ি থেকে ঠকে গেল..সবদিক থেকে ঠকে গেল..".প্রভাসের মুখের দিকে চেয়ে সবটাই মেনে ও মানিয়ে নেয় ঈশিতা।

ভালোবাসার মানুষটাকে একসময় সহ্য করতে না পেরে বোঝাতে গিয়েছিল ঈশিতা। প্রভাস বলেছিল,
--"দেখো ঈশিতা আমার মা বাবা সাধারণ ছাপোষা মানুষ..তাদেরও ইচ্ছা ছিল তাদের সন্তান শ্বশুরবাড়ি সম্মান পাবে..গ্রামের আর পাঁচটা বউয়ের বাবার বাড়ির মত তারা আদর সম্মান পাবে..কিন্তু কিছুই তো হল না..আমাকে তোমার মা বাবা জামাই হিসেবে মানলেন না..আমি তোমাকে কিছু বলি ?তুমি মা বাবাকে নিয়ে এত ভেবো না.." প্রভাসের কথায় গভীরভাবে আহত হয় ঈশিতা।যে লাজুক সহজ সরল মেঠো ঘ্রাণে পূর্ণ প্রভাস ও তার সৃজনশীল মন তাকে আকর্ষণ করেছিল।আজ সে এত অসংবেদনশীল কি করে হতে পারে ! তাদের ভলোবাসার সেই উষ্ণতা কোথায় !
"রোজ রোজ অশান্তি ভালো লাগে না ঈশিতা..মায়ের সঙ্গে সঙ্গে সংসারের কাজ করতে পারো না..সারাদিন তো বাড়িতে বসেই থাকো..স্কুল থেকে এসে দুদন্ড শান্তি নেই..মায়ের কাছে তোমার নামে এত নালিশ শুনতে হয়!" ঈশিতা বরাবরের মতো চুপ থাকে।সে অনুভব করে সময়ের সাথে তাদের সম্পর্কে ফাটল ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।প্রেমিক পুরুষ রূপে প্রভাস ও স্বামী রূপে প্রভাসকে সে মেলাতে পারে না।ওকে নিয়ে দেখা রঙীন স্বপ্নময় জীবন ও বাস্তব জীবনের মধ্যে সীমাহীন পার্থক্য..যাকে পাওয়ার জন্য সে মা বাবার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।মায়ের আঁচলে বাঁধা সেই প্রভাস কীভাবে ঈশিতার মন কাড়ল।

"এভাবে বোধহয় আমাদের একসাথে এক ছাদের নীচে থাকা সম্ভব নয় প্রভাস.."

--"সিদ্ধান্ত সেদিনও তোমার ছিল..আজও তুমি নেবে..এ নিয়ে আমার কোনো মতামত নেই.."

--"তুমি আমাকে মন থেকে কোনোদিনই ভালোবাসনি প্রভাস !"

--"ভালোবেসেছি..কিন্তু মা - বাবাকে কিছু বলতে অপারগ আমি.."
--"আমি তো তোমাকে তাদের কিছু বলতে বলিনি প্রভাস...আমিও তো মা বাবাকে ছেড়ে এসেছি!"

--"সেটা তোমার সিদ্ধান্ত ছিল.."
কথা বাড়ায়নি ঈশিতা.. নিজেকে বড় হীন মনে হয়েছিল।ঈশিতার আত্মসম্মানবোধে লেগেছিল চরমতম আঘাত ।


"তুই আরেকবার ভেবে দেখ ঈশিতা..প্রভাসকে এত ভালোবাসিস.."
--"ভালোবাসা আর একছাদের নীচে একসাথে থাকা এক নয় কৌশিকী..তুই আমার ও প্রভাসের কমন বন্ধু..তোর আমাদের দুজনের জন্যই খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক.."
--"সেটা বিষয় নয়..আসলে আমরা মনে মনে কেউই চাই না কোনো সম্পর্ক ভাঙুক.."
--"বিয়ের আগের প্রভাস ও বিয়ের পরের প্রভাস সম্পূর্ণ আলাদা ..আজকাল একদম মেলাতে পারি না..নিজের অসম্মানটা আর মানতে পারছি না.."
ঈশিতা সংসার ছেড়ে প্রিয় বান্ধবী কৌশিকিদের বাড়ি আশ্রয় নেয়।এরপর ঈশিতার মা বাবা সমস্ত বিষয়ে জানতে পেরে ঈশিতাকে ক্ষমা করে দিয়ে তাকে নিতে আসে,
"ফিরে চল মা আমরা বেঁচে থাকতে তুই কৌশিকির কাছে কতদিন থাকবি ? ভালো দেখায় না ..পুরোনো সব ভুলে যা.. " ঈশিতা বাবা বলে হাউমাউ করে কেঁদে জড়িয়ে ধরে বাবাকে...ঈশিতার মা এসে মাথায় হাত রাখে।

