29/07/2025
আমি লিখি মূলত তাদের জন্য যাদের পিতামাতা তার সন্তানকে একজন উচ্চ শিক্ষিত কেরানি বানানোর জন্য সেক্যুলার শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। এটাই আমার মূল কমিউনিটি। আমিও এই কমিউনিটিরই লোক। তাই এই কমিউনিটিকেই আমি মূলধারা মনে করি। আমি মনে করি এরা ভাল হলে দেশ ভালো হয়ে যাবে। এরা যদি রাষ্ট্রে আল্লাহ্র আইন চায় রাষ্ট্রে আল্লাহ্র আইন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এরাই আমার নিকট আশা ভরসার মূল স্থান। এদের জন্যই আমার লেখা। ..
কিন্ত সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস হওয়া নিয়ে যতদিন যাচ্ছে ততদিন অন্যান্য কমিউনিটির মত এই কমিউনিটির মধ্যে সন্দেহের দানা বাঁধছে। এজন্যই সবরের এত মূল্য। সব সংগ্রাম , আন্দোলন দিনশেষে সবরের উপরই দাঁড়িয়ে থাকে। এই সন্দেহ দানা বাঁধে বিশেষ করে ডক্টর ইউনুস জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস সংক্রান্ত স্ট্যাটাসে যখন স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দেয়, ..
"এটি দেশের প্রতিষ্ঠিত আইনি, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরে থাকা কোনো সামাজিক এজেন্ডাকে উৎসাহিত করবে না।"
একই বিবৃতি ইংরেজিতে , "It will not serve to promote any social agenda that falls outside the country’s established legal, social and cultural framework." ..
এই বিবৃতির পর অনেকেই ধোঁকা খেয়ে বসে। তাদের কথা হল জাতিসংঘ তো বলেই দিয়েছে যে তারা আমাদের দেশের নর্মের বাহিরে যাবে এরকম কোন কাজ করবে না। তাহলে এটা নিয়ে এত সমস্যা কোথায় ? ..
কিন্ত এরপূর্বের লাইনেই সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ..
" ওএইচসিএইচআর মিশন মানবাধিকারের যেকোনো গুরুতর লঙ্ঘনের প্রতিরোধ ও প্রতিকার, বিগত সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর মনোনিবেশ করবে।" ..
এখন সমস্যা হল জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস মানবাধিকার বলতে যা বুঝে তার ভিতরে LGBTQ+ অধিকার স্পষ্ট অন্তর্ভূক্ত। তারা সব জিনিসে ছাড় দিতে রাজি আছে কিন্ত মানবাধিকার থেকে তারা দেশীয় কিংবা কালচারাল নর্মের কথা উল্লেখ করে এই জিনিস ত্যাগ করতে পারবে না। ..
এগুলো নিয়ে তারা অলরেডি আলোচনা আরো দশ বছর আগে সম্পন্ন করে ফেলেছে। ২০১১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এক সভায় তাদের নেওয়া একটি সিদ্ধান্ত হল এরকম,
" Where there is a tension between cultural attitudes and universal human rights, rights must carry the day. Together, we seek the repeal of laws that criminalize homosexuality, that permit discrimination on the basis of sexual orientation or gender identity, that encourage violence."
এটাকে বাংলা করলে দাঁড়ায় ,
" যেখানে সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সর্বজনীন মানবাধিকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে, সেখানে মানবাধিকারেরই জয় হতে হবে। আমরা একসঙ্গে সেইসব আইন বাতিলের চেষ্টা করছি যা সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে, যৌন পরিচয় বা লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্যকে অনুমোদন দেয়, কিংবা সহিংসতাকে উসকে দেয়।"
অর্থাৎ যেখানে কালচার আর মানবাধিকারের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধবে সেখানে অবশ্যই মানবাধিকারকে বিজয়ী করতে হবে। এ ব্যাপারে কোন ছাড় নেই।
একই অ্যাসেম্বলিতে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা সিদ্ধান্ত হল,
" জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা যৌন পরিচয় (sexual orientation) ও লিঙ্গ পরিচয় (gender identity) সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে তাদের কাজের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (OHCHR), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (UNICEF), জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (UNESCO), জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (UNHCR), আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA), এবং এইচআইভি/এইডস বিষয়ক জাতিসংঘের যৌথ কর্মসূচি (UNAIDS)।" [১]..
এছাড়া ২০১৩ সালে বান কি মুন ইউ এন এর আরেকটা অ্যাসেম্বলিতে স্পষ্ট ঘোষণা করেন , " Culture, Religion, Tradition can never Justify Denial of Rights" [২]..
অর্থাৎ মানবাধিকারের এই ব্যাপার যেটাকে তাদের ভাষায় SOGI (Sexual Orientation & Gender Identity) বলা হয় এই ব্যাপারে কোন ছাড় নাই।..
কেন সোশ্যাল নর্মের উপরে SOGI-র রাইটস প্রাধান্য পাবে এগুলো নিয়ে খোদ OHCHR সহ জাতিসংঘের অন্যান্য এজেন্সির একাধিক রিসার্চ আছে। যেগুলো নিয়ে আলোচনা করলে আলোচনা ভারি হয়ে উঠবে। তাই সংক্ষিপ্ত করার জন্য আপাতত মূল আলোচনাতেই থাকছি। ..
