08/04/2025
আয়াত (সরাসরি অনুবাদ):
"হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে যে কেউ যদি তার দ্বীন থেকে ফিরে যায়, তবে আল্লাহ এমন এক কওম আনয়ন করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং যারা তাঁকেও ভালবাসবে; তারা হবে মুমিনদের প্রতি বিনয়ী, কাফিরদের প্রতি কঠোর, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ; তিনি যাকে ইচ্ছা তা দেন। আল্লাহ সর্বব্যাপী, সবজ্ঞ।"
— সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত ৫৪
আধুনিক প্রেক্ষাপটে আয়াতটির বিশ্লেষণ:
১. "যে কেউ দ্বীন থেকে ফিরে যায়..."
আজকের যুগে দ্বীন থেকে ফিরে যাওয়া মানে শুধু ইসলাম ত্যাগ করাই নয়—বরং দ্বীনকে গুরুত্ব না দেওয়া, ইসলামী আদর্শ ও বিধানকে উপেক্ষা করাও দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়ার এক রূপ। অনেক মুসলমান নামায, রোজা, হালাল-হারাম, ইনসাফ, ন্যায়বিচার—এসব মূল বিষয়ে উদাসীন।
২. "আল্লাহ এমন এক কওম আনয়ন করবেন..."
আল্লাহর দ্বীন কেউ ছেড়ে দিলে ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। বরং আল্লাহ নতুন কিছু লোক এনে দেন যারা বেশি আন্তরিক, বেশি একনিষ্ঠ, এবং দ্বীনের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।
আজকের যুগে আমরা দেখতে পাই — পূর্বে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকার অনেক জায়গায় মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করছে। এই পরিবর্তনও এই আয়াতের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিফলন।
৩. "যাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং যারা তাঁকেও ভালোবাসে..."
এখানে বোঝা যায় — আসল মুমিন শুধু ধর্মীয় পরিচয়ে নয়, বরং যারা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় উদ্দীপ্ত। যারা আল্লাহকে ভালোবাসে, তারা দ্বীনকে শুধু নিয়ম নয়, বরং ভালোবাসার সম্পর্ক হিসেবেই দেখে।
৪. "মুমিনদের প্রতি নম্র, কাফিরদের প্রতি কঠোর..."
এটা রাজনৈতিক বা সামরিক নয় — বরং চরিত্রের দৃঢ়তা বোঝানো হয়েছে। তারা মুমিন ভাইদের সাথে দয়ালু ও সহানুভূতিশীল, কিন্তু ইসলামের শত্রুদের সামনে আপসকারী নয়। আজকের মুসলমানদের মধ্যে এর বিপরীত দেখা যায় — আমরা নিজেরা পরস্পরকে ঘৃণা করি, কিন্তু ইসলাম-বিদ্বেষীদের সামনে নরম হয়ে যাই।
৫. "আল্লাহর পথে জিহাদ করে..."
জিহাদ মানে শুধু যুদ্ধ নয় — বরং দ্বীনের জন্য সকল রকম প্রচেষ্টা: জ্ঞান অর্জন, দাওয়াহ, অন্যায়ের প্রতিবাদ, নিজের খেয়াল-নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম — সবই জিহাদের অংশ।
৬. "নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না..."
আজকের সমাজে ইসলাম মানলে, হিজাব পরলে, সুন্নাহ অনুযায়ী চললে — মানুষ ব্যঙ্গ করে। কিন্তু আসল মুমিন এসব ভয় করে না, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাধান্য দেয়।
উপসংহার:
এই আয়াত আমাদের জন্য সতর্কবার্তা এবং আশা
যদি আমরা দ্বীন থেকে দূরে যাই, আল্লাহ আমাদের বদলে নতুন কাউকে আনবেন।
তবে আমরা যদি সত্যিকার মুমিন হতে চাই — আল্লাহকে ভালোবাসি, দ্বীনের জন্য নির্ভীক হই, এবং মুমিনদের সাথে দয়ালু হই — তাহলে আমরা এই গুণের অংশ হতে পারি।