কিছুদিন বাদের ঘটনা ঈশিতা তার বাবার কাছে গিয়ে বলে,"বাবা তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে.."
--"বল কি কথা..আমি প্রভাসের সঙ্গে ডিভোর্স সম্পন্ন করে নতুন করে পড়াশোনাটা শুরু করতে চাই.. চাকরি করতে চাই.."
--"তুই যেটা বলবি মা..সেটাই হবে..কোনো জোর
করব না..দ্বিতীয়বার আর আমাদের প্রিয় মেয়েকে হারাতে চাই না.." ঈশিতার প্রিয় পোষ্য টিয়া মিঠু খাঁচার মধ্যে থেকে বলে "তাই হোক তাই হোক.." মিঠুর কথা শুনে ঈশিতা খাঁচার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে "এই মিঠু এভাবে তোর বন্দী থাকতে ভালো লাগে !"

অবশেষে ঈশিতা ও প্রভাসের ডিভোর্সটা হয়ে যায় ।প্রভাসেরও বেশ তাড়া ছিল।বোধহয় মা বাবার পছন্দ করা মেয়েকে স্ত্রী করে আনবে !মুক্তি পেয়ে তারাও বাঁচল। ঈশিতা বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ঈশিতার পোষা প্রিয় তোতা পাখী বলে ওঠে 'মুক্তি পেলি..মুক্তি পেলি..' ঈশিতা খাঁচার সামনে এগিয়ে যায়.." যা যা যাচ্ছিস না কেন যা.." খাঁচার মুখ খুলে দেওয়া সত্ত্বেও ঈশিতা দেখল তার মিঠু উড়ে যাচ্ছে না..সে খাঁচা খুলে বাইরে উড়িয়ে দিয়ে বলে "আজ আমি মুক্ত..যা মুক্তি দিলাম তোকেও.." সে শুনতে পেল দূরে কোথাও রবীন্দ্রসংগীত বাজছে 'আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে..' ঈশিতার দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।(পূর্ব প্রকাশিত)©®রাখী দে (দত্ত)



Rakhi Dey Dutta
*** ছবি AI দ্বারা নির্মিত

17/05/2025

#টেবিলফ্যান #গল্প ভরদুপুরবেলা।বাইরে প্রচণ্ড উত্তাপ।টিনের ছাউনি ও জানালার ফাঁক বেয়ে আসা সেই উত্তাপ ঘরে বসে অনুভব করছে সুপর্ণা।সুমন ফেরির কাজে বেরিয়েছে।গরমে একসময় থাকতে না পেরে সুপর্ণা সুমনের ঘর থেকে সদ্য কেনা টেবিলফ্যানটা নিজের ঘরে নিয়ে আসে।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে সুমন তেতে-পুড়ে বাড়ি ফিরে আসে।ঘরে গিয়ে টেবিলফ্যানটা দেখতে না পেয়ে সুপর্ণার ঘরে পা বাড়ায়।সেখানে টেবিল ফ্যান দেখে চিৎকার করে বলে "হাওয়া খাওয়ার এত শখ!একটা টেবিলফ্যান কিনতে পারিস না!এই গরমে বেরোতে হয় না তো !"অপমানে সুপর্ণার দুই চোখ ফেটে জল আসে।নিজেকে সামলে নিয়ে বলে "আমার ভুল হয়ে গেছে ভাই।আমি এখনি তোর ঘরে দিয়ে আসছি।"সুমনের ঘরে টেবিলফ্যান রেখে নিজের ঘরে ফিরে আসে সুপর্ণা।সেইমুহূর্তে সুপর্ণার মা ঘরে ঢুকে দুঃখ করে বলে "সুমনকে আমরা বোধহয় ঠিকমতো মানুষ করতে পারলাম না রে!তোর বাবা বেঁচে থাকলে !" সুপর্ণা উদাসীনভাবে বলে "এবার যেভাবেই হোক আমার একটা কাজের ব্যবস্থা করতে হবে মা।অভাবের সংসারে বিধবা দিদিকে কোন ভাই ভালোবাসে !" ( পূর্ব প্রকাশিত )©® রাখী দে দত্ত

***ছবি AI অ্যাপ দ্বারা নির্মিত


Rakhi Dey Dutta

17/05/2025

শুভ সকাল...নদীর বুকে ভেসে চলার কতরকম গল্প...

চুপির চর,পূর্ব বর্ধমান...






