17/06/2025
আমাদের দেশের অধিকাংশ ষ্টুডেন্ট বিভিন্ন দেশে MBBS হয়ে ওঠার স্বপ্নপূরনে পাড়ি দিয়ে থাকে। সংখ্যাটা প্রতি বছরে আনুমানিক দুই লক্ষের কাছাকাছি।
NEET exam একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে,এটা একটা প্রতারণামূলক ব্যাবসা। NEET পাশ করতে মাত্র 18% নাম্বার লাগে। অর্থাৎ, মোট 720 নাম্বারের পরীক্ষার মধ্যে মাত্র 138 নাম্বার পেলেই, একজন ষ্টুডেন্ট তার ডাক্তার হবার স্বপ্নপূরণ করতে সক্ষম। শর্ত একটাই, ষ্টুডেন্টের বাবাকে একজন কোটিপতি হতে হবে।
আসল খেলাটা এখানেই।
দেশে MBBS পড়ার জন্য মোট 90675 টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে 44555 টি সরকারি আসন, বাদবাকি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ।
সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ফিস নামমাত্র, মাত্র কয়েক হাজার টাকা। কিন্তু, বেসরকারি কলেজের ফিস ট্র্যাক্চার নানা জায়গায় নানারকম। মোটামুটি ভাবে 75 লাখ থেকে শুরু, একটু উন্নতমানের কলেজ হলেই এক থেকে দেড় কোটি টাকার প্যাকেজ।
এই বছর 2025 সালে প্রায় 28 লাখ মতো ছাত্রছাত্রী NEET পরীক্ষা দিয়েছে। এর মধ্যে পাশ করেছে প্রায় 16 লাখ 70 হাজার ষ্টুডেন্ট।
দেশে MBBS এর আসন সংখ্যা সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে মাত্র 90675, অথচ, পাশ করেছে 16 লাখ 70 হাজার ষ্টুডেন্ট। তাছাড়া, পৃথিবীর আর কোনো দেশে, কোনো পরীক্ষায় 18% নাম্বার পাওয়া ষ্টুডেন্ট কখনো পাশ করতে পারে না। তাহলে NEET এর ক্ষেত্রে এটা করানো হচ্ছে কেনো ?
আসল খেলাটা কিন্তু এখানেই।
NEET এর মাধ্যমে যোগ্যতা অনুযায়ী টপ ক্যাটাগরির ষ্টুডেন্ট বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পেয়ে থাকে। 45 000 এর মতো বাকি 15 লাখ ষ্টুডেন্টের জন্য মাত্র 46120 টি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের আসন রয়েছে।
NEET পরীক্ষা কেবলমাত্র মেরিট নির্ভর হলে, MBBS আসন সংখ্যার যৎসামান্য বেশী ষ্টুডেন্ট কৃতকার্য হিসাবে নির্বাচিত হতো। আসনের চেয়ে 30গুন বেশী ষ্টুডেন্ট কখনো কৃতকার্য হতে পারতো না।
অথচ এটাই হচ্ছে। কেনো হচ্ছে, কারন জানেন ?
