https://www.facebook.com/198601833991377/

Deepmalya's Diary, Tarakeswar (2025)

15/09/2025

আজ ঠাকুর পরমহংস দেবের অন্যতম প্রধান শিষ্য স্বামী অভেদানন্দ মহারাজের শত তম জন্মতিথি। প্রণাম জানাই মহান মনীষিকে 💐💐💐💐✴️🙏🙏🙏🙏🌺🌺🌺🌺🌺
🌼🌼জয়তু শ্রীরামকৃষ্ণ 🌺🌺
🕉️ চিত্র স্থান - স্বামী অভেদানন্দ মহারাজের আদি বাড়ি উত্তর কলকাতা 🔯
চিত্র তুলেছেন - দীপমাল্য চন্দ্র 🙏

15/09/2025

আজ অমর কথাসাহিত্যিক শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১৫০ তম জন্ম জয়ন্তী। তাঁর কলমের কালজয়ী সৃষ্টি আমাদের মননে নিরন্তর। এই প্রসঙ্গে আজ তাঁর কৈশোরের প্রারম্ভের এক ছোট্ট অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো,হয়তো অনেকেরই জ্ঞাত। তখন কথাশিল্পী বারোতে, একবার ছুটির দিনে ঘরে বসে ঘুড়ি তৈরি করছেন এমন সময় তাঁর ঠাকুমার কাছে এসে উপস্থিত হন পাশের পাড়ার নয়ন বাগদি, সে এসে পাঁচটি টাকা চায় গোরু কিনবে বলে। তিনি দিয়েও দেন। নয়ন রওনা হয় বসন্তপুরে পিসিমার বাড়ি। কথাশিল্পী জানতেন, বসন্তপুরে মাছ ধরার ভালো ছিপ পাওয়া যায় আর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সে নয়নের পিছু নেয়। বেশ অনেকটা ক্রোশ যাবার পর নয়ন উপলদ্ধি করে,তার পিছু পিছু কেউ আসছে। পশ্চাৎমুখী হয়ে দেখে কৈশোর। তিনিও নাছোড়বান্দা অগত্যা নয়ন রাজি হলেন কিশোরকে সঙ্গী করতে। পথে মুড়ি বাতাসা কিনে পিসির বাড়ির পথে ধাবিত হল। পিসির বাড়ি পৌঁছে আগে পাশের কুন্তী নদীতে স্নান সেরে এসে পেলেন রাজকীয় আতিথেয়তা। বাড়ির বধূরা কলা পাতায় নানা উপকরণ সহযোগে ফলার মেখে দিলেন। সেই সুস্বাদু খাদ্য পেটে চালান করে বিছানায় টানটান হল দুজনে। নিদ্রাভঙ্গ হতে প্রায় বেলা চারটে গড়িয়ে গেলো। খানেক পরেই রওনা দিলো তারা। দুজনের দোসর হল ধেনুটি। দিনের আলো ফুরিয়ে এসেছে, আঁধার নেমে গেছে। ওরা তিনজন চলেছেন বাড়ির পথে। পাকা রাস্তা পেরিয়ে মেটো পথে পা দিয়ে ফেলেছেন। নানারকম পেল্লায় গাছগাছালি ঘেরা নির্জন অন্ধকারময় পথ। এমন সময় ' বাপ রে মা রে...! চিৎকার শব্দ। কিশোর ঠাওর করতে পারলেন না বিষয়টা। ওরা আড়াল থেকে দেখে, এক বৈষ্ণব উপুড় হয়ে শুয়ে। ঝোলাটাও কাঁধে, শ্বাস বায়ু অচল। চারিদিকে চাল ছড়ানো। নয়নের চোখ রক্তজবা হয়ে উঠলো। কিশোরের মধ্যে কৌতুহল জাগছে কি হল ব্যাপারটা। তারপরই মানুষের পায়ের শব্দ পেয়ে ওরা গাছের আড়ালে মুখ লুকোয়, দেখে কয়েকজন ঠ্যাঙাড়ে মৃত মানুষটির ঝোলা হাতড়াচ্ছে। নয়ন হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, ' নরকের কীট... এইভাবে গরীবদের প্রাণ নিস...! ' এমন সময় এক ঠ্যাঙাড়ে বলে উঠলেন, ' ওসব ধর্ম কথা শুনিয়ে লাভ নেই, সাহস থাকে তো সামনে আয়...! ' নয়ন ওদের লক্ষ্য করে পাবড়া ছুঁড়ে মারে। ঠ্যাঙাড়ে দল ভয়ার্ত শরীরে দৌড় লাগাতে থাকে কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। এক ঠ্যাঙাড়ের ঝোঁপ দিয়ে পালাতে গিয়ে অন্ধকারে মুখ থুবড়ে পড়ে সেখানে আর সুযোগ বুঝে নয়ন লাঠির বাড়ি দামদম দেয়। জ্ঞান হারায় সে। এরপর তিনজন নিদিষ্ট অভিমুখে যাত্রা করে।
জানেন কি এই ' ঠ্যাঙাড়ে ' কী? তখনকার সময়ে হুগলি - বর্ধমান জেলা এদের উপদ্রবে অতিষ্ঠ থাকতেন। দিনের আলো ফুরালে শুরু হতো ওদের রাজত্ব। মেঠো পথ জুড়ে রাজ করে বেড়াতো ওই নিষ্ঠুর ও লোভী পথদস্যু'র দল। পথচারীদের বাঁশের ছোট ছোট লাঠি যাকে বলা হয় পাবড়া দিয়ে পায়ে আঘাত করতো, অসাবধানরত চারী হুমড়ি খেয়ে মাটিতে লুটালে সামনে গিয়ে লাঠির ঘা দিতো। নির্দোষ পথচারী ওদের হাতেই অকালে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হতো। ওদের নির্মম অতিষ্ঠে আঁধার নামলেই তখন পথঘাট হয়ে যেতো মানবশূন্য। কিন্তু, নয়ন সেই অন্ধকার দিনের চিরমুক্তি ঘটিয়ে ছিলেন। সেই ঘটনার পর থেকে ঠ্যাঙাড়ে আর কোনো মানবের প্রাণনাশ করে লুটপাট করার কথা ভাবেনি। তখন কৈশোরাবস্থায় তিনি ভীতু স্বভাবেরই ছিলেন কিন্তু এই ঘটনাটা তাঁকে সাহসীকতার পরিচয় দেয়, সেদিনের সেই ছেলেটি আজকের কথাশিল্পী শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সবার মনের অলিন্দে শিউলির সৌরভে এই শরৎ শোভা সাজিয়ে রেখে চলেছেন নিরন্তর।
© দীপমাল্য চন্দ্র
#