17/05/2025

আমাদের জীবনের অধিকাংশ সময় তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করতে করতে দিন কাটে ।মনে হয় এই বুঝি আগামীদিনে ভালো সময় আসছে তারপর সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু বাস্তবে অনুভব করি যত দিন যায় তত যেন ফেলে আসা আমাদের সাধারণ দিনগুলি কোন জাদুবলে যেন ভালোমন্দ স্মৃতি হয়ে ওঠে। আসলে আমরা জীবনে যা চাই কিংবা যেভাবে চাই ঠিক সেভাবে পাই না বরং যা পাই বা যতটুকু পাই তা অন্যভাবে অমূল্য স্মৃতি হিসেবে রয়ে যায়। তবে জীবনের এই অমোঘ সত্যটা অনুধাবন করতে আমরা বেশ দেরী করে ফেলি।© রাখী দে দত্ত

কাশ্মীর '২০২৪
Rakhi Dey Dutta

17/05/2025

#আন্তর্জাতিকপরিবারদিবস শুভ সকাল।আজ ১৫ ই মে।আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস ।এই বছরের আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসের থিম " টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবার-ভিত্তিক নীতি: সামাজিক উন্নয়নের জন্য দ্বিতীয় বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলনের দিকে.."এই দিনটি মূলতঃ পরিবার সম্পর্কিত বিষয়গুলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবারগুলিকে প্রভাবিত করে এমন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং জনসংখ্যাগত প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধির সুযোগ প্রদান করে। আজকের দিনে সকলের জন্য শুভকামনা জানাই।সকলে পরিবারসহ ভালো থাকুন ও সর্বদা পরিবারের পাশে থাকুন।

সিলেরিগাঁও '২০২৪ ...







Rakhi Dey Dutta

17/05/2025
13/05/2025

শুভ সকাল...ওরা আছে বলে সবুজ এত হাসে.. ওরা আছে বলে চারপাশ এত রঙিন..ওরা আছে বলে প্রকৃতি এত সুন্দর !
মায়াপুর, নদীয়া....










13/05/2025

#ডাকবাক্স #গল্প বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে পাড়ার মোড়ের পাড়ার পোস্ট অফিসের বাইরে এক কোণে পড়ে থাকা পুরাতন ডাকবাক্সটা হঠাৎ চোখে পড়ে মৃদুলের।একদম ভেঙে দুমড়ে জরাজীর্ণ অবস্থা!অথচ একসময় ওই ডাকবাক্সটা তার জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে ছিল! এই ডাকবক্সেই ফেলত তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য চিঠি।
পাড়ার মেয়ে রেবতীকে ভালোবেসেছিল কলেজ পড়ুয়া মৃদুল।যখন প্রেমপর্ব শুরু হয় রেবতী তখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ত।রেবতীর বাবার ছিল বদলির চাকরি।সেইসময় তারা চলে যায় কোচবিহার জেলায়। মৃদুল থেকে যায় কলকাতায়।দূরত্ব অনেক! ভালোবাসা হার মানেনি!সেই ভালোবাসা বাঁচিয়ে রেখেছিল পাড়ার এই ডাকবাক্স।তখন না ছিল টেলিফোন না ছিল সহজলভ্য এ যুগের মোবাইল।কোচবিহার যাওয়ার আগে রেবতী বলেছিল,"চিঠি পাঠিও নিয়মিত।চিঠি আমাদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে এনে আমাদের দুটি মন এক করে রাখবে।" মৃদুল তার মনের যত কথা লিখে পাঠাতো গোপন খামে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তার কাছেও এসে পৌঁছাত রেবতীর ভালোবাসায় লেখা চিঠি।সেই রেবতী তার স্ত্রী।এতদিন পর চলার পথে এই বৃদ্ধ বয়সে ডাকবাক্সটি চোখে পড়তেই পুরনো ভালোবাসার নস্টালজিয়ায় ভোগে মৃদুল।তার মনে হয় যে কোনো জিনিস সহজলভ্য হলে হয়ত তার টান থাকেনা। যেমন এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভালোবাসা! দেখনদারি ষোলো আনা অথচ গভীরতা কিংবা আনুগত্য কোনোটাই সেভাবে নেই।তখনকার সময় রেবতীকে চোখের সামনে দেখতে না পেলেও তার লেখা চিঠির গন্ধে হৃদয় আবেগ মথিত হয়ে উঠত।রেবতীর মুখ ভেসে উঠত চিঠি পড়ার মাঝে।আজকাল ভালোবাসায় সেই আবেগ কোথায় ! শুধু চাওয়া পাওয়ার হিসেব ! সম্পর্ক গড়া অপেক্ষা ভাঙার খেলা অধিক !দীর্ঘশ্বাস পড়ে মৃদুলের। ডাকবাক্সর করুণ অবস্থা এড়িয়ে সে ধীরে ধীরে বাড়ির পানে পা বাড়ায়।( প্রকাশিত)©® রাখী দে দত্ত