30 গুন ছাত্রছাত্রীদের পাশ করিয়ে, 46120 টি আসনের প্রাইভেট হসপিটাল মালিকদের জন্য মার্কেট তৈরী করে দেওয়া হয়।
আর, সরকারের তৈরি করে দেওয়া এই মার্কেটে প্রত্যেক ষ্টুডেন্টের বাবা পৌনে এক কোটি থেকে দের কোটি পর্যন্ত জোগাড় করতে পারে না।
এক্ষেত্রে মাত্র 1 নাম্বার কম পাওয়ার জন্য সরকারি হসপিটালে চান্স না পাওয়া ষ্টুডেন্ট ব্যাকফুটে চলে যায়। 720 নাম্বারের মধ্যে, মাত্র 138 পাওয়া ষ্টুডেন্ট, বাবার টাকার জোরে, নিজের নামের আগে ডাক্তার লেখার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলে।
এছাড়া NEET এর কোয়েশ্চেন প্যাটার্ন নিয়েও নানাধরনের অবজেকশন রয়েছে। ২০২৫ এর নিট প্রশ্নপত্র হয়েছে পাণ্ডিত্য ফালানোর মত, তামিলনাড়ুর 12th বোর্ডে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়া ছাত্রীটি NEET ক্র্যাক করতে পারে নি। এই বিষয়টি অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গেছে। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টে তামিলনাড়ু সরকার পরাজিত, NEET কাউন্সিলের ফেভারে রায় দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া, কয়েকদিন আগে ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত ছাত্র নবীন শেখরাপ্পা কর্ণাটক ষ্টেট বোর্ড পরীক্ষায় 98% মার্কস নিয়ে পাশ করেছে। অথচ, দেশের কোনো সরকারি কলেজে চান্স পেতে অক্ষম হয়েছে।
NEET এর ফলাফলে দেখা গেছে, বিভিন্ন রাজ্য সরকারের বোর্ডের অধীনে পড়াশোনা করা ষ্টুডেন্ট পিছিয়ে গেছে। CBSE পড়া ষ্টুডেন্ট বাজিমাত করেছে। আর, CBSE তে সাধারণ মধ্যবিত্ত এবং গরীব পরিবারের ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করতে পারে না। এখানে খরচ অনেক বেশী।
2 লাখের কাছাকাছি ষ্টুডেন্ট বিদেশে পড়তে যাচ্ছে। তাদের কি যোগ্যতা নেই ? যদি যোগ্যতা না থাকে, তাহলে তাদের ডাক্তার হবার সুযোগ দেওয়া হবে কেনো ? কেনো মাত্র 18% পাওয়া ষ্টুডেন্টকে ডাক্তার হওয়ার যোগ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে ?
আমাদের দেশের ভালো প্রাইভেট কলেজে MBBS করতে খরচ পড়ে এক থেকে ডের কোটি টাকা। আর, অত্যন্ত নিম্নমানের মেডিক্যাল কলেজ 70 লাখ টাকার মতো প্যাকেজ নিয়ে থাকে। সদ্য গজিয়ে ওঠা বীরভূমের শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজে খোঁজ নিয়ে দেখলাম,, 65 লাখের প্যাকেজ চলছে।
এই খরচ কোনো সাধারণ মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলেমেয়েদের নাগালের মধ্যে থাকে না। তাই তারা বাধ্য হয়েই বিশ্বের অন্যান্য দেশ, যেখানে তুলনামূলক ভাবে অনেক কম খরচে MBBS হয়ে ওঠা সম্ভব, সেখানে পাড়ি দিয়ে থাকে।
এখন প্রশ্ন হলো, ইউক্রেন সহ অন্যান্য দেশে যেখানে 20 থেকে 25 লাখ টাকার মধ্যে MBBS করিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে, সেখানে আমাদের দেশে এক কোটি লাগে কেনো ? আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশ যেখানে 30/40 লাখের মধ্যে ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণ করে চলেছে, সেখানে আমরা পারছিনা কেনো ?
উত্তর একটাই, পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করে যাওয়া। আর, কোটিপতির সন্তানের স্বপ্ন পুরন করে দেওয়া।
এখানে একটাই কথা - "ফেলো কড়ি, মাখো তেল।
NEET এর মাধ্যমে 80% পাওয়া ষ্টুডেন্ট ডাক্তার হবার স্বপ্ন পুরন করতে পারবে না। অথচ, কোটিপতি বাবার 18% পাওয়া ছেলে ড্যাং ড্যাং করে ডাক্তার হয়ে যাবে।
সত্যি, প্রতিভার কি অসাধারণ সংজ্ঞা। এই সিস্টেমের পরিবর্তন আনা দরকার।