21/10/2025
ঠিক দুপুর বারোটা। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদটা জানালার কাঁচ ভেদ করে এসে পড়েছে ঋতুদের বসার ঘরের মেঝেতে। তবে ভেতরে পরিবেশটা একদম ঠান্ডা, জমজমাট। ঋতুর বাড়িতে আজ তার স্কুলের তিন বন্ধু— শ্রেয়া, অয়না আর দেবাঞ্জন এসেছে অনেকদিন পর একসাথে দুপুরের খাবার খেতে।
সকাল থেকে চারজনের হাসি-গল্প আর খুনসুটিতে মেতে আছে পুরো বাড়ি। নানা ধরনের প্ল্যান আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা শেষ হতেই সবার পেটে ইঁদুর দৌড় শুরু হয়ে গেল।
"উফ! আর তর সইছে না! ঋতু, কিরে? খাবার তৈরি হতে আর কত দেরি?" শ্রেয়া ড্রয়িংরুমের সোফায় শুয়ে প্রায় কাতর স্বরে বলল।
"একদম তৈরি! চল, তোরা ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যা। মা এখুনি সব নিয়ে আসছে," হাসতে হাসতে উত্তর দিল ঋতু।
ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজানো হলো। গরম ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাতের সাথে আলুর চিপস, মুগের ডাল, আর মায়ের হাতের স্পেশাল মাছের কালিয়া। এছাড়াও ছিল বেগুন ভাজা, টক দই আর মিষ্টি।
দেবাঞ্জন তো খাবারের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, "আহা! ঋতুর মায়ের হাতের রান্না মানেই স্বর্গ!"
"মিথ্যে বলিস না! তোর মুখ দেখে মনে হচ্ছে যেন জন্ম জন্মান্তরের অভুক্ত!" অয়না টিপ্পনী কাটল।
এরপর আর কথা নয়, শুরু হলো ভোজ। প্রতিটি লোকমাতেই যেন মিশে আছে বন্ধুত্বের স্বাদ আর পুরোনো দিনের নস্টালজিয়া। মাঝে মাঝে টুকটাক হাসি-ঠাট্টা, পুরোনো দিনের মজার ঘটনার স্মৃতিচারণ। ঋতুদের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ফুচকা খাওয়া থেকে শুরু করে দেবাঞ্জনের পরীক্ষার খাতায় শ্রেয়ার উত্তর টুকে দেওয়ার মতো দুষ্টুমিগুলো বারবার ফিরে এলো তাদের আলোচনায়।
খাওয়া শেষে চার বন্ধু টেবিল ছেড়ে উঠে এলো, কিন্তু পেট ভরা আর মনভরা তৃপ্তিতে কেউই নড়তে পারছিল না।
ঋতু হেসে বলল, "চল, এবার একটা জমিয়ে ঘুম হবে, তারপর বিকেলে চা আর আড্ডা।"
শ্রেয়া সম্মতি জানিয়ে বলল, "এই দিনগুলোই তো আসল সঞ্চয়! এমন দুপুরের খাবার আর এমন বন্ধুত্বের কোনও তুলনা হয় না।"
দেবাঞ্জন মাথা নেড়ে সায় জানাল। তারা চারজন একসাথে হাসতে হাসতে বসার ঘরে ফিরে এলো, যেখানকার রোদটা ততক্ষণে হালকা হয়ে নরম আলোয় পরিণত হয়েছে। ঋতু তার বন্ধুদের সাথে আরও এক দুপুর কাটানোর আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।