21/07/2025
সকালে নাস্তা খেয়ে যখন বাচ্চাগুলি স্কুলে চলে যায়, বাবা মা আশায় থাকে স্কুল শেষে বাচ্চাগুলো বাবা-মায়ের বুকে ফিরে আসবে। কিন্তু কে জানতো আহারে! বাচ্চা গুলো একদম পুড়ে মাংসপিণ্ড হয়ে আসবে? আবার অনেককে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। কে জানত এমন হবে। এর দায়ভার কে নিবে নিবে!! কে নিবে এই আন প্রফেশনালিজম এবং অব্যবস্থাপনার দায়িত্ব!
কে নিবে সন্তানহারা বাবা-মা গুলোকে সান্তনা দেয়ার দায়িত্ব? আদৌ কি কোন সান্ত্বনা তাদের যন্ত্রণা কমাতে পারবে? কে নিবে হারিয়ে যাওয়া ভবিষ্যতের উজ্জ্বল নক্ষত্র গুলোর দায়িত্ব । বিমান প্রশিক্ষণ সাধারণত লোকালয় থেকে দূরে করা হয়। তাহলে কেন এই ফাইনাল ফ্লাইট রাউন্ডটা লোকালয়ে করা হয়?কবে বাংলাদেশ থেকে দূর হবে এই ধরনের অব্যাবস্থাপনাময় সিস্টেম? আছে শুধু এত এত প্রশ্ন এবং দীর্ঘশ্বাস, কান্না, যন্ত্রণাময় আহাজারি। কিন্তু এর কোন উত্তর নেই।
আজ ছিল ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের সলো ফ্লাইট ট্রেনিং (Solo Flight Training)
সলো ফ্লাইট ট্রেনিং হলো একজন পাইলটের ট্রেনিংয়ের সর্বশেষ ধাপ। ফাইটার জেট অপারেট করার জন্য একজন পাইলট যে হাই স্কিল্ড, সেটি'ই প্রমাণিত হয় সোলো ফ্লাইটের মাধ্যমে। ট্রেনিং-এর এপর্যায়ে পাইলটকে নেভিগেটর বা কো-পাইলট বা কোনো প্রকার ইন্সট্রাক্টর ব্যতীত একাই ফ্লাইট অপারেট করতে হয়। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির আজ সেরকমই একটি ট্রেনিং ফ্লাইট অপারেট করছিলেন।
যেকোনো প্রকার ট্রেনিং ফ্লাইট সিভিলিয়ান এরিয়া থেকে দূরেই হয়ে থাকে, তবে সলো ফ্লাইট সাধারণত আর্বান এরিয়াতেই হয়ে থাকে৷ আর আর্বান এরিয়াতে এধরণের সেন্সিটিভ ফ্লাইট অপারেট করার জন্য পাইলটকে যথেষ্ট কোয়ালিফাইড হতে হয়। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির তেমনই একজন পাইলট। তো ট্রেনিংয়ের লক্ষ্যে তৌকির তার এফ-৭ বিমান নিয়ে কুর্মিটোলা পুরাতন এয়ারফোর্স বেস থেকে টেক অফ করেন। এরপর উত্তরা, দিয়াবাড়ি, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা'র আকাশজুড়ে তিনি উড়তে থাকেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বিমানে কিছু সমস্যা আঁচ করেন। কন্ট্রোল রুমে রিপোর্ট করে জানান যে তার বিমান আকাশে ভাসছে না, মনে হচ্ছে বিমান নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে। কন্ট্রোল রুম থেকে ইন্সট্যান্ট রেসপন্স করে ইজেক্ট করার জন্য জানানো হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে যতটুকু জানা সম্ভব হয়েছে: ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির শেষ মুহূর্ত অব্দি চেষ্টা করেছেন বিমান বাচানোর জন্য। তিনি বিমানটির সর্বোচ্চ ম্যাক স্পিড তুলে বেসের দিকে ছুটতে থাকেন। এর মধ্যেই কন্ট্রোল রুমের সাথে পাইলটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার ঠিক এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যেই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে বিধ্বস্ত হয়।
এখন পর্যন্ত এতটুকুই জানা গেছে। তবে বিমানের ঠিক কি ধরণের টেকনিক্যাল ফেইলিওরের জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটলো, তা কেবলমাত্র ম্যাসিভ ইনভেস্টিগেশন হলেই জানা সম্ভব।
এই দুর্ঘটনায় যাদেরকে এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের খোঁজ যেন শীঘ্রই পাওয়া যায় এই দোয়া করি। যারা প্রাণ হারিয়েছেন শহীদ হয়েছেন আল্লাহ তাদেরকে সর্বোচ্চ মাকামে পৌঁছে দিন, এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আল্লাহ তাআলা এই বিপদ মোকাবেলা করার জন্য সাহস দিন ধৈর্য দিন আমিন।
সাজেশনস :
1. ট্রেনিং এরিয়া শহরের ভিতরে হওয়া উচিত নয়।
2. ফ্লাই করার পূর্বে কঠোরভাবে সব সময় ফিটনেস অবশ্যই চেক করতে হবে।
3. ফ্লাই করার পূর্বে সিকিউরিটি সিস্টেম অবশ্যই দেখে নিতে হবে।
4. প্রশিক্ষণের শেষ পর্যায়ের ফ্লাইটাও কোনভাবে সিটি এরিয়ায় করা যাবে না লোকালয় থেকে দূরে করতে হবে।