Chotanagpur Voice

Chotanagpur Voice It is a blog on contemporary issues of Chota Nagpur Region

20/10/2025

#জঙ্গলমহলের_মাটিতে_কাজ_নেই, #তাই_মাটি_ছাড়ছে_তরুণেরা

জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হলেও আজও দারিদ্র্য ও বেকারত্বে জর্জরিত। এখানকার তরুণেরা প্রতি বছর হাজারে হাজারে গুজরাট, কেরল, কর্ণাটক, দিল্লি, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে কাজের সন্ধানে চলে যায়—নির্মাণ শ্রমিক, সিকিউরিটি গার্ড, হোটেল কর্মী কিংবা কারখানা শ্রমিক হিসেবে। কারণগুলো বহুমুখী—অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক, শিক্ষাগত ও পরিবেশগত সব দিকেই তাদের সুযোগ সীমিত।

পুরুলিয়ার ৮৭.২৬ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে, যেখানে কৃষিই একমাত্র জীবিকা। কিন্তু কৃষি মৌসুমি ও অনিশ্চিত। বাঁকুড়ায় প্রায় ৬৫ শতাংশ সেচ খালের উপর নির্ভরশীল, ফলে বৃষ্টির অভাব ঘটলে ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যায়। ICAR–CRIDA-র হিসাবে এই অঞ্চল রেইনফেড এলাকা, অর্থাৎ জলনির্ভর নয়—ফলে খরায় আয় থেমে যায়, কৃষকের হাতে কাজ থাকে না। সেই সঙ্গে মনরেগার কাজও অনিয়মিত; ২০২০–২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে যেখানে ১.৩১ কোটি মানুষ কাজ পেয়েছিল, ২০২২–২৩-এ তা নেমে আসে মাত্র ২৪ লক্ষে। নিরাপত্তা-জাল দুর্বল হয়ে পড়েছে। তরুণেরা তাই মৌসুমি চাষ বা সরকারি প্রকল্পে কাজের আশা না রেখে বাইরে বেরিয়ে পড়ছে।

শিল্পের অবস্থা আরও করুণ। পুরুলিয়ার জেলা শিল্প প্রোফাইল বলছে, এখানে মাঝারি শিল্প ইউনিট হাতে গোনা কয়েকটি, নতুন MSME প্রস্তাবও মাত্র তিরিশের মতো—যেখান থেকে সম্ভাব্য কর্মসংস্থান পাঁচ হাজারের বেশি নয়। পুঁজির অভাব, ব্যাংকিং সেবার সীমাবদ্ধতা ও বাজার সংযোগের ঘাটতি মিলিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি হয় না। যে কয়েকটি খনিজ বা ইটভাটা খাত আছে, সেগুলোতেও কাজ অনিয়মিত ও ঝুঁকিপূর্ণ।

শিক্ষা ও দক্ষতার ঘাটতিই জঙ্গলমহলের সবচেয়ে বড় সমস্যা। পুরুলিয়ার সাক্ষরতা মাত্র ৬৫.৩৮ শতাংশ, বাঁকুড়ায় ৭০.৯৫ শতাংশ, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭৮–৮৫ শতাংশ হলেও সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলে তা নেমে আসে ৫৪.৭ শতাংশে। নারী সাক্ষরতা আরও কম—পুরুলিয়ায় ৫০.৫, বাঁকুড়ায় ৬০.৪ শতাংশ। শিক্ষার এই ফাঁকই চাকরির সুযোগের দরজা বন্ধ করে দেয়। স্থানীয়ভাবে আইটি বা টেকনিক্যাল শিক্ষার কেন্দ্র প্রায় নেই, ভোকেশনাল প্রশিক্ষণও শহরমুখী। ফলে দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ না পেয়ে তরুণেরা গুজরাট বা দক্ষিণ ভারতের শিল্পাঞ্চলে কাজ নিতে বাধ্য হয়।

ভাষা ও সংস্কৃতির কারণেও তারা পিছিয়ে পড়ে। ঝাড়গ্রামে প্রায় ১৮.৭ শতাংশ মানুষ সাঁওতালি ভাষাভাষী। বাংলা বা ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকায় চাকরির পরীক্ষায় বা ইন্টারভিউয়ে তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। স্থানীয়ভাবে রোল মডেল বা ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং নেই, ফলে আত্মীয় বা দালালের হাত ধরে অন্য রাজ্যে যাওয়াই সহজ মনে হয়। নারী শ্রম অংশগ্রহণও আশঙ্কাজনকভাবে কম। NFHS–৫ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের অ্যানিমিয়ার হার ৬৩ শতাংশের কাছাকাছি; দুর্বল স্বাস্থ্য ও পুষ্টির কারণে অনেকেই নিয়মিত কাজ করতে পারেন না। পরিবারের আর্থিক চাপ সামলাতে পুরুষ সদস্যই বাইরে যায়।

প্রশাসনিক পরিকাঠামোও অত্যন্ত দুর্বল। পুরুলিয়ায় প্রায় চার লক্ষের বেশি পরিবার ‘ডিপ্রাইভড হাউজহোল্ড’ হিসেবে চিহ্নিত। সড়ক, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা সবই ভঙ্গুর। বহু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। বিদ্যুৎ অনিয়মিত, নেটওয়ার্ক দুর্বল। অনেক স্কুল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ইন্টারনেটই নেই, ফলে অনলাইন আবেদন বা ই-লার্নিং কার্যত অসম্ভব। গ্রামীণ জনঘনত্ব ৪৬৮ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার, কিন্তু গ্রামগুলি দূরত্বে বিচ্ছিন্ন, বাজারে পৌঁছাতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। ছোট ব্যবসার জন্য এটি মারাত্মক ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়।

জঙ্গলমহলের মাটি মূলত লালমাটি ও ল্যাটেরাইট; জলধারণ ক্ষমতা কম, তাই চাষাবাদে ঝুঁকি বেশি। বনজ ও খনিজ সম্পদ প্রচুর থাকলেও স্থানীয়রা তার থেকে ন্যায্য আয় পায় না। বড় প্রকল্পে বাইরের শ্রমিকদের অগ্রাধিকার থাকে, স্থানীয়রা পায় সামান্য মজুরির অনিরাপদ কাজ। পাথরখাদান, ইটভাটা, খনি—সব ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রবল। ন্যায্য মজুরি না পাওয়া, দুর্ঘটনার আশঙ্কা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ—সব মিলিয়ে তরুণেরা অন্য রাজ্যে পাড়ি দেয়।

এই অঞ্চলের অনেক পরিবার এখন পরিযায়ী শ্রমিকের পাঠানো টাকায় বেঁচে থাকে। একবার কেউ বাইরে গেলে পরিবারে সেটিই পথচলার দিশা হয়। PLFS–এর তথ্যে দেখা যায়, গ্রামীণ বেকারত্বের হার ২.৪ শতাংশ হলেও কর্মসংস্থানের মান খারাপ—বেশিরভাগই আংশিক বা স্বল্প মজুরির কাজ। সেই বাস্তবতাই তরুণদের শহরমুখী করে। পশ্চিমবঙ্গে মনরেগা বা সরকারি নিয়োগ প্রায় বন্ধ, নতুন শিল্প আসছে না, বেসরকারি বিনিয়োগও নগণ্য। এই অবস্থায় বাইরে গিয়ে কাজ নেওয়াই তাদের কাছে টিকে থাকার একমাত্র উপায়।

