31/07/2025
Part 01 :
গল্পের নাম: একবারের প্রফিট, চিরজীবনের ক্ষতি।
(বাস্তব জীবনের এক বন্ধুত্ব আর গ্যাম্বলিং-এর গল্প)
তাদের দুজনের গল্প। নাম নয়, পরিচয় নয় – শুধু দুজন মানুষ, দুই বিপরীত স্বভাবের বন্ধু।
একজন, আমরা ধরি তার নাম "রাফি" — স্বপ্নবাজ, জেদি, একটু তাড়াহুড়ো করা টাইপ। মাথায় প্ল্যান ঘোরে সারাক্ষণ, চায় এক ঝাঁকে বড়লোক হয়ে যেতে।
আরেকজন – "রাজ"। ঠান্ডা মাথার, বাস্তবতাবাদী। ধীরে ভাবা, ধীরে চলা মানুষ। চুপচাপ ট্রেড করে, বেশি কথা বলে না, কিন্তু যখন বলে – সোজা বুক ভেদ করে যায়।
দুজনের বন্ধুত্ব ছিল ঈর্ষণীয়। একসাথে বড় হয়েছে, একসাথে স্বপ্ন দেখেছে।
তাদের গল্প শুরু হয় "কালার ট্রেডিং" দিয়ে। প্রথমে দুজনে মিলে ছোট ছোট এমাউন্টে ট্রেড করতে শুরু করে। ১০০ টাকা লাভ, ২০০ টাকা লাভ... ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যায়। টাকা ইনকাম করতে কার না ভালো লাগে?
শুরুতে, তারা দিনে দিনে খেলত। কেউ ৫০ টাকা দিত, কেউ ১০০। খুব ছোট ছোট এমাউন্ট। রাফি নিজে হাতে ট্রেড করত, অনেক সময় লস করত, রাজ দেখত আর মাঝে মাঝে পরামর্শ দিত। কিছুদিন পর তারা বুঝল — রাজের সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময় সঠিক হয়, তার হ্যান্ডও ব্রেকডাউন কম, মাথা ঠান্ডা থাকে।
এখান থেকেই রাফি বুঝে গেল, রাজকে নিয়ে এগোনো যায়। আর রাজ? সে তো প্রথম থেকেই বন্ধু হিসেবে রাফিকে ভরসা করত, শুধু একটু বেশি রিস্কি মনে করত।
একদিন সন্ধ্যায়, একটা সেমি-ডার্ক চায়ের দোকানে বসে রাফি বলল:
> “রাজ, আমি ভাবছি বড় করে ঢুকবো। ওই ছোট ছোট টাকা থেকে কিছুই হচ্ছে না। ৩০ হাজার ইনভেস্ট করবো।”
রাজ চমকে উঠল:
> “তুই সিরিয়াস? এত টাকা কই পেলি?”
রাফি একটু হাসল, মুচকি মুখে বলল:
> “সুদে নেব। বাবার নামে জমানো ছিল। লুকিয়ে নিয়ে আসবো।”
রাজ কিছুক্ষণ চুপ। এরপর বলে:
> “ভাই, ইনভেস্ট করিস ঠিক আছে। কিন্তু একটা কথা – নেগেটিভ দিক আগে ভাব। যদি সব টাকা উড়ে যায়? কী করবি?”
