02/08/2025
যখনই ধর্মের নামে অধর্ম বাড়তে থাকে তখনই ভগবান প্রকট হন । আজকের ভিডিও ভগবান বিষ্ণুর নরসিংহ অবতারের কাহিনী যা মহাবতার নরসিংহ মুভিতে দেখানো হয়েছে।
সিনেমার শুরুতেই দেখা যায় কশ্যপ রাজার স্ত্রী দিতি কাম বাসনার বশবর্তী হয়ে রাজাকে সম্ভোগের জন্য বাধ্য করেন । একদিন রাজাকে চিন্তিত দেখে দিতি কারণ জিজ্ঞাসা করেন । রাজা বলে - মূর্খ নারী,সম্ভোগের সঠিক সময় তখন ছিল না ,,এর ফলস্বরূপ দুই দানব তোমার গর্ভে আশ্রয় নিয়েছে,,যাদের মুল লক্ষ্য হবে ভগবানের সাথে শত্রুতা আর ভগবানের ভক্তদের উপর হিংসা।
সেই সময় আসে যখন হিরন্যকষিপু ও হিরনাক্ষ নামের দুই অসুরের জন্ম হয় । অসুরকুলের গুরু সুক্রাচার্য দুইভাইকে সমস্ত তামসিক বিদ্যা এবং অস্ত্রশস্ত্রের পারদর্শী করে তোলেন । সেই শক্তিবলে ওরা পুরো পাতাল লোকে ত্রাহি ত্রাহি রব তুলে দিয়েছিল । পাতাল লোকের সাথে সাথে স্বর্গলোকে ওরা রাজত্ব করার পরিকল্পনা করে এবং ভগবান বিষ্ণুকে বধ করার পরিকল্পনা করে । আর বলে বিষ্ণু লুকিয়েই থাকবে তাই ভূমিকে অপহরণ করলে বিষ্ণুকে আসতেই হবে ।
হিরনাক্ষ ভূমি অর্থাৎ পৃথিবীকে সমুদ্রের নিচে লুকিয়ে রাখে । তখন সমস্ত দেবতাগণ ব্রহ্মদেব এর কাছে আসে আর বলে ,,, হে ব্রহ্মদেব কোনো রাক্ষস আজ পর্যন্ত এমন দুঃসাহস করার কথা ভাবেনি,, আর ভূমিকে রক্ষা করার উপায় জানতে চায় । ব্রহ্ম্যদেব বলে একমাত্র ভগবান বিষ্ণুই ভূমিকে রক্ষা করতে পারেন এবং ভগবান বিষ্ণুর নাম স্মরণ করেন । তখনই তার নাসিকা থেকে ভগবানের বরাহ অবতারের উদ্ভব হয় এবং হিরোনাক্ষকে বধ করে ভূমিকে রক্ষা করেন।
হিরোনাক্ষ বধের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হিরন্যকসিপু পর্বতের শিখরে গভীর তপস্যা শুরু করে ,,,তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে বহ্মদেব অসুরের কথা মতো বলে - তোমার মৃত্যু না কোনো নর না কোনো পশু,না দিনে না রাতে , না ঘরের ভিতর না ঘরের বাইরে হবে ।আর এদিকে ওই অসুরের গর্ভবতী স্ত্রী লীলাবতীর গর্ভে জন্ম হয় বিষ্ণু ভক্ত সন্তান প্রহ্লাদের।
হিরন্যকসিপু তার সন্তান প্রহ্লাদের সাথে দেখা করে এবং তার মুখে বিষ্ণুর প্রশংসা শুনে প্রহ্লাদের উপর রেগে যায় ,,,এমনকি তার নিজের সন্তান হওয়ার সত্ত্বেও প্রলাদকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার আদেশ দেয় । কিন্তু প্রহ্লাদ যখনই সময় পেতো তখনই ভগবান বিষ্ণুর মাহাত্ম্য সবাইকে শোনাতেন । যখন এক দানব তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য তলোয়ার নিয়ে এগিয়ে আসছিল প্রহ্লাদ চোখ বন্ধ করে বলে চলেছিল - ওম নম ভগবতে বাসুদেবায়। এবং যে মুহূর্তে আঘাত করতে যাবে তলোয়ার উল্টে এসে ওই দানবকে হত্যা করে।এই ভাবে কারাগারে বন্দী করে রাখা হোক, আগুনে পুড়িয়ে মারা হোক বা সমুদ্রের ভয়ংকর জন্তুর দ্বারা প্রহ্লাদকে শেষ করা - সব চেষ্টায় বিফলে যেতে থাকে প্রহ্লাদের ভক্তির কাছে।
