20/07/2025
তারকেশ্বর মন্দিরের ইতিহাস
তারকেশ্বর মন্দির, যা তারকনাথ মন্দির নামেও পরিচিত, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার তারকেশ্বরে অবস্থিত একটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দির। এটি ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এবং মন্দিরটিতে "তারকনাথ" নামে শিবকে পূজা করা হয়। জানেন কী এই মন্দিরের সৃষ্টি কিভাবে? কে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা?
মন্দিরটি রাজা ভরমল্লার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে জানা যায়, যিনি ছিলেন ভগবান শিবের একজন ভক্ত।
স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, মন্দিরটি একটি শিবলিঙ্গ আবিষ্কারের সাথে সম্পর্কিত, যা একজন গ্রামবাসী খুঁজে পেয়েছিলেন।
কথিত আছে যে, ১৭২৯ সালে এই স্বয়ম্ভু লিঙ্গের চারপাশে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল এবং এটি "বাবা তারকনাথ" নামে পরিচিত।
শাস্ত্রজ্ঞ,পন্ডিত,ঐতিহাসিকদের মত ও প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে হুগলী জেলার রামনগর অঞ্চলে বিষ্ণুদাস নামে এক স্থানীয় ক্ষত্রিয় রাজার আধিপত্য় ছিল,তিনি শিবের পরম ভক্ত ছিলেন। রাজার ভাই ভারমল্ল ছিলেন সংসার ত্য়াগী সন্ন্যাসী যোগী। তখন এই বনাঞ্চলের নাম ছিল তাড়পুর। বিষ্ণুদাসের ভাই ভারমল্ল রোজ বনে যেতেন ফলমূল ও মধু সংগ্রহ করতে। প্রায়ই তিনি লক্ষ করতেন একটি বড় কালো রঙের শিলাখণ্ডের ওপর গাভীরা এসে দুধ দিয়ে য়ায়। এই অদ্ভুত ঘটনা তিনি তাঁর দাদাকে বলেন। শিবভক্ত বিষ্ণুদাস বনে এসে এই দৃশ্য দেখে শিহরিত হন। রাজা ভারামল্ল তখন ঐ প্রস্তরখন্ডকে শিবলিঙ্গ রূপে রামনগরে এনে প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হলেন। কিন্তু অনেক মাটি খুঁড়া খুঁড়ির পরেও শিলাখন্ডের মূল খুঁজে পাওয়া গেল না।
এরপরের জনশ্রুতি, সেইসময় কোন এক রাতে রাজার ভাই ভারামল্ল স্বপ্ন দেখলেন, স্বয়ং শিব তাঁকে জানাচ্ছেন যে, তিনি তারকনাথ অর্থাৎ জীবের রক্ষাকর্তা, শিবের একটি রূপ । তিনি ঐ বন থেকে গয়া ও কাশী পর্যন্ত ছড়িয়ে আছেন। সুতরাং তাঁকে তাড়পুরের জঙ্গল থেকে উচ্ছেদ না করে ওখানেই তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা হোক ।এরপর স্বপ্নাদিষ্ট ভারামল্ল ও মুকুন্দরাম রাজার সহযোগিতায় বন কেটে পরিষ্কার করে তাড়পুরেই প্রস্তরখন্ডের উপর একটি মন্দির নির্মাণের উদ্য়োগী হলেন। মুকুন্দ ঘোষকে শিবের সেবা ও পুজো করবার ভার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিই হলেন তারকনাথের প্রথম সেবক। এই জায়গাটির আজকের নাম তারকেশ্বর।
বাবা তারকনাথ বাবা তারকেশ্বর নামেও পরিচিত। তিনি ভগবান শিবের একটি উগ্র রূপ, যিনি সমুদ্র-মন্থনের সময় হলাহল (বিষ) পান করেছিলেন। এই জন্য শিবকে হলধর নামেও ডাকা হয়। তারকনাথ ভগবতী তারার স্বামী। তার শিবলিঙ্গও তারাপীঠ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
মন্দিরটি ধীরে ধীরে একটি পবিত্র স্থান হিসাবে গুরুত্ব লাভ করে এবং আজও এটি একটি বিখ্যাত তীর্থস্থান। মন্দিরটি শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এবং এখানে তারকনাথ রূপে পূজা করা হয়। প্রতি বছর বহু তীর্থযাত্রী এই মন্দির পরিদর্শনে আসেন। ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে, দুধপুকুরে ডুব দিয়ে স্নান করলে মনস্কামনা পূর্ণ হয়। শেওড়াফুলির নিমাই তীর্থ ঘাট থেকে জল এনে তারকেশ্বর মন্দিরে বাবার মাথায় অর্পণ করার প্রথাও প্রচলিত আছে। ভক্তদের বিশ্বাস বাবা তারকনাথ তাদের বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।