23/05/2025
বেহাল রাস্তা, মুর্শিদাবাদের বুধুরাপাড়ায় দুর্বিষহ জনজীবন
স্টিং টাইমস সার্ভিস: মুর্শিদাবাদ জেলার খড়গ্রাম থানার অন্তর্গত কীর্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বুধুরা পাড়া যেন এক অবহেলিত জনপদ। বেহাল রাস্তা, বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা, আর সেই সঙ্গে প্রশাসনের চূড়ান্ত উদাসীনতা—এই তিনে একসঙ্গে জর্জরিত হয়ে পড়েছে গোটা গ্রাম। জনজীবন এখানে দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকার ভবিষ্যতের মুখোমুখি।
গ্রামের একমাত্র প্রধান রাস্তাটির অবস্থা এমনই করুণ যে, একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি কাদা ও জলমগ্ন হয়ে ওঠে। খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলা দুঃসাধ্য, যানবাহন চলাচল তো বহু দূরের কথা। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বর্ষার সময় অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা হায়দার আলী বলেন, "একজন অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গেলে জীবন নিয়ে ফিরব কি না, সেটাই প্রশ্ন। অ্যাম্বুলেন্স তো ঢুকতেই পারে না। রোগীকে কাঁধে করে কাদা পেরিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এটা কীভাবে চলবে?"
শুধু রাস্তা নয়, গ্রামে নেই কোনো পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থাও। বাড়ির বর্জ্য জল জমে থেকে তৈরি করছে মশার প্রজননক্ষেত্র। ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া-সহ বিভিন্ন রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। দুর্গন্ধে টেকা দায়। শিশুরা খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান, সদস্য, এমনকি ব্লক প্রশাসনকেও বহুবার জানানো হয়েছে এই সমস্যার কথা। মৌখিক অভিযোগ, লিখিত ডেপুটেশন—সবই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব আশ্বাসই যেন শুধুই কথার কথা। বাস্তবে বদলায়নি গ্রামবাসীর দৈনন্দিন দুঃখ-কষ্ট।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা দুলাল শেখ বলেন, "প্রতিবার ভোটের আগে নেতারা এসে বলেন, এবার রাস্তার কাজ হবে। ভোট শেষ হলে আর কেউ ফিরে তাকায় না। আমরা কি মানুষ নই? আমাদের কি ভালোভাবে বাঁচার অধিকার নেই?"
পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের উপরও। কাদা ভরা রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে যাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে। কৃষকেরাও তাঁদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন না সময়মতো, ফলে তারা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন, "বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। বাজেট এলেই কাজ শুরু হবে।"
তবে বহু বছরের অব্যবস্থা আর অবহেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে এখন আর সেই আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। তাঁদের হুঁশিয়ারি,
"দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা বৃহত্তর গণআন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।"
এখন দেখার বিষয়, দীর্ঘদিনের এই বঞ্চনা ও দুর্ভোগের শেষ কোথায়। আদৌ কি প্রশাসনের দৃষ্টি পড়বে এই গ্রামে? নাকি ভোটের প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আবারও আটকে পড়বে সাধারণ মানুষ?