রাফির চোখে আগুন। স্বপ্ন। বিশ্বাস। বলল:
> “লস হবে না রে ভাই। আমি তো থাকছি না একা। তুই তো আছিস। তোর উপর আমার চোক বন্ধ করে ভরসা।”
রাজ একটু অস্থির বোধ করল, কিন্তু কিছু বলল না।
সেই রাতেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। ইনভেস্ট হবে – বড় খেলা শুরু হবে।
তখনো তারা জানত না – যে খেলায় নামতে যাচ্ছে, সেটার শেষ কোথায়, আর কীভাবে সেই খেলাই তাদের সম্পর্কের ভিত কাঁপিয়ে দেবে।
--------
৩০ হাজার টাকা এড করল রাফি। ইনভেস্টমেন্ট শুরু হলো।
প্রথম দিনেই রাজ ২,৪০০ টাকা লাভ করলো, পরদিন ৩,০০০ টাকা। আর পরদিন ৪,৫০০ টাকা।
রাফিকে রাজ ট্রেড করতে দিত না কারণ রাফি ট্রেড করলেই লস হতো সেকারণে উইথড্র কোরা টাকাও রাফির কাছে রাখতে দিত না রাজ , কারণ সে ভাবতো হইতো এই টাকা টাও শেষ করে দেবে আবার গেমে ভরে।
এই জন্য রাফি ও কিচ্ছু বলতো না যেহেতু সে বুঝতে পারতো সে নিজে ট্রেড করলে লস হয়ে যায়।
রাজ এবার রোজ রোজ প্রফিট করে যাচ্ছে
রাফি আর রাজ আনন্দে পাগল।
প্রফিটের অর্ধেক করে নিত তারা। দিনে দিনে বেরিয়ানি খাওয়া শুরু হলো। প্রতিদিন একটা না একটা রেস্টুরেন্টে ঘুরতে যেত।
বাইকে চড়ে বিকেলবেলা ঘুরতে বেরিয়ে পড়ত। চোখে তখন ভবিষ্যতের রঙিন ছবি – বড়লোক হওয়া, বড় গাড়ি, বড় ফ্ল্যাট, এবং একসাথে দুনিয়া কাঁপানো।
বন্ধুত্বটা আরও গভীর হতে লাগল। যেন তারা দুজনেই একটাই স্বপ্নের অংশীদার।
রাজ কখনো টাকা নিত না নিজের চাহিদায়। রাফি বারবার বলত, “ভাগ তোরও তো আছে!” কিন্তু রাজ বলত, “তুই তো ইনভেস্ট করছিস, আমি শুধু ট্রেড করছি। প্রফিট হলে অর্ধেক তোর, অর্ধেক আমার – সেটাও তোর জন্যই।”
একদিন রাজ বলল:
> "একটা মোবাইল কিনবো ভাই! প্রফিট থেকেই নেবো। আমাদের কাছে পুঁজি বাদে প্রফিট বেঁচে আছে ৩০ হাজার, এবার একটা প্রিমিয়াম মোবাইল নেওয়া যাক।"
রাফিও মাথা নাড়ল, বলল:
> "দেখিস, আমরা একদিন এই ৩০ হাজারকেই লাখে পরিণত করবো।"
রাজ ফোন অর্ডার করল – ২০ হাজারের মোবাইল। বাকি ১০ হাজার থেকেও কিছু খরচ হয়ে গেলো। রাফি তখন ভাবছিল, “এত প্রফিট যখন হচ্ছে, তাহলে মোবাইল কেনাটাও ঠিক। রাজের হাতেই তো জাদু আছে!”
রাফি আর রাজ তখন প্রায় প্রতিদিন দেখা করত। কখনো রোডসাইড চায়ের দোকানে, কখনো রাত ১২টা পর্যন্ত টুকটাক প্ল্যানিং। রাজ হাসতো, বলতো:
> "তুই চিন্তা করিস না। এই ইনভেস্টটা তোর – কিন্তু প্রফিটটা আমাদের।"
সেই এক কথায় রাফি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতো।
তাদের দুজনের জীবনে তখন কোনো চিন্তা ছিল না। টাকাও আসছে, ঘোরাঘুরি হচ্ছে, পরিবারের থেকেও অনেকটা লুকিয়ে সব কিছু এগোচ্ছে। মনে হচ্ছিল এইভাবেই একটা সময় বড় কিছু করে ফেলবে তারা।
---
🎉 বন্ধুত্ব তখন চূড়ায়
সন্ধ্যার পর তারা বসে ভবিষ্যতের হিসাব করত। কত ইনভেস্ট করলে কত রিটার্ন, মাসে কত লাভ, ভবিষ্যতে কত টাকা জমবে – সেই আলোচনা ঘিরেই দিন কেটে যেত।
রাফি তার একমাত্র জীবনের বড় প্ল্যান বানিয়ে ফেলেছিল — এই ইনভেস্টমেন্টই তাকে তার স্বপ্নে পৌঁছাবে।
আর রাজ? সে বন্ধুর মুখে হাসি দেখেই নিজেকে সফল মনে করত। সে বুঝত, টাকা তার না – কিন্তু দায়িত্ব তার কাঁধে।
একদিন রাজ বলেছিল:
> "দেখ, তুই আমার উপর ভরসা করিস – এই টাকা আমি এমনভাবে চালাবো, তোর ইনভেস্টের দ্বিগুণ তুলে দেব।"
রাফি চুপ করে ছিল। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তার মনেও তখন শুরু হয়েছে একটা অদৃশ্য লোভ। লোভ টাকা নয়, স্বপ্নের সফলতার।
তাদের তখনো কোনো ধারণা ছিল না, এই আনন্দের ছায়ায় লুকিয়ে আছে একটা আসন্ন ঝড়…
---
( পর্ব ২: লাগলে কমেন্ট করুন )