04/09/2023
বড্ড জানতে ইচ্ছা করে,,,
প্রিয় বন্ধুরা আজ আমি মুসাফির কামাল ফকির আপনাদের মাঝে একটি হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস বর্ণনা করার জন্য চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমার পোস্ট খানা পড়ার পরে কমেন্ট করে জানাবেন আপনাদের নিকটে কেমন লেগেছে?
আপনারা খালের মত যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন এটি আজ খাল হলেও এক সময় এখানে অনেক স্রোত ছিলো, কালের বিবর্তনে ও প্রাকৃতিক কারণে স্রোতের নদীটি আজ খালে উপান্তরিত হয়েছে।
অবস্থানঃ
বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দী থানাধীন ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের ছোট একটি গ্রাম বাঁশহাটা। এই বাঁশহাটা গ্রামের বাঙ্গালী নদী হতে একটি শাখা নদী বের হয়ে সেটি দঃক্ষিন দিকে চলেগেছে, যার নাম স্থানিয় ভাবে বড়িয়ার নদী বলা হয়। বড়িয়ার নদী এই জন্য বলা হয় শাখা নদীটি বগুড়া জেলার ধূনট থানার চিকাসি ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামের বুক চিড়ে বয়ে গেছে তাই আমরা নদীটিকে বড়িয়ার নদী হিসাবে নাম দিয়েছি।
এই নদীতে এক সময় বাণিজ্যিক ভাবে নৌকা চলাচল করতো ধান পাট বুঝাই নৌকা চলতো, কুমারের মাটির বাসনপত্র ও এই নদী দিয়ে যাওয়া আসা করতো।
এক সময় প্রচুর মাছ ধরা পড়তো। প্রতি বছরের আর্শ্বিন কার্তিক মাসে প্রচুর মাছ ধরা পড়তো। নদীর প্রস্ত কম হওয়ার ফলে মাছ ধরার জন্য বেশি উপোযাগি ছিলো।
ছোট বড় নানান রংগের মাছ ধরা পড়তো। রুই, কাতলা, মৃগেল, কাল বাউস, বোয়াল, চিতল মাছ ছিলো অন্যতম। এই নদী বয়ে পালের নৌকা সহ বর্ষা কালে গহনার নৌকা চলতো। ছোট বেলাতে গহনার নাও বলতে মনে করতাম নৌকা ভর্তি গহনা থাকতো।
বড় হয়ে যে টুকু বুঝেছি শিখেছি সেটি হলো, গহনার নাও মানে গহনার নায়ে করে নব বধুরা বাপের বাড়ি হতে শ্বশুর বাড়ি এবং শ্বশুড় বাড়ি হতে বাবার বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। তাই নৌকাটির নাম করণ করা
হয়। কালের বিবর্তনে এবং মানুষের কিছু অসৎ আচরণের কারণে আজ নানান ধরণের ডোবা নালার সৃষ্টি করে রাখে।
আজ নদী গুলো মরে যাওয়ার অন্যতম কারণে হলো বিভিন্ন ভাবে উন্নায়নের নামে নদীতে ব্রীজ নীর্মাণ করা এবং খালের মুখে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের ব্যবস্থা করা।
নদীর স্রোতকে যত বাধা মুক্ত রাখা যাবে তত পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সুন্দর্য বহাল থাকবে সেই সাথে বৃদ্ধি পাবে প্রাকৃতিক ভাবে চাষাবাদের সুবিধা
বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ কিন্তু জনসংখ্যা ব্যপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মানুষের বসত বাড়ি নির্মান এবং কল খারখানা বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী মরে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো নদীর উপরে ব্রীজ নির্মাণ করা।
নদীর উপরে ব্রীজ নির্মাণ করার ফলে ব্রীজের খুঁটির সাথে পানি ধাক্কা খেয়ে ঘূর্ণিপাকের সৃষ্টি হয় এবং ব্রীজের ভাঁটির অংশে বালুচর জাগে ফলে বর্ষাকালে সহজে পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে পানি সমতল ভূমিতে উঠে পড়ে ফলে অতি তারাতারি বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যায়।
এই বড়িয়া নদী ভাংগনে এক সময় বর্তমান বড়িয়া ব্রীজের ভাঁটির অংশে অনেক জমাজমি নদী গর্ভে চলে যায় এবং নদীপারের বসত বাড়ি গুলো হুমকির মুখে পতিত হয়।
এই বড়িয়া নদী বড়িয়া, সাতবেকি,ঝিঁনাই গ্রাম হয়ে পূর্নরায় বাঙ্গালী নদীর আরেকটি শাখার সহিত যুক্ত
হয়। নদী শাসন নদী দূষণ এগুলো প্রাকৃতিক কারণে হয়, কিন্তু মানুষের সৃষ্টি হলো নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা।
অবৈধ দখল নদী দূষণের অন্যতম কারণ, নিজের জমি ভেংগে নদীতে চলে গেছে এই দাবির পরিপেক্ষিতে নদীর কিনারে ব্লক বা দেয়াল নির্মাণ করে বসত ঘর নির্মাণ করেও ছোট ছোট নদী ও খাল গুলোকে আমরাকে সচল হতে অচল করে ফেলি। অবৈধ দখল দারের হাত হতে এবং নদীতে বাঁধ নির্মাণ প্রতিরোধে সরকারি ভাবে কড়া নজর দারি না থাকলে এই বড়িয়া নদীর মত একদিন অনেক নদী নালা বিলিন হয়ে যাবে।
স্মৃতিঃ
এই বড়িয়া নদী ঘিরে গ্রাম্য সাংস্কৃতির অনেক কথাই মনে পড়ে। প্রতি বছরই আশ্বিন কার্তিক মাসে এই নদীর পাড়ে কখনো গ্রামের উত্তর পাড়ায় কখনো বা গ্রামের দঃক্ষিন পাড়ায় মেলা বসত। মেলাতে মহিলাদের চুড়ি,ফিতা, লিপিষ্টিক আলতা, শিশুদের খেলনা সহ নানান ধরণের খাবার পাওয়া যেতো। বিশেষ করে জামবুরা, আখ, গুঁড়ের লই, বাদাম ভাজা, চিনির খাঁজা অন্যতম।
খেলাধূলাঃ
লাঠিবাড়ি, হা ডু ডু, পাতা খেলা, নৌকা বাইচ এবং গ্রামীণ খেলা ধূলা ইত্যাদি।
রাতের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানঃ
পালাগান, জারিগান, গেদাফকিরের গজল, স্থানিয় শিল্পীদের নাটক, উল্লেখযোগ্য। গুনাই বিবি, রূপভান, কমলার বনবাস, শহীদ কারবালা, ইত্যাদি বই গুলো ছিলো গ্রামীণ মানুসদের মুল বিনোদোন।