13/05/2025

জীবনে একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর আমাদের সকলেরই কমবেশি একরকমের জীবনদর্শন তৈরি হয়ে যায়।তখন যতই কেউ কাউকে সদুপদেশ দিক না কেন, তারা নিজেদের তৈরি ধ্যানধারণা থেকে কিছুতেই বেরোতে পারি না।আর এই ধ্যানধারণা বা জীবনদর্শন তৈরি হয় পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে।তবে এই অভিজ্ঞতা সবসময় যে সদর্থক ভাবনা গড়ে তোলে তা কিন্তু নয় বরং উল্টোটাই দেখি অধিক তৈরি করে।তাই নিজের পরিবারের সদস্যরা ও কিছু হাতেগোনা শুভাকাঙ্ক্ষীদের ছাড়া কারোর জীবনে আগ বাড়িয়ে জ্ঞান বা পরামর্শ দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত থাকলে মানসিক দিক থেকে ভালো থাকা যায়।কারণ জ্ঞান বা সদুপদেশ অপেক্ষা আমরা জীবনে ধাক্কা খেতে পছন্দ করি বেশি(ব্যতিক্রম আছে) যা অবশ্য পুনরায় জীবন অভিজ্ঞতা বাড়ায়।রিপোস্ট ©® রাখী দে দত্ত

হরনগর,নদীয়া...






13/05/2025

#দ্বিচারিতা #গল্প বাইরে রাস্তার দিকে একমনে তাকিয়ে বিতস্তা ।ব্যালকনির ফাঁক দিয়ে সে খেয়াল করছে কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকা একটি কুকুরকে।তার ছানাগুলি খুনসুঁটি করছে! নরম নরম গোলগাল সাদা-কালো রংয়ের ছানাগুলি কখনও মায়ের পিঠে উঠছে কখনও বা ওম নিতে কোলের ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে।মা কুকুরটা অনাবিল স্নেহে তার ছানাগুলোকে জিভ দিয়ে অনবরত চাটছে। বিতস্তা চিন্তা করে মায়েরা বোধহয় এরকমই হয়!শত বিরক্ত করা সত্ত্বেও কোনো রাগ নেই।আছে শুধু নরম স্নেহ।সে মানুষ হোক বা পশু।নিজের ছোটোবেলায় কথা মনে পড়ে বিতস্তার।বড্ড মা ঘেঁষা ছিল।বিতস্তার দিদি পত্রলেখা প্রায়ই বলত "তুই একা মায়ের মেয়ে আর তো কেউ হয় না।"
আজ সকাল থেকেই মায়ের জন্য বিতস্তার মনটা খারাপ । মাথার উপর বাবা নামক বটগাছের ছায়া হঠাৎ করে সরে গেছে।মনের কোণে জমা অপরিসীম বেদনা।তার উপর মায়ের অনড় সিদ্ধান্ত ।নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে তার।গতকাল রাতে মায়ের সঙ্গে বলা কথাগুলো মস্তিষ্কে ঘোরাফেরা করছে।
"মা তোমার অসুবিধাটা কোথায় ?তুমি কেন এরকম ছেলেমানুষি করছ!"
--"আমি কোনো ছেলে মানুষী করছি না।বাস্তবটা আমি বুঝি।"
--"না তুমি কিছুই বোঝো না।নইলে বাবার অনুপস্থিতিতে একা একা থাকতে চাও।'
--"এই বাড়িতে থাকতে আমার কোনো সমস্যা নেই।"
--"তোমার দেখাশোনা ?"
--"সন্ধ্যাদি আছেন তো !"
--"মা সন্ধ্যামাসি কাছে থাকলেও আমরা তো টেনশনের মধ্যে থাকব।"
--"তোরা তো সবসময় খোঁজখবর নিচ্ছিস!আমার অসুবিধা হলে আমিও জানাবো।তাছাড়া তোরাও আসবি।আমিও মাঝে মাঝে তোর কাছে গিয়ে থাকব।"
--"এটা কি তোমার শেষ সিদ্ধান্ত ।"
--"হ্যাঁ রে।"
--"একসময় আমাদের কাছে থেকেছ মা।তাহলে এখন থাকতে দ্বিধা বোধ করছ কেন ?"
--"তখন পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল ।আমি ও তোমার বাবা পুকুনের জন্য সমাজের কথা আমল দিইনি।তখন শুধু নিজেদের অতটুকু নাতনির প্রতি মায়া ও স্নেহের টানে তোদের শহরে স্থানান্তরিত হয়েছিলাম।এখন পরিবেশ অন্যরকম।পুকুন বড় হয়ে গেছে।কোনো সমস্যা নেই।যা অপমান সয়েছি !"
--"সেই অপমান তো আজও আমিও বয়ে বেড়াচ্ছি। যে অপরাধ কোনো দিন করিনি তার বোঝা বয়ে বেড়ানো যে কত মানসিক কষ্টের সেতো অনুভব করি প্রতিমুহূর্তে !সেসময় যদি আদৃতর মা ও দিদিরা একটু বুঝত আমাকে।সেই সময়টুকু দিল না।"
--"অতীত নিয়ে আর ভাবিস না বিতস্তা।এখন সামনে এগিয়ে যা।পুকুনকে মনের মতো করে মানুষ কর।নিজের প্রতি ও অদৃতর প্রতি যত্ন নে।"
--"সে ঠিক নেব । কিন্তু তুমি আমার কাছে থাকলে এখনকে কি বলল এখন আর কিছু যায় আসে না।"
--"বিষয় সেটা নয়।বিষয় হল আমাদের সমাজের গতানুগতিক মানসিকতা ! সমাজের পুরনো বস্তাপচা নিয়ম অপেক্ষা কাউকে ভালো রাখা বা ভালো থাকতে দেওয়া যে অধিক জরুরি সে কথা আমরা ভুলে যায়।সেসময় শুধুমাত্র পুকুনের জন্য আমরা সমস্ত অপমানের বিষ পান করেছি।"
--"সে বিষ় আমি ও আদৃতও পান করেছি। আদৃতর মা ও ছোটদি সমস্ত আত্মীয় মহলে আমাদের সম্পর্কে কম কুৎসা রটিয়েছে।তখন যখন সব মেনে নিয়েছি।এখন তো কোনো সমস্যা নেই।তাছাড়া মা নিজের মাকে কাছে রেখে সেবা করব এরমধ্যে এত কিন্তু কেন।!আমাদের মফঃস্বল শহরাঞ্চলে মধ্যবিত্ত সমাজ কবে কোথায় মেয়েদের বাবা ও মাকে দের সম্মান দিয়েছে !"
--"ওরে আমরা মেয়েরাই তো মেয়েদের শত্রু ।নিজেদের সম্মান করতে জানি না।মেয়ের মা ছেলের মায়ের তফাৎ নিম্ন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষরাই করে। সমাজে এদের সংখ্যাটা বেশি রে।"
--"আমি আজও ভুলতে পারি না তোমাদের অসম্মানের কথা।আমার মনে আছে।আমাদের বিয়ের প্রথম বছর যেদিন বাবা জামাইষষ্ঠীর নিমন্ত্রণ করতে এসেছিল। সেদিন আদৃতর বড়দি বাবাকে বাড়ির গেট খুলে দেয়নি।বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। আদৃতর ছোটদি তোমাকে ফোন করে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করেছিল।বাবাকে পদে পদে বুঝিয়ে দিয়েছিল এটা তার মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। একি কম কষ্টের ছিল!বাবা যেখানে সারাজীবন সসম্মানে মাথা উঁচু করে বেঁচেছেন সেখানে আমাদের জন্য তাঁকে অসম্মানিত হতে হয়েছে ।এটা যে কোনো কন্যাসন্তানের কাছে কতটা লজ্জাজনক !"
--"তুই যে কষ্ট পেতিস।বুঝতে পারতাম।তোদের তো বরাবর আধুনিকমনস্ক, মুক্তমনা তৈরি করতে চেয়েছিলাম।"
--"আমরা তো তাই হয়েছি মা যে কারণে সমাজের কোনো কুসংস্কার,বস্তাপচা সামাজিক নিয়ম মেনে নিতে পারিনা।অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করতে পারিনা।মুখ ফুটে সত্যটাও চিৎকার করে বলতে পারিনা।ভিতরে গুমরে গুমরে মরি।সেই দিনগুলো আজও ভুলতে পারি না। আদৃতর ছোটদি আমাকে ও আদৃতকে একঘরে থাকতে দেবে না।এযুগে এসেও কি বর্বর মানসিকতা ।আদৃত প্রথম প্রথম রাতেরবেলা ঘুমানোর পূর্বে বেডরুমের দরজা বন্ধ করে দেওয়াতে কি অশান্তি সৃষ্টি করেছিল।শুধু কি তাই মা! আমাকে যখন তখন অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেছে। উফ কি ভয়ংকর দিন গেছে।কেউ সহজে বিশ্বাস করবে!আদৃতকে যে কত অপমান সইতে হয়েছে শুধুমাত্র আমাকে সাপোর্ট করার জন্য।আমি মা আজও বুঝতে পারিনা আমাদের সোসাইটি সত্যিই কি আধুনিক না আধুনিকতার নামে দ্বিচারিতায় ভরা!আমাদের তো অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ ছিল তবু ওরা আমাকে মেনে নিতে পারল না কেন ! ঈর্ষা না অধিকার হারানোর ভয় না ছেলের পরিবার বলে সামাজিক ক্ষমতার আস্ফালন দেখানোর প্রচেষ্টা! কিন্তু কোনোদিন মুখ ফুটে বলতে পারিনি।মিথ্যা অপবাদ নীরবে সয়েছি।"কথাগুলো একটানা বলার পর বিতৃষ্ণায় ভ্রুযুগল কুঁচকায় বিতস্তা। ©®রাখী দে দত্ত