অনেকেই ভাবতে পারেন , তাহলে OHCHR কি মিথ্যে কথা বলেছে ? এর উত্তর হল না। তারা ঐসব কালচারাল নর্ম মানবে যেগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে না (তাদের ভাষায়)। যেমন ধরেনঃ আমাদের দেশের কালচারাল নর্ম হল এখানকার মেয়েরা সাধারণত কালচারালি শর্ট ড্রেস পরে না। তো, মানবাধিকার অফিসে যারা চাকরি করবে তারা খুব কালচারালি এই নর্মটা গ্রহন করবে। কোন প্রেশার ছাড়াই। কিংবা ধরুন, কোন দেশের কোন এক পাহাড় পবিত্র কিংবা বন জঙ্গল পবিত্র সে অঞ্চলের মানুষের কাছে। এখন মানবাধিকার অফিসের লোকজন এমন কোন কাজ করবে না যে কাজ করলে ঐ বন কিংবা পাহাড়ের পবিত্রতা নষ্ট হিসেবে ধরা দিবে স্থানীয় মানুষদের নিকটে। আপনি গরু, খাশি খাবেন, এটা নিয়ে তারা কোন কথা বলবে না। অর্থাৎ স্থানীয় খাদ্য রিউচুয়াল নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলবে না। প্রকাশ্যে তারা মদ খাবে না। আশা করি এই দু একটা উদাহরণে বুঝতে পেরেছেন তারা "legal, social and cultural framework" বলতে কি বুঝিয়েছে।..
এলজিবিটি-র ব্যাপারে তারা এতটাই কঠোর এ ব্যাপারে তারা যে কালচারাল নর্মের কোন পাত্তা দেয় না তা অলরেডি তারা উগান্ডাতে প্রমাণ করে দিয়ে আসছে। উগান্ডা একটা খৃস্টান দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা ধর্ম এবং স্থানীয় সংস্কৃতির উপর প্রভাবিত হয়ে ২০২৩ সালে যখন অ্যান্টি-হোমোসেক্স্যুয়ালিটি বিল পাস করে যা ছিল উগান্ডার মেজোটিরিয়ান গণতন্ত্রের ফসল সেটার ব্যাপারে তৎক্ষণাৎ রাষ্ট্রপতিকে মানবাধিকার কমিশন এই বিল সাইন করতে নিষেধ করে। এবং এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ আইনগুলোর একটি হিসেবে বর্ণনা করে। কিন্ত আইনটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত আইন ছিল। উগান্ডার বেশিরভাগ মানুষ আইনটির পক্ষে ছিল। এর কিছুদিন পরেই উগান্ডা সরকার এই মানবাধিকার অফিস বন্ধ করে দেয়। তাদের সাথে যে চুক্তি ছিল সেই চুক্তির পরিধি বাড়ানো থেকে তারা বের হয়ে আসে। ..
সমস্যা হল, এ ব্যাপারটি এতটাই সেন্সিটিভ যে মানবাধিকার কমিশন অফিস একটা অক্ষ হয়ে উঠে। এলজিবিটি-র বিরুদ্ধে যায় এরকম কিছু করলে পাওয়ারফুল তিনটি অক্ষ সজাগ হয়ে উঠে। এক, আমেরিকা, দুই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং তিন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। যখন তিনটি অক্ষ একত্র হয়ে কোন ইস্যুর ব্যাপারে কোন গরীব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে তখন তার স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। যখন তিনটে অক্ষ একত্রিত হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই দূর্বল দেশের উপর একটি শাস্তি আসা অবধারিত হয়ে উঠে। তখনই স্যাংশন সহ আরো নানা আলাপ উঠে আসে। সে সময়ে CNN এর একটা শিরোনাম এরকম ছিল , " UN and US Join Chorus of Condmnation against Uganda's hardline anti-LGBT bill" [৩]...
বাংলাদেশ যদি হাঙ্গেরি কিংবা পোল্যান্ডের মত একনোমিক্যালি শক্তিশালী দেশ হত তাহলেও এত সমস্যা হত না। এই দুটো দেশই এলজিবিটি ইস্যু নিয়ে উপরে উল্লেখিত তিনটে অক্ষের তীব্র সমালোচনার সম্মখীন হয়েছিল কিন্ত এজন্য তাদের কোন কিছুই পোহাতে হয় নাই। ..
এখন বাংলাদেশের মত গরীব দেশ যে দেশের যুদ্ধ বিমান মাথার উপর ভেঙ্গে পড়লে তার জন্য সরকার প্রধানের চাদা তুলতে হয় যে দেশের প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই বৈশ্বিক এনজিও গুলোর নিকটে হাত পাততে হয় আপনার কি মনে হয় সেই দেশ এত পাওয়ারফুল অক্ষগুলোর বিরুদ্ধে LGBTQ+নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ? পারবে না।
Notes:
[১] United Nations General Assembley A/HRC/199/41
[২] SG/SM/14944-HR/5127
[৩] https://edition.cnn.com/2023/03/22/africa/uganda-lgbtq-bill-condemned-intl
— এস এম সাওয়াবুল্লাহ্ হক
সোর্স: ফেসবুক পোস্ট, ২৯ জুলাই ২০২৫