24/04/2025
তুমি জানো, ছোটবেলা থেকে কাশ্মীর দেখার একটা স্বপ্ন ছিল। ভেবেছিলাম এই সবুজ উপত্যকা, বরফে ঢাকা পাহাড় দেখব তোমার হাত ধরে, একসঙ্গে গরম কফি খাবো, কত ছবি আঁকা ছিল মনে মনে।
তুমি চোখ বন্ধ করে আছো, আমি জানি তুমি আর কোনোদিন চোখ খুলবে না। আমি তোমার পাশেই বসে আছি, কিন্তু তুমি শুনতে পাচ্ছ না আমার কান্নার শব্দ, টের পাচ্ছো না আমার কাঁপা হাতের স্পর্শ।
ওই হামলার শব্দ এখনও কানে বাজছে, তোমার চিৎকার! মুহূর্তে সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে দিলো ওরা—ভালোবাসা, স্বপ্ন, জীবন।
তুমি বলেছিলে, "ছবিগুলো ভালো করে তুলতে হবে, সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে।"
এমন ছবি তোলার কথা তো ছিল না।
তুমি জানো, আমি তোমাকে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম, বুকের মধ্যে আটকে রাখতে চেয়েছিলাম সেই মুহূর্তে। কিন্তু সময় কত নিষ্ঠুর, না? সে যে কারও কথা শোনে না।
তুমি তো বলেছিলে, আমরা একসঙ্গে বুড়ো হব, একসঙ্গে হাঁটবো ছাতা মাথায়, একদিন আমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে আবার আসবো এখানে। অথচ এখন? আমাকে যে একাই ফিরতে হবে। তোমার ব্যাগ, তোমার ঘড়ি, তোমার গানের প্লেলিস্ট, তোমার ফোন তেমনটাই আছে, শুধু তুমি নেই।
তুমি বলতে— আমি তোমার কাছে থাকলে পৃথিবীর সব ঝড়ও নাকি শান্ত হয়ে যায়। কিন্তু আজ... আমার ভেতরের ঝড় থামছে না যে। তোমার জামা ভিজে গেছে রক্তে… আমি তো চুড়ি পরে এসেছিলাম তোমার জন্য, সিঁদুর পড়েছি তোমার নামে। এত সহজে তুমি যেতে পারো না! না, তুমি পারো না।
দেখো, চারদিকে লোকজন ছুটছে, কয়েকজন টেনে তুলতে চাইছে আমাকে… কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়তে পারছি না। তুমি তো আমার সব ছিলে। এই মাত্র তো হোটেলে বসে গরম চা খাচ্ছিলাম আমরা… কত কথা বলছিলে তুমি—আমার হাসি, আমার চোখের কাজল নিয়ে।
তোমার ফোনটা এখনো বেজে চলেছে—“মা” লেখা আসছে স্ক্রিনে, আমি কী বলব তাঁকে? যে তাঁর ছেলে এখন চিরতরে ঘুমিয়ে পড়েছে? আমার বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। তুমি ছাড়া আমি কোথায় যাবো বলো? এত ভালোবাসার শুরুটা কি এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে?
তুমি বলেছিলে, "চলো, নতুন জীবন শুরু করি।" এরকম জীবন তো আমি চাইনি গো? আমি এখনো তোমার হাত ধরে আছি, ধরেই থাকবো যতক্ষণ না তুমি উঠে দাঁড়াও… উঠো না প্লিজ… একবার, শুধু একবার!
আজ শুধু ধর্মের জন্য প্রাণ গেল… কিছু মানুষের। তাদের কী দোষ ছিল? আজকের দিনটা আমার মনে থাকবে, যতদিন বাঁচবো। তারা তো ঘুরতে গিয়েছিল, হাসতে গিয়েছিল, ভালোবাসা ভাগ করে নিতে গিয়েছিল। তারা তো কারও ক্ষতি করেনি। তবুও… কিছু লোকের হাতে তাদের প্রাণ গেল, শুধু ধর্মের কারণে।
তাদের জীবন থেমে গেল। শুধু কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের, ঘৃণায় ভরা লোকের কারণে। যারা ধর্মের নামে আগুন জ্বালায়, বন্দুক তোলে, রক্তে রাঙায় পাহাড়, উপত্যকা, শহর, গ্রাম।
ধর্মের নামে এমন মৃত্যু কবে শেষ হবে? আর কতজন প্রাণ হারাবে এইভাবে?
© পিয়ালী চ্যাটার্জী মল্লিক