29/11/2025
হাজী মুহাম্মদ মহসিনের আজ মৃত্যুবার্ষিকী || Haji Muhammad Mohsin 🙏💐
হাজী মুহাম্মদ মহসিন
১. জন্ম ও বংশপরিচয়: হাজী মুহাম্মদ মহসিন ১৭৩২ সালে (মতান্তরে ১৭৩০) পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে এক সম্ভ্রান্ত ও ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন হাজী ফয়জুল্লাহ এবং মাতা জয়নাব খানম। তাঁর পূর্বপুরুষরা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইরান থেকে বাংলায় এসেছিলেন।
২. শিক্ষাজীবন: তিনি হুগলিতে গৃহশিক্ষকের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে উচ্চশিক্ষার জন্য মুর্শিদাবাদে যান। তিনি কুরআন, হাদিস, ফিকহ এবং আরবি ও ফারসি ভাষায় গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
৩. বিশ্বভ্রমণ ও 'হাজী' উপাধি: জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে ইরান, ইরাক, মিশর, তুরস্ক এবং আরব দেশগুলো ভ্রমণ করেন। তিনি মক্কা ও মদিনায় হজ পালন করার পর 'হাজী' উপাধিতে ভূষিত হন।
৪. বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকার: তাঁর সৎ বোন মন্নুজান খানম নিঃসন্তান ছিলেন। ১৮০৩ সালে মন্নুজান খানমের মৃত্যুর পর মহসিন তাঁর বিশাল জমিদারির একমাত্র উত্তরাধিকারী হন, যার মধ্যে হুগলি, যশোর, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
৫. মহসিন ফান্ড (ওয়াকফ): ১৮০৬ সালে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি জনকল্যাণে দান করে একটি ওয়াকফনামা বা ট্রাস্ট গঠন করেন, যা ইতিহাসে 'মহসিন ফান্ড' নামে পরিচিত। এই ফান্ডের অর্থ শিক্ষা বিস্তার ও দরিদ্রদের সহায়তায় ব্যয় করা হতো।
৬. দানবীর খেতাব: তিনি ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সাধারণ ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। নিজের বিশাল সম্পদ জনসেবায় উৎসর্গ করার জন্য তাঁকে 'বাংলার হাতেম তাই' বা 'দানবীর' বলা হয়।
৭. দুর্ভিক্ষে অবদান: ১৭৬৯-৭০ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে (ছিয়াত্তরের মন্বন্তর) তিনি বহু লঙ্গরখানা স্থাপন করেন এবং হাজার হাজার অনাহারী মানুষকে অন্ন ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন।
৮. শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা: মহসিন ফান্ডের অর্থে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হুগলি মহসিন কলেজ, হুগলি মাদ্রাসা, ঢাকা মহসিনিয়া মাদ্রাসা (বর্তমানে কবি নজরুল সরকারি কলেজ) এবং চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর বিভিন্ন সরকারি স্কুল ও কলেজ।
৯. হুগলি ইমামবাড়া: তাঁর দানের অর্থে ১৮৬১ সালে বিখ্যাত হুগলি ইমামবাড়া নির্মাণ সম্পন্ন হয়। এটি শুধু ধর্মীয় কেন্দ্রই নয়, স্থাপত্যশৈলীতেও একটি অনন্য নিদর্শন।
১০. মৃত্যু ও সমাধি: এই মহান দানবীর ১৮১২ সালের ২৯ নভেম্বর হুগলিতে মৃত্যুবরণ করেন। হুগলি ইমামবাড়া প্রাঙ্গণে তাঁকে সমাহিত করা হয়।