সমাজে সফল রোল মডেল কম, সরকারি অফিসে ঘুষের সংস্কৃতি প্রচলিত, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিষ্ক্রিয়। মদ্যপান, হতাশা, কাজের অভাবে সামাজিক ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। নারীরা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাবে ঘরবন্দি, তরুণ পুরুষেরা নির্মাণ শ্রমিক বা সিকিউরিটি গার্ড হয়ে বাইরে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, পুরুলিয়ার জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৬৮, সাক্ষরতা ৬৫ শতাংশ, নারী সাক্ষরতা ৫০ শতাংশ, সাঁওতাল সাক্ষরতা ৫৫ শতাংশের নিচে, মহিলা অ্যানিমিয়া ৬৩ শতাংশ, মনরেগা আবেদন ১.৩১ কোটি থেকে নেমে ২৪ লক্ষে। এই প্রতিটি সংখ্যাই এক একটি বাস্তবতার প্রতিফলন—একটি অঞ্চলের ক্রমাগত অবনতি ও প্রান্তিকীকরণের চিত্র।

তবু সমাধানের পথ রয়েছে। ছোট জলাধার, মাইক্রো সেচ ও হর্টিকালচার বাড়ানো গেলে কৃষিতে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব। স্থানীয় কাঁচামাল ঘিরে MSME ক্লাস্টার, টেরাকোটা, ল্যাক ও খনিজ প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে তোলা দরকার। প্রতিটি ব্লকে আইটি-ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র ও ডিজিটাল ক্যারিয়ার হাব তৈরি করতে হবে। নারীস্বনির্ভর গোষ্ঠী ও ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পকে বাজারের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। স্কুলে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট ও ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। পর্যটন, সংস্কৃতি ও হস্তশিল্প ঘিরে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, প্রশাসনিক সদিচ্ছা ও স্থানীয় যুবশক্তিকে নীতি প্রণয়নে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া।

জঙ্গলমহলের তরুণেরা কাজের সন্ধানে অন্য রাজ্যে যায় কারণ তাদের মাটিতে কাজের মর্যাদা ও স্থায়িত্ব নেই। তারা যে মাটিতে জন্মেছে, সেই মাটির উন্নয়নের জন্য তাদের শ্রমই যদি অন্য রাজ্যে চলে যায়, তাহলে সেই অঞ্চল চিরকাল পিছিয়ে থাকবে। জঙ্গলমহল ভারতের উন্নয়নের মানচিত্রে আজও প্রান্তে, কিন্তু এখানকার প্রতিটি তরুণ যদি নিজের মাটিতে জীবিকা পায়, তবেই ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের মানে সম্পূর্ণ হবে। এই প্রবন্ধের প্রতিটি সংখ্যা, প্রতিটি কারণ একটাই কথা বলে—জঙ্গলমহলকে উন্নয়নের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষা, দক্ষতা, সেচ, শিল্প ও ন্যায়সংগত প্রশাসনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলেই হয়তো একদিন আর কেউ বলবে না, জঙ্গলমহলের যুবকরা মাটি ছেড়ে যেতে বাধ্য।

 #পুরুলিয়া_পৌরসভার_আর্থিক_অবস্থা আজ রাজ্যের অন্যতম দুর্বল এবং জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চার দশকের পুরোনো এই নগ...
19/10/2025

#পুরুলিয়া_পৌরসভার_আর্থিক_অবস্থা আজ রাজ্যের অন্যতম দুর্বল এবং জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চার দশকের পুরোনো এই নগর প্রশাসন কাঠামোগত দুর্বলতা, অনুদানের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, রাজস্ব সংগ্রহের সীমাবদ্ধতা এবং অডিটের ঘাটতির কারণে কার্যত এক আর্থিক সংকটের পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই অবস্থা শুধু প্রশাসনিক অদক্ষতার ইঙ্গিত নয়, বরং শহরের নাগরিক পরিষেবাগুলির মান, নাগরিকদের জীবনের মান ও ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনাকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করছে।

পুরুলিয়া পৌরসভা 1876 সালে স্থাপিত হয় এবং এটি বর্তমানে প্রায় ৮৭,০০০ জনসংখ্যার একটি শহর পরিচালনা করে। কিন্তু শহরের আকার ছোট, শিল্প-বাণিজ্যিক কার্যকলাপ সীমিত এবং রাজস্ব আয়ের উৎস অত্যন্ত সংকীর্ণ। পৌরসভার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১০-১১ অর্থবছরে পৌরসভার মোট আয় ছিল আনুমানিক ২.৭৮ কোটি টাকা এবং ব্যয় ছিল প্রায় ২.৯৩ কোটি টাকা, অর্থাৎ সেই বছর প্রায় পনের লক্ষ টাকার ঘাটতি ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাব এখনো পর্যন্ত অডিট হয়নি, যা পৌরসভার আর্থিক প্রশাসনের ধীরগতি ও স্বচ্ছতার অভাবকে প্রকাশ করে।

পৌরসভার আয়ের প্রায় ষাট থেকে সত্তর শতাংশ আসে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের অনুদান এবং প্রকল্পভিত্তিক তহবিলের মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে স্বচ্ছ ভারত মিশন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, আমৃত এবং জাতীয় নগর জীবিকা মিশন ইত্যাদি প্রকল্প। নিজস্ব রাজস্ব উৎস যেমন সম্পত্তি কর, বাণিজ্য লাইসেন্স ফি, জল সরবরাহ চার্জ ও বাজার ফি মিলিয়ে পৌর আয়ের বিশ থেকে পঁচিশ শতাংশের বেশি হয় না। এই রাজস্বের কাঠামো অত্যন্ত দুর্বল, কারণ সম্পত্তি করের হার বহু বছর ধরে পুনর্মূল্যায়ন হয়নি এবং কর আদায়ের হারও কম। অনেকে বহু বছর ধরে কর দেননি, অথচ তাদের হোল্ডিং নম্বর রেকর্ডে রয়ে গেছে।

পুরুলিয়া শহরের অর্থনীতি মূলত প্রাথমিক খাতনির্ভর, কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা ভিত্তিক। বড় শিল্পের অভাবের কারণে বাণিজ্যিক সম্পদের সংখ্যা সীমিত, ফলে পৌরসভা কর আদায়ে পিছিয়ে পড়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলার মাত্র ৯.৪ শতাংশ মানুষ শহুরে এলাকায় বসবাস করে, যা রাজ্যের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই সীমিত নগরায়ণই শহরের করযোগ্য সম্পদের ঘাটতির মূল কারণ।

অর্থনৈতিক দুরবস্থার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল পৌরসভার ব্যয় কাঠামো। মোট ব্যয়ের প্রায় পঁচাত্তর শতাংশ বেতন, পেনশন, প্রশাসনিক খরচ এবং অফিস রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হয়। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অবশিষ্ট থাকে মাত্র পঁচিশ শতাংশ বা তারও কম। এর ফলে রাস্তা, ড্রেন, আলো, জল সরবরাহ, ময়লা অপসারণ প্রভৃতি মৌলিক নাগরিক পরিষেবার রক্ষণাবেক্ষণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

অডিটের বিলম্ব এবং আর্থিক স্বচ্ছতার ঘাটতিও পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। ২০১৮-১৯ সালের হিসাব এখনো অডিট হয়নি, যা বোঝায় যে বহু বছর ধরে আর্থিক অনিয়ম বা ভুল হিসাবের সম্ভাবনা পরীক্ষা করা হয়নি। একটি পৌর প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটি গুরুতর প্রশাসনিক ত্রুটি। অডিট না হলে হিসাবের স্বচ্ছতা থাকে না, অনিয়ম চিহ্নিত হয় না এবং দায়িত্ব নির্ধারণও সম্ভব হয় না।

এই আর্থিক সংকটের সরাসরি প্রভাব পড়ছে শহরের সাধারণ নাগরিকদের জীবনে। পুরুলিয়া শহরের বহু ওয়ার্ডে রাস্তাঘাট দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। বর্ষাকালে কাদা জমে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পানীয় জলের সরবরাহ ব্যবস্থা ভঙ্গুর, কারণ পাইপলাইন পুরনো ও ফুটো হয়ে গেছে, মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ নেই। ময়লা-আবর্জনা অপসারণের ক্ষেত্রেও নিয়মিততা নেই, ফলে শহরের স্বাস্থ্য পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে পুরুলিয়া পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয় এবং পর্যাপ্ত জনবল ও গাড়ি না থাকায় কার্যকরভাবে বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয় না।

পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন বিলম্বিত হচ্ছে, যা প্রশাসনিক আস্থার অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। ২০২২-২৩ সালে একাধিক মাসে বেতন বিলম্বিত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। এতে কর্মচারীদের মনোবল নষ্ট হচ্ছে এবং পরিষেবার মানও নিম্নগামী হচ্ছে।

এই অবস্থার সমাধান একমাত্র কাঠামোগত ও নীতিগত সংস্কারের মাধ্যমেই সম্ভব। প্রথমত পৌরসভাকে রাজস্ব পুনর্গঠনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সম্পত্তি কর ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা যেতে পারে। জিআইএস ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রতিটি হোল্ডিংয়ের অবস্থান, আয়তন ও মালিকানা নির্ধারণ করে কর আদায়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা যায়। অনলাইন কর পরিশোধ ব্যবস্থা চালু করলে নাগরিকদের অংশগ্রহণ ও কর সংগ্রহের হার বাড়বে।

দ্বিতীয়ত, স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করতে হবে। পুরুলিয়া শহর ও আশেপাশে ক্ষুদ্র শিল্প, হস্তশিল্প, ইকো-ট্যুরিজম, ইটভাটা ও বাজারভিত্তিক ছোট ব্যবসাগুলি উন্নত করা গেলে পৌরসভার করযোগ্য সম্পদ বাড়বে। স্থানীয় উদ্যোগকে নগর পরিকল্পনার অংশ করতে হবে।

তৃতীয়ত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেল চালু করা যেতে পারে। স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে দরজায় দরজায় ময়লা সংগ্রহ এবং বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট বা বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প চালু করলে পৌরসভার জন্য নতুন আয়ের উৎস তৈরি হবে।

চতুর্থত, অডিট সংস্কৃতিকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রতিটি অর্থবছর শেষে ছয় মাসের মধ্যে অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করা উচিত এবং সেই রিপোর্ট পৌরসভার ওয়েবসাইটে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের অংশগ্রহণে একটি জনস্বচ্ছতা বোর্ড তৈরি করা যেতে পারে, যা আর্থিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।

পঞ্চমত, রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয় করে পুরুলিয়াকে একটি ‘আরবান ব্যাকওয়ার্ড মিউনিসিপ্যালিটি’ হিসেবে বিশেষ তহবিলের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যেমন কেন্দ্রীয় সরকার পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের আওতায় পিছিয়ে পড়া পৌর সংস্থাগুলির জন্য বিশেষ সহায়তা দিয়েছে, পুরুলিয়াকেও সেই তালিকায় আনা উচিত।

ষষ্ঠত, কর্মচারী কাঠামো সংস্কার প্রয়োজন। জনসংখ্যা ও কার্যভার অনুযায়ী কর্মী পুনর্বিন্যাস, দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ এবং অপ্রয়োজনীয় প্রশাসনিক খরচ কমিয়ে উন্নয়নমূলক খাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া উচিত।

পুরুলিয়া পৌরসভা আজ এক দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক শ্বাসরোধের মধ্যে রয়েছে। এর আয় মূলত অনুদাননির্ভর এবং ব্যয় কাঠামো অস্বচ্ছ। কিন্তু সমস্যা অমীমাংসিত নয়। যদি পৌর প্রশাসন তথ্যভিত্তিক ট্যাক্স পুনর্গঠন, প্রযুক্তিনির্ভর রাজস্ব বৃদ্ধি এবং নাগরিক অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা চালু করতে পারে, তবে পুরুলিয়া শহর পুনরায় নিজস্ব আর্থিক ভিত্তিতে দাঁড়াতে পারবে। নাগরিকরা তখনই কর দেবে যখন তারা বুঝবে যে তাদের টাকায় শহর পরিষ্কার হচ্ছে, পানীয় জল আসছে, রাস্তা ঠিক হচ্ছে এবং আলো জ্বলছে।

একটি শহরের উন্নয়ন শুধু প্রশাসনিক দক্ষতার উপর নয়, নাগরিক আস্থার উপরও নির্ভর করে। পুরুলিয়া পৌরসভার উচিত সেই আস্থা পুনর্গঠন করা। সঠিক পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা, আর্থিক শৃঙ্খলা এবং অংশগ্রহণমূলক প্রশাসনের মাধ্যমে পুরুলিয়া একদিন হতে পারে পশ্চিমবঙ্গের একটি আর্থিকভাবে স্বনির্ভর ও সুশাসিত শহর।

 #পুরুলিয়া_জেলার_১০০টি_জনসমস্যা১) নিরাপদ পানীয় জলগ্রামীণ ও পাহাড়ি বহু বসতিতে পাইপে বিশুদ্ধ জল এখনো পৌঁছায় না; নলকূপ ...
17/10/2025

#পুরুলিয়া_জেলার_১০০টি_জনসমস্যা

১) নিরাপদ পানীয় জল
গ্রামীণ ও পাহাড়ি বহু বসতিতে পাইপে বিশুদ্ধ জল এখনো পৌঁছায় না; নলকূপ নির্ভরতা বেশি এবং জলের গুণমান অনিশ্চিত। গ্রীষ্মে জলের স্তর নেমে গেলে নারী–শিশুকে দূরপথ হাঁটতে হয়। সমাধান: উৎস-পরিবর্তন, গ্রামভিত্তিক ফিল্টার/ক্লোরিনেশন, নিয়মিত গুণমান পরীক্ষা।

২) ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লুরাইড/আয়রন
কিছু ব্লকে ফ্লুরাইড ও আয়রনের মাত্রা মানদণ্ডের ওপরে, দাঁত–হাড়–ত্বক সমস্যা বাড়ায়। সমাধান: ডিফ্লুরাইডেশন প্ল্যান্ট, আয়রন রিমুভাল ইউনিট, বিকল্প জলস्रोत এবং স্কুলভিত্তিক সচেতনতা।

৩) বৃষ্টির জল সংরক্ষণে ব্যর্থতা
বর্ষায় জল নষ্ট হয়; শুষ্ক মৌসুমে তীব্র জলাভাব। সমাধান: চেকড্যাম, রুফটপ হার্ভেস্টিং, গ্রাম-ট্যাঙ্ক পুনরুজ্জীবন এবং O&M ক্যালেন্ডার।

৪) পুকুর–দিঘি–ট্যাঙ্কে পলি জমা
জলাশয়ের ধারণক্ষমতা কমে মৎস্য, সেচ ও পানীয় জলে প্রভাব। সমাধান: ড্রেজিং, নর্দমা-বিচ্ছিন্নকরণ, কমিউনিটি-চুক্তিভিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণ।

৫) অনিয়মিত বিদ্যুৎ–ভোল্টেজ ড্রপ
লোডশেডিং/ভোল্টেজ ওঠানামায় পড়াশোনা, স্বাস্থ্যসেবা ও ক্ষুদ্র শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত। সমাধান: ফিডার আপগ্রেড, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ২৪×৭, ট্রান্সফরমার রি-অ্যালাইনমেন্ট।

৬) শেষ-মাইল ইলেকট্রিফিকেশন
কিছু বিচ্ছিন্ন টোলে সংযোগ/বিলিং স্থায়ী নয়। সমাধান: সোলার–ব্যাটারি মাইক্রো-গ্রিড, স্থানীয় টেকনিশিয়ান ও বার্ষিক AMC।

৭) কৃষি–গৃহস্থালি ফিডার সেগ্রিগেশন
একই ফিডারে পাম্প–ঘর থাকায় ভোল্টেজ পড়ে। সমাধান: আলাদা ফিডার, টাইম-অফ-ডে সাপ্লাই, স্মার্ট মিটারিং।

৮) সোলার পাম্প/গ্রিডের রক্ষণাবেক্ষণহীনতা
সরঞ্জাম বসে আছে, AMC নেই। সমাধান: পঞ্চায়েত–SHG–উদ্যোক্তা মডেলে O&M, দ্রুত স্পেয়ার সাপ্লাই।

৯) গ্রামীণ সড়ক বেহাল
বর্ষায় বিচ্ছিন্নতা, গর্ত–ড্রেনেজের সমস্যা। সমাধান: PMGSY-পরবর্তী ৫-বছরের O&M, প্রি-মনসুন মেরামত।

১০) ছোট ব্রিজ–কালভার্টের ঘাটতি
ঝরনা–নালায় বাঁশের সাঁকো ঝুঁকিপূর্ণ। সমাধান: মাইক্রো-ব্রিজ তালিকা, টপোগ্রাফি-ভিত্তিক অগ্রাধিকার, দ্রুত টেন্ডার।

১১) সড়ক নিরাপত্তা দুর্বল
স্কুল–বাজারে জেব্রা–সাইনেজ–স্পিড ক্যালমিং নেই। সমাধান: ব্ল্যাকস্পট অ্যাকশন প্ল্যান, হেলমেট/সিটবেল্ট প্রয়োগ।

১২) রেল ক্রসিংয়ে দীর্ঘ জট
ওভারব্রিজ/আন্ডারপাস বিলম্বে, অ্যাম্বুলেন্স আটকায়। সমাধান: উচ্চ-প্রবাহ ক্রসিং অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্পায়ন।

১৩) সরকারি বাসের স্বল্পতা
সন্ধ্যার পর রুট বন্ধ; ছাত্র–রোগীর কষ্ট। সমাধান: ডিমান্ড-রেসপন্সিভ মিনিবাস, রুট-রিভিউ, টাইমটেবল প্রকাশ।

১৪) ই-রিকশা বিশৃঙ্খলা ও চার্জিং সংকট
চার্জিং/ভাড়া/সেফটি মানহীন। সমাধান: নির্দিষ্ট চার্জিং-ডক, ভাড়া-চার্ট, ফিটনেস সার্টিফিকেট।

১৫) শহরে যানজট–পার্কিং ঘাটতি
কোর করিডরে অনিয়ন্ত্রিত পার্কিং। সমাধান: একমুখী লুপ, মার্কড অন-স্ট্রিট পার্কিং, পার্ক-অ্যান্ড-ওয়াক।

১৬) PHC/CHC জনবল–সুবিধার ঘাটতি
ডাক্তার–নার্স–ল্যাব–ফার্মাসিস্টের পদ শুন্য। সমাধান: কন্ট্র্যাক্ট + রিটেনশন ইনসেনটিভ, টেলি-ডায়াগনস্টিক্স।

১৭) এম্বুলেন্স বিলম্ব
খারাপ রাস্তা–নেটওয়ার্কে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ নষ্ট। সমাধান: ব্লক স্টেশনিং, GPS-SLA ট্র্যাকিং, হার্ড-টু-রিচ রুটম্যাপ।

১৮) টেলিমেডিসিন–রেফারাল প্রটোকল নেই
গ্রাম থেকে জেলা রেফারাল এলোমেলো। সমাধান: ব্লক টেলি-OPD, ই-ICU, নির্দিষ্ট রেফারাল পথনির্দেশ।

১৯) মাতৃ–শিশুস্বাস্থ্যে ঝুঁকি
ANC ৪+, PNC, অ্যানিমিয়া–স্টান্টিংয়ে পিছিয়ে। সমাধান: ট্র্যাকিং-মাইক্রোপ্ল্যান, পুষ্টি-সহায়তা, হোম ভিজিট।

২০) আঙ্গনওয়াড়ির খাদ্য–ECE দুর্বল
ডিম–দুধ–ডাল অনিয়মিত; গ্রোথ মনিটরিং কম। সমাধান: মেনু-ডিসপ্লে, মা-কিচেন, মাসিক অডিট।

২১) টিকাকরণে কোল্ড-চেইন ভঙ্গ
ILR/ডীপ ফ্রিজার–বিদ্যুতে বাধা। সমাধান: সোলার-ILR, ডেটা-লগার, কোল্ড-বক্স ব্যাকআপ।

২২) মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রায় নেই
স্কুল–DMHP কভারেজ কম। সমাধান: ব্লক ক্লিনিক, টেলি-কাউন্সেলিং, শিক্ষক–ASHA প্রশিক্ষণ।

২৩) প্রতিবন্ধী সেবা অপর্যাপ্ত
স্ক্রিনিং–উপকরণ–রিহ্যাব ধীর। সমাধান: মাসিক ক্যাম্প, এক-স্টপ কিয়স্ক, স্কুলে IEP।

২৪) অসংক্রামক রোগ বাড়ছে
HT/DM/CVD স্ক্রিনিং কম; লাইফস্টাইল কাউন্সেলিং নেই। সমাধান: ৩০+ জনের বার্ষিক স্ক্রিনিং, NCD কর্নার।

২৫) বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দুর্বল
সেগ্রিগেশন–ট্রিটমেন্টে ফাঁক। সমাধান: অনুমোদিত এজেন্সি কভারেজ, লাইসেন্স লিংকড কম্প্লায়েন্স।

২৬) শহরে পয়ঃনিষ্কাশনের ঘাটতি
ওপেন ড্রেন–সিউয়ার নেট নেই। সমাধান: DEWATS/মিনি-STP, সেপটেজ ম্যানেজমেন্ট।

২৭) কঠিন বর্জ্যে উৎস-বিচ্ছেদ হয় না
MRF/কম্পোস্টিং কম। সমাধান: দু’ডাস্টবিন বাধ্যতামূলক, ইউজার-ফি–সার্ভিস-লেভেল ট্যাগ।

২৮) খনি/স্টোনক্রাশার ধুলো-দূষণ
PM মান ছাড়াচ্ছে; শ্বাসরোগ বাড়ে। সমাধান: ওয়াটার-স্প্রে, কভার, গ্রিন-বাফার, রিয়েল-টাইম মনিটর।

২৯) জলাশয়–নর্দমা সংযোগ
ইউট্রোফিকেশন–মাছ/পাখি কমে। সমাধান: ইন্টারসেপশন–ডাইভারশন, ওয়েটল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট।

৩০) বন উজাড়–হাতি সংঘাত
ফসল–ঘর নষ্ট; প্রাণহানি। সমাধান: করিডর সুরক্ষা, আগাম সতর্কতা, ক্ষতিপূরণের TAT।

৩১) বালু–পাথর অবৈধ খনন
নদী–রাস্তা–জলস্তর ক্ষতিগ্রস্ত। সমাধান: ই-পরমিট, জিওফেন্স, ড্রোন নজরদারি।

৩২) বন অগ্নিকাণ্ডে সাড়া ধীর
ফায়ার লাইন–ওয়াচটাওয়ার–ভলান্টিয়ার দুর্বল। সমাধান: ড্রাই-সিজন SOP, মক ড্রিল।

৩৩) বজ্রপাত–ঝড়ে প্রস্তুতি কম
LA–সেফ শেল্টার নেই। সমাধান: থান্ডার-ডে প্রোটোকল, স্কুল–মাঠে লাইটনিং অ্যারেস্টার।

৩৪) সেচঘাটতি–বৃষ্টিনির্ভর কৃষি
ফলন অনিশ্চিত। সমাধান: লিফট/মাইক্রো-ইরিগেশন, ক্যানাল রিহ্যাব, ওয়াটার বাজেটিং।

৩৫) মাটির অম্লতা–সংশোধন কম
লাইম/জিপসাম কম ব্যবহারে ফলন পড়ে। সমাধান: ব্লক ডেমো–ইনসেনটিভ, ফসল-নির্দিষ্ট প্যাকেজ।

৩৬) বীজ–সার বিলম্বে
সিজন মিস; ফলন কমে। সমাধান: প্রি-বুকিং, PACS ডিস্ট্রিবিউশন ড্যাশবোর্ড।

৩৭) MSP ক্রয়কেন্দ্র কম
কৃষক মহাজনের দরে বিক্রি করেন। সমাধান: মোবাইল প্রোকিউরমেন্ট, গ্রামীণ সংগ্রহকেন্দ্র।

৩৮) FPO দুর্বল
অর্থায়ন–অ্যাকাউন্টিং–বিপণন গ্যাপ। সমাধান: হ্যান্ডহোল্ডিং এজেন্সি, স্ট্যান্ডার্ড কনট্রাক্ট।

৩৯) তসর–লাক্ষা–মধু মূল্যচক্র ভঙ্গ
ব্র্যান্ডিং/ই-কমার্স নেই। সমাধান: ক্লাস্টার প্রসেসিং, GI/ব্র্যান্ড, অনলাইন সেলস।

৪০) পশু-স্বাস্থ্য টিকাদান কম
FMD/PPR কভারেজ নিচু। সমাধান: মোবাইল-ভেট ইউনিট, কোল্ডচেইন, ক্যালেন্ডার।

৪১) মৎস্য উৎপাদন কম
স্টকিং–ফিড–কোল্ডচেইন দুর্বল। সমাধান: সমবায় বরফঘর, ফিড সহায়তা, মার্কেট-লিংক।

৪২) যুব-দক্ষতা আধুনিক নয়
GIS/EV/হসপিটালিটি/সোলার O&M কোর্স দরকার। সমাধান: ইন্ডাস্ট্রি-টাই-আপ, অন-দ-জব ট্রেনিং।

৪৩) MGNREGA কাজ–মজুরি বিলম্ব
ডিমান্ড ক্যাপচার কম; পেমেন্ট দেরি। সমাধান: ১৫-দিন SLA, সোশ্যাল অডিট, সাইট বোর্ড।

৪৪) নারী SHG-র ঋণ–বাজার বাধা
ডকুমেন্টেশন–বিপণনে সমস্যা। সমাধান: কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার, কনসাইনমেন্ট সেলস।

৪৫) হস্তশিল্প–ক্ষুদ্রশিল্প রপ্তানি গ্যাপ
প্যাকেজিং–ডিজাইন–বারকোড নেই। সমাধান: B2B মিট-আপ, ফেয়ার, রপ্তানি সহায়তা।

৪৬) পর্যটন অবকাঠামো–ক্যারিং ক্যাপাসিটি নেই
রাস্তা–টয়লেট–সাইনেজ মানহীন। সমাধান: মানদণ্ডভিত্তিক উন্নয়ন ও সীমা।

৪৭) হোমস্টে মান-সার্টিফিকেশনহীন
সেফটি–হাইজিন–সার্ভিস ভেরিয়েবল। সমাধান: বাধ্যতামূলক চেকলিস্ট, ট্রেনিং।

৪৮) ঐতিহ্য/পুরাকীর্তি তদারকি কম
দেউলঘাটা–চড়রা–অন্য সম্পদ ক্ষয়ে যায়। সমাধান: কনসারভেশন প্ল্যান, ‘অ্যাডপ্ট-এ-হেরিটেজ’।

৪৯) ক্রীড়া অবকাঠামো–কোচিং ঘাটতি
স্কুল মাঠ/ইনডোর হল কম; কোচ নেই। সমাধান: ব্লক স্পোর্টস একাডেমি, ট্যালেন্ট স্কাউট।

৫০) শহরে উন্মুক্ত সবুজ স্থান কম
পার্ক–গ্রিনওয়ে–হাঁটার পথ অনুপস্থিত। সমাধান: ওপেন স্পেস রেশিও, গ্রীন স্ট্রিটস।

৫১) যুব বেকারত্ব–অভিবাসন
লোকাল চাকরি না থাকায় বাইরের রাজ্যে সরে যায়। সমাধান: স্কিল-টু-প্লেসমেন্ট পাইপলাইন।

৫২) ১০০-দিনের কাজের অনিয়ম–বকেয়া
কাজ কম, পেমেন্ট দেরি। সমাধান: জব-সিকার রেজিস্টার, পাবলিক পেমেন্ট ড্যাশবোর্ড।

৫৩) SHG ব্যবসায়িক সক্ষমতা কম
বুককিপিং–কস্টিং–ব্র্যান্ডিং শেখানো দরকার। সমাধান: ইনকিউবেশন, মার্কেট-লিংক।

৫৪) স্থানীয় শিল্পের প্রযুক্তি পুরোনো
উৎপাদনশীলতা–সেফটি কম। সমাধান: টেক-আপগ্রেড স্কিম, সেফটি অডিট।

৫৫) পর্যটন প্রচারে সমন্বয়হীনতা
জেলা–রাজ্য–বেসরকারি আলাদা আলাদা। সমাধান: ক্যালেন্ডার-ইভেন্ট, যৌথ প্রচার।

৫৬) হোমস্টে সার্টিফিকেশন–ট্রেনিং নেই
অভিজ্ঞতা একরূপ নয়। সমাধান: গ্রেডিং–তালিকা, কোর্স–সার্টিফাই।

৫৭) ঐতিহ্য সংরক্ষণে স্থায়ী তদারকি নেই
বাজেট–মানবসম্পদ কম। সমাধান: ট্রাস্ট/PPP কনসারভেশন।

৫৮) খেলাধুলা–সংস্কৃতি প্ল্যাটফর্ম কম
স্কুল–মহল্লায় নিয়মিত ইভেন্ট নেই। সমাধান: ব্লক কালচারাল ফান্ড, ক্যালেন্ডারাইজেশন।

৫৯) পার্ক/খোলা জায়গা দখল
ডেভেলপমেন্ট প্রেসার। সমাধান: জোনিং এনফোর্সমেন্ট, ডিমার্কেশন।

৬০) হকার জোন নেই
ফুটপাত দখল–জট। সমাধান: নির্দিষ্ট ভেন্ডিং জোন, পরিচয়পত্র, ট্রায়াল রুট।

৬১) বস্তি উন্নয়ন থমকে
পানি–টয়লেট–ড্রেন দুর্বল। সমাধান: ইন-সিটু আপগ্রেড, কমিউনিটি টয়লেট, পাইপড ওয়াটার।

৬২) আবাসন প্রকল্পে দেরি–মানহানি
PMAY ঘর অসম্পূর্ণ। সমাধান: জিও-ট্যাগ, তৃতীয়পক্ষ QA, কিস্তি-শর্তে মান নিয়ন্ত্রণ।

৬৩) সাশ্রয়ী ভাড়াবাড়ি সংকট
কর্মজীবী–ছাত্রদের সমস্যা। সমাধান: রেন্টাল হাউজিং স্কিম, ডরমিটরি মডেল।

৬৪) PDS লিকেজ–ওজন কম
মনিটরিং দুর্বল। সমাধান: ই-পিওএস অ্যানালিটিক্স, সারপ্রাইজ চেক, হেল্পলাইন।

৬৫) সামাজিক পেনশন বিলম্ব
DBT/কেওয়াইসি সমস্যায় দেরি। সমাধান: ক্যাম্প–ট্র্যাকার–ব্যাংক-মিত্র।

৬৬) শিশু পাচার/শিশুশ্রম ঝুঁকি
দারিদ্র্য–ড্রপআউটের ফল। সমাধান: স্টেশন–বাসস্ট্যান্ড ভিজিল্যান্স, রিহ্যাব সেন্টার।

৬৭) নারী নিরাপত্তা দুর্বল
হটস্পট লাইট/CCTV কম। সমাধান: নাইট প্যাট্রোল, ফাস্ট-ট্র্যাক সেল, সেফ রুট ম্যাপ।

৬৮) স্কুল অবকাঠামো ঘাটতি
রুম–লাইব্রেরি–ল্যাব–টয়লেট কম। সমাধান: ক্লাস্টার রিসোর্স সেন্টার, মান-চেকলিস্ট।

৬৯) ড্রপআউট হার বেশি
দূরত্ব–দারিদ্র্য–বিবাহ। সমাধান: ব্রিজ কোর্স, ট্রান্সপোর্ট/হোস্টেল, স্কলারশিপ।

৭০) ICDS কেন্দ্র দুর্বল
ECE–খেলা–গ্রোথ চার্ট অনিয়মিত। সমাধান: টুলকিট, মনিটরিং বোর্ড, মা-কিচেন।

৭১) ST/SC/OBC বৃত্তি–হোস্টেল কম
কভারেজ–পেমেন্ট গ্যাপ। সমাধান: সহজ আবেদন, সিট বাড়ানো, ডিবিটি ট্র্যাকার।

৭২) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর সহায়তা কম
র‌্যাম্প–অ্যাপ্লায়েন্স–শিক্ষক নেই। সমাধান: IEP, সহায়ক ডিভাইস, প্রশিক্ষণ।

৭৩) আইটিআই/পলিটেকনিক আপডেট নয়
পুরনো কোর্স–মেশিন। সমাধান: ইন্ডাস্ট্রি-টাই আপ, অন-দ-জব ট্রেনিং।

৭৪) ডিজিটাল শিক্ষায় নেটওয়ার্ক/ডিভাইস স্বল্প
স্মার্ট ক্লাস ব্যবহার কম। সমাধান: স্কুল-ওয়াইফাই, ডিভাইস লাইব্রেরি, শিক্ষক ট্রেনিং।

৭৫) কর্মসংস্থান দফতর নিষ্ক্রিয়
জব-ফেয়ার/প্লেসমেন্ট কম। সমাধান: ত্রৈমাসিক মেলা, এমআইএস, নিয়োগদাতা নেটওয়ার্ক।

৭৬) MSME-তে মূলধন/বাজারের ঘাটতি
ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল–অর্ডার বুক দুর্বল। সমাধান: ক্রেডিট গ্যারান্টি, B2B লিংক।

৭৭) ব্যাংকিং/ফিন-লিটারেসি কম
BC পয়েন্ট কম; মহিলা অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয়। সমাধান: ফিন-লিট ক্যাম্প, ডিপোজিট–ইনস্যুরেন্স প্রোডাক্ট।

৭৮) মৌসুমি অভিবাসন বেশি
পরিবার ভেঙে যায়। সমাধান: লোকাল জব, স্কিল কনভার্সন, ফুড সিকিউরিটি প্যাকেজ।

৭৯) সিঙ্গল-উইন্ডো ক্লিয়ারেন্স ধীর
অনুমতিতে মাসের পর মাস। সমাধান: অনলাইন TAT, ডিমড-অ্যাপ্রুভাল।

৮০) খনি–কারখানায় সেফটি কম
PPE/ইরগোনমিক্স/ড্রিল অনুপস্থিত। সমাধান: ত্রৈমাসিক অডিট, জরিমানা, প্রশিক্ষণ।

৮১) পুরোনো মাস্টারপ্ল্যান
ড্রেনেজ–ট্রান্সপোর্ট–ওপেন স্পেস আপডেট দরকার। সমাধান: নতুন ডিপি/বেসপ্ল্যান।

৮২) বিল্ডিং পারমিটে স্বচ্ছতা নেই
ঘুষ–ফাইল এজিং। সমাধান: অনলাইন ট্র্যাকিং, পাবলিক ড্যাশবোর্ড।

৮৩) স্ট্রিটলাইট অচল
রাতে নিরাপত্তা কমে। সমাধান: AMC ৪৮-ঘণ্টা SLA, স্মার্ট কন্ট্রোলার।

৮৪) বর্ষায় জলজট–ড্রেন জ্যাম
প্রি-মনসুন ডেসিল্টিং হয় না। সমাধান: হটস্পট ম্যাপ, সময়সূচি।

৮৫) জমি রেকর্ড ডিজিটাল ধীর
মিউটেশন–অমিল–বিলম্ব। সমাধান: SLA, সিস্টেম রিকনসিলিয়েশন।

৮৬) RTPS সেবা বিলম্ব
জন্ম সনদ–ইত্যাদি দেরি। সমাধান: টপ-২০ সার্ভিস মনিটরিং, পেনাল্টি।

৮৭) RTI-তে দেরি/অসম্পূর্ণতা
প্রো-অ্যাকটিভ ডিসক্লোজার কম। সমাধান: আপিল ড্যাশবোর্ড, বিভাগভিত্তিক প্রকাশ।

৮৮) স্থানীয় সংস্থায় জনবল শুন্যতা
ইঞ্জিনিয়ার–অ্যাকাউন্ট্যান্ট–স্যানিটেশন স্টাফ কম। সমাধান: দ্রুত নিয়োগ–প্রশিক্ষণ।

৮৯) গ্রামসভা/ওয়ার্ড কমিটি অকার্যকর
লোকশাসনে অংশগ্রহণ কমে। সমাধান: ত্রৈমাসিক সভা, মিনিটস প্রকাশ, ATR।

৯০) কুর্মালি–সাঁওতালি ভাষা অবহেলা
দপ্তর–স্কুলে মাতৃভাষা কম। সমাধান: দ্বিভাষিক সাইনেজ–পাঠসামগ্রী।

৯১) PVTG/দূরবর্তী টোল সেবা-বঞ্চিত
স্বাস্থ্য–শিক্ষা–রেশন পৌঁছায় না। সমাধান: মোবাইল ভ্যান, কেয়ার কো-অর্ডিনেটর।

৯২) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দুর্বল
কন্ট্রোলরুম–স্টক–মকড্রিল ফাঁক। সমাধান: SOP, হিট/স্টর্ম অ্যাকশন প্ল্যান।

৯৩) ওপেন ডেটা/ড্যাশবোর্ড নেই
জনসেবা সূচক জনসমক্ষে নেই। সমাধান: মাসিক KPI প্রকাশ।

৯৪) প্রকল্পে গুণমানহীনতা/দুর্নীতি
থার্ড-পার্টি টেস্ট নেই। সমাধান: জিও-ট্যাগ, সোশ্যাল অডিট বাধ্যতামূলক।

৯৫) জলজীবন মিশনে স্থায়িত্বহীন O&M
ট্যাপ আছে, জল আসে না। সমাধান: গ্রাম জল কমিটি, ক্লোরিনেশন, মিটার রিডিং।

৯৬) সেপটেজ ট্রিটমেন্ট নেই
শহুরে স্লাজ সরাসরি ফেলা হয়। সমাধান: FSM কন্ট্র্যাক্ট, নির্দিষ্ট ডিসপোজাল।

৯৭) বজ্রপাত-সুরক্ষা অবকাঠামো কম
স্কুল–মাঠে LA নেই। সমাধান: ইনস্টলেশন–অডিট–সচেতনতা।

৯৮) পর্যটন হটস্পটে দূষণ
প্লাস্টিক–DG সেট–ধুলো বৃদ্ধি। সমাধান: ক্যারিং ক্যাপাসিটি, গ্রিন কোড।

৯৯) হাতি ক্ষতিপূরণ বিলম্ব
ফসল–ঘর ক্ষতিতে টাকা দেরি। সমাধান: ডিজিটাল ক্লেইম, অগ্রিম রিলিফ।

১০০) সামাজিক নিরীক্ষা–অভিযোগ নিষ্পত্তি দুর্বল
নাগরিকের ভরসা কমে। সমাধান: হটলাইন, গ্রিভান্স ড্যাশবোর্ড, স্বাধীন অডিট।

 পুরুলিয়ার পুরসভার পুরপ্রধান নব্যেন্দু মাহালি সম্প্রতি এক সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের সামনে মেজাজ হারিয়ে যে আচ...
17/10/2025



পুরুলিয়ার পুরসভার পুরপ্রধান নব্যেন্দু মাহালি সম্প্রতি এক সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের সামনে মেজাজ হারিয়ে যে আচরণ করেছেন, তা শুধুমাত্র এক ব্যক্তির উত্তেজনা নয়, একটি জেলার প্রশাসনিক ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন। এমন এক জেলায়, যেখানে চিকিৎসকরা প্রতিদিন জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম করেন ন্যূনতম পরিকাঠামোয়, সেখানে জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে সংযম ও সহযোগিতাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু যা দেখা গেল তা ছিল রাগ, অহংকার, এবং অপমানের প্রকাশ।

পুরুলিয়া জেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম পিছিয়ে থাকা অঞ্চল। জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৭.৮৩ লক্ষ, কিন্তু এই বিপুল মানুষের জন্য সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার অবস্থা আশঙ্কাজনক। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, এখানে রয়েছে একটি জেলা হাসপাতাল, একটি উপবিভাগীয় হাসপাতাল, একটি মানসিক হাসপাতাল, একটি পুলিশ হাসপাতাল, পাঁচটি রুরাল বা চেইফ হাসপাতাল (CHC), পনেরোটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (BPHC), ৫৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (PHC) এবং ৪৮৫টি সাব-সেন্টার। কিন্তু এই সংখ্যার আড়ালে বাস্তবতা ভয়াবহ — বহু প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র অকার্যকর বা আংশিকভাবে চালু, ডাক্তার ও নার্সের পদ শূন্য, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির তীব্র অভাব। অনেক গ্রামীণ এলাকায় রোগীরা এখনও ২০–৩০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে বাধ্য হন।

জন্মহার প্রতি ১,০০০ জনে ২১.৩২, মৃত্যুহার ৮.৪, শিশু মৃত্যুহার ৩৮.৩৪ এবং মাতৃ মৃত্যুহার ১৭৬.৩৮ — এই পরিসংখ্যানগুলো একবিংশ শতাব্দীর পুরুলিয়াকে এক করুণ প্রতিচ্ছবি হিসেবে তুলে ধরে। জেলার পুষ্টিহীনতা পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মুণ্ডা সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে প্রায় ১৯.৬ শতাংশ ছেলে ও ২৪.১ শতাংশ মেয়ে stunting-এর শিকার, অর্থাৎ তাদের বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কম। ৬৬ শতাংশেরও বেশি শিশু ওজনের দিক থেকে স্বাভাবিক মানের নিচে। অনিমিয়া বা রক্তাল্পতায় আক্রান্ত শিশুদের হারও উল্লেখযোগ্য — মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৭.৮ শতাংশ, ছেলেদের ক্ষেত্রে ৬.৬ শতাংশ।

নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারগুলোর (NRC) কর্মদক্ষতার রিপোর্টও তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। জেলার নয়টি NRC-তে ৭,০০০-এর বেশি শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে, কিন্তু নিরাময়হার সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেক কেন্দ্রেই বেড-অকুপেন্সি ৮৫ শতাংশ ছুঁয়েছে, অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় অবকাঠামো ও জনবল সীমিত।

এই অবস্থার মধ্যেই জেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জুনিয়র ডাক্তাররা দিনরাত কাজ করে চলেছেন। তাঁদের কাঁধে চিকিৎসার পাশাপাশি প্রশাসনিক চাপ, নিরাপত্তাহীনতা এবং জনঅসন্তোষের ভারও পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন প্রশাসনিক প্রধান যদি জনসমক্ষে তাঁদের অপমান করেন, তবে তা শুধু একজন চিকিৎসককে নয়, গোটা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই আঘাত করে। নব্যেন্দু মাহালি, যিনি পুরুলিয়া পুরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান, তাঁর আচরণ প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করেছে।

একটি সমাজে নেতৃত্বের মান নির্ধারণ হয় সংযম, সহমর্মিতা এবং নৈতিকতার দ্বারা। জনপ্রতিনিধি মানে ক্ষমতার প্রদর্শন নয়, মানুষের পাশে থাকা। পুরুলিয়ার মতো জেলায়, যেখানে প্রতিদিন শিশুমৃত্যু, অনাহার, অপুষ্টি এবং চিকিৎসা সঙ্কট একত্রে নিত্যবাস্তবতা, সেখানে মেজাজ হারানো মানে দায়িত্ব হারানো।

এই ঘটনায় প্রশাসনের উচিত সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া যে চিকিৎসকদের অপমান করা এক ধরনের নৈতিক অপরাধ। নব্যেন্দু মাহালির প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়া যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগে অকার্যকর PHC ও BPHC পুনরুজ্জীবন, চিকিৎসক নিয়োগ, ওষুধ সরবরাহ, এবং গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ।

পুরুলিয়ার এই ঘটনা একদিকে আমাদের সমাজের বাস্তবতা দেখায়, অন্যদিকে সতর্ক করে দেয়— উন্নয়নের সংজ্ঞা কেবল রাস্তা বা প্রকল্প নয়, মানুষের প্রতি সম্মান ও মানবিকতার চর্চা। মেজাজ নয়, মনোভাবই সভ্যতার মানদণ্ড। নব্যেন্দু মাহালির এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমরা যেন অন্তত সেই পাঠটি নতুন করে মনে রাখি।

পুরুলিয়া বা প্রাচীন মানভূমের ইতিহাস যতটা মাটির ও মানুষের, তার চেয়ে কম নয় তার ভাষা ও সংস্কৃতির ইতিহাস। এই মাটিতে ভাষা, ...
16/10/2025

পুরুলিয়া বা প্রাচীন মানভূমের ইতিহাস যতটা মাটির ও মানুষের, তার চেয়ে কম নয় তার ভাষা ও সংস্কৃতির ইতিহাস। এই মাটিতে ভাষা, জাতি, ধর্ম, বিশ্বাস মিলেমিশে গড়ে উঠেছিল এক বহুমাত্রিক সমাজ। কিন্তু সেই সমাজকে একমাত্রিক করার চেষ্টা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পর থেকেই। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী নাম নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত। তিনি ছিলেন শিক্ষক, সংগঠক ও রাজনীতিবিদ, যিনি ভাষা আন্দোলনের নামে এক গভীর সামাজিক রূপান্তর ঘটিয়ে গিয়েছিলেন।

নিবারণ দাশগুপ্ত মানভূমকে বিহার থেকে আলাদা করে বিভাজিত করার আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষাকে রাজভাষা করার দাবি তুলেছিলেন এবং এর পক্ষে মানুষের সমর্থন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। প্রথমে এই আন্দোলনকে অনেকেই ভাষার স্বাধিকার আন্দোলন বলে দেখেছিলেন, কিন্তু পরে ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে অন্য এক বাস্তবতা। সরকারি জনগণনায় কুড়মালি, সাঁওতালি, খারিয়া, মুণ্ডারি, হো, পাঞ্চপরগানিয়া ভাষাভাষীদের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে “অন্যান্য” বিভাগে ফেলা হয়। এর ফলে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেখানো হয়। সেই হিসাবই মনভূমকে বাংলাভাষী অঞ্চল হিসেবে উপস্থাপনের মূল ভিত্তি হয় এবং এই পরিসংখ্যানের ভেতর দিয়েই রাজ্য পুনর্গঠনের যুক্তি দাঁড় করানো হয়।

এই পুরো প্রক্রিয়ায় নিবারণ দাশগুপ্তের ভূমিকা ছিল সচেতন। তিনি বুঝেছিলেন যে বাংলা ভাষার পরিসংখ্যান বাড়ানো মানে রাজনৈতিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি। কিন্তু এই কৌশলের শিকার হয় স্থানীয় ভাষা, স্থানীয় সংস্কৃতি, এবং তাদের ভাষাভাষী মানুষরা। যারা কুড়মালি বা অন্য স্থানীয় ভাষায় কথা বলত, তারা তাদের পরিচয় হারায়। তাদের ভাষা সরকারি নথিতে মুছে যায়, তাদের সংস্কৃতি “অগ্রসর নয়” বলে অবহেলিত হয়।

মানভূম ছিল বহু ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতির মিলিত ক্ষেত্র। কুড়মি, সাঁওতাল, মাহাতো, বৌরী, মুণ্ডা—সবাই তাদের নিজস্ব লোকবিশ্বাসে, প্রকৃতি ও মাটির সঙ্গে যুক্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল। নিবারণ দাশগুপ্ত ও তাঁর সহযোগীরা এই বহুত্বের জায়গায় এক নতুন রূপ আনার চেষ্টা করলেন। তারা মনভূমকে “বাংলাভাষী হিন্দু অঞ্চল” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন। এতে করে কুড়মি জনগোষ্ঠীর লোকাচার ও দেবতারা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে। গরমঠাকুর, মারাং বুরু, জাহের আই—এই দেবতাদের পূজা গ্রামীণ ও পশ্চাৎপদ বলে চিহ্নিত হয়, আর দুর্গা ও সরস্বতীর মতো ব্রাহ্মণিক দেবতা উপাসনার মাধ্যমে কুড়মিদের হিন্দু সমাজে টেনে আনা হয়। এর ফলে কুড়মি সমাজে বিভাজন তৈরি হয়—একদল নিজেদের উচ্চ হিন্দু বলে পরিচয় দিতে শুরু করে, আরেকদল নিজেদের ঐতিহ্য ও আদি ধর্ম ভুলতে থাকে।

নিবারণ দাশগুপ্তের ভাষা আন্দোলনে স্থানীয় ভাষার কোনো জায়গা ছিল না। স্কুলে, অফিসে, সংবাদপত্রে, সর্বত্র শহুরে বাংলাকে চাপিয়ে দেওয়া হয়। মানভূমের বাংলা, যেখানে কুড়মালি শব্দ ও ধ্বনি মিশে ছিল, তাকে “অশুদ্ধ” বলে তাচ্ছিল্য করা হয়। ফলস্বরূপ গ্রামের মানুষ মনে করতে শুরু করে যে তাদের ভাষা নিম্নমানের, তারা শুদ্ধ বাংলা জানে না, তারা সংস্কৃতিতে পিছিয়ে আছে। এই আত্মঅবজ্ঞা সমাজকে দুই ভাগে ভাগ করে দেয়—শিক্ষিত শহুরে বাংলা সমাজ ও তথাকথিত গ্রাম্য কুড়মালি সমাজ।

১৯৫৬ সালে মানভূম পশ্চিমবঙ্গে যুক্ত হলো। আন্দোলন সফল হলো, কিন্তু এই সাফল্যের আড়ালে হারিয়ে গেল স্থানীয় পরিচয়। প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি সব জায়গায় কলকাতাকেন্দ্রিক মানসিকতা ঢুকে পড়ল। পুরুলিয়ার কুড়মালি ভাষা এখনও জীবিত, কিন্তু তা সরকারি স্বীকৃতি পায়নি। বাংলা ভাষা আজ রাজভাষা, কিন্তু এই বাংলা আসলে এমন এক শহুরে সংস্কার, যার মধ্যে গ্রামের ভাষা, আদিবাসী স্বর, কুড়মালি মাটির গন্ধ নেই।

ইতিহাসে নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত থাকবেন ভাষা আন্দোলনের নেতা হিসেবে, কিন্তু তাঁর কর্মকাণ্ডের ভেতর লুকিয়ে আছে এক ধরনের সাংস্কৃতিক উপনিবেশবাদ। তিনি মানুষকে ভাষার নামে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, কিন্তু সেই ঐক্যের ভিত ছিল এক সাংস্কৃতিক শ্রেষ্ঠত্ববোধের ওপর দাঁড়ানো। তিনি মানভূমকে বাংলার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন, কিন্তু মানভূমের আত্মাকে হিন্দু বাঙালি সংস্কৃতির ছাঁচে ঢালতে চেয়েছিলেন। আজ যখন পুরুলিয়ার মানুষ আবার তাদের নিজস্ব ভাষা ও পরিচয়ের স্বীকৃতি দাবি করছে, তখন ইতিহাসের এই অধ্যায় নতুন করে মূল্যায়নের দাবি রাখে। নিবারণ দাশগুপ্ত ছিলেন ইতিহাসের সন্তান, কিন্তু তাঁর পথ মনভূমের মাটির পথ নয়।

রেফারেন্স - Contemporary Religious Institutions in Tribal India - by Amit Jha

https://www.google.co.in/books/edition/Contemporary_Religious_Institutions_in_T/zgLCCQAAQBAJ?hl=en

Address

Purulia

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Chotanagpur Voice posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Chotanagpur Voice:

Share