10/09/2025
দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা এক ধরনের ‘ডমিনো ইফেক্ট’ সৃষ্টি করেছে, যার শুরুটা হয়েছিল কলম্বো থেকে। ইন্ট্রেস্টিংলি, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং নেপালের পলিটিকাল মুভমেন্টগুলোর মধ্যে বেশ কিছু সিমিলার প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যায়। এটা শুধু ‘আনজাস্ট’ রেজিমের বিরুদ্ধে ম্যাসিভ আপরাইজিং নয়, বরং এই অঞ্চলের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক কাঠামোগত সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে।
প্রথমত, তিন দেশেই এক্সজিস্টিং ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনগুলো অলমোস্ট নন-ফাংশনাল অবস্থায় ছিল। ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল হিসেবে শাসকগোষ্ঠী বিরোধীদের ওপর ধারাবাহিকভাবে দমন-পীড়ন চালিয়েছে। এর ফলে কার্যকর রাজনৈতিক ভারসাম্য, জবাবদিহিতার সংস্কৃতি কিংবা অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির পরিবেশ কোনোটিই গড়ে ওঠেনি।
দ্বিতীয়ত, পরিবারতান্ত্রিক বা বংশানুক্রমিক রাজনীতি তিন দেশের অস্থিরতার একটি প্রধান মিল। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতাকাঠামো, শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসে পরিবারের আধিপত্য এবং নেপালে কৈরালা পরিবারের প্রভাব—সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পরিমণ্ডল সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে এলিটদের হাতে।
তৃতীয়ত, আন্দোলনগুলোর শুরুটা হয়েছিল অপেক্ষাকৃত সাধারণ ইস্যু দিয়ে, কিন্তু পরবর্তীতে তা সরকারের পতনের দাবিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন, নেপালে দুর্নীতি ও নেপোটিজমবিরোধী প্রতিবাদ, এবং শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কট—প্রতিটি ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত ফলাফল রেজিমের পদত্যাগের মাধ্যমে এসেছে।
চতুর্থত, সোশ্যাল মিডিয়া এবং তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেনারেশন Z, আন্দোলনগুলোতে ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। তারা শুধু রাস্তায় সক্রিয় হয়নি, বরং ভার্চুয়াল স্পেসকেও দক্ষভাবে ব্যবহার করেছে। নেপালে তো ‘হ্যাশট্যাগ নেপো কিড’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন খুবই ট্রেন্ডি। প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রগুলো প্রায় একই ধরনের স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে: ইন্টারনেট শাটডাউন, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আন্দোলন দমন। ফলশ্রুতিতে প্রাণহানি ও সহিংসতা বেড়েছে, যা চলমান আন্দোলনকে আরও উস্কে দিয়েছে।
পঞ্চমত, প্রতিটি আন্দোলনে রেজিমের পতনের পর একধরনের মব ভায়োলেন্সের উথান হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসে পরিবারের বাসভবন ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে, বাংলাদেশেও একম বা ভাঙচুর ঘটেছে, আর নেপালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অলির স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। এগুলো প্রমাণ করে আন্দোলনগুলো কেবল প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং কখনও কখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে অরাজকতায় রূপ নিয়েছে।
ষষ্ঠত, বহির্বিশ্বের ভূরাজনৈতিক স্বার্থও এই আন্দোলনগুলোকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে। চীন, ভারত এবং পশ্চিমা বিশ্বের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত গুরুত্বের কারণে প্রতিটি দেশই বিভিন্ন শক্তির প্রতিযোগিতার অঙ্গনে পরিণত হয়েছে। যদিও আন্দোলনগুলো মূলত হোম গ্রোন, তবুও এক্সট্রা-রিজিওনাল পাওয়ারদের ইনভলভমেন্ট এদের গতি-প্রকৃতিকে আরও কমপ্লেক্স করেছে।
সবশেষে, দক্ষিণ এশিয়ায় যে রাজনৈতিক মৌসুমি বায়ু বইতে শুরু করেছে, তা সাময়িক নাকি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের শুরু, সেটাই এখন দেখার বিষয়। কাঠমান্ডুর পর এই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে নেক্সট কোথায় বৃষ্টিপাত ঘটবে কে জানে! 😅