30/10/2025
“মেঘ মুলুকে ঝাপসা রাতে, রামধনুকের আবছায়াতে, তাল বেতালে খেয়াল সুরে, তান ধরেছি কন্ঠ পুরে।”
আজ শিশু সাহিত্যিক,লেখক, ছড়াকার, রম্যরচনাকার,নাট্যকার সহ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সুকুমার রায়ের জন্মদিন। বাংলা ভাষার সেই দুষ্টু-জাদুকর, যিনি শব্দ নিয়ে এমন খেলেছেন যে অসম্ভব জিনিসও হঠাৎ সম্ভব মনে হয়। উপেন্দ্রকিশোরের ছেলে, সত্যজিতের পিতা- এই পরিচয়গুলো থাক, কিন্তু তার থেকেও বড় পরিচয়টা হল তিনি নিজেই: বাংলায় ননসেন্স রাইমের স্রষ্টা পথপ্রদর্শক; কবি, নাট্যকার, ব্যঙ্গকার- সব মিলিয়ে এক অনন্য কারিগর।
ইংল্যান্ডে গিয়ে ছাপা আর ছবির খুঁটিনাটি শেখেন- হাফটোন, ব্লক, টাইপোগ্রাফি। দেশে ফিরে ‘ইউ. রে অ্যান্ড সন্স’-এ সেই বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে বইকে বানালেন দেখার জিনিস। ‘সন্দেশ’ সম্পাদনা করতে করতে বুঝিয়েছেন- শুধু ছন্দ জানলেই হয় না, ছাপার কালির গন্ধটাও জানতে হয়। তাই তাঁর বই খুললেই কাগজ-মসির মধ্যে একটা পরিষ্কার সৌন্দর্য, আর শব্দে-শব্দে দুষ্টুমি ধরা দেয়।
‘আবোল তাবোল’, ‘হযবরল’, ‘পাগলা দাশু’, ‘খাইখাই’- এসব শুধু “শিশুদের বই” নয়। এগুলো বাংলা ভাষার ল্যাবরেটরি। ছন্দ ভাঙেননি; তাতে নতুন প্রান বসিয়েছেন- নতুন শব্দ, আঁধার-আলোতে জন্ম নেওয়া অদ্ভুত প্রাণী, উলটোপালটা রাজনীতি, আর টকঝাল ব্যঙ্গ। বাইরে থেকে হাসির, ভেতরে তীক্ষ্ণ আধুনিকতা- ঔপনিবেশিক গাম্ভীর্যকে টিকলি কেটে দিয়েছেন; শিখিয়েছেন, স্বাধীনতার প্রথম পাঠ শুরু হয় কল্পনা দিয়ে।
তাঁর লেখার বড় জোরটা ছিল টোনে- বন্ধুর মতো ডেকে নিয়ে হঠাৎ উলটে দেন যুক্তির পাটাতন। ‘পাগলা দাশু’ সামাজিক নিয়মকে মজার মঞ্চে টেনে আনে; ‘হযবরল’ যুক্তির তালা খুলে দেয়। আর এসবের পেছনে থাকে নিখুঁত ছন্দ, রাইমের খেলা, লাইনের ব্রেক, চরিত্র গড়ার কায়দা- পুরোটাই ভেবে-চিন্তে করা কাজ।
মাত্র ছত্রিশ বছরের জীবন। কালাজ্বরে শরীর হারালেও কল্পনা আজও টাটকা। তাই তিনি আমাদের বুকের আলমারির চিরসবুজ বই। সুকুমার রায় আমাদের মনে করিয়ে দেন- ভাষা শুধু নিয়ম নয়, খেলা; সাহিত্য শুধু জ্ঞান নয়, বিস্ময়। জন্মদিনে তাঁকে অনেক ভালোবাসা- যিনি হেসে-খেলে আমাদের কল্পনার ছাদটা একটু উঁচু করে দিয়েছিলেন। তথ্য ঋণ: ডিডি বাংলা
একাধিক সৃষ্টির মহান স্রষ্টা কে শুভ জন্মজয়ন্তীতে আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য ।🙏💐 🙏