24/12/2022
বলিউডের তানসেন
৩১ শে জুলাই ১৯৮০ | রমজানে রোজা রেখেছেন রফি সাহেব । সকালবেলা শরীরটা বেশ খারাপ, কিন্তু তার মধ্যেই তিনি দুর্গা পুজোর রেকর্ডের জন্য অভ্যাস করছেন একটি বাংলা গান - শ্যামা সঙ্গীত। হঠাৎ ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। হাসপাতালে পৌঁছনোর কিছুক্ষনের মধ্যেই খবর এলো চির নিদ্রায় চলে গেছেন বলিউডের তানসেন - রোজা রাখা এই মানুষটি যখন শ্যামা সঙ্গীত গাইতে গাইতে মহাসিন্ধুর ওপারে চলে গেলেন, বাইরে তখন নেমেছে প্রবল শ্রাবণের ধারা।
এরকম আকাশ ভাঙা বৃষ্টি অনেকদিন দেখেনি বোম্বে | কিন্তু সেই দুর্যোগের মধ্যেই বেরিয়েছিল স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মিছিল আর সেই রেকর্ড আজও ভাঙ্গেনি। অন্তত ২০ হাজার রফি ভক্ত এক আকাশ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন রফি সাহেবকে শেষ বিদায় জানাতে। কোনো সঙ্গীতশিল্পী মারা যাবার পর সেটাই আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় মিছিল, কেননা এই মানুষটি যে ছিলেন অজাতশত্রু।
কে ছিলেন না সেই মিছিলে?
রাজ কাপুর, দিলীপ কুমার থেকে অমিতাভ বচ্চন। লতা মঙ্গেশকর থেকে কিশোর কুমার। সে মিছিলে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যান রফি সাহেবের সেক্রেটারি জাহির । রফি সাহেব সারা জীবন যত দান-ধ্যান করেছেন তা সবই জাহিরের নামে । নিজের নাম কখনো প্রকাশ করেননি। জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিয়েছেন, "দেনেওয়ালা ম্যায় কৌন হুঁ? সব উপরওয়ালা"।
সে বৃষ্টিস্নাত বিষন্ন বিকেলে বান্দ্রার মসজিদে তখন তিল ধরণের জায়গা নেই। পুলিশ গেট বন্ধ করে দিয়েছে। কুছ পরোয়া নেহি - ১০ ফুট উঁচু পাঁচিল বেয়ে কাতারে কাতারে মানুষ তখনও চেষ্টা করে যাচ্ছেন মসজিদে ঢোকার। তাদের জামা প্যান্ট ছিঁড়েছে, জুতো-চটি খুলে পড়ছে, হাত পা কেটে রক্তে পাঁচিল লাল হয়ে গেছে কিন্তু তাদের সামলানো যাচ্ছে না। পুলিশ দুবার লাঠি চার্জ করে হাল ছেড়ে দিয়েছে।
সেখানেই সেই বিখ্যাত ছবিটি তোলেন স্টেটসম্যান পত্রিকার এক চিত্র সাংবাদিক যা পরদিন কাগজের প্রথম পাতায় বেরিয়েছিল। ফুলে ফুলে ঢাকা মহম্মদ রফির দেহ মসজিদে শোয়ানো আর তাঁর পা ধরে অঝোরে কেঁদে চলেছেন তাঁর সংগীত জীবনের সব চেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী - কিশোর কুমার | আর কী আশ্চর্য ! সে ছবিতে দেখা যাচ্ছে মৃত্যুর পরেও রফি সাহেবের মুখে তাঁর সেই চিরন্তন হাসিটিই লেগে রয়েছে।
রফি সাহেবের মৃত্যুর পরদিন ভারতে দেড় লক্ষ আর পাকিস্তানে ৫ লক্ষ মানুষ অরন্ধন দিবস পালন করেন। লাহোর রেডিও স্টেশন সব অনুষ্ঠান বাতিল করে সারা রাত শুধু রফি সাহেবের গান বাজিয়েছিল। শ্রোতাদের অনুরোধে সে অনুষ্ঠানটি আরো ১২ ঘন্টা বাড়াতে হয়েছিল।
১৯৮০ তে রফি সাহেবের পুজো-র গানের রেকর্ড বের হয়নি কিন্তু কিশোর কুমারের বেরিয়েছিল। সেখানে গীতিকার মুকুল দত্তকে বিশেষ অনুরোধ করে একটি গান লিখিয়ে সেটি গেয়েছিলেন কিশোর কুমার। গানটির সুর দিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। সেটাই ছিল রফি সাহেবের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ও তাঁর সবচেয়ে বড় ভক্তের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আজও পুরোনো না হওয়া সুপার ডুপার হিট সেই গানটি ছিল :
“সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে,
চলে গেছে দিন তবু, আলো রয়ে গেছে।"
আজ মহম্মদ রফি সাহেবের জন্মদিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি |