13/09/2025
প্রবীণ এক দাদার নামোল্লেখ ক'রে সেই মা-টি বলছেন, 'উনি সৎসঙ্গ-অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে আমার নিন্দা করেছেন, অভিশাপ দিয়েছেন।'
শুনে আচার্য্যদেব বলছেন, 'আমি আমার ভাল শুনলেও সেটা কানে তুলব না, আর, মন্দকথা তো তুলবই না। আমি নিজের বিষয়ে কোনো কথাই শুনব না। আমি 'লক্ষ্য' হ'তেই পারি না। 'লক্ষ্য' যদি ঠাকুর হন, তাহলে ঠিক আছে। আমার সম্বন্ধে কিছু ভাল বলতে আসছে, সঙ্গে-সঙ্গে blunt (অভিভূত) হয়ে যাই, মন্দ বলতে আসছে, সেখানেও blunt হয়ে যাই। কেন? আরে, বলছে বলুক গা!'
তারপর দৃষ্টান্ত দিয়ে বলছেন, 'এখানকার আশ্রমেরই এক পরিবারের গৃহবধূ আমাকে লিখছে-তা'র স্বামী এবং শ্বশুর আমার বিষয়ে নিন্দা করে, আর এই নিয়ে সে খুব অশান্তি বোধ করছে। তো, আমি তা'র স্বামী-শ্বশুরকে ডেকে বললাম, 'আমার এটা পছন্দ হল না যে, আপনার বৌমা এইরকম ক'রে চিঠি লিখছেন। আপনারা আমার কী নিন্দা করেছেন, সেটা শোনা তো আমার কাজ নয়!
কেননা, আপনারা যদি ব'লেও থাকেন, আর আমাকে যদি সেটা শুনতে হয়, তাহলে ওই নিন্দা আমার গায়েই এঁটে ফেলা (পক্ষান্তরে স্বীকার ক'রে নেওয়া) হ'ল! কাজেই, আমি এসব শুনতে নারাজ।' তখন ওই দুই ব্যক্তি প্রাণপণে চেষ্টা করছেন বোঝাতে যে তাঁরা এটা বলেন নি। আমি তাদের বলি, 'আমি তো এটা শুনতেই চাইছি না- আপনারা বলেছেন কি বলেন নি। আপনারা বললেও আমার যায়-আসে না, না বললেও যায়-আসে না। আমি কিছু মনেও করি না।'- এর তিনদিন পরের ঘটনা। সেই পরিবার কোনো একটা সমস্যায় প'ড়ে আমার সাহায্যপ্রার্থী হ'ল। আমি কিন্তু সাহায্য ক'রে দিলাম। কেন করব না! আমি তো 'আমি' না। দিনের শেষে আমি তো ঠাকুরের। আমি যদি 'আমি' হতাম, তাহলে আপনাদের মাঝে এতক্ষণ ব'সে থাকতাম না। আমি আমার মতন গিয়ে এখন বিশ্রামে মগ্ন থাকতাম, বা নিজের মতন ক'রে সময় কাটাতাম। কিন্তু, আমি যখন ঠাকুরের, তাহলে আমাকে চলতেই হবে এরকমভাবে, যাতে কেউ আমার শত্রু হ'তেই না পারে।'
(আলোচনা বৈশাখ, ১৪৩০)
©Pritish Ranjan Mridha