06/12/2025
হানাফি থেকে আহলে হাদিস হওয়ার কারণে
মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা করছে কেউ মাটি দিতে যাবেন না এবং মসজিদের খাটলি দেওয়া হবে না!!
শাইখ আব্দুল হাসিব ( সভাপতি লালগোলা জমঈয়তে আহলে হাদীস পশ্চিমবঙ্গ)।
গতকাল দেওনসারা, বিরহামপুর, নদাইপুর, লালগোলার ঘটনা একজন ব্যক্তি গত দুয়েক বছর পূর্বে আহলে হাদীস হয়েছেন। গতকাল তার স্ত্রী মৃত্যু বরণ করেছেন ( রাহি:) বিদ' আতিরা মসজিদের মাইক থেকে তার জানাজায় উপস্থিত না হওয়ার জন্য মানুষকে নিষেধ করছে। এমনকি লাশবাহী খাট পর্যন্ত দেওয়া হয়নি, শেষ পর্যন্ত ধুলাউড়ি মসজিদ ( এরাও নতুন আহলে হাদীস ) থেকে খাটলি নিয়ে আসা হয়। উক্ত মসজিদে আমি জুম'আর খুতবাহর দায়িত্ব পালন করি। আলহামদুলিল্লাহ দিনের পর দিন আহলে হাদিসের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ যখন আসল সত্য দ্বীন বুঝতে পারবে তখন তাকে হুমকি ধামকি আর ভয় দেখিয়ে থামানো যাবে না, কারন হিদায়াত আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে।
যুবক সাহাবী মুসআব ইবন উমায়ের (রাঃ) — ইসলামের দাওয়াতি সংস্কৃতির প্রথম অগ্রদূত
মক্কার ইতিহাসে এমন কিছু তরুণ ছিলেন, যাঁদের নাম উচ্চারণ করলে মনে হয়— তারা ছিলেন নবীন সূর্যের প্রথম কিরণ। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুসআব ইবন উমায়ের (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।
তিনি ছিলেন মক্কার এক সম্ভ্রান্ত ও ধনী পরিবারের সন্তান। তাঁর পোশাক, সুগন্ধি, চালচলন— সবই ছিল বিলাসবহুল জীবনের প্রতীক। মক্কার লোকেরা বলত, “যেখান দিয়ে মুসআব চলে যায়, বাতাসেও তার সুগন্ধ থাকে।”
কিন্তু যখন তিনি নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দাওয়াত শুনলেন, তাঁর অন্তর আলোয় ভরে গেল। তিনি গোপনে ইসলাম গ্রহণ করলেন— কারণ তাঁর পরিবার ছিল কট্টর বিরোধী।
যখন তাঁর মা জানতে পারলেন যে তিনি মুসলমান হয়েছেন, তখন তাঁকে বাড়িতে বন্দি করে রাখলেন, আরাম–বিলাস কেড়ে নিলেন।
কিন্তু সেই তরুণ বললেন,
“হে মা, যদি তুমি আমাকে শতবার বন্দি করো, তবু আমি সেই সত্য ত্যাগ করব না, যা আমার অন্তর চিনে নিয়েছে।”»
এভাবেই শুরু হলো তাঁর ত্যাগের অধ্যায়।
ইসলামের প্রথম দাওয়াতি প্রতিনিধি
নবী (সা.) যখন মক্কার বাইরে ইসলাম প্রচারের পথ খুঁজছিলেন, তখন মদিনার কিছু মানুষ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তাঁরা নবী করিম (সা.)-কে অনুরোধ করলেন—
হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের কাছে এমন কাউকে পাঠান, যিনি আমাদের ইসলাম শেখাবেন।”»
তখন নবী (সা.) নির্বাচন করলেন মুসআব ইবন উমায়েরকে— ইসলামের প্রথম দাওয়াতি প্রতিনিধি (দাঈ) হিসেবে।
তিনি গেলেন মদিনায়, যেখানে তখনকার সমাজে গোত্রবিরোধ, কুসংস্কার ও অজ্ঞতা প্রবল ছিল। কিন্তু এই তরুণ সাহাবি মৃদুভাষী, জ্ঞানী ও চরিত্রবান ছিলেন।
তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে আল্লাহর একত্ব, ন্যায়, ও মানবতার শিক্ষা দিলেন।
মদিনার নেতা আসআদ ইবন জরারা (রাঃ) তাঁর দাওয়াতে প্রথম সাড়া দেন, পরে একে একে পুরো গোত্র ইসলাম গ্রহণ করে।
একদিন তিনি মদিনায় সা’দ ইবন মু’আয (রাঃ) নামের প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। সা’দ প্রথমে রাগান্বিত হয়ে এলেন, কিন্তু যখন মুসআব (রাঃ)-এর মুখে কুরআনের আয়াত শুনলেন, তাঁর অন্তর কেঁপে উঠল।
তিনি বললেন,
এই বাণী সত্য, এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।”
সেই দিনের পর মদিনায় ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ল— এবং অল্প সময়েই শহরটি নবীর হিজরতের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল।»
ত্যাগ ও শহীদির শেষ অধ্যায়
মুসআব (রাঃ)-এর দাওয়াতি পরিশ্রমে মদিনা ইসলাম গ্রহণ করেছিল, যা পরে ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করে।
বদর ও উহুদের যুদ্ধে তিনি নবী (সা.)-এর পতাকা বহন করেন।
উহুদের যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। শত্রুরা তাঁর ডান হাত কেটে দেয়— তিনি বাম হাতে পতাকা নেন। বাম হাতও কেটে যায়, তখন বুকে জড়িয়ে রাখেন পতাকা।
অবশেষে শহীদ হন, কিন্তু পতাকা মাটিতে পড়তে দেননি।
নবী করিম (সা.) তাঁর শহীদ দেহ দেখে অশ্রু বিসর্জন দেন। তাঁর দাফনের সময় দেখা যায়— তাঁর শরীর ঢাকার মতো সম্পূর্ণ কাপড়ও নেই।
নবী (সা.) বললেন,
«“আমি মুসআবকে মক্কায় এমন দেখেছি যে, তাঁর চেয়ে বিলাসী তরুণ আর কেউ ছিল না; আর আজ দেখছি— আল্লাহর পথে তিনি সবকিছু ত্যাগ করেছেন।”»