22/08/2024
লোকটির নাম রবীন্দ্রনাথ দাস। বাড়ি ভারতের দক্ষিন চব্বিশ পরগনা জেলায়। পেশায় একজন মৎস্যজীবী। ভারতের হলদিয়া অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরছিল সে ও তার ১৫ জন সাথী। হঠাৎ প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়। একসময় ট্রলার উল্টে যায়। প্রচন্ড ঢেউয়ে একেকজন একেক দিকে ভেসে যায়। রবীন্দ্রনাথও ভেসে যায়। পেশায় জেলে হওয়ায় পানির প্রতি ভয় ছিল তার কম, আর মনে ছিল প্রচন্ড সাহস। তাই গভীর সমুদ্রে ভেসে গেলেও বেঁচে থাকার সাহস হারাননি। ভাসতে থাকেন। ভাসতে থাকেন। উপরে আকাশ আর নিচে পানি। রবীন্দ্রনাথ ভাসতে থাকেন।
১ ঘন্টা ২ ঘন্টা করতে করতে ১ দিন থেকে ২ দিন হয়ে যায় রবীন্দ্রনাথ ভাসতে থাকেন।
রবীন্দ্রনাথের শরীর দুর্বল হয়ে যায় কিন্তু বাঁচার কোন অবলম্বন খুঁজে পায় না। খাবার বলতে কেবল যখন বৃষ্টি নামে তখন সেই বৃষ্টির পানি। কারণ সমুদ্রের লোনাপানি পান করাও যায় না। তবুও রবীন্দ্রনাথ হার মানে নি। ভাসতে থাকে ভাসতে থাকে।
ভাসতে ভাসতে ৫ দিন পার হয়ে যায়। ৫ দিন পর প্রায় ৬০০ কি.মি. ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় এসে পৌঁছে। তখন বাংলাদেশের জাহাজ "এমভি জাওয়াদ" এর ক্যাপ্টেন অনেক দূর থেকে তাকে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে তার দিকে লাইফ জ্যাকেট ছুঁড়ে মারে কিন্তু সে ধরতে পারে না, তলিয়ে যায়। কিন্তু জাহাজের ক্যাপ্টেন জাত পাত, ধর্মীয় ভেদাভেদ, সীমানার কাঁটাতার ভুলে তার পিছনে ছুটতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর কিছুটা দূরে আবার তাকে দেখা যায়। ক্যাপ্টেন তাৎক্ষনিক জাহাজ সেদিকে ঘুড়িয়ে আবার একটি লাইফ জ্যাকেট ছুঁড়ে দেয়। এক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ লাইফ জ্যাকেটটি ধরতে সমর্থ হয় এবং ধীরে ধীরে জাহাজের দিকে আসতে থাকে। জাহাজের কাছাকাছি আসলে ক্রেন ফেলে তাকে জাহাজের উপর তোলা হয়।
তাকে জাহাজে তোলার দৃশ্যটি জাহাজের একজন নাবিক ভিডিওতে ধারণ করেন। তাতে স্পষ্ট দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথