24/07/2025
এটা কোনো ছবি নয়, ঘটমান #বর্তমান_অভিশাপ যেটা ধীরে ধীরে একটা প্রজন্মকে পঙ্গু বানিয়ে দেবে। আমরা দেখছি, আলোচনা করছি, মাইক ধরে সেমিনার হল কাঁপিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু প্রবণতা কমছে না। বরং আরও বাড়ছে।
কিছু বছর আগেও বাচ্চাদের জন্য ছড়া বা গানের কলি বা আবৃত্তি বা নাচের অংশ বরাদ্দ ছিল যেটা বাড়িতে অতিথি এলেই পারফর্ম করার চাপ আসত অভিভাবকদের তরফ থেকে। এটাও খুব একটা সমীচীন কাজ নয়। অনেক বাচ্চাদের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়ে যেত যার পোশাকি নাম 'পারফরম্যান্স এনক্সাইটি'। আর আজ? বাচ্চাদের রিল নকল করে নাচ, মুভমেন্ট এসব দেখে বড়রা হাততালি দিচ্ছেন! ভাবা যায়! আমরা পেছনের দিকে কি অসম্ভব দ্রুততায় এগিয়ে যাচ্ছি!!
যখন একটা বাচ্চা না বুঝেই আধো আধো স্বরে বলে উঠছে "আমাকে কি চেকচি নাগচে?" সম্মিলিত হর্ষধ্বনি বুঝিয়ে দিচ্ছে তার ছেলেমানুষির আড়ালে উত্তেজনার সুড়সুড়ি সবাইকে বেশ মোহিত করেছে। আবার আর একটু বড় বাচ্চা যখন ভাষা না বুঝেই গেয়ে উঠছে "তেরা *ন্ড খাড়া নেহি হোতা সুনা ম্যায়নে আপনি সহেলি সে..." আশেপাসেট লোকজন মুখ টিপে পরস্পরের দিকে ইশারা করছেন, কেউ বা তাকে ধমকে থামানোর চেষ্টা করছেন। বাচ্চাটি কিন্তু বুঝছে না তার কি অপরাধ!
🔹বেশ কিছু বাচ্চা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলিব্রিটি হয়ে যাওয়ায় অনেক বাবা মা এই পথে ডলার রোজগারের দিকে ঝুঁকছেন। এতে তাদেরও কাজকর্মের ক্ষতি হচ্ছে, কিন্তু বাড়ি বসে ডলার আসার স্বপ্নে তারা বিভোর। এটা তারা বুঝছেন না যে বাচ্চা বড়ো হয়ে উঠতে উঠতে সোশ্যাল মিডিয়া বা তার ডলার কোনোটাই আর থাকবে না।
🔹 অণুবীক্ষণিক পরিবার এবং বাবা মায়ের পেশাগত ব্যস্ততা একটা বড় কারণ। আগেকার একান্নবর্তী পরিবারে বাচ্চা খেলার সাথী পেতো, মায়ের আদর কাকিমা জ্যেঠিমাদের কাছে পেয়ে যেত। এখন তাদের হয় স্কুল, নয়তো বেবিসিটার ভরসা। বাচ্চা যাতে শান্ত থাকে, হাতে মোবাইল এবং তাতে হয় রিল নয়তো কার্টুন।
🔹 বাবা মায়েরা নিজেদের স্পেস বানাতে গিয়ে বাচ্চাকে ফোনে ব্যস্ত রাখছেন যাতে বায়নাক্কা সামলাতে না হয়। অথচ সে সময়টা নিজেরাও যদি একটু ছেলেমানুষি করেন, বাচ্চাটি সঙ্গ পায়।
🔹সোশ্যাল কম্পিটিশন একটা বড় ফাঁদ বাবা মায়েদের জন্য। কিটি পার্টিতে মায়ের হাত ধরে পৌঁছনো বাচ্চার পকেটে সেলফোন। খেলাধুলার অভ্যেস তো নেই, যদি বড়দের আড্ডায় ডিস্টার্ব করে! থাক নিজের মতো ফোন নিয়ে। যে বাচ্চার কাছে সেটা নেই, সে দলছুট। তার বাবা মায়ের প্রতি বাকিদের কৌতুকমিশ্রিত প্রশ্নবাণ।
🔹 শিশুসুলভ বায়না যখন জেদে পরিণত হয়, সেটা থামানোর জন্য বিনা পরিশ্রমের সমাধান সেলফোন এবং রিল বা কার্টুন। "আমার বাচ্চা তো ফোন দেখতে দেখতেই খেয়ে নেয়। কোনো দুস্টুমি করে না" এ যে কি পরিমান বিষক্রিয়া, বলে বোঝাবার নয়।
এ তো গেল উদাহরণ। এর জন্য দায়ী আমরা, সমাজ। একজন শিশু প্রায় শূন্য ব্রেন নিয়ে জন্মায়। অন্তত বুদ্ধিমত্তার নিরিখে। ক্লিনিক্যাল ব্রেন ডেভেলপ করতে এবং কগনিটিভ প্যাটার্ন তৈরি হতে মোটামুটি আট বছর বয়স হয়ে যায়। আমরা স্কুলে পাঠাই তিন বছর বয়সে, পিঠে নিজের চেয়ে ভারী ব্যাগ। কব্জি এবং আঙুলের হাড় ঠিকঠাক গঠিত হতে প্রায় পাঁচ বছর লাগে। আমরা পেন্সিল বা পেন ধরিয়ে দিই তার আগেই। টানা চারলাইন মনে রাখার মতো স্মৃতিশক্তি তৈরি হতেই আমরা চারটে বিষয় মাথায় ঢোকাতে শুরু করি। এগুলো কতটা চাপ তৈরি করে ভেবে দেখি!
যে বাচ্চা 'শান্ত' হয়ে একমনে রিল বা কার্টুন দেখে বাড়িকে শান্তি দেয়, তার বোধ কতটা তৈরি হয়? তার পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে যোগাযোগ কতটা তৈরি হয়? আর একটি সমবয়সী বাচ্চার সঙ্গে বন্ধুত্ব কতটা তৈরি হয়? হাতেকলমে কাজ করার অভ্যাস কতটা তৈরি হয়? কৌতুহল কতটা তৈরি হয়?প্রশ্নগুলো সহজ, উত্তরটাও জানা। কিস্যু হয় না। উল্টে তার ভাবনায় এক অলীক জগৎ তৈরি হয় যেখানে কার্টুনের চরিত্রগুলো থাকে, রিল কন্টেন্টগুলো থাকে। সে তাদের সঙ্গে আদানপ্রদান করে মনে মনে। তাদের মতো আচরণ করে। পাশ থেকে ডাকলে সারা দেয় না। ফুল বা পাখি দেখে খুশিতে ফেটে পড়ে না। নীল আকাশ দেখে অবাক হয় না। রাতের আকাশে আঙ্গুল দিয়ে তারা দেখায় না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার এই অডিও ভিস্যুয়াল সিগনাল পেতে পেতে তার ব্রেন অভ্যস্ত হয়ে যায়। সাদা পাতায় কালো অক্ষর তার মনঃসংযোগ কাড়তে পারে না।
কিন্তু এতসব আমিই বা বলছি কেন? কি লাভ বলে?
🤔🤔