যখন প্রহ্লাদ সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাচ্ছিল তখন বরুণদেব তাকে রক্ষা করে আর প্রণাম করে বলে তোমার মত ভক্তের দর্শন পেয়ে আমি ধন্য হয়ে গেছি। প্রহ্লাদ বলে - আমার চোখ তো সেই রন্তকে দেখতে চায় যে পুরো বিশ্বকে পরিচালনা করছেন । বরুণদেব বলে - তোমার কি মনে হয় সে তোমার দেখা দেবে ? তুমি একবার তাকে ডেকে তো দেখো । বিজয়ী ভব। বলে বরুণ দেব সাগরে মিলিয়ে যায়।
প্রহ্লাদ দুঃখে বলতে থাকে - হে নাথ ,তুমি ছাড়া এই জগত সংসারে আমার আর কেউ নেই ,,আমার তো আপনার সাথে দেখা করার কোনো যোগ্যতা নেই তবুও কৃপা করে আমায় দেখা দিন আর তারপর ক্লান্ত হয়ে অচেতন হয়ে যায় ।
ঠিক তখনই ভগবান বিষ্ণু প্রহ্লাদকে দেখা দেন আর বলো প্রহ্লাদ আমি তোমার জন্য কি করতে পারি ?প্রহ্লাদ বলে - আপনার দর্শন যে পেয়ে গেছি,আর কিই বা চাওয়ার থাকতে পারে ! হে প্রভু আজ আমার সকল মনের আশা পূর্ণ হয়ে গেছে ,আর আমার কিচ্ছু চাই না ।আর যদি কিছু দেওয়ার থাকে তাহলে আমার উপর এইরকম কৃপা করবেন যাতে আমার হৃদয়ে আপনার ভক্তির আলো সদা প্রজ্জ্বলিত থাকে আর একমুহুর্তের জন্য ও আমি যেন আপনাকে না ভুলি। ভগবান বিষ্ণু প্রহ্লাদকে সেই আশীর্বাদ করে ।
সিনেমার শেষ অংশে প্রহ্লাদ রাজ দরবারে ফিরে আসে ।
প্রহ্লাদকে দেখে সবাই চমকে যায় আর পিতা হিরন্যকস্পু রেগে যায়।প্রহ্লাদ পিতাকে বলে ,ভগবান বিষ্ণু জগৎসংসারের পিতা ,ওনার সাথে শত্রুতা করো না । উনি তো সর্বোপরি , সকল স্থানে ,সকল জীবের মধ্যে বিরাজ করেন। তখন হিরন্যকশিপু সামনের পিলার দেখিয়ে বলে এর মধ্যে তাহলে নিশ্চয় বিষ্ণু আছে আর যদি তা না হয় তাহলে আমি তোর মুণ্ডু ধর থেকে আলাদা করে দেবো বলে জোরে একটা পাঞ্চ মারে।তখনই পিলারের মধ্যে থেকে উদ্ভব হয় ভগবান বিষ্ণুর না নর না পশু নরসিংহ অবতার।এরপর নরসিংহ ও হিরন্যকসিপু এর মধ্যে বিশাল যুদ্ধ হয় আর হিরন্যকসিপুর মৃত্যু হয়।
ভগবান নরসিংহের রাগকে শান্ত করার জন্য সমস্ত দেবতাগণ মর্তে চলে আসে কিন্তু কারো সাহস হয় না ভগবানের সামনে আসার,,পিতামহ ব্রহমার আদেশে প্রহ্লাদ ভগবানের সামনে আসে ,,,আর ভগবান নরসিংহের রাগ শান্ত হয় ,,,,প্রহ্লাদকে বুকে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নেয় এবং বলে যুগে যুগে তোমার কীর্তি আমার সবচেয়ে মহান ভক্ত হিসাবে করা হবে আর যে যে তোমার পূজা করবে তারা সবাই আমার কৃপার পাত্র হবে ।এখানেই মুভি শেষ হয়।
সনাতন হিন্দুধর্মের এক অসাধারণ সিনেমা মহাবতার নরসিংহ।its not just a movie,is an experience। Ei movie theke amra ki ki sikhte pari? প্রথমত , আমাদের দ্বারা করা কোনো ভুল আমাদের মধ্যেই এক বিশাল দানব সৃষ্টি করে যা আমাদের জীবনের সাথে সাথে সমগ্র জাতিকে বিনষ্ট করার শক্তি রাখে যেমনটা দিতি করেছিল । দ্বিতীয়তঃ ,সমগ্র মুভি জুড়ে দেখা যায় অসুর হিরন্যকসিপুর এক বিষ্ণুভক্ত সন্তানের জন্ম হয় এবং তার ভক্তির দ্বারা সমস্ত বাধা বিপত্তি ও সমগ্র জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচায়।
এই ছিল মহাবতার নরসিংহ সিনেমা মুল বিষয়বস্তু,,thanks for watching।