22/04/2025
আমার জীবনটা নিয়ে হালকা একটু লিখলাম
গল্পের নাম: ভাঙনের শব্দ
একটা সময় ছিল, গ্রামের এক কোণে ছোট্ট একটা বাড়ি ছিল যেখানে বসবাস করত একটি সুন্দর যৌথ পরিবার। দাদা-দাদির ছয়টি সন্তান—চার ছেলে, দুই মেয়ে। অভাব ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী, তবু সংসারে ছিল হাসি, ভালোবাসা আর একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা।
পরিবারের বড় ছেলে ছিল একেবারে মাটির মানুষ। বাবা-মা, ভাই-বোনদের মুখে হাসি দেখার জন্য দিন-রাত খেটে চলত। একদিন দাদা সিদ্ধান্ত নিলেন, বড় ছেলেকে বিয়ে দেবেন। বিয়ে হলো, সংসারে এলো নতুন বউ। এক ছেলে, দুই মেয়েকে নিয়ে বড় ছেলের আলাদা একটি ছোট্ট পরিবার গড়ে উঠল। কিন্তু সংসার যত বড় হতে লাগল, অভাবের আঁচ ততই বাড়তে লাগল।
এমন সময় বড় মেয়ের প্রেমের কথা জানাজানি হয়। সে জানিয়ে দেয়—“ওকে না দিলে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলব।” পরিবারের বড় ছেলে ভাবলো, বোনের ভালোবাসা অস্বীকার করা অন্যায় হবে। কিন্তু বিয়ে মানে তো খরচ, গহনা, আয়োজন! তখন সে যায় নিজের স্ত্রীর কাছে।
—“তোমার গহনা দিয়ে আমার বোনকে বিয়ে দেবো?” স্ত্রী মুচকি হেসে বলে, “আমার গহনা মানে তো তোমারই গহনা। দাও, বিয়ে দাও তোমার বোনকে।”
সেই গহনাতেই বড় বোনের বিয়ে হয়। পরে ছোট বোনের বিয়েও হয় অনেক কষ্টে। বড় ছেলে সিদ্ধান্ত নেয়, বিদেশ যাবে, কিছু রোজগার করতে হবে। পরিবারের সবাই মিলে টাকা জোগাড় করে তাকে পাঠায়।
বিদেশে গিয়ে সে পরিশ্রম করে টাকা পাঠাতে থাকে, সংসার চলে, কিন্তু পেছনে কেউ কেউ শুরু করে পারিবারিক ভাঙনের কাজ। কানকথা, সন্দেহ আর হিংসা ঢুকে পড়ে বাড়ির দেয়ালে।
বড় ছেলে একদিন ছুটি নিয়ে বাড়ি আসে। টাকার টানাটানিতে পড়ে। স্ত্রীকে বলে, “টাকা নেই, বাবা’র কাছে বলবো।”
বাবা বলে, “আমার কাছে তো কিছুই নেই।”
স্ত্রী বান্ধবীর কাছে যায় সাহায্য চাইতে। কিন্তু শুনতে পায়—“তোর শ্বশুর তো আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার দিয়েছে !”
স্ত্রীর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। এসে স্বামীকে সব জানায়। বড় ছেলে বাবার কাছে জানতে চায়, “আপনি কি সত্যিই টাকা নিয়েছেন?”
এই প্রশ্নেই আগুন ধরে যায় সংসারে।
বাড়ির অন্যরা, যারা আগে থেকেই বড় ছেলের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত ছিল, তাকে মারতে আসে। অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে পুরো পরিবারে। তবু বড় ছেলে টিকিটের টাকা জোগাড় করে বিদেশ চলে যায়।
পেছনে রয়ে যায় তার স্ত্রী, যে একদিন নিজের গহনা দিয়ে এই সংসারকে জোড়ে রেখেছিল। আজ তাকেই ঘরছাড়া করা হয়।
দিন গড়ায়, মাস পেরোয়। সেই বড় ছেলে আজ অন্য এক গ্রামে বাস করে। আর পুরোনো বাড়িতে নেই সেই হাসি, নেই সেই একতা। দাদার নাতি আব্দুলআহাদ চেষ্টা করেছে পরিবারটাকে আবার এক করতে, কিন্তু তার চেষ্টাও বৃথা।
সবচেয়ে কষ্টের কথা—যাদের জন্য জীবন ত্যাগ করা হয়েছিল, তারা আজ অনুভবহীন।
---
শেষ কথা:
ভালোবাসা আর ত্যাগ যেখানে একপাক্ষিক থাকে, সেখানে সম্পর্ক টেকে না। যে হাত একবার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে, তাকে ধাক্কা দিলে, সেই পরিবার আর আগের মতো থাকে না।
---
তুমি চাইলে গল্পটা আমি নাটক বা সংলাপ আকারেও সাজিয়ে দিতে পারি। আবার গল্পের শেষে অন্য বার্তা বা শিক্ষা যোগ করতেও পারি। কেমন লাগলো বলো!