06/08/2025
জুলাই ঘোষণাপত্রে প্রবাসীদের অবদান কোথায়?
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ শুনলাম সুন্দর আয়োজন, সুন্দর উপস্থাপনা, গম্ভীর ভাষণ সবই ঠিক আছে কিন্তু এর থেকেও বড় যে অভাব আমি হৃদয়ে অনুভব করেছি-তা হলো প্রবাসীদের প্রতি সম্পূর্ণ নীরবতা। ঘোষণাপত্রের প্রতিটি শব্দে দেশের মুক্তি, সংগ্রাম, ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের কথা এসেছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রবাসীরা যে রক্ত, ঘাম, শ্রম, এবং জীবনের নিরাপত্তা বাজি রেখে লড়েছে সেটি কি সত্যিই অদৃশ্য হয়ে গেল?১৫ বছরের শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বৃটেনসহ ইউরোপের নানা প্রান্তে, মধ্যপ্রাচ্যে, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত রাস্তায় থেকেছে। বৃটেনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে দিন-রাত টানা কর্মসূচি, আলতাব আলী পার্কে প্রতিবাদ সমাবেশ, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে মিছিল, মধ্যপ্রাচ্যে জেল-জুলুমের শিকার হওয়া, আর সর্বশেষ রেমিট্যান্স বন্ধের মতো সাহসী সিদ্ধান্ত-যা সরাসরি শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এমনকি জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকেই প্রবাসীরা তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছে অর্থে, কর্মসূচিতে, প্রচারণায়, অনলাইন যুদ্ধে। তখন দেশের আন্দোলনের জন্য টাকা-পয়সা, মিডিয়া কাভারেজ, আন্তর্জাতিক লবি সব কিছুতেই ছিল প্রবাসীদের বিশাল অবদান।
কিন্তু জুলাই ঘোষণাপত্রে প্রবাসীদের জন্য একটি লাইনও বরাদ্দ হলো না! এটা কি কেবল ভুলে যাওয়া, নাকি পরিকল্পিত অবহেলা? যে মানুষগুলো দেশ ছেড়ে দূরে থেকেও দেশের জন্য নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছে, তাদের অবদানকে যদি রাষ্ট্রীয় নথিতে স্থান না দেওয়া হয় তাহলে ইতিহাস কি তাদের প্রতি ন্যায় করবে?
আমরা ভুলে যাই না প্রবাসীরা কেবল রেমিট্যান্স পাঠায় না, তারা পাঠায় দেশের অর্থনীতির রক্তধারা। তারা কেবল বিদেশে টাকা উপার্জন করে না, তারা বিদেশে থেকেও দেশের জন্য রাজপথে লড়াই করে। তারা শুধু ভোট দিতে পারে না, কিন্তু দেশের জন্য মরতে পারে।
জুলাই ঘোষণাপত্রে যদি প্রবাসীদের এই আত্মত্যাগের কথা না থাকে তাহলে এই ঘোষণাপত্র কেবল আংশিক সত্যই বলবে, পূর্ণ সত্য নয়। ইতিহাসে যাদের রক্ত ও শ্রম আছে তাদের নাম বাদ দিলে ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
পরবর্তী সরকার যদি সত্যিই এই ঘোষণাপত্র সংবিধানে সংযোজন করে, তবে তারা কি প্রবাসীদের অবদানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিবে?
✍️রিয়াজ মাহমুদ
প্রবাসী (মালয়েশিয়া)