RudraX

RudraX In a slight different way! In a Slight Different Way!
(3)

সময় যত এগোয়, ফলাফলের উল্লাসে আর তেমন উদ্বেল হই না। আজকাল আমরা যত বড় হচ্ছি, ততই বুঝতে পারছি সব জয় আনন্দ নিয়ে আসে না, আ...
14/07/2025

সময় যত এগোয়, ফলাফলের উল্লাসে আর তেমন উদ্বেল হই না।

আজকাল আমরা যত বড় হচ্ছি, ততই বুঝতে পারছি
সব জয় আনন্দ নিয়ে আসে না, আর সব হার মন ভাঙে না।

জীবনে কিছু পরাজয় থাকে, যেগুলো জয়কে আরও গভীর করে তোলে। কিছু লড়াই থাকে, যেখানে শেষ রানের আগেই আমরা বুঝে যাই, কে সত্যিকারের বিজয়ী।

এইমাত্র শেষ হওয়া ঐতিহাসিক ম্যাচটা দেখলাম। না, ভারত জেতেনি। কিন্তু যেন একটা বড় কিছু জিতে ফেলেছি মনে হচ্ছে। কারণ যেভাবে তারা লড়েছে, তাতে স্কোরবোর্ডের ফলটাই গৌণ হয়ে গেছে।

দেখছিলাম, কীভাবে একজন বোলার, যার কাজ উইকেট নেওয়া, শেষবেলায় ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রতিটা বল যেন একেকটা যুদ্ধ। সঙ্গী একজন যোদ্ধা, যিনি কতবার এই চাপের মুখে দাঁড়িয়েছেন, লড়েছেন। তবুও ভাগ্য আজ মুখ ফেরাল।

কিন্তু সেই চোখের ভাষা? না, সেটা কোনও পরাজিত হওয়া ব্যক্তির চোখ ছিল না।

যে খেলোয়াড়কে আমরা সবসময় মুখোশে দেখি!
হাসি, আগ্রাসন, আত্মবিশ্বাস। আজ তাঁর চোখে ক্লান্তি ছিল, লড়ে যাওয়ার পরিশ্রম ছিল, এবং সবচেয়ে বড় কথা, ছিল একটা অপূর্ব শান্তি। কারণ তিনি জানেন, তিনি কিছুই বাকি রাখেননি।

যারা ক্রিকেট বোঝেন, অথবা খেলেন, তারা ভাল মতই জানে কতটা লড়াই করেছিল ভারতের টেইল এন্ডার এবং রবীন্দ্র জাদেজা স্বয়ং! একেকটি বল যেন পরীক্ষার যে কম নয়! অপরদিকে ইংলিশ ক্যাপ্টেন বেন স্টোকস ক্রমাগত আগ্রাসীভাবে তার সমস্ত তাস এক এক করে যেন বার করে থাকছিলেন কোনোমতে যাতে ওই শেষ উইকেটটা নেওয়া যায়। এবসল্যুট সিনেমা।

অন্যদিকেও মন ছুঁয়ে যাওয়া দৃশ্য, বিপক্ষের ক্যাপ্টেন এসে জড়িয়ে ধরছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে, যেন বেন স্টোকস অক্ষরে অক্ষরে উপলব্ধ করতে পারছিলেন রবীন্দ্র জাদেজার এই ইনিংসটার গুরুত্ব। ম্যাচ জেতার পর তারা সাময়িক আনন্দ করল কিন্তু তারপর যা হল সত্যি অভূতপূর্ব! এই জন্যই টেস্ট ক্রিকেট কে এত ভালোবাসি!

কোনও বিজয় উল্লাস নয়, বরং এক মানবিক মুহূর্ত। সেই মুহূর্তে খেলার সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল ক্রিকেট। অন্য দিক থেকে এক মিনিট অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে ম্যাচ শেষ হয়ে। সিরাজ তখন ও বিশ্বাস করতে পারছেন না এই পরাজয়! মাটিতে বসে রয়েছেন তিনি। চোখ ছলছল! তৎক্ষণাৎ তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এগিয়ে এলেন প্রতিপক্ষের দুজন ইংলিশ ক্রিকেটার, যেন তারাও কুর্নিশ জানালেন তাদের লড়াইকে।

আমরা যারা শুধু রেজাল্ট দেখে ম্যাচের বিচার করি, তারা এই অনুভূতিগুলো মিস করি। কিন্তু যারা খেলার প্রতিটা বল দেখে, তারা জানে, ম্যাচটা আসলে কোথায় হারে, কোথায় জেতে।

টেস্ট ক্রিকেট ঠিক সেভাবেই আমাদের শেখায় ধৈর্য, সংযম, সম্মান। এটুকুই বলি, এই খেলার মধ্যে একটা জীবন লুকিয়ে থাকে। হারলেও যেন মাথা উঁচু থাকে, লড়লে যেন মন শান্ত থাকে। দিনশেষে হার অথবা জিত তো আসবেই! ইংল্যান্ড জিতল, ভারত জিতল, আবার ইংল্যান্ড জিতল এভাবেই তো চলতে থাকবে! এভাবেই চলে এসেছে বছরের পর বছর ধরে। ক্রিকেটের জন্ম থেকেই। কিন্তু এই শিক্ষাগুলো আর কিভাবে শিখতে পারি আমরা? সত্যিই! ধন্য টেস্ট ক্রিকেট।

এই মুহূর্তগুলোই বাঁচিয়ে রাখে আমাদের। জয়-পরাজয়ের বাইরে, কিছু কিছু লড়াই থেকেই যায়, যা শুধু হৃদয়ে অনুভব করতে হয়। ওহ মাই টেস্ট ক্রিকেট 💗✨

ট্রেনটা এখন কোথায়?এই একটিমাত্র প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কতো সময় যে আমরা হারিয়েছি, তার হিসেব নেই।প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়...
13/07/2025

ট্রেনটা এখন কোথায়?

এই একটিমাত্র প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কতো সময় যে আমরা হারিয়েছি, তার হিসেব নেই।

প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনের অপেক্ষা, ভিড়ের মধ্যে নিজের কোচ খুঁজে না পাওয়ার দুশ্চিন্তা, অথবা অফিস পৌঁছানো নিয়ে ধোঁয়াশা সবটা জড়িয়ে ছিল ওই এক বাক্যে।

একটা সময় ছিল, যখন ট্রেন কোথায় আছে জানতে আমাদের নির্ভর করতে হতো স্টেশনের অস্পষ্ট ঘোষণার ওপর, অনুসন্ধান কেন্দ্রের কর্কশ সুরে, কিংবা সহযাত্রীদের কল্পনায়।

স্টেশনের বোর্ডে চক দিয়ে লেখা এবং টাইমটেবিল বইতে সময়সূচি প্রায়ই মেলেনি বাস্তবের সঙ্গে, ঘোষণার ভাঙা শব্দগুলো মিলিয়ে কেবল আরও বিভ্রান্তিই জন্ম দিয়েছে।

কিন্তু ওই যে বলে না, প্রতিটি সমস্যার সাথে সাথে তার সমাধানও যেন সাথে সাথেই জন্ম নেয়! এটিই যেন সবকিছু পাল্টে দিল। শুনুন তবে।

সাল ২০১৫

সকালবেলা, ব্যস্ত বেঙ্গালুরু স্টেশন। হাজার মানুষের মধ্যে দাঁড়িয়ে একদল তরুণ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা, দূরে অস্পষ্ট ঘোষণার গুঞ্জন, কারও চোখে উদ্বেগ, কারও মুখে বিরক্তি। তারা একা নন, সেই মুহূর্তে গোটা দেশে এমন হাজারো স্টেশনে চলছিল ঠিক এই একই দৃশ্য। একটাই প্রশ্ন সবার মুখে, কিন্তু তার কোনো সরাসরি উত্তর নেই,

“আমার ট্রেন এখন কোথায়?”

ঠিক সেই মুহূর্তেই মনে বাজল প্রশ্নটা। আমরা যখন স্মার্টফোনে এত কিছু করতে পারি, তখন সেই স্মার্টফোনেই ট্রেন কোথায় আছে সেটা কি জানার উপায় নেই? একটা অ্যাপের মাধ্যমে, নিজের ফোনেই? তাও আবার ইন্টারনেট বা GPS ছাড়াই?