প্রতিমাদেবী সব শুনে বিতস্তাকে স্নেহভরা কণ্ঠে বলে, "জানিস তো আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মেয়েদেরই বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না।বিশেষত গ্রামে আর মফঃস্বল শহরে।মধ্যবিত্ত ঘরের বেশিরভাগ বিবাহিতা মেয়েরা এমনই হয়।বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি মনের মতো না হলে মনে মনে ক্ষতবিক্ষত হলেও চিরকাল চুপচাপই রয়ে যায়।লোকলজ্জা ও সমাজের ভয়ে নিজেদের ইচ্ছা চাহিদা ও শখগুলির সঙ্গে একরকম আপোষ করে নেয়।শুধু তাই নয় বয়স্ক মা - বাবাকে দেখাশোনা করার বিষয়টির ক্ষেত্রেও এই আপোষ করতে দেখা যায়।বাড়ির বৌমা হয়ে শ্বশুর শাশুড়িমাকে ঠিকমত যত্ন করে না অবহেলা করে এই অভিযোগ বহু পুরনো কিন্তু যে মা-বাবাদের শুধুমাত্র কন্যাসন্তান এবং তারা বিবাহিতা সেই সকল মা বাবাদের বয়সকালে দেখাশোনার বিষয়টি সমাজে আজও অবহেলিত।শহরাঞ্চলে তোর মতো কিছু স্বনির্ভর বিবাহিতা মেয়েরা বয়স্ক পিতামাতার দায়িত্ব নিতে চাইলে আজকাল তাও গেল গেল রব হয়ত সেভাবে ওঠে না ।শুনতে মন্দ লাগলেও মফঃস্বল শহর ও গ্রামের সামাজিক পরিবেশ কিন্তু এই বিষয়ে আজও চরম রক্ষণশীল।"
--"সেতো প্রতি পদে পদে অনুভব করি মা।তবে সময়ের সঙ্গে এখন কে কি বলল আর ভাবি না।"
--"তুই না ভাবলেও আমি ভাবি।"
--"তোর বাড়ির কাছাকাছি আমাদের ফ্ল্যাট কিনে থাকা নিয়ে একসময় কম জলঘোলা হয়েছে।দুই তরফের আত্মীয় স্বজন ,পরিচিত বন্ধুবান্ধব সকলেই তোদের দুজনকে আর আমাদের দুজনকে ভুল বুঝেছে।"
--"মা আমিও কি বুঝতাম না ! আমাদের কাছাকাছি তোমাদের থাকাটা সেসময় কেউই মেনে নিতে পারিনি।সেই সমাজের চোখরাঙানি !মেয়ের বাবা মা হওয়া মানে অপরাধী।দিদি ও বোন দুজনেই তাদের শ্বশুরবাড়িতে সম্মান গেল বলে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দিত।আমি কোনোদিন বুঝতে দিইনি বরং চেষ্টা করেছি বাবার বাড়ির অভাব তারা যেন অনুভব না করে।কিন্তু আলটিমেটলি কি হয়েছে নিজের আত্মসম্মান রাখতে গিয়ে বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িতে দুর্নামের শিকার হয়েছি।প্রতি মুহূর্ত নিজেকে ক্রমশঃ গুটিয়ে নিয়েছি।এমনকি কর্মক্ষেত্রেও সহকর্মীদের চোখে আমাকে নিয়ে সন্দেহ ও কৌতূহল দেখেছি।আমার অনুপস্থিতিতে গোল টেবিলে সমালোচনা শুনেছি।কিন্তু কখনই নিজের সাফাই দিতে যায়নি বা কারোর নামে কুৎসা রটায়নি।"
--"তুই কি সেরকম মেয়ে নাকি!নিজের শ্বশুরবাড়ির নিন্দা বাইরের মানুষদের সামনে করবি। এতে যে নিজেদের সম্মান নষ্ট হয়।"

--"কেউ বোঝে না মা !কি অপমান সহ্য করে পরিশ্রম করে সংসার ও পড়াশোনা শেষ করেছি ।আদৃত আর তোমরা না থাকলে এতদূর পৌঁছাতে পারতাম না।"
--"ভুলটা তো সেই আমাদেরই ছিল বিতস্তা।"
--"ভুলটা ইচ্ছাকৃত ছিল না মা।সেটা জানি।কিন্তু অধিকাংশ মা বাবারাই তাদের মেয়েদের মঙ্গল করতে গিয়ে অমঙ্গলটাই ডেকে আনে।তবু রক্ষা আদৃত আমাকে বুঝতে পেরেছিল।তাই সকল রাগ দুঃখ অভিমান মুখ বুঝে চেপে নিতে পেরেছিলাম।অবশ্য চাপতে চাপতে একসময় অসুস্থও হয়েছি।মা তোমার মনে আছে কতটা ঝড় গেছে আমার আর আদৃতর জীবনের উপর দিয়ে !"
--"মনে থাকবে না !"©® রাখী দে দত্ত
--"আমার ইরিটেবল বাওল সিনড্রোমটা কি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছিল!সুস্থ হব কিনা সেই বিষয়ে সন্দেহ ছিল।"
--"সেসময় আমরাও তোকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম !প্রথমে লোকালে তারপর কলকাতায় ডাক্তার দেখানো।শেষপর্যন্ত আদৃত তোকে চেন্নাই নিয়ে গেল। সেখানেও ডাক্তার দেখিয়ে তুই সম্পুর্ণ সুস্থ হস নি।পুনরায় কলকাতায় হোমিওপ্যাথ ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ হোস।"
--"সত্যি মা সেইসময়টা ! পুকুন ছোটো । আদৃতর কর্মক্ষেত্রে চাপ ও ব্যস্ততা।তোমরা না থাকলে !"
--"মা-বাবারা সর্বদা সন্তানদের পাশে থাকে !"
--"তাহলে ছেলের মা বাবারা ছেলের বিয়ের পর বদলে যায় কেন! বৌমাদের প্রতিপক্ষ ভাবেন কেন !"
--"এর কারণ নিরাপত্তাহীনতা !"
--"সে তো আমিও বুঝি ! কিন্তু কেন এই নিরাপত্তাহীনতা ! নিজেদের উপর বিশ্বাস নেই।যে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছে তার প্রতি ভরসা নেই।যে মায়েরা সন্তানদের শুধু নিতে শেখায় দিতে শেখায় না তারাই অধিক স্বার্থপর হয় মা।তাছাড়া একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর সন্তানদের স্পেস না দিলে তারা মা ও বাবার প্রতি বিরূপ হয় তখন পরের ঘরের মেয়েদেরকে আশ্রয় করে জীবনতরী বয়তে চায়। আদৃতও জানত তার মা ও দিদিরা কি অন্যায় করেছিল !"©® রাখী দে দত্ত
--"আজও ভুলতে পারিনা আদৃতর মায়ের কথা ।ছোট্ট পুকুনকে নিয়ে যেদিন নার্সিংহোম থেকে প্রথম ঘরে ফিরি চিৎকার করে বলেছিলেন, তোমার পেটের ঐ ছোটো বাচ্চাকে আমি দেখতে পারব না।তুমি কি করে বাচ্চা মানুষ করবে কি চাকরি করবে তোমার ব্যাপার... মাটার্নিটি লিভ মাত্র সাড়ে চার মাস তখন।তারপর কি হবে আমার অতটুকু দুধের শিশু ।আমাদের কর্মরত মায়েদের অপরাধবোধ অসহায়তা কেউ বোঝে না মা।সেইসময় আমরা নিরুপায় হয়ে তোমাদের দ্বারস্থ হয়েছিলাম।কিন্তু তোমাদের এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে কি পেয়েছ ! সমাজে শুধু লাঞ্ছনা জুটেছে।কারণ একটাই মধ্যবিত্ত ঘরে মেয়ের মা বাবারা বিবাহিতা মেয়ের কাছে থাকতে পারে না।যতই মেয়েরা কর্মরত হোক না কেন ।ওদের স্বাধীনতা থাকতে নেই ! ওদের আত্মসম্মান থাকতে নেই।শুধু থাকে শ্বশুরবাড়িতে সব মানিয়ে নিয়ে সকলের প্রতি কর্তব্য।"
--"জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছি অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে।নতুন করে কিছু বলার নেই বিতস্তা ।"
--"মা আমি আজও যে কিছু ভুলিনি।আদৃত আমার পাশে থাকার জন্য ওর কপালে বৌভেরুয়া তকমা জুটেছিল।এটা যে কি মারাত্মক অসম্মানজনক !সমাজে এই বিষয়গুলো যেন ভীষণ কমন ম্যাটার।কিন্তু আমি তো সেরকম মানসিকতার নয় তাই মানতে পারতাম না।বুকের ভিতর ভীষণ কষ্ট হত। মনে হত আমার কি অপরাধ ছিল যে আমি শ্বশুরবাড়িতে কারোর কাছে ন্যূনতম স্নেহ ভালোবাসা পেলাম না !কতদিন মুখ গুঁজে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়েছি।মাঝেমধ্যে আদৃতর উপর ভীষণ রাগ হত। ওর মা ও দিদিরা এত নিম্নমানসিকতাসম্পন্ন ! জেনেশুনে ও আমাকে কেন বিয়ে করল।এমনিতেই আমি বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।তোমাদের বাধ্য মেয়ে ছিলাম তাই ….."
--"আমিও তো চাইনি তোর বিয়েটা সাত তাড়াতাড়ি হোক।তোর পেছনে বিপাশা ছিল।তোর বাবা কর্মঠ থাকতে থাকতে তোদের তিনবোনকে সুপাত্রস্থ করে যেতে চেয়েছিলেন ।"
--"সে সবই বুঝি কিন্তু সত্যি করে বলো আমি কি এরকম একটা পরিবার ডিজার্ভ করতাম! আদৃত যদি আমাকে না বুঝত ! তাহলে আমার কি পরিণতি হত।কতটা কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে আর ধৈর্য্যশীল থাকতে হয়েছে।"
--"তারজন্য কিন্তু আজ তুই অনেক পরিণত ও বুদ্ধিমতী ! বিপাশা আর পত্রলেখা কিন্তু ততটা নয় !
--"ওরাই হয়ত ভালো আছে মা।মনের গভীরতা মনের অসুখ বাড়ায়।ইমোশনাল স্ট্রেস নিতে নিতে আমি ক্লান্ত মা।এই জায়গায় পৌঁছাতে যে কঠিন পথ অতিক্রম করেছি যে পরিশ্রম করেছি সেটা কেউ দেখে না ।দেখে শুধু আমি ভালো আছি কেন ?আমি এত অ্যাক্টিভ কেন!মানুষ কেন বলতো নিজের অপারগতা মানতে পারে না ।অন্যের ভালো থাকা নিয়ে আক্ষেপ করে।"
--"মানসিকতা উচ্চতর না হলে কেউ আত্মসমালোচনা করে না বিতস্তা।মানুষ মানুষের মন্দ দিকগুলো খুঁজে বের করতে চায়।"
--"সমাজ ও সমাজের একপেশে নিয়ম কানুনের গণ্ডি আর ভালো লাগে না মা।তোমার ভালো থাকাটাই এখন আমাদের কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি।আমি কোনো অজুহাত শুনতে চাই না।তুমি আমার কাছে থাকবে।"
--"আমি তোর কাছে থাকবো না, তা বলছি না।মাঝে মাঝে যাবো। নিজের আত্মসম্মান নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকতে চাই রে।বাড়িটারও দেখাশোনা করা জরুরি।তোর বাবা শেষ জীবনে কষ্ট করে নিজে হাতে তৈরি বাড়ি।এর মায়া সহজে ত্যাগ করতে পারব না।"
--"তোমাকে ত্যাগ করতে বলিনি। সন্ধ্যামাসি বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করবে তো!"
--"ঠিক আছে আমি ভেবে দেখব।"
--"আমি তোমাকে জোর করব না মা।দিনের শেষে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার আছে ।তবে যে সমাজব্যবস্থা আজও ছেলের মা ও মেয়ের মায়েদের মধ্যে পার্থক্য করে সেই সমাজব্যবস্থার প্রতি একরাশ করুণা ছড়া কিছু অবশিষ্ট থাকে না।"
একথা বলে মায়ের কাছে রাতটা কাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসে বিতস্তা।তারপর থেকে মাথায় তার একটাই চিন্তা সেও তো মেয়ের মা। মফঃস্বল শহরের মানুষের জীবনের বহিরঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া পড়লেও মনের অন্তরঙ্গে আজও রক্ষণশীলতার মোড়ক জড়ানো। মানবিকতা আগে না কি নিয়ম ! যাই হোক আত্মসম্মানের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করা অসম্ভব! ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিতস্তা।কুকুরটা ততক্ষণে ছানাদের নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। বিতস্তা দেখতে পায় না । (প্রকাশিত)©® রাখী দে দত্ত
***সত্য ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত।
------------
**ছবি AI অ্যাপ দ্বারা তৈরি।

Address

Krishnagar

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Golu's Activities posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share