11/11/2023
রাজা মেনন পরিচালিত 'পিপ্পা' নামক ছবিতে এ আর রহমান সুরারোপিত কবি নজরুল ইসলামের রচনা "কারার ঐ লৌহ কপাট..." গানটির বিকৃত সুরারোপ সম্পর্কে সারা বাংলা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি সম্মিলনীর বিবৃতি
"ইতিমধ্যেই গোটা দেশ অবহিত যে 'অস্কার' জয়ী সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান সম্প্রতি "পিপ্পা" নামক হিন্দি চলচ্চিত্রে বিশ্ববন্দিত কবি নজরুল ইসলামের ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কালজয়ী রচনা "কারার ঐ লৌহকপাট" গানটির উপর নতুন করে সুরারোপ করেছেন যা মূল সুর থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। যদিও আজও মূল গানটি জনমানসে যে আবেগ অনুভূতি ও প্রেরণা সঞ্চার করে নতুন করে সুরারোপিত গানটি তা করতে চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ইতিমধ্যে সমাজমাধ্যমে এই গানের বিরোধিতা করে বহু মানুষ তাদের বক্তব্য জানাচ্ছেন।আমরা মনে করি যেকোনও শিল্পের নান্দনিকতা সমাজ পরিবেশ থেকেই উদ্ভুত। সমাজের চাহিদা আকাঙ্খা তাই শিল্পে প্রতিভাত হয়। নজরুল ইসলামের মূল গানটির প্রেক্ষাপটও তাই। পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে নিবেদিত সৈনিক দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ব্রিটিশ পুলিশ কর্তৃক ১৯২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর কারারুদ্ধ হন। এই ঘটনার পর দেশবন্ধু'র সহধর্মিনী বাসন্তী দেবী দেশবন্ধু সম্পাদিত 'বাঙ্গলার কথা' পত্রিকার দায়িত্বভার গ্রহন করেন ও সুকুমাররঞ্জন দাশের মাধ্যমে নজরুল ইসলামকে একটি কবিতা লেখার অনুরোধ জানান। নজরুল সেই অনুরোধ স্বীকার করে "ভাঙার গান" শীর্ষক কবিতাটি লেখেন। এই কবিতায় পরবর্তীতে তিনি সুর দেন এবং তা দেশাত্মবোধক গান রূপে গোটা দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে ভীষণভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে। সেই সময় হুগলি জেলে স্বদেশী আন্দোলনের সাথে জড়িত বন্দি এবং অন্যান্য বন্দিদের সাথে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এই গানটি গাইতেন বলে জানা যায়। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রশাসন এই গানটির ব্যাপ্তি লক্ষ্য করে সারাদেশে গানটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে এই গানের সুরে ও কথায় পরাধীনতার যন্ত্রনা থেকে মুক্তির যে আকাঙ্খা সেদিন ফুটে উঠেছে তা সেদিনের মতন আজও এদেশের প্রত্যেক মানুষকে আন্দোলিত করে। এ আর রহমানের নতুন সুরে সে আবেদন কোথায়! ঐতিহাসিক ভাবেই হয়ত তা করা সম্ভব নয়। ফলে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এমন একটি বিখ্যাত সৃষ্টিকে সংগীত পরিচালক এ আর রহমান পুনর্নিমান করতে গিয়ে নিজের যে দক্ষতাকেই ব্যবহার করে থাকুন না কেন, আদপে এই কালজয়ী গানটির ইতিহাসকে অস্বীকার করেছেন এবং গানটির যে আবেদন এবং তার মূল নির্যাসকে অপমান করেছেন!
সামাজিক মাধ্যমে গানটি প্রকাশিত হওয়ার পর ইতিমধ্যেই বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সংগীত প্রেমী মানুষ, সংগীত অনুরাগী মানুষ এবং সচেতন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক এর প্রতিবাদ করেছেন। আমাদের দেশের স্বনামধন্য প্রবীন শিল্পী থেকে শুরু করে আধুনিক গানের এই সময়ের প্রখ্যাত শিল্পীরাও এই কাজটির নিন্দা জানিয়েছেন। আমরা 'সারা বাংলা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি সম্মিলনী' দ্ব্যার্থহীনভাবে এ আর রহমান সহ সম্পূর্ণ ফিল্মের সাথে যুক্ত সকল ব্যক্তির এহেন কর্মকাণ্ডের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট চলচ্চিত্রের পরিচালক, প্রযোজক ও সংগীত পরিচালকের কাছে নতুন সুরারোপিত এই গানটি অবিলম্বে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি এবং চলচ্চিত্রটির প্রয়োজন হলে মূল সুর ও ভাব অক্ষুন্ন রেখে এবং প্রাসঙ্গিকতাকে বিবেচনায় রেখে গানটি পরিবেশনের দাবি জানাচ্ছি।