
06/03/2024
জামাই সিগারেট জ্বালিয়ে আমার মুখের সামনে ধরে বললো,
"দেও একটা টান দেও।"
তাহার আচরণে আমি বিস্মিত! হতবাক! চোখ বড়ো বড়ো করে বললাম, "হোয়াট? কি বলছো তুমি?"
"কি বলছি, বুঝো নাই তুমি? ব্যাপার না বুঝিয়ে দিচ্ছি। আমি বলছি, সিগারেট মুখে নিয়ে তুমি একটা সুখটান দেও।"
"মানে! তুমি আমাকে সিগারেট খেতে বলছো?"
"হ্যাঁ, বলছি। আমার অনেক দিনের শখ বিয়ের পর বউকে নিয়ে একসাথে সিগারেট খাবো। এখন জলদি জলদি কয়েকটা টান দেও।"
আমি তো আবার জামাই'র বাধ্যগত স্ত্রী! তাহার কথায় উঠি আর বসি। কি আর করার! জামাইর শখ বলে কথা!
তাছাড়া, বিয়ের আগে মনে মনে এমন শখ আমারও ছিলো। জামাইয়ের সাথে বসে একসাথে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে, তার ঠোঁটে'র স্বাদ নিবো। আজ শখ পূরণের দিন। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বাহিরে। এটাই মোক্ষম সুযোগ। অতঃপর সিগারেট নিয়ে দু'জন এক সাথে টানলাম।
বক্সে গান বাজিয়ে গানের তালে তালে দু'জন লাফাচ্ছি আর সিগারেট খাচ্ছি। সিগারেটের স্বাদ চমৎকার! কেমন নেশা নেশা ধরেছে মনে। এরিমধ্যে হঠাৎ কলিং বেল। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি চলে এসেছে। আমরাও ঘোর থেকে বেরিয়ে দু'জন ভদ্র বাচ্চা হয়ে গেলাম।
এরিমধ্যে দুপুর হয়ে গেছে, আমিও রান্নার জন্য রান্না ঘরে গেলাম।
সাথে সাথে শ্বাশুড়ি এসে বললো,
"বউ মা, তুমি রুমে গিয়ে আরাম করো। ফোন টিপো, ফেসবুকিং করো, নাচো, গান গাও। এইটা চিল করার বয়স, জাস্ট লাইফটা এনজয় করো। রান্না আমিই করছি। সময় মতো টেবিলে খাবার দিয়ে ডাক দিবো। খেতে এসো।"
পরক্ষণে শ্বশুর একটা চিপস, আইসক্রিমের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
"বাহির থেকে আসার সময় তোমার জন্য নিয়ে এসেছি, মা। নেও এগুলো খেতে খেতে আরামসে ফোন টিপো। ফোন ঘাঁটার সময় চিপস না হলে জমে না।"
আমি অবাক হয়ে দেখছি এদের। এরা আমাকে আমার বাবা-মায়ের থেকেও বেশি আদর-যত্ন করে। উঁহু! এরা আমাকে মোটেও কটাক্ষ করে এসব বলছে না। তাদের ভাষ্য মতে, বাচ্চা-কচ্চা না হওয়া অবধি চিল করার বয়স। সংসার সামলানোর দায়িত্ব তাদের। এভাবে সারাদিন আমার যায় শুয়ে-বসে।
বিকেলে শ্বাশুড়ি'র পোলা ঘুমাচ্ছে। এরিমধ্যে শ্বাশুড়ি আমার জামাইরে ঘুম থাইকা টাইনা-ধইরা উঠাইয়া কইলো,
"তুই ম'রা'র মতো এখন ঘুমাচ্ছিস? যা বউমা কে নিয়ে একটু বাহির থেকে ঘুরে আয়।
সামনে বসন্তের মাস, বউমা কে নিয়ে মার্কেট থেকে ওর জন্য বাসন্তী'র শাড়ী- চুড়ি নিয়ে আয়।
মেয়েটার কোনো খেয়ালই রাখছিস না তুই। খালি বাপের মতো সারাদিন ঘুম আর ঘুম!"
মায়ের ধমক খেয়ে জামাই মন খারাপ করে বললো, "যাও রেডি হয়ে আসো।"
এদের নিয়ে তিড়িংবিড়িং করতে করতেই দিন যায় আমার। কিন্তু আজ দু'দিন হলো জামাইর সাথে ঝগড়া হয়েছে। ঝগড়া মানে কঠিন ঝগড়া। কথা বন্ধ। জামাই কথা বলতে আসলেও মুখ ফিরিয়ে নেই আমি। না কোনো কথা নেই। অগত্যা জামাই মন খারাপ করে আজ অফিসে চলে গেলো।
দুপুরে শ্বাশুড়ি'র সাথে লুডু খেলছিলাম আমি। এরিমধ্যে কলিং বেল। সামনে ডেলিভারি বয়।হাতে বিশাল একটা বক্স। জিজ্ঞেস করলাম, কি চাই? বললো, "ম্যাম আপনার পার্সেল!"
এতো বড় পার্সেল আমার নামে। কিছুটা অবাকই হলাম। কে দিলো? সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে পার্সেল খুলে তো আমি আরো অবাক।
ওয়াও! আমার পছন্দের সকল লেখক- লেখিকার বই। শুধু কি বই? প্রতিটা বইয়ের ভাঁজে এক একটা চকচকে হাজার টাকার নোট, চকলেট। সাথে রয়েছে বিভিন্ন কালারের বিশটা করে শাড়ী, চুড়ি, হিজাব, ঝুমকা। সব শেষ এক গুচ্ছ গোলাপ। ছোট্ট একটা চিরকুট,
"স্যরি বউ...!"
মানে এটা আমার পাগলা বরের কাজ। আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেললাম আমি। যে মানুষটা আমার খুশীর জন্য এতো কিছু করলো, তার সাথে কি রাগ করা যায়? আমার সব রাগ নিমিষেই উগলে গেলো। ততক্ষণাৎ জামাইকে ছোট্ট একটা টেক্সট দিয়ে বললাম,
"লাঞ্চ রেডি করছি আমি। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো।"
পরক্ষণে খাবার রেডি করে নিজেও একটুখানি পরিপাটি হলাম। বরের পছন্দ করা একটা শাড়ী- চুড়ি পড়ে সেজেছি আজ। কিছুক্ষণ পর বর আসলো, দরজা খুলে দিলাম আমি। আমাকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো বর।
আমি দৌড়ে গিয়ে উনার বুকে ঝাপিয়ে পড়লাম। উনার এতো এতো ভালোবাসা পেয়ে আনন্দে কেঁদে দিলাম আমি। বর আমার চোখের জল মুছে আলগোছে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
"কাঁদে না, জান! শুনো না, আজ শাড়ীতে তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে! ভালোবাসি বউ! আর হ্যাঁ, গিফট গুলো তোমার পছন্দ হয়েছে? "
সবকিছু কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে আমার কাছে। হ ভাই ঠিক ধরেছেন, এটা স্বপ্ন'ই। বরের চুমু খাওয়ার পরই আমার ঘুম ভে'ঙে গেছে। এরপর নিজেকে আবিষ্কার করলাম ভাঙা ঘরে। সারাদিন আজাইরা পইড়া থাকি কাজকাম নাই। ছেঁড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে এমন বড়োলোকি স্বপ্ন দেখি। বুঝছেন?
(সমাপ্ত)
এরকম গল্পঃ আরো পেতে আমাদের পেজ টি ফলো করুণ।
সপ্নের দুনিয়া