04/09/2025
ক্বুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিকোণে ও ইতিহাসের পাতায় 'ঈদে মীলাদুন্নাবী।
"""""""""""""""""""""""''''''""""""'''''
মীলাদ শব্দের অর্থ জন্মের সময়। এখানে 'ঈদ আনন্দ ও খুশীর অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। মূল অর্থ হচ্ছে- নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনের আনন্দ ও খুশীর উৎসব! এই দিনটি আবার "ফাতিহায়ে দোয়াযদাহাম" নামে মানুষের কাছে পরিচিত।
নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনকে "ঈদে মীলাদুন্নাবী" নামকরণের মাধ্যমে নব-আবিষ্কৃত 'ঈদ পালন করা হয়ে থাকে! এই 'ঈদের ভিত্তি ক্বুরআন ও সুন্নাহর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনকে 'ঈদ হিসাবে পালন করা কিংবা জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা নিঃসন্দেহে বিদ'আত!
মুসলিমদের জন্য 'ঈদ হচ্ছে ২টি। : ঈদুল ফিত্বর এবং 'ঈদুল আযহা- তবে জুমু'আর দিনকেও 'ঈদ বলা হয়েছে।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَدِمَ رَسُو لُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ : " مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ ؟ ". قَالُوا : كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا : يَوْمَ الْأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ ".
অর্থঃ আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাডহু 'আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনাতে এসে দেখেন, মাদীনাহবাসীরা নির্দিষ্ট দু’টি দিনে খেলাধুলা ও আনন্দ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ্ স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ এ দু‘টি দিন কিসের? সকলেই বললো, জাহিলী যুগে আমরা এ দু’ দিন খেলাধুলা করতাম। রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ্ তোমাদের এ দু’ দিনের পরিবর্তে উত্তম দু‘টি দিন দান করেছেন। তা হলো, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্বরের দিন।( আবূ দাঊদ হাঃ১১৩৪; নাসাঈ হাঃ ১৫৫৬)
জুম'আর দিনকেও 'ঈদ বলা হয়েছে। হাদীস-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ" إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ جَعَلَهُ اللَّهُ لِلْمُسْلِمِينَ فَمَنْ جَاءَ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ وَإِنْ كَانَ طِيبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ "
অর্থঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ স্বল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ এই দিনকে মুসলিমদের 'ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমু'আহর স্বালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য।(ইবনু মাজাহ্ হাঃ ১০৯৮; স্বহীহ্ ইবনে মাজাহ্ হাঃ ৯০৮)!
"""""'''""""""""'''''"""""""'''''''"'
'ঈদে মীলাদুন্নাবী, ইতিহাসের দৃষ্টকোণে।
----------------------------------------------
'ঈদে মীলাদুন্নাবী, নব-আবিষ্কৃত 'ঈদে! নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে আনন্দ ও উৎসবের নামে বিশ্বজুড়ে অগণিত ভ্রান্ত আক্বিদাহ্ ও বিদ'আতের জন্ম হয়েছে!
ক্বুরআন-সুন্নার কোথাও প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে জন্ম-মৃত্যুর আনন্দ উল্লাস ও শোক পালনের দলীল খুঁজে পাওয়া যায় না। রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবূওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে মৃত্যু বরণ পর্যন্ত ২৩টি রাবি'উল আওয়াল মাস পেয়েছিলেন। কিন্তুু তিনি নিজের কিংবা কাউরি জয়ন্তী উদযাপন করেননি। রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারটি কন্যা- যায়নাব,উম্মে কুলসুম, ফাতিমা ও রুকাইয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহুন্না)।
রুকাইয়া রাযিয়াল্লাহু 'আনহা দ্বিতীয় হিজরীতে,
যায়নাব রাযিয়াল্লাহু 'আনহা অষ্টম হিজরীতে,
উম্মে কুলসূম রাযিয়াল্লাহু আনহা নবম হিজরীতে এবং ফাতিমাহ্ রাযিয়াল্লাহু আনহা আল্লাহর রাসূলের মৃত্যুর পর, ১১ হিজরীর ৩রা রমাযান, মৃত্যু বরণ করেন।( তাবাক্বাতু ইবনে সা'আদ ৮ম/৩০ পৃষ্ঠা)!
বিশ্বনাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় প্রিয়তমা কন্যাদের কোন একজনেরও জন্মবার্ষিকী পালন করেননি। তাঁর পুত্রগণের মধ্যে কেবলমাত্র ইব্রাহীম ছাড়া সকলেই একবছরের মধ্যেই মারা যান। ইব্রাহীম একবছর চার মাস বয়সে মারা যান।
পুত্র ইব্রহীমের মৃত্যুর সময় রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের চক্ষু দিয়ে ঝর ঝর করে অশ্রু গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। স্বাহীহ্ বুখারীর একটি হাদীস-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ : دَخَلْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَبِي سَيْفٍ الْقَيْنِ وَكَانَ ظِئْرًا لِإِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِبْرَاهِيمَ فَقَبَّلَهُ وَشَمَّهُ، ثُمَّ دَخَلْنَا عَلَيْهِ بَعْدَ ذَلِكَ وَإِبْرَاهِيمُ يَجُودُ بِنَفْسِهِ ، فَجَعَلَتْ عَيْنَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَذْرِفَانِ، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : وَأَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ فَقَالَ : " يَا ابْنَ عَوْفٍ، إِنَّهَا رَحْمَةٌ ". ثُمَّ أَتْبَعَهَا بِأُخْرَى فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ الْعَيْنَ تَدْمَعُ، وَالْقَلْبَ يَحْزَنُ، وَلَا نَقُولُ إِلَّا مَا يَرْضَى رَبُّنَا، وَإِنَّا بِفِرَاقِكَ يَا إِبْرَاهِيمُ لَمَحْزُونُونَ "
অর্থঃ আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে আবূ সায়ফ্ কর্মকারের নিকট গেলাম। তিনি ছিলেন (নাবী-তনয়) ইব্রাহীম (রাঃ)-এর দুধ সম্পর্কীয় পিতা। আল্লাহর রাসূল স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইব্রাহীম (রাঃ)-কে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন এবং নাকে-মুখে লাগালেন। অতঃপর (আরেক বার) আমরা তার (আবূ সায়ফ্-এর) বাড়িতে গেলাম। তখন ইব্রাহীম (রাঃ) মুমূর্ষু অবস্থায়। এতে আল্লাহর রাসূল স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উভয় চক্ষু হতে অশ্রু ঝরতে লাগল। তখন ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আর আপনিও? (ক্রন্দন করছেন?) তখন তিনি বললেনঃ অশ্রু প্রবাহিত হয় আর হৃদয় হয় ব্যথিত। তবে আমরা মুখে তা-ই বলি যা আমাদের রব পছন্দ করেন, আর হে ইব্রাহীম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অবশ্যই শোকসন্তপ্ত"(স্বাহীহ্ বুখারী হাঃ ১৩০৩)।
কিন্তুু নাবী মুহাম্মাদ স্বল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রিয় পুত্রের জন্মের দ্বিতীয় বছর জন্মোৎসব কিংবা মৃত্যুদিবস পালন করেননি। রাসূল স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর মুসলিম জাহানের শাসন ক্ষমতা পেয়েছিলেন জালীলুল ক্বাদর স্বাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুম। আবূ বাকর, 'উমার ফারূক্ব, 'উসমান গানী, 'আলী এবং মু'আবিয়াহ্ রাযিয়াল্লাহু আনহুম। নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর সুদীর্ঘ ১১ হিজরী থেকে ৬০ হিজরী পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছর যাবৎ পাঁচজন পরম ভক্ত স্বাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুম রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তুু কেহই ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ স্বল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে জন্ম জয়ন্তী "মীলাদুন্নাবী" পালন করেননি।
সর্বশেষ স্বাহাবী:-
""""""""""""""""""""
লক্ষাধিক স্বাহাবীদের (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) মধ্যে সর্বশেষ স্বাহাবী "আবূ তুফাইল আ-মির ইবনে ওয়াস্বিলাহ্ রাযিয়াল্লাহু আনহু" ১১০ হিজরীতে মারা যান। সুদীর্ঘ ১০০ বছর মীলাদুন্নাবী কেহই পালন করেননি।
তাবে'য়ী ও তাবা তাবে'য়ীগণের যুগে এবং চার ইমাম অর্থাৎ ইমাম আবূ হানীফাহ্, ইমাম শাফে'য়ী, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুমুল্লাহু) এর যুগে সুদীর্ঘ ২৪০ হিজরী পর্যন্ত এই মীলাদুন্নবী উদযাপনের প্রমাণ নেই।
নবম হিজরী শতকের অন্যতম আলেম ও ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে হাজর আল-আসকালানী রাহঃ (মৃত্যু: ৮৫২হি: ১৪৪৯খ্রি:) লিখেছেন: ‘‘মাওলিদ পালন মূলত: বিদ‘আত। ইসলামের সম্মানিত প্রথম তিন শতাব্দীর সালফে সালেহীনদের কোন একজনও এ কাজ করেন নি"।
নবম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের প্রখ্যাত মুদাদ্দিস ও ঐতিহাসিক আল্লামা আবুল খাইর মুহাম্মাদ ইবন আব্দুর রহমান আস-সাখাবী রাহঃ(মৃত্যু: ৯০২হি: ১৪৯৭খ্রি:) লিখেছেন: ‘‘ইসলামের সম্মানিত প্রথম তিন যুগের সালফে সালেহীনদের (সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীদের) কোন একজন থেকেও মাওলিদ পালনের কোন ঘটনা খুজে পাওয়া যায় না। মাওলিদ পালন বা উদযাপন পরবর্তী যুগে উদ্ভাবিত হয়েছে।
""""""""""""""""""""""""""""'""""""""
"মীলাদুন্নাবী" নাবীর জন্ম জয়ন্তীর আবিষ্কার ৩৬২ হিজরীতে!!!
~~~~~~~~~~~
মুসলিমদের মধ্যে কতিপয় জয়ন্তী চালু করে ৩৬২ হিজরীতে মিসরের ফাতেমী শিয়া রাষ্ট্রনায়ক মু'ইয লিদিনিল্লাহ্। ছয়টি জয়ন্তীর বিদ'আত আবিষ্কার করে। ১.মাওলিদুন্নাবী,
২. মাওলিদু আমীরিল মু'মিনীন আলী ইবনে আবী ত্বালিব,
৩.মাওলিদুস্ সাইয়িদাহ্ ফাত্বিমাতুয্-যুহরা-,
৪. মাওলিদূল হাসান,
৫. মাওলিদুল হুসাইন,
৬. মাওলিদুল খালীফাতুল হা-যির।
তারপর থেকেই মুসলিম উম্মাহর মধ্যে জয়ন্তী বিদ'আত প্রচলিত আছে। পরবর্তীতে আরোও বহু জয়ন্তী আবিষ্কার হয়েছে।
(أحسن الكلام: فيما يتعلق بالسنة والبدعة من الأحكام)
সুন্নীদের মধ্যে মীলাদুন্নাবীর প্রচলন:-
~~~~~~~~~~~~~~~~
৪৮৭ হি: (১০৯৪ খ্রি:) ফাতেমী খলীফা আল-মুসতানসিরের মৃত্যু হলে সেনাপতি আল-আফযাল ইবন বদর আল-জামালীর সহযোগিতায় মুস্তানসিরের ছোট ছেলে ২১ বৎসর বয়স্ক আল-মুস্তা‘লী মিসর অধিকার করে খলীফা হন। সেনাপতি আফযাল সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পড়েন। তিনি ৪৮৮ হিজরীতে ফাতেমীদের প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নাবী উৎসব ও অন্যান্য জন্মদিনের উৎসব বন্ধ করে দেন। পরবর্তী কোন কোন ফাতেমী শাসক পুনরায় এ সকল উৎসব সীমিত পরিসরে চালু করেন, তবে ক্রমান্বয়ে ফাতেমীদের প্রতিপত্তি সঙ্কুচিত হতে থাকে এবং এ সকল উৎসব জৌলুস হারিয়ে ফেলে।
পরবর্তীতে সুন্নীদের মধ্যে আনুমানিক ৬০৪ হিজরীতে এই 'ঈদে মীলাদুন্নাবীর প্রচলন করেন ইরাবিলের রাজা আবূ সাঈদ কুকুবারী ইবনে বুক্তকীন। তিনি মুজাফ্ফরুদ্দীন নামে পরিচিত ছিলেন। হাফেয ইবনে কাসীর রহঃ বলেনঃ বাদশাহ্ মুজাফফরুদ্দীন উক্ত মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে পাঁচ হাজার খাসির মাথা, দশ হাজার মুরগি,একলাখ মাটির পেয়ালা এবং ত্রিশ হাজার মিষ্টির প্লেটের ব্যবস্থা করতেন। ঐ মাহফিলে আলেম ওলামা ও সুফিরা শরীক হতেন। বাদশাহ তাদের বিশেষ পোশাক উপহার দিতেন। ঐ মাহফিলে নাচ,গান ও বাজনার আসর বসত! উপস্থিত থাকত গায়ক-গায়িকা ও রাগ রাগিনীর দল! বিভিন্ন রং তামাশা ও খেল তামাশার দল বসত। ঐ অনুষ্ঠানে তিনহাজার স্বর্ণ মূদ্রা খরচ করতেন (আল্ বিদায়্যাহ্ ওয়ান্ নিহায়্যাহ্১৩/১৪৭)।
উপমহাদেশে মীলাদুন্নাবীর প্রচলনঃ-
~~~~~~~~~~~~~~~~~
ইসলামের মধ্যে সর্ব প্রথম মীলাদ নামে,ছয়টি মীলাদ মিশরের কায়োরোতে চালু করেন শি'য়া খালীফা মু'য়িয লিদিনিল্লাহ্। ভারতে মগল সম্রাটদের কিছু মুন্ত্রী ও পরামর্শদাতা ছিল শি'য়া। যেমন সম্রাট হুমায়ুন ও সম্রাট আকবরের মা ছিলেন শি'য়া! যেমন বৈরাম খাঁ ছিলেন মোঘল সম্রাট হুমায়ুন এবং আকবরের সেনাপতি এবং উপদেষ্টা এবং হুমায়ুনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও শ্রদ্ধেয় সভাসদ। হুমায়ুন তাকে খান ই খানান-বৈরাম খান উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন, কিন্তুু তিনি ছিলেন কট্টর শি'য়া। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাষ্ট্রদূত শি'য়া ছিলেন।বাদশাহ্ বাহাদুর শাহ্ শি'য়া ছিলেন। তাঁরাই এই উপমহাদেশে সুন্নীদের মধ্যে মীলাদুন্নাবী নামে বিদ'আতটির প্রচার প্রসার করেন।
নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখের গুরুত্ব,না জন্মদিনের?
""""""""""""""""""'''''
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ স্বল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাবি'উল আওয়াল মাসের কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেন, এবিষয়ে বিদ্যানগণের বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
অধিকাংশের মতে এবং সঠিক তথ্য অনুযায়ী যে বছর আবরাহা বাদশাহ্ হস্তী বাহিনী দ্বারা কা'বাহ্ ধ্বংস করতে এসেছিল, সেই বছরেই রাবি'উল আওয়াল মাসের ৯ই তারিখ এবং খ্রিস্টীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী ৫৭১ খৃষ্টাব্দের ২০ অথবা ২২ শে এপ্রিল সোমবারের দিন জন্মগ্রহণ করেন।
(রহমাতুললিল'আলামীন-১ম খন্ড ৩৮ পৃষ্ঠা; আররাহীক্বুল মাখতূম ১ম/১০১ পৃষ্ঠা।
কোনো কোনো ইতিহাসবিদ বলেছেন, ১২ রবি'উল আউয়াল। কেউ কেউ আবার ৮ কিংবা ৯ কিংবা ১২ই রবি'উল আওয়াল বলেছেন।
তবে দিন হিসেবে সোমবার সম্পর্কে মতভেদ নেই।
আল্লাহর রাসূল স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবারের দিন স্বিয়াম রাখতেন।
-وَسُئِلَ عن صَوْمِ يَومِ الاثْنَيْنِ؟ قالَ: ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ، وَيَوْمٌ بُعِثْتُ، أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ
অর্থঃ অতঃপর সোমবারের স্বওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ দিন আমি জন্মলাভ করেছি এবং এ দিনই আমি নুবুওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছি বা আমার উপর (ক্বুরআন) নাযিল করা হয়েছে।( স্বাহীহ্ মুসলিম হাঃ 1162(198))
মীলাদুন্নাবী পালনকারী ভায়েরা উক্ত হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করে বলে থাকেন,নাবী স্বাল্লাল্লাহ 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ জন্মদিনে স্বিয়াম পালন করে জন্মদিনের সম্মান করতেন। আমরাও মীলাদুন্নাবী উদযাপন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনের সম্মান করছি!
মীলাদুন্নাবী যারা পালন করছেন, তাঁদেরকে বলছি-
নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সোমবারের স্বিয়াম রাখা জন্মদিনের সম্মানে নয়, বরং তা ছিল মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। কারণ ঐদিন মহান আল্লাহ্ তাঁকে জন্ম দান এবং নাবূওয়াত দান করেছিলেন। নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৮, ৯ কিংবা ১২ ই রাবি'উল আওয়াল স্বিয়াম রাখতেন না। তিনি প্রত্যেক মাসের প্রতি সোমবার চারটি কোন কোন মাসে পাঁচটি স্বিয়াম রাখতেন।
অত এব নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করে প্রতি সোমবার স্বিয়াম রাখা কর্তব্য।
মীলাদুন্নাবী পালনের স্বরূপ:-!!
"""""'"""""""""""""""""
মীলাদুন্নাবীর জালসায় নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানের দাঁড়ানো!!!!!!!!
নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানে কিংবা তাঁর প্রশংসা শোনার সময় দাঁড়ানো বিদ'আত। এই প্রথা আবিষ্কার করেন তাকিউদ্দীন সুবকী প্রায় ৭০০-৭৫৬ হিজরীর মধ্যে! তিনি স্বাহাবী, তাবে'ঈ কিংবা তাবা'তাবে'ঈ নন।
কোন মানুষের সম্মানার্থে দাঁড়ানো যাবে না। একমাত্র মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে আল্লাহর দাস হিসেবে প্রমাণ করতে গেলে তাঁর সামনে একনিষ্ঠ ভাবে ও বিনয়ীর সাথে দাঁড়াতে হবে। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
"وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ"
"আর তোমরা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ ভাবে দাঁড়াও"।
রাসূল স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তাঁর সম্মানার্থে কোনো স্বাহাবী দাঁড়িয়েছেন এরকম প্রমাণ কোনো একটি হাদীসে পাওয়া যায় না। তবে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার একাধিক হাদীস রয়েছে।
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ لَمْ يَكُنْ شَخْصٌ أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَكَانُوا إِذَا رَأَوْهُ لَمْ يَقُومُوا لِمَا يَعْلَمُونَ مِنْ كَرَاهِيَتِهِ لِذَلِكَ ،
আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, স্বাহাবীদের নিকট রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাইতে বেশি প্রিয় ব্যক্তি আর কেউ ছিলেন না। অথচ তারা তাকে দেখে দাঁড়াতেন না। কেননা তারা জানতেন যে, তিনি এটা পছন্দ করেন না(তিরমিযী হাঃ ২৭৫৪)।
عَنْ أَبِي مِجْلَزٍ، قَالَ خَرَجَ مُعَاوِيَةُ فَقَامَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ وَابْنُ صَفْوَانَ حِينَ رَأَوْهُ . فَقَالَ اجْلِسَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَتَمَثَّلَ لَهُ الرِّجَالُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ "
আবূ মিজলায (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু'আবিয়াহ (রাযিঃ) বাইরে বের হলে তাকে দেখে আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর ও ইবনু সাফওয়ান দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি বললেন, তোমরা দু’জনেই বস। আমি রাসূলুল্লাহ স্বল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ এতে যে লোক আনন্দিত হয় যে, মানুষ তার জন্য মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকুক, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নেয় (তিরমিযী হাঃ ২৭৫৫)।
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ اشْتَكَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّيْنَا وَرَاءَهُ وَهُوَ قَاعِدٌ وَأَبُو بَكْرٍ يُسْمِعُ النَّاسَ تَكْبِيرَهُ فَالْتَفَتَ إِلَيْنَا فَرَآنَا قِيَامًا فَأَشَارَ إِلَيْنَا فَقَعَدْنَا فَصَلَّيْنَا بِصَلاَتِهِ قُعُودًا فَلَمَّا سَلَّمَ قَالَ " إِنْ كِدْتُمْ آنِفًِا لَتَفْعَلُونَ فِعْلَ فَارِسَ وَالرُّومِ يَقُومُونَ عَلَى مُلُوكِهِمْ وَهُمْ قُعُودٌ فَلاَ تَفْعَلُوا ائْتَمُّوا بِأَئِمَّتِكُمْ إِنْ صَلَّى قَائِمًا فَصَلُّوا قِيَامًا وَإِنْ صَلَّى قَاعِدًا فَصَلُّوا قُعُودًا "
জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আমরা তার পিছনে স্বালাত আদায় করলাম। তিনি বসে বসে স্বালাত আদায় করছিলেন। আবূ বাকর (রাযিঃ) লোকদেরকে তার তাকবীর জোরে শুনিয়ে দিচ্ছিলেন। তিনি আমাদের দিকে খেয়াল করে আমাদেরকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি আমাদের ইশারা করলেন। সেজন্য আমরা বসে গেলাম। আমরা তার সাথে বসে স্বালাত আদায় করলাম। সালাম ফিরানোর পর তিনি বললেনঃ তোমরা পারস্য ও রোমের (সাম্রাজ্যের) লোকেদের মতোই করতে যাচ্ছিলে। তাদের বাদশারা বসে থাকে আর তারা দাঁড়িয়ে থাকে। তোমরা কখনো এমন করো না। সবসময় তোমাদের ইমামদের অনুসরণ করবে। সে যদি দাঁড়িয়ে স্বালাত আদায় করে, তোমরাও দাঁড়িয়ে স্বলাত আদায় করবে। সে যদি বসে স্বালাত আদায় করে তোমরাও বসে স্বালাত আদায় করবে (স্বাহীহ্ মুসলিম হাঃ ৪১৩/৮৪: আবূ দাঊদ হাঃ ৬০৬: ইবনু মাজাহ্ হাঃ১২০৪০)।
আলোক সজ্জাঃ-
মীলাদুন্নাবী উপলক্ষে বাড়ি ঘর আলোকিত করা হয়। এটা অগ্নিপূঅগ্নিপূজকদের অনুকরণ! বারমেকী নামে এক সম্প্রদায় যারা অগ্নিপূজক ছিল। ঐ অগ্নিপূজকদের কিছু লোক হিজরীর প্রথম শতকে ইসলাম গ্রহণ করে। তারাই সর্বপ্রথম ইসলামে বাতি জ্বালানো ও আলোকসজ্জার রীতি (বিদ'আত)চালু করে।কারণ তারা অগ্নিপূজার ধর্মে আকৃষ্ট ছিল।(জালালুদ্দিন সায়ূতী রাহঃ আল্ আমরু বিল ইত্তিবা' ওয়ান্নাহয়ু 'আনিল ইবতিদা' -১৭৭-১৭৮ পৃষ্ঠা)!
মীলাদুন্নাবীর চিত্রঃ- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের
কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে মীলাদুন্নাবী উজ্জাপিতহয়। আমাদের দেশে দেখা যায়-রাস্তার আনাচে কানাচে চাঁদ তারা খচিত সবূজ রঙের পতাকার বাহার! মাসজিদে মাসজিদে জালসার আয়োজন। কোথাও আবার কোনো সমৃদ্ধশালী ব্যক্তির বাড়িতে জালসার আয়োজন করা হয়। কিছু ঠিকাদার মৌলভী সাহেবরা নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঠিক বেঠিক জীবনী কাহিনী সুরেলি ভঙ্গিমায় বয়ান করেন। যখন নাবীর নাম উচ্চারিত হয়, তখন তাদের আক্বীদাহ্ অনুযায়ী নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন তাদের মাহফিলে উপস্থিত হয়ে গেছেন! তাই উপস্থিত জনতা দাঁড়িয়ে গিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে বিদ'আতী দরূদ পড়ে ও সালাম করে নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামেকে স্বাগত জানাতে থাকেন। বাড়ি ঘরকে আলোকিত করে এবং ধূপকাঠির ধোঁয়া দিয়ে সুগন্ধিত করে। বাজার ঘাটে চলে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা! রকমারি খাবার দাবার তৈরী করা হয়! মীলাদ মাহফিলে নাবীজীকে ডাকা হয় এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া হয়! নাবীজী অদৃশ্যের খবর রাখেন এবং তিনিই হলেন সৃষ্টির মূল, এই ভ্রান্ত আক্বিদাহ্ প্রচার করা হয়! এরকম ধারণা ও বিশ্বাস শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
""""""""""""""""""
এ বিষয়ে মূল কথাঃ-
কোনো জীবিত কিংবা মৃত ব্যক্তির জন্মদিন পালন করা এবং মৃত ব্যক্তির মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা মুসলিমদের জন্য বিদ'আত!
কোনো জীবিত মহান ব্যক্তির প্রতিবছর জন্মোৎসব পালন করা ইয়াহূদীদের অনুকরণ! কোনো মৃত ব্যক্তির জন্মদিন পালন করা "ক্রিসমাস ডে" পালনকারী খৃষ্টানদের চাল চলন! নববর্ষের বার্ষিকী, বিবাহ বার্ষিকী, প্রভৃতি আনন্দোৎসব এবং মৃত্যু বার্ষিকী ও চাহারম-চল্লিশে প্রভৃতি লোকের বার্ষিকী পালন করা অগ্নিপূজক ও অমুসলিম ভাইদের অনুসরণ!
রাসূল স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
" مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ"
ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে"।(আবূ দাঊদ হাঃ ৪০৩১)!
এই উম্মাত ইয়াহূদী খৃষ্টানদের অনুসরণ করবে,তার ভবিষ্যৎ বাণী রাসূলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে গেছেন!
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى قَالَ فَمَنْ؟
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী স্বাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ "অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকেদের নীতি-পদ্ধতিকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি দবের গর্তে ঢুকে, তাহলে তোমরাও তাদের অনুকরণ করবে"। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কি ইয়াহূদী ও নাসারা? তিনি বললেনঃ "আর কারা?"(স্বাহীহ্ বুখারী হাঃ ৩৪৫৬; ৭৩২০;স্বাহীহ্ মুসলিম হাঃ ২৬৬৯)।
মুহাম্মাদ স্বল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনের নামে ১২ই রাফি'উল আওয়াল কিংবা কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মীলাদুন্নাবী পালন করা ক্বুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিকোণে বিদ'আতের প্রচার ও প্রসার ছাড়া কিছুই নয়!
বিদ'আত থেকে বাঁচার ও মুক্তি লাভের উপায়!
'''''''''''''''''''''’'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
বিভিন্ন বিদ'আত ও পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা পেতে হলে
(১) কেবলমাত্র মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ স্বল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুড়ান্ত বিধান যথাক্রমে কুরআন ও স্বাহীহ্ হাদীসকেই নিঃশর্তভাবে সত্যের মানদন্ড হিসাবে গ্রহণ করুন।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
"يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ۖ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا،،
অর্থঃহে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহ্র ও পরকালে বিশ্বাস কর, তাহলে তোমরা অনুগত হও,রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের নেতৃবর্গদের( এই শর্ত সাপেক্ষে যে তারা আল্লাহ্ এবং রাসূলের নির্দেশ মুতাবিক নির্দেশ দান করেন!) আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়, তাহলে সে বিষয়টি আল্লাহ্ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। এটিই হল কল্যাণকর এবং পরিণামে উত্তম।(সূরাহ্ নিসা- ৪:৫৯)
(২) নিজ নিজ অজ্ঞতা দূর করুন,সঠিকটি জানার চেষ্টা করুন।
(৩) বাপদাদার অন্ধ অনুকরণ ত্যাগ করুন,এটি একটি জাহেলী মতবাদ।
(৪) আগের আলেমরা কি কম জানত? এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা! এই ধারণা ত্যাগ করুন।
(৫) প্রকৃত হক্ব্পন্থী 'আলেমের সাহচর্য গ্রহণ করুন।
(৬) বিদ'আত দেখলেই প্রতিহতের চেষ্টা করুন। অন্যায়ের প্রতিবাদে ইসলামের কৌশল ও পন্থা অবলম্বন করুন।
পরিশেষে মহান আল্লাহর নিকট দু'আ করি হে আল্লাহ্! আমাদের সকলকে শির্ক ও বিদ'আতের ছোঁয়াচ থেকে রক্ষা করুন। তাওহীদ ও সুন্নাতের উপর প্রতিষ্ঠিত অবস্থায় মৃত্যু বরন করার তাওফীক্ব্ দান করুন। আ-মীন!
মুখতার হুসেন রাহীমী।