এই ভাবনাই হয়ে ওঠে একটি বিপ্লবের সূচনা। বেঙ্গালুরুর ছোট্ট একটি টেক দল, Sigmoid Labs, শুরু করল স্বপ্ন দেখা। তারা ছিলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু তাঁদের হৃদয় ছিল প্রতিটি ভারতীয় রেলযাত্রীর মতোই ক্লান্ত আর অপেক্ষায় আচ্ছন্ন।

তাঁদের মাথায় ঘুরছিল একটা অসম্ভব বলেই মনে হওয়া প্রশ্ন, “এমন কি কিছু বানানো যায়, যা ইন্টারনেট ছাড়াই ট্রেনের অবস্থান বলে দেবে? ট্রেনের লাইভ লোকেশন ট্র্যাক করা যাবে? মানুষের সুবিধা হবে যাত্রা করতে?”

তখনকার দিনে ফোনের চার্জ বাঁচানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ, আর মোবাইল ডেটা যেন ছিল আকাশছোঁয়া দামে।

কিন্তু তারা হার মানেনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে দাঁড়িয়ে ট্রায়াল-এন্ড-এররের মধ্য দিয়ে তারা বানাল এক অনন্য অ্যালগরিদম। অ্যাপটি কাজ করে খুব নির্ভুলভাবে, যাত্রী যেখানে আছেন, সেখানে ফোন কোন মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে যুক্ত আছে তা শনাক্ত করে এবং ভারতীয় রেলের সূচির সঙ্গে মিলিয়ে ট্রেনের বর্তমান অবস্থান নির্ধারণ করে। অর্থাৎ, একেকটা ফোন হয়ে উঠল একেকটা লাইভ সেন্সর, ট্রেনের চলাচলের বাস্তব মানচিত্র তৈরি করল কোটি কোটি মানুষের হাতের মুঠোয়।

আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়? এতে না ছিল কোনো বিজ্ঞাপন, না বিশাল কোনো প্রমোশনাল বাজেট। এই অ্যাপ ছড়িয়ে পড়েছিল একেবারে নীরবে, এক যাত্রীর ফোন থেকে আরেক যাত্রীর ফোনে, ট্রেনের মধ্যে এক হকারের মুখে তো আরেক এক সেলসম্যানের ফোনে। এভাবে মুখে মুখে, গুগল সার্চ ছাড়াই, এই অ্যাপ হয়ে ওঠে কোটি মানুষের নির্ভরতার নাম।

ধীরে ধীরে সময় এগোল,

একজন বাবা তাঁর ছেলেকে ফোন করে বলছেন—"এই অ্যাপটা খুলে দেখ তো, ট্রেনটা এখন কোথায়?"

একজন মা স্টেশনে বসে পাশে বসা অপরিচিত সহযাত্রীকে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে বলে দিচ্ছেন, যেন এটা এখন রেলযাত্রার অপরিহার্য টুল।

একজন সাধারণ গরিব ট্রেনের হকার, যিনি দিনে কমপক্ষে চারটে ট্রেন বদলান, তিনি বলেন—“এই অ্যাপ ছাড়া এখন কোথাও বের হই না।” নিত্যযাত্রীরা গভীরভাবে ভরসা করে বলেন, অফিস থেকে বেরিয়ে ট্রেন কোথায় আছে তা জেনে এখন আর তাড়াহুড়ো করতে হয় না। সময় মতো পৌঁছে যাই স্টেশনে। লম্বা যাত্রার ভিন রাজ্যে যাওয়া শ্রমিকরাও চোখ বন্ধ করে ভরসা করেছেন এই অ্যাপটিকে।

এই অকল্পনীয় জনপ্রিয়তা নজর এড়ায়নি বিশ্বের প্রযুক্তি দানবদেরও। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, গুগল Sigmoid Labs-কে প্রায় ৩০-৪০ মিলিয়ন ডলারে অথবা ২৮০ কোটি টাকায় অধিগ্রহণ করে নেয়। এটি ছিল গুগলের Next Billion Users প্রকল্পের অংশ, যেখানে এমন প্রযুক্তি খোঁজা হচ্ছিল, যা কোটি কোটি নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধান দেয়।

সিগময়েড ল্যাব জানায়,

“We can think of no better place to help us achieve our mission… to bring technology and information into more people’s hands.”

অর্থাৎ, “প্রযুক্তি ও তথ্যকে আরও বেশি মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের সঙ্গে চলার জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো উদাহরণ হতে পারে না।”

এই অর্জন ছিল শুধু Sigmoid Labs এর নয়, বরং এই দেশের লক্ষ সমস্যার জন্য তৈরি এক সম্ভাবনার স্বীকৃতি। প্রমাণ হল, দেশের মাটির সমস্যার সমাধান বিশ্বের মন জয় করতে পারে।

সময়ের সঙ্গে অ্যাপটি শুধু জনপ্রিয় হয়নি, হয়েছে আরও প্রযুক্তিনির্ভর ও উন্নত। এখন এতে রয়েছে GPS ভিত্তিক ট্র্যাকিং সিস্টেম, যা স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি তথ্য নিয়ে জানিয়ে দেয় ট্রেনের সঠিক অবস্থান, একদম লাইভ। জানা যায় প্রতিটি কোচের অবস্থান, ট্রেন কোন প্ল্যাটফর্মে ঢুকবে, কতটা দেরি হচ্ছে, এমনকি কখন ছাড়বে, সবকিছুই এক ঝলকে।

শুরুর দিকে যখন ইন্টারনেট ছিল বিলাসিতা, তখন অ্যাপটি কাজ করত সেল টাওয়ার আর ট্রেনের সময়সূচির জটিল মিলিয়ে তৈরি একটি দেশীয় অ্যালগরিদমের উপর। সেই প্রযুক্তি আজ আর ব্যবহৃত হয় না। পরিবর্তে এসেছে স্যাটেলাইট-নির্ভর ম্যাপিং, রিয়েল টাইম ট্র্যাকিং, লাইভ ETA আপডেট যা কেবল আধুনিকই নয়, বিশ্বের অনেক উন্নত অ্যাপের কাছেও এক উদাহরণ।

এই অ্যাপ এখন ১০ কোটিরও বেশি মানুষ ডাউনলোড করেছেন, এবং প্রতি মাসে কোটি কোটি মানুষ এটি ব্যবহার করেন। প্লে স্টোরে এর রেটিং ৪.৪-এর বেশি, হাজার হাজার রিভিউয়ে মানুষ একটাই কথা বলেন যে এই অ্যাপ না থাকলে রেলভ্রমণ অসম্পূর্ণ।

এখন এটি শুধু একটি অ্যাপ নয়, ভারতের রেলযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ আজ এটিকে ভালবাসে। এটি শুধুই সফটওয়্যার নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক চলমান বিশ্বাস।

একদিন যে প্রশ্ন ছিল শুধু হতাশা আর উদ্বেগের প্রতীক, আজ সেই প্রশ্নের উত্তর মেলে স্রেফ এক ক্লিকে।

যখন ট্রেন দেরি করে, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে কেউ যখন অ্যাপটি খুলে দেখেন একটা ট্রেন চলতে চলতে আসে তাঁর দিকে, তখন যে প্রশান্তি, যে স্বস্তি মনের ভেতর তৈরি হয়, সেটাই এই অ্যাপের সবচেয়ে বড় পুরস্কার।

এটি শিখিয়েছে—প্রযুক্তি মানে শুধু ভবিষ্যৎ নয়, এটি বর্তমানের সমস্যাকে স্পর্শ করে তার হৃদয় থেকে।
‘Where is My Train’ তাই শুধুই একটি অ্যাপ নয়, এটি একটি আবেগ, একটি ঐক্য, একটি নীরব বিপ্লব, যার শুরু হয়েছিল একটি প্রশ্ন দিয়ে, “ট্রেনটা এখন কোথায়?”

এই অ্যাপটি তো ব্যবহার করেছেন, কিন্তু কি জানতেন এই অ্যাপের এই ইতিহাস? ছড়িয়ে দিন পুরো কাহিনীটা আপনার রেল সহযাত্রীর সাথে, আপনার বন্ধুদের সাথে, আপনার কাছের মানুষদের সাথে!

12/07/2025

জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম দিনগুলো, আহা আমাদের সেই School

মনে পড়ে এই সমস্ত কিছু? সেই বৃষ্টি, সেই ছুটি, আহা! সেই সমস্ত দিন ❤️✨

ভাবুন তো একটিবার,একটা পাহাড়ি গ্রামের নাম কেউ জানে না।গুগল ম্যাপেও হয়তো তার লোকেশন ঠিকঠাক দেখায় না, পথ চিনিয়ে দিতে পার...
11/07/2025

ভাবুন তো একটিবার,

একটা পাহাড়ি গ্রামের নাম কেউ জানে না।
গুগল ম্যাপেও হয়তো তার লোকেশন ঠিকঠাক দেখায় না,
পথ চিনিয়ে দিতে পারেনা কোন লোকাল বাস,
এমনই দুরবস্থা,
সাইনবোর্ডেও তার ঠাঁই মেলেনা,
নামটি জানেন সেই গ্রামের?

জিলিংসেরেং, শোনেননি তো?
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের কোলঘেঁষে,
যেখানে লাল মাটির ধুলোর উপরেই সকাল নামে,
আর সন্ধ্যা নামে বিকেলের মধ্যেই।

সেই গ্রামে শিশুরা স্কুলের ঘণ্টা শোনে না,
শোনে গ্রামের নিস্তব্ধতা।
আর শেখে জীবনের পাঠ।
সেই গ্রামে মায়েরা হাঁড়ি চড়ান আগুনে,
আর মেয়েরা শিখে যায় নীরব থাকা, স্বপ্ন না দেখতে শেখা।

এমনই এক গ্রামে,
একজন তরুণী পা রেখেছিলেন ২০১৯ সালে,
বিয়ের পর নতুন সংসারে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে।
নাম তাঁর মালতী মুর্মু।

আর এখানেই শুরু হয় গল্পের বাঁক...

মালতী তখনও জানতেন না,
একদিন নিজের হাতেই তুলবেন গুটিকয়েক শিশুর ভবিষ্যৎ। গড়ে তুলবেন এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত।

তবে চারপাশ দেখে তিনি বুঝেছিলেন,
এই নীরবতার নিচে জমে আছে অজস্র অপূর্ণতা।

শুধু উচ্চমাধ্যমিক পাশ মেয়েটি
দেখলেন এই গ্রামের শিশুরা স্কুলে যায় না।
যদিও আছে একটা বাংলা মাধ্যম সরকারি স্কুল,
কিন্তু সাঁওতাল শিশুদের মাতৃভাষা অলচিকি সেখানে নেই,
শিক্ষার্থীরা শব্দ বোঝে না, বইয়ের পাতায় নতুন ভাষা খুঁজে পায় না।

তিনি ভাবলেন,
“আমার ঘরই তো হতে পারে তাদের প্রথম বিদ্যালয়।”

তারপর যা করলেন, তা ইতিহাস নয়, তৈরি হল ভবিষ্যতের ভিত্তি।

নিজের মাটির ঘরের উঠোনে,
স্বামী বাঁকা মুর্মুর পাশে নিয়ে,
তিনি শুরু করলেন এক অলিখিত পাঠশালা।

কোনো সরকারি সাহায্য ছিল না।
না মিড ডে মিল, না ছাতা দেওয়া অনুদান, না বই পাঠানো দফতর।

তবু, একটা মন, এটকুখানি ইচ্ছা, আর কয়েকটি ছোট মুখই ছিল যথেষ্ট।

আজ সেই পাঠশালায় প্রায় ৪৫টি শিশু আসে,
প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে।
মালতী দেবী পড়ান, অলচিকি, বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক।
গান শেখান, গল্প বলেন, ছড়া শোনান।

তার দেড় মাসের ছোট বাচ্চা আর চার বছরের ছেলের দেখভালের ফাঁকেই তিনি ছড়িয়ে দেন আলোর অক্ষর।

গ্রামের মানুষ পাশে এসে দাঁড়ায়। মাটির দেয়াল তুলে দেয়, ঝুপড়ি ঘরটি হয়ে ওঠে ছোট্ট স্কুলঘর।

স্বামী বাঁকা মুর্মু বলেন,

"পঞ্চম শ্রেণির পর ১২ কিলোমিটার দূরে স্কুল,
জঙ্গলের ভেতর দিয়ে গিয়ে কতজন বা যেতে পারে?"
তাই নিজের টাকায় বই কিনে আনেন তারা ঝাড়গ্রাম থেকে।

জানেন কেন?
“যেন এই শিশুগুলো অন্তত নিজের ভাষাটাকে চিনতে শেখে।”

আর এখানেই আসে আমাদের প্রশ্ন,

আমরা যারা আলোয় থাকি,
তারা কি কেবল বাহবা দিতেই শিখি? নাকি কোনো দিন দাঁড়াতে পারি এই আলোর মশালধারীর পাশে?

জানেন কি?
আজও সেই পাঠশালায় নেই পর্যাপ্ত খাতা–কলম,
নেই আলো, নেই সোলার ল্যাম্প, নেই চেয়ারের ব্যবস্থা।
একটা পেনসিল, একটা পুরোনো বই,
একটা ব্যাটারিচালিত লাইট,
সেগুলোর পিছনেও লড়াই করেন মালতী মুর্মু স্বয়ং।

লকডাউনের সময়েও বন্ধ হয়নি তার ক্লাস।
যখন গোটা দেশ ঘরে আটকেছিল,
তখন মালতীর উঠোনে খোলা ছিল ভবিষ্যতের দরজা।

আমরা যারা সভ্যতার আলোতে বাস করি,
তারা কি শুধু গল্প শুনেই থেমে যাবো?
না কি কোনোভাবে সেই গল্পের পাশে দাঁড়িয়ে
একটুখানি আশার রং লাগাতে পারি?

না, আপনাকে মাঠে নামতে হবে না,
আপনাকে গ্রামে গিয়ে স্কুল করতে হবে না।
শুধু একটুখানি সাড়া দিলেই হয়।

একটা পুরোনো বই,
একটা খাতা–কলমের সেট,
একটি সোলার ল্যাম্প কারও পক্ষে পাঠানো হয়তো সহজ।

কিংবা শুধু এই গল্পটা অন্য কাউকে জানানো, মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

কোনো পত্রিকা, কোনো সংগঠন,
কোনো সাহায্যপ্রবণ মানুষ অথবা প্রতিষ্ঠানের কানে পৌঁছে দেওয়া,
তাতেও শুরু হতে পারে বদলের ঢেউ।

সব কাজ আমাদের একার নয়,
কিন্তু একটা ছোট কাজও অনেক কিছু বদলে দিতে পারে,
যদি আমরা তা একসাথে করি।

আমাদের সম্মিলিত ভরসাই একদিন হয়ে উঠতে পারে
একটি বিকল্প শিক্ষা এবং বিপ্লবের ভিত।

মালতী মুর্মু,
আপনি শুধু একজন গৃহবধূ নন,
আপনি এই সময়ের নীরব শিক্ষানায়িকা।
আপনি প্রমাণ করেছেন

আলো, তখনই আলোকিত হয়
যখন তা অন্যের অন্ধকার ভেদ করে পথ দেখানোর ক্ষমতা রাখে।

তবে দাঁড়ান‼️‼️‼️‼️

প্রতিটি গল্পেরই থাকে আরেকটি দিক, আর প্রতিটি আলোচনারও প্রয়োজন কিছু প্রশ্ন।

এই হৃদয়ছোঁয়া কাহিনিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর, পুরুলিয়ারই এক স্থানীয় মানুষ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন, যিনি থাকেন সেই গ্রামের একদম কাছেই।

তিনি লিখছেন, “জিলিং সেরেং-এ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, মিড ডে মিলও দেওয়া হয়। গ্রামের মানুষজন আমাদের হাটে আসেন, ভোট কেন্দ্রও এক। তাহলে প্রশ্ন জাগে, নতুন এই বিদ্যালয় কেন?”

তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী,
ভিডিওতে যেটা দেখানো হয়েছে তা যেন আংশিক সত্য।
যেমন, সেই প্রচন্ড ভাইরাল ভিডিওতে বলা হয়েছে “কোনও সহায়তা নেই”, অথচ বাচ্চাদের ইউনিফর্মে একটি এনজিওর লোগো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তারা মিড ডে মিল, বাসনপত্র, ইউনিফর্ম, এমনকি ঘর তৈরির জন্য খরচ দিয়েছে।

তাহলে “আমি একা লড়ছি”
এই কথাটি পুরোপুরি সত্য কি?

তিনি আরও বলেন, “পুরুলিয়াকে যেন ইচ্ছা করে দরিদ্রতার প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়, যাতে সাহায্যের নামে অর্থ ওঠে। অথচ শহরের লোকেরা নিজের এলাকার বস্তি বা ফুটপাথে তাকায় না, আসে পুরুলিয়ায় দান করতে, ভিডিও তুলতে।”

এই কথাগুলি পড়লে প্রশ্ন জাগে,

আমরা কি কখনও যাচাই না করেই আবেগে ভেসে যাই?

কেউ যদি একটি গ্রামের দুঃখকে ভাইরাল করে নিজের জনপ্রিয়তা বা লাভ বাড়ায়, সেটা কি ন্যায্য?

তবে এই সব প্রশ্নের মধ্যেও মালতী মুর্মুর ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। তিনি নিশ্চয়ই এক ভালো হৃদয়ের মানুষ, যিনি হয়তো একেবারে মন থেকে কিছু শিশুদের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু সমস্যা তখনই তৈরি হয়,
যখন সেই মানবিক প্রচেষ্টাকে ঘিরে লোক দেখানো সহানুভূতি, ভিউ বাড়ানোর পরিকল্পনা,
বা তথ্য গোপন রেখে আবেগকে ব্যবহার করার খেলা শুরু হয়।

আমরা সবাই চাই এই পৃথিবীতে আরও বেশি মালতী মুর্মু হোক, তবে সেই সঙ্গে চাই সততা, স্বচ্ছতা আর প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক সাহায্য পৌঁছাক ঠিক মানুষের কাছেই।

তাই বলবো,
প্রথমে যাচাই করুন, তারপর দান করুন। শুধুমাত্র আবেগ তাড়িত হবেন না, উপলব্ধ করুন, সত্যতা খুঁজুন, তারপর মানুষকে জানান।

কারণ ওই যে বলে না?

গল্প যখন সত্যের জায়গা দখল করে নেয়,
তখন সাহায্যের নামে শুরু হয় ব্যবসা।

🔖 #মালতীমুর্মু
🔖
🔖
🔖 #পাহাড়েরপাঠশালা
🔖
🔖
🔖
🔖
🔖 #অলচিকিকথা
🔖

র*ক্তে*র সম্পর্ক কবে কাগজে হেরে যায়, জানেন?সেদিনই, যেদিন র*ক্তে*র উষ্ণতার চেয়েএকটি কাগজের শীতলতার স্পর্শ বেশি বিশ্বাসযোগ...
08/07/2025

র*ক্তে*র সম্পর্ক কবে কাগজে হেরে যায়, জানেন?

সেদিনই, যেদিন র*ক্তে*র উষ্ণতার চেয়ে
একটি কাগজের শীতলতার স্পর্শ বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।

যেদিন এক ভাই, ভাইয়ের চোখে নয়,
তাকায় দলিলের নির্জীব অক্ষরের দিকে।

মুখের কথার দাম কমে যায়,
স্ট্যাম্প পেপারের দাম বাড়ে।

সেদিনই,
সম্পর্কের পবিত্র দেয়ালে প্রথম চিড় ধরে।

একসময় যে বাড়িতে হাসির আওয়াজে মুখর ছিল উঠোন,
সেখানে এখন শুধু হিসেব চলে।
কে কত টাকা দিল, কে কতটা জমি পাবে,
কার বিয়েতে কে কী উপহার দিয়েছিল!
এসব নিয়েই আলোচনা, এসব নিয়েই মনোমালিন্য।

একটানা এই হিসেব-নিকেশের ভিড়ে সম্পর্কগুলো শুকিয়ে যেতে থাকে, ভেঙে যেতে থাকে ভিতরের সেই অদৃশ্য বাঁধন।

সবচেয়ে কষ্ট হয় তখন, যখন দেখতে হয়,
একসাথে বড় হওয়া ভাইবোন আজ কথা বলে না।
একই উঠোনে খেলা, একসাথে পড়া, একসাথে বড় হওয়া
সবকিছু মুছে যায় কাগজের দাগে।

যে দাদা যিনি একসময় বোনের জন্য ছায়া ছিলেন,
আজ তাকান না পর্যন্ত বোনের ঘরের দিকে।

যে বোন যিনি একসময় দাদাকে নিয়ে গর্ব করতেন,
আজ তাঁকে দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নেন ঘৃণাতে।

এই দূরত্বের শুরুটা বোঝা যায় না,
কিন্তু ফাঁকটা ধীরে ধীরে এতটাই বড় হয়ে যায়,
যেখানে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।
ভালোবাসা, স্নেহ, বিশ্বাস
সবকিছু বদলে যায় সন্দেহ, অভিযোগ আর নির্লিপ্ততায়।

আর এই ভাঙন চূড়ান্ত রূপ পায় তখন,
যখন মা-বাবা আর থাকেন না।
তাঁরাই ছিলেন সেই অদৃশ্য বন্ধন,
যার জন্য সবাই একটু হলেও একসাথে থাকত।

তাঁরা চলে গেলে কেউ কাউকে আর ধরে রাখার চেষ্টা করে না।
তখন সম্পর্কের জায়গায় জায়গা নেয় স্বার্থ, মিথ্যে অর্থ!
নিজেরটা বুঝে নেওয়ার তাড়নায় হারিয়ে যায় সমস্ত মায়া।

সবচেয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন সেই মা, যিনি একসময় বলতেন,
“যার কষ্ট বেশি, আমি তার কাছে আগে ছুটে যাই।”
আজ তিনি চুপ করে একটা ঘরের কোণায় বসে থাকেন।
কারণ তার ভাগে ঘর পড়েনি, তার তিল তিল করে গোছানো সংসারে যেন পড়ে গিয়েছে এক অদৃশ্য সরলরেখা।

এই ভাগাভাগির খেলায় কেউ পায় ঘর, কেউ জমি।
আর কেউ পায় ‘ত্যাজ্য’ এই শব্দটা।
হয়তো সে এক দাদা, হয়তো সে এক বোন, যে কোনো ভুল করেনি,

তবুও সবার অলক্ষে কেউ বলে বসে,
“সম্পত্তিতে ওর আবার কী দরকার?”
এই কথাটা যেন তার অধিকারের দাবিটাকেই মুছে দেয়,
একটাও শব্দ না বলে, নিঃশব্দে।

সবকিছু পাওয়ার পরেও, জীবনের একটা সময় এসে প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে আসে,
“তারা কি সত্যিই সব পেলো?”
নাকি সবকিছু পেয়েও একেবারে খালি হয়ে গেলো?

জমি বাড়লেই বাড়ি হয় ঠিকই,
কিন্তু পরিবার না থাকলে সেটাকে ”ঘর” বলা যায় না।
সম্পত্তি হয়তো মানুষকে বাইরে থেকে ধনী করে তোলে,
কিন্তু ভিতরে জমে থাকা কষ্টটা কেউই দেখতে পায় না,
যা কোনো দলিলে লেখা থাকে না, জমে থাকে হৃদয়ের গভীরে!

আর সেই নিঃশব্দ যন্ত্রণার কপাট,
পৃথিবীর কোনো চাবিই আর খুলতে পারে না।

তারা সবাই কিছু না কিছু পেয়েছে।
জমি, ঘর, টাকা, দলিল! সবই ভাগ হয়ে গেছে এক এক করে।
শুধু ভাগ হয়নি সেই পুরোনো জানালাটা,
যেটা দিয়ে ঝগড়ার মাঝেও দুই ভাই একসাথে আকাশ দেখত।

ভাগ হয়নি সেই পুরোনো কম্বলের গন্ধ,
যেটার তলায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকত সবাই, শীতের রাতে।
ভাগ হয়নি সেই বিকেলের রোদ, যে রোদে ভাইবোনেরা পাটপাট করে পিঠ দিত উঠোনে শুয়ে।
ভাগ হয়নি সেই সন্ধের আলো,
যেখানে মা বলতেন, “এই সবাই পড়তে বোস এখনই।”

আজ তারা পারছে একে অপরকে দলিলের কলমে নিজেদের ছোট করতে,
পারছে কোর্ট-কাচারিতে নিজেদের অধিকারের লড়াই লড়তে,
কিন্তু পারেনি ছোট করতে সেই ছোটবেলার ভালোবাসাকে।
যেটা আজ আর নেই, চুপিচুপি হারিয়ে গেছে পুরোনো কাগজের ভাঁজে ভাঁজে।

তবু ভাবতে হয়,
এই জয় কি সত্যিই কোনো জয়?

জেতার পরেও যদি চোখে জল আসে,
তাহলে তো মন অনেক আগেই হেরে বসে আছে।

এত কিছু পেয়েও শেষে থেকে যায় শুধু একটা ফাঁকা বুক।
মানুষটাই যদি পাশে না থাকে,
তবে কিসের জমি? কিসের দলিল?
যার জন্য রেখে যাচ্ছে
সে-ই বা কি নিশ্চিতভাবে সেই মূল্য দেবে?

আর যদি দেয়ও,
কে বলতে পারে,
সে-ই হয়তো তাদের মতোই কোনোদিন সম্পর্কগুলো আবার টুকরো করে ফেলবে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির মত?

জীবন তো আজ আছে, কাল নেই।
এক্স-রে রিপোর্টের একটামাত্র দাগেই পাল্টে যায় গোটা পৃথিবী।

কিন্তু সম্পর্ক?
সেগুলোই তো একমাত্র সম্পদ,
যা কোটি টাকার জমি দিয়েও কেনা যায় না।

সবাই কিছু না কিছু পেয়েই যায়।

কারও দখলে আসে বড় ঘর,
কারও নামে জমি রেজিস্ট্রি হয়,
কারও ভাঁজে ভাঁজে থাকে কাগজের গন্ধ মাখা কিছু দলিল।

আর কেউ কেউ থেকে যায় শুধু,
একটা পুরোনো ছবির কোণায়,
একটা মায়ের নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাসে,
একটা বিকেলবেলার গল্পে, যেটা আর কেউ মনে রাখে না।

তাদের নামে কিছু লেখা থাকে না,
তাদের ভাগে কোনো ঘর পড়ে না,
শুধু থেকে যায় নিঃশব্দে উচ্চারিত এক শব্দ, ‘অপ্রয়োজনীয়’।

কিন্তু আসল ক্ষতিটা হয় কোথায়?
না, জমি বা টাকায় নয়।
আসল ক্ষতি হয় সেইখানে,
যেখানে একসময় একসাথে খেলা, হাসি আর কাঁদা ভাগাভাগি করা মানুষগুলো, আজ চোখে চোখ রাখতে ভয় পায়।

যে উঠোনটা একসময় ছিল শৈশবের মঞ্চ,
সেই উঠোনই আজ ভাগ হয়ে গেছে কাগজে-কলমে।
কিন্তু সেই উঠোনের সোনাঝরা বিকেলগুলো,
তা তো আর কেউ ফেরত দিতে পারবে না।

সব কিছু পেয়েও শেষের দিকে গিয়ে অনেকেই নিঃশব্দে ভাবে,
“যাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছিলাম, তারা তো পাশে নেই।”

অর্থের লোভ, সম্পত্তির লোভ, বড়ই ভয়ংকর।
সে শুধু সম্পর্ক নয়, ভেঙে দেয় শিকড়টাকেও… যেখান থেকে সবার সেই প্রথম তাদের ‘ঘর’ শব্দটা জন্মেছিল!

যেন ভাঙল এজব্যাস্টনের ইগো!এই কাহিনি কোনও দিনপঞ্জি নয়,এই কাহিনি এক অপেক্ষার,৫৮ বছরের দীর্ঘ, ঘন, ভারী অপেক্ষা!এজব্যাস্টন,য...
06/07/2025

যেন ভাঙল এজব্যাস্টনের ইগো!

এই কাহিনি কোনও দিনপঞ্জি নয়,
এই কাহিনি এক অপেক্ষার,
৫৮ বছরের দীর্ঘ, ঘন, ভারী অপেক্ষা!

এজব্যাস্টন,
যার নামটাই ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের বুকের ওপর এক চাপা পাথর।
যেখানে গিয়েছে সাতবার, প্রত্যেকবার ফিরেছে মাথা নিচু করে।
একবার ড্র, কিন্তু জয়? কখনও না।

এই মাঠটা যেন রূপকথার সেই বন,
যেখানে ঢুকেছে অনেক বীর,
কিন্তু কেউই শেষ করে ফিরে আসতে পারেনি।

অবশেষে এল সেই দিন: ৬ জুলাই, ২০২৫!

সকাল থেকে বৃষ্টির পর এই দিনে সূর্যটা একটু উজ্জ্বল উঠেছিল হয়তো,
কারণ সে জানত আজ এক অভিশাপের মৃ*ত্যু হবে।

ভারতীয় দল মাঠে নামে না শুধু খেলতে,
তারা নামে অতীতকে বদলাতে।

যখন প্রথম ব্যাট করতে নামে ভারত,
তখন কেউ জানত না, এটা কেবল ইনিংস নয়,
এটা হচ্ছে এক মহারথ যাত্রার সূচনা।

শুভমন গিল, এক কবির মতো ব্যাট হাতে

তার ব্যাটে কোনও হুংকার ছিল না, ছিল নিঃশব্দ জাদু।
এক-একটি শটে তিনি যেন এঁকে যাচ্ছিলেন সময়ের ক্যানভাসে অমর ছবি।
২৬৯ রানের ইনিংসটা রান নয়,
এটা ছিল মনোসংযম, ধ্যান, আর নিষ্ঠার উৎসব।

যশস্বী জয়সওয়াল, উষার মতো আগমন

৮৭ রানে যে সূর্যটা উঠেছিল,
তার আলোয় গিলের রাজপথ তৈরি হল।
তার ব্যাটে ছিল ছন্দ,
আর সেই ছন্দেই ভাঙতে শুরু করল এজবাস্টনের নির্জীবতা।

করুণ, সুন্দর, জাদেজা, বুননের স্থপতি।

তারা কোনো শিরোনামে আসে না,
তবে পাথর গাঁথে তারা,
যার ওপর দাঁড়িয়ে ওঠে সৌধ।
করুণের শান্ত ৩১,
সুন্দরের দৃঢ় ৪২,
আর জাদেজার রুদ্ররূপী ৮৯
এই ইনিংসগুলো ছিল ভিত, ছিল শিকড়।

৫৮৭ রানে দাঁড়াল ভারত,
তখনও কেউ জানত না, আসল কাহিনি শুরুই হয়নি।

এবার ইংল্যান্ডের পালা,

হ্যারি ব্রুক ও জেমি স্মিথ,
দুজন একসাথে দাঁড় করালেন ৩০৩ রানের প্রাচীর।
ভারতের মাটি থেকে উঠে আসা এক তরুণ তখন সামনে এসে দাঁড়াল,

আকাশদীপ, এক বজ্রকণ্ঠ নবীন বীর

তিনি বললেন না কিছু,
তিনি শুধু ছুড়ে দিলেন বল, আর বল… আর বল…
৪ উইকেট তাঁর প্রথম গীত ছিল।

মহম্মদ সিরাজ, একার হাতে দুর্ভেদ্য দুর্গে আগুন,

৬ উইকেট… একাই ফেলে দিলেন ইংল্যান্ডকে।

তাদের ইনিংস শেষ ৪০৭ রানে,
ভারতের লিড তখনও ইতিহাসের পথে।

দ্বিতীয় ইনিংস, না, এটা ব্যাটিং না,
এটা ছিল সেই মন্ত্রোচ্চারণ,
যার প্রতিটি শব্দে ভেঙে যাচ্ছিল পুরনো অভিশাপ।

শুভমন আবার!
১৬১ রানে এক রাজকীয় প্রত্যাবর্তন,
মোট ৪৩০ রানে এই ম্যাচে তিনি একা হয়ে উঠলেন এক মহাকাব্য।

পন্থের আগুন!
৫৮ বলে ৬৫ রান,
সেই ইনিংসটা যেন এক বিদ্যুৎ চমক,
যেখানে প্রতিটি বল ছিল ঘুমন্ত পাহাড়ে ধাক্কা।

রাহুল, নিরবতার দৃঢ়তা!
তার ৫৫ রানে ছিল ধীর, গভীর এক ধ্বনি—
যা ইংল্যান্ডের বাকি আশাকে নিঃশব্দে গিলে ফেলল।

জাদেজা, শেষবারের মতো ব্যাট তুলে শেষ পৃষ্ঠা লিখে গেলেন, ৬৯* যেন সবুজ ঘাসে ফোটানো শেষ র*ক্তগোলাপ।

ভারত দাঁড় করাল ৬০৮ রানের টার্গেট।
ইংল্যান্ড তখনো স্বপ্ন দেখছিল, তাদের দম্ভ এতটাই ছিল তারা বলেই দিয়েছিল ভারত আমাদের যাই টার্গেট দিক আমরা চেস করে দেবো। কিন্তু কেউ জানত না, ওরা একটা দুঃস্বপ্নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে।

ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নামে,
কিন্তু আকাশ থেকে তখন নামছে বজ্র।

চতুর্থ দিন শেষে তিনটি উইকেট ফেলে ভারত আশা দেখছে ঐতিহাসিক জয়ের।

আকাশদীপ আবার!

এইবার তিনি ফিরলেন ৬ উইকেট নিয়ে, পঞ্চম উইকেট নেওয়ার পর যশপ্রীত বুমরাহ যিনি ডাগ আউটে বসেছিলেন তিনি যেন তার পিঠ চাপড়ে দিলেন।
ম্যাচে ১০ উইকেট,
এজবাস্টনের বাতাসে তখন শুধু এক নাম, “আকাশদীপ!”

বাকিরা চূড়ান্ত পতনের সঙ্গী
সিরাজ এর আগুন ঝরানো বোলিং এর সাথে অসাধারণ ফিল্ডিং, জাদেজা, সুন্দর, প্রসিধ,
প্রত্যেকে একটা করে পেরেক ঠুকে দিলেন।

ইংল্যান্ড শেষ ২৭১ রানে। ভারত নিল তাদের কুড়িটি উইকেট।

এখন থেকে এজবাস্টন মানে গর্ব

আজ কেউ বলবে না, “ওটা ভারতের মনোহরা শ্মশান।”
আজ থেকে এজবাস্টন মানেই এক মিনার,
যার গায়ে লেখা থাকবে

“এখানে ভারত বারবার হারত।
এখন এখানেই ইতিহাস লিখে যায়।”

যেমনভাবে "গাবা এর ঘমন্ড" ভেঙেছিল, আজ তেমনই যেন ভাঙলো “এজব্যাস্টোন এর ইগো!”

তাই বলে একসাথে চার পাঁচটা চাকরি? এত বুদ্ধি!আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি, এক স্বপ্নের শহর।তারা ভাবছিল, এক জিনিয়াস পেয়েছে।আসলে ত...
06/07/2025

তাই বলে একসাথে চার পাঁচটা চাকরি? এত বুদ্ধি!

আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি, এক স্বপ্নের শহর।

তারা ভাবছিল, এক জিনিয়াস পেয়েছে।
আসলে তারা পেয়েছিল এক ছায়া।
একই সময়ে পাঁচটা কোম্পানির ফুলটাইম কর্মী।
লোকেশন? আমেরিকা।
বাসস্থান? ভারত।

এই ছেলে ছিল এক ‘GHOST EMPLOYEE’,
নাম, সোহম পারেখ।

গল্পটা গুজরাটের এক মধ্যবিত্ত বাড়ি থেকে শুরু। একটা ছোট ঘরে বসে একটা ছেলেটা কোড করত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শুধু কোড না, সে গড়ে তুলছিল এক প্ল্যান। একটা সিস্টেম, যেটা সিস্টেমকেই ফাঁকি দেবে।

সে ছিল ক্লাসের প্রথম।
ইউনিভার্সিটির শীর্ষে।

GitHub-এ তার প্রোজেক্ট দেখে আমেরিকার কোম্পানিগুলো মুগ্ধ,
Mixpanel, Playground AI, Synthesia, Alan AI সবাই তার CV দেখে ভাবল,

“এমন ট্যালেন্ট আর কোথায় পাব!”

তারা বুঝতেই পারেনি,
সোহম ঠিক এইটাই চেয়েছিল।

সে প্রতিটি কোম্পানির চাকরি একে একে পকেটে পুরে নিতে থাকল। একই সময়ে পাঁচটা কোম্পানির ফুলটাইম চাকরি।
সপ্তাহে ১৪০ ঘণ্টার কাজ, একটা মানুষের পক্ষে সম্ভব?

সোহম করে দেখাল।

কিন্তু সে কোথায় ছিল?
সান ফ্রান্সিসকো নয়।
সে ছিল অন্য শহরে।

আর তার অফিসিয়াল ল্যাপটপগুলো ছিল আমেরিকায় এক বন্ধুর ফ্ল্যাটে, সেই অফিসের ঠিকানার শহরে।

ল্যাপটপগুলো সবসময় অন থাকত, যেন সিস্টেম ভাবতো
“এই তো, আমাদের লোক onsite এই আছে।”

Zoom মিটিংয়ে সে কখনও ক্যামেরা অন করত না।
বলত, “ওয়েবক্যাম নষ্ট”, “নেট স্লো”, “আজ একটু অসুস্থ”।

কারও কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে প্রোজেক্ট জমা দিয়ে দিত।
ডেডলাইন? কখনো মিস করেনি।
কোড? একেবারে নিখুঁত।

সবাই মনে করত, "সোহম শুধু আমাদের টিমেই কাজ করে।"
আসলে সে তখন একসাথে পাঁচটা টিমে, পাঁচটা কোম্পানির ফাঁসের মাঝে দৌড়চ্ছে, নিখুঁতভাবে।

একবার ভাবুন,
তিনটে মিটিং চলছে একই দিনে, একই টাইমস্লটে।
তিনটা ভিন্ন প্রজেক্ট, তিনটা ভিন্ন টেকস্ট্যাক। সোহম সেগুলোকে সামলাচ্ছে এমনভাবে, যেন সবই তার একার খেলাঘর।

আয়?
এক বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকর ও কাছাকাছি।

সব কিছু নিখুঁত চলছিল,
তবে প্রতিটি মাস্টারপ্ল্যানে একটা ‘লুপহোল’ থাকে।

মিক্সপানেল এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা একদিন টুইট করেন,
“আমরা আমাদের ইঞ্জিনিয়ারের লোকেশন নিয়ে সন্দেহ করছি।”

এই একটা লাইন ইন্টারনেটে আগুন লাগিয়ে দিল।

বাকিরা কমেন্টে এসে বলল,
“Wait… আমরাও তো ওকে নিয়েছিলাম!”
“সে তো আমাদেরও ফুলটাইম!”
“আমরাও স্ক্রিনে মুখ দেখিনি কোনোদিন…”

একেক করে খুলে গেল প্রতারণার ফাইল।
সব কোম্পানি বুঝতে পারল,
তারা সবাই এক ছেলেরই শিকার।

তাকে বরখাস্ত করা হলো।
প্রতিটা দরজা বন্ধ হলো মুখের ওপর।

সোহম নিজে বলল আমি গর্বিত নই আমার কাজে, কেউ 140 ঘন্টা কাজ করতে চায় না, কিন্তু আমি আর্থিক অবস্থার কথায় ভেবে কাজটা করছিলাম।

সবাই ভাবল, শেষ।
এই ছেলের কেরিয়ার শেষ।

কিন্তু না।
এই গল্পের ক্লাইম্যাক্স তখনও বাকি।

কয়েক মাস পর আবার খবর ছড়াল,
সোহম পারেখ ফিরে এসেছে।
এইবার সে ঢুকেছে সান ফ্রান্সিসকোরই আরেক নামী AI স্টার্টআপে, Darwin Studios।
পদ? Founding Engineer।

CEO জানালেন, “সে ভুল করেছে। কিন্তু তার প্রতিভা অস্বীকার করা যায় না।”

এইবার ক্যামেরা অন।
এইবার আলোয় এসে দাঁড়াল সেই ছায়ামানব।

কি কাহিনী তাই না? যখন মেধা এবং বুদ্ধি একই মানুষের মধ্যে এসে সম্মিলিত হয়, তখন যেন এমনটাই হয়ে দাঁড়ায়!

সে শুধু কোডার নয়।
সে এক স্ট্র্যাটেজিস্ট, এক স্ক্রিপ্টরাইটার, এক গেমপ্লেয়ার।
সে এমন এক চরিত্র, যার মাথায় ছিল এমন এক স্ক্রিপ্ট,
যেটা লিখেছে কীবোর্ড দিয়ে, আর বানিয়েছে বিশ্বাস দিয়ে।

যে ছেলেটা ভারতে বসে আমেরিকার পাঁচটা টেক জায়ান্টকে একইসাথে পরিচালনা করেছিল,

একটাও ডেডলাইন মিস না করে, প্রতিটা কোড নিখুঁত রেখে
সে কি শুধুই প্রতারক? না, সে এক অলিম্পিয়ান বুদ্ধির কারিগর।

একটা মেশিন যেমন একসাথে পাঁচটা টাস্ক করে,
সোহম ছিল সেই মেশিন, কিন্তু র*ক্ত মাংসের নির্মম দক্ষতায় গাঁথা।

মানুষ তাকে হয়তো ক্ষমা করবে না, কিন্তু তার ভবিষ্যৎ উপেক্ষা করাও পারবে না।

কারণ, এমন মাথা বারবার জন্মায় না।
আর একবার ফিরলে, হয়তো সে শুধু নিয়ম ভাঙবে না,
নতুন নিয়ম তৈরি করেও যেতে পারে।

05/07/2025

Circus এর পিছনে লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর সত্য!

সিংহের গর্জনে সবাই মুগ্ধ… কেউ জানতো না, সেই সিংহটা আসলে একজন বেকার গ্র্যাজুয়েট ছেলে।

চাকরি না পেয়ে সার্কাসে সিংহ সেজে মঞ্চে নামতে হয়েছিল ওকে।
ভেতরে ভয়, বাইরে মুখোশ… এবং হঠাৎ আসল সিংহ মঞ্চে উঠে আসে!

এরপর যা হয়, সেটাই এই ভিডিওর আসল শিক্ষা।

এই গল্পটা শুধু হাসির নয়। এটা হাজারো বেকার তরুণের বাস্তবতা, যারা স্বপ্ন নিয়ে পড়ে, কিন্তু চাকরির অভাবে অভিনয় করে যায় নিজেরই জীবনে। কিন্তু সেখানেও টুইস্ট ছিল..

#বেকার_গ্র্যাজুয়েট

বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান? কখনো কখনো একটা সাধারণ প্রশ্নই যথেষ্ট হয়, একটি চকচকে মুখোশের আড়ালের গভীর ক্ষতটাকে চিনিয়ে দেওয়...
04/07/2025

বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান?

কখনো কখনো একটা সাধারণ প্রশ্নই যথেষ্ট হয়, একটি চকচকে মুখোশের আড়ালের গভীর ক্ষতটাকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য।

জায়গাটা মুম্বই। উপলক্ষ্য, হিন্দি ছবি 'মালিক'-এর ট্রেলার লঞ্চ। মঞ্চে পাশাপাশি বসেছিলেন টলিউডের 'ইন্ডাস্ট্রি' প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং বলিউডের অভিনেতা রাজকুমার রাও। আলো, ক্যামেরা আর পূর্বপরিকল্পিত হাসির আবহে সবকিছুই চলছিল জনসংযোগের চেনা ছকে।

গণ্ডগোলটা বাধল, যখন একজন সাংবাদিক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে বাংলায় একটি প্রশ্ন করলেন। প্রশ্নটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং স্বাভাবিক ছিল, তাঁর পুরনো বাংলা চরিত্র এবং নতুন হিন্দি চরিত্রের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে।

উত্তরে বাংলার সবচেয়ে বড় তারকা যা বললেন, তা এক হিমশীতল বাস্তব। তিনি প্রশ্নকর্তাকে থামিয়ে দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলেন,
“Why do you need to talk in Bengali?”

একটি বাক্য। আর তাতেই সব স্পষ্ট।

অনেকেই হয়তো বলবেন, সামান্য একটা ঘটনা নিয়ে এত বাড়াবাড়ির কী আছে? মুম্বইয়ের মঞ্চে একটু হিন্দি-ইংরেজি বলতেই পারেন।

সমস্যাটা সেখানেই। এই ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। এটি একটি গভীর অসুখের লক্ষণ, যার নাম হীনম্মন্যতা। আর এই হীনম্মন্যতার কারণেই আজ জাতীয় স্তরে বাংলা সিনেমা এবং তার শিল্পীরা নিজেদের সম্মান আদায় করতে ব্যর্থ।

যাঁরা ভাবছেন এটা সামান্য ঘটনা, তাঁদের হয়তো কোনো ধারণা নেই যে ভারতের প্রখ্যাত এক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, অর্থাৎ বলিউড, আদতে বাংলাকে কী চোখে দেখে।
একসময় সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণালের সেনের বাংলাকে সমীহ করত গোটা দেশ।

আর আজ?

আজ পশ্চিমবঙ্গ তাঁদের কাছে শুধুমাত্র সস্তা গল্পের যোগানদার, যেখান থেকে কম দামে রিমেকের স্বত্ব কেনা যায়। এখানকার শিল্পীরা তাঁদের কাছে 'রিজিওনাল অ্যাক্টর', যাঁরা বলিউডে একটা সুযোগ পেয়ে ধন্য হয়ে যান।

তাঁরা বাংলার শিল্পীকে প্রকৃত শিল্পী হিসেবে দেখেন না, দেখেন না প্রতিযোগী হিসেবেও।
দেখেন সস্তার বিকল্প হিসেবে।

এই অসম্মানজনক ধারণার জন্য কারা দায়ী?

অবশ্যই বলিউডের ঔদ্ধত্য দায়ী। কিন্তু তার চেয়েও বেশি দায়ী আমাদের নিজেদের আত্মসম্মানের অভাব। যখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় প্রতিনিধি নিজেই নিজের ভাষার প্রশ্নে কুণ্ঠিত হন, তখন আমরা বলিউডের কাছে কী বার্তা পাঠাই?

আমরা প্রকারান্তরে তাঁদের এটাই বলি যে,
"তোমরা আমাদের যা ভাবো, সেটাই ঠিক। আমরা সত্যিই তোমাদের নীচে।"

প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়ের ওই একটি বাক্য বলিউডের সেই ঔদ্ধত্যকেই মান্যতা দেয়।

আর ঠিক সেই মুহূর্তেই মঞ্চে উঠে দাঁড়াল এক অন্য প্রতিরোধ। কেউ হয়তো আশাই করে নি।

রাজকুমার রাও, যিনি প্রবাসী বাঙালি স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা থেকে ভাষাটা শিখেছেন, কোনো সিনেমার চরিত্রের প্রয়োজনে নয়, আত্মস্থ করার জন্য।

তিনি বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে সাংবাদিকের প্রশ্নটি বাকিদের জন্য অনুবাদ করে দিলেন।

তিনি শুধু অনুবাদ করলেন না, তার আগে তিনি বললেন ভালো করে আপনি কন্টিনিউ করুন আমরা ট্রান্সলেট করে নেবো। যেখানে প্রসেনজিতের চ্যাটার্জী বাঙালি হয়ে বললেন যে বাংলায় কথা বলা কি দরকার, সেখানে রাজকুমার রাও একজন অবাঙালি হয়েও বললেন আপনি যে ভাষায় প্রশ্ন করছেন সে ভাষায় প্রশ্ন করুন।

তিনি এক ধাক্কায় বাংলার সম্মানটুকু রক্ষা করলেন।
যে কাজটা ঘরের ছেলের করার কথা ছিল, সেটা যখন একজন অতিথি করে দেন, তখন লজ্জাটা আরও প্রকট হয়।

আজ দক্ষিণ ভারতের তারকারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়েও নিজের ভাষায় সগর্বে কথা বলেন। তাঁদের কাছেও বলিউড ছিল, কিন্তু তাঁরা শিকড় উপড়ে ফেলেননি। বরং নিজেদের এতটাই শক্তিশালী করেছেন যে বলিউড আজ তাঁদের সমীহ করতে বাধ্য। এজন্যই হয়তো দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার এত নাম ডাক। এগিয়ে চলেছে তারা কারোর উপর ভরসা না করে।

আর আমরা?

আমরা রাস্তায় বেরোলেই দেখতে পাই, এখনো কিছু মানুষ বাংলায় প্রশ্ন শুনে লজ্জা পাই, অস্বস্তিতে পড়ি। বাঙালিরা আজকাল নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথা বলে। কুল লাগার জন্য। কমিউনিকেট অর্থাৎ যোগাযোগ করতে নাকি আরো সুবিধা হয়।

এই মানসিকতারই প্রতিফলন ঘটে আমাদের শিল্পে।
বাংলা ইন্ডাস্ট্রির পোস্টারে তারকার মুখ যত বড় হয়, গল্পের শিরদাঁড়াটা ততটাই দুর্বল হতে থাকে। আপনি ঠিক করে বলুন তো দু একটা ছবি বাদ দিলে কতদিনে শেষ আপনি ভালো বাংলা ছবি দেখেছেন? ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, কিন্তু তা সমুদ্রে এক ফোঁটা জলের মতো।

যে শিল্প নিজের মাটির ভাষার মুখ ঢেকে রাখে, সে কী করে বিশ্বমানের হবে? দেখুন প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জীকে অভিনেতা হিসেবে আমরা নিঃসন্দেহে প্রচন্ড ভালোবাসি, তিনি একা হতে বহুদিন এই ভার বহন করেছেন। তিনি দুর্দান্ত অভিনেতা এ বিষয়ে কোনো দ্বিতীয় কথা নেই, কিন্তু জানেন কি?

শুধু 'ইন্ডাস্ট্রি'র তকমা গায়ে জড়ালে হয় না, আত্মপরিচয় লাগে।

বাংলা কোনো 'লোকাল' ভাষা নয়। এটা একটা সংস্কৃতি, একটা মাটি, একটা আস্ত অস্তিত্ব। সেদিন আমরা নিজেদেরই অস্বীকার করব, যেদিন আমরা নিজেরাই সেই অস্তিত্বকে তুলে ধরতে ভয় পাব।

আর যতক্ষণ আমরা নিজেদের সম্মান করব না,
ততক্ষণ বাইরের জগৎ থেকেও সম্মান আশা করাটা বিলাসিতা মাত্র।

আমরা ঠেলে দিতে আসিনি, শুধু হাত ধরে পাশে দাঁড়াতে আসিনি,এসেছি শিকড়ের পাশে ছায়া হয়ে থাকতে। চাই বাংলা যেন শুধু স্মৃতির ভাষা না হয়, হয়ে উঠুক সম্মানের সুর।

চাই বাংলা সিনেমা যেন আর শুধুই চলচ্চিত্র না থাকে, হয়ে উঠুক আত্মপরিচয়ের দর্পণ। কারণ বাংলা শুধু একটি ভাষা নয়, এ আমাদের নাড়ির টান, আত্মার ঠিকানা, মনের প্রশান্তি!

চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা!ভাবুন তো একবার!আপনার পাড়ার একটা ছেলে পুলিশের চাকরি পেয়েছে।রোজ সকালে কড়া ইস্ত্রি...
03/07/2025

চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা!

ভাবুন তো একবার!
আপনার পাড়ার একটা ছেলে পুলিশের চাকরি পেয়েছে।
রোজ সকালে কড়া ইস্ত্রি করা উর্দি পরে, চকচকে বুট পায়ে ডিউটিতে বেরোয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তার পুলিশের পোশাক পরা ছবিতে লাইক-কমেন্টের বন্যা।
বাবা-মা গর্বিত, প্রতিবেশীরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
কি দারুণ ব্যাপার, তাই না?

উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার শিমুলপুর চৌরঙ্গী এলাকার গল্পটাও ঠিক এমনই ছিল। গল্পের হিরো পুলিশ অঙ্কিত ঘোষ।

এলাকার সকলের চোখে সে একজন সফল পুলিশ কনস্টেবল। পোস্টিং কোথায়? একেবারে ভিআইপি এলাকা, সল্টলেকের বিকাশ ভবনে!

অঙ্কিতের ভাবসাব, হাঁটাচলা, কথাবার্তায় এমন একটা দাপট ছিল যে, তাকে দেখে সন্দেহ করার কোনো প্রশ্নই উঠত না।

প্রায় একটা বছর ধরে এভাবেই চলছিল তার ‘ডিউটি’।

কিন্তু সিনেমার গল্পে যেমন টুইস্ট আসে,
এই গল্পেও ঠিক সেটাই ঘটল।

গাইঘাটা থানার আসল পুলিশদের কানে খটকা লাগে।
তারা খোঁজ নিতেই বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ তথ্য,
বিকাশ ভবনে ‘অঙ্কিত ঘোষ’ নামে কোনো কনস্টেবল নেই! মানে এক্সিস্টই করে না।

তাহলে এই ছেলে কে?
সে কি সত্যিই পুলিশ?
নাকি পুলিশের পোশাক পরে অন্য কোনো মতলবে ঘুরছে?

পুলিশের একটা টিম তৈরি হয়।
লক্ষ্য, অঙ্কিতের গতিবিধি।

অঙ্কিত সকালে বাড়ি থেকে বেরোয়, বিকেলে ফেরে,
বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে, সবই খুব স্বাভাবিক।

কিন্তু পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেওয়া কি এত সহজ?
তারা শুধু ঠিক মুহূর্তটার অপেক্ষা করছিল।

সেই মঙ্গলবার...
ডিউটিতে বেরোনোর জন্য উর্দিটা গায়ে চাপিয়েছে অঙ্কিত।
ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ে আসল পুলিশ।

— “আপনার পরিচয়?” —
— বুক চিতিয়ে জবাব: “আমি কনস্টেবল অঙ্কিত ঘোষ।”
— “আইডি কার্ডটা দেখান।”

ব্যস!
এই একটা প্রশ্নেই যেন সব শেষ।

যে দাপট এতক্ষণ অঙ্কিতের গলায় ছিল,
তা যেন কর্পূরের মতো উবে যেতে থাকে।
তার মুখ ফ্যাকাশে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।

আসল পুলিশের সামনে নকল পুলিশের অভিনয় আর কতক্ষণই বা টিকবে?

সিনেমার মতো ক্লাইম্যাক্স এ পরিণত হয় সমস্ত সিন।

অঙ্কিতের বাড়ি থেকে বেরোল,
সারি সারি পুলিশের পোশাক,
নকল ব্যাজ, নেমপ্লেট, আরও কত কী!

জানা গেল,
অঙ্কিত পুলিশের পরীক্ষায় ফেল করেছিল।
কিন্তু বাড়িতে লজ্জার ভয়ে জানায়, চাকরি পেয়ে গেছে।

আর সেই একটা মিথ্যেকে সত্যি প্রমাণ করতেই
সে এমন নাটকীয় কাণ্ড ঘটায়। মানে ভাবা যায়?

সে হয়তো নিজের হারকে মেনে নিতে পারেনি, শুধু এরকম অঙ্কিত নয় হয়তো হাজার হাজার অঙ্কিত রয়েছে যারা তথ্য প্রচেষ্টা করছে নিজের জীবনে কিছু করবার জন্য,নাম উজ্জ্বল করবার জন্য।

কিন্তু একবারে জয় না আসলে এরকম দুঃসাহসী পদক্ষেপ?

অঙ্কিতের গ্রেফতারের খবরে অনেকেই অবাক, সোশ্যাল মিডিয়াতে গড়ে উঠেছিল এক গোটা ফলোয়ার বেস। তবে বিশেষ করে কিছু অনুরাগী রীতিমতো ভেঙে পড়ে জানান তারা এটা মেনে নিতেই পারছেন না।বেশ হিরো হিরো লাগছিল ছেলেটাকে। 🤦🏻

সত্যিই!

এখন আর ঘাম ঝরিয়ে চাকরি পেতে হয় না,
নকল পোশাক পরলেই আপনি হিরো!

ঝকঝকে দুটো ছবি পোস্ট করলেই
সমাজ স্যালুট এবং কুর্নিশ জানায়।

অভিনয় যদি জাঁকিয়ে বসে মুখে,
তাহলে লাইকের ঢেউ উঠে চোখে মুখে।

আর ধরা পড়ে গেলে?

তখন আপনি মানুষ নন, কন্টেন্ট!
ভাইরাল হন, শেয়ার হন,
মিম হন, মজার পাত্রে পরিণত হন।

সমাজ বলে,
“নাটকটা তো ভালোই করছিল!
শুধু শেষ দৃশ্যে ক্যামেরা ঢুকে পড়ল...”

আর আপনি বুঝতেও পারেন না,
জীবনে আপনি কতটা এগোতে পারতেন,
যদি অভিনয়টা শুধু রিয়েল লাইফে না করে,
শুধু একটু নিজের জীবনের জন্য করতেন।

Address

Phulia

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when RudraX posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to RudraX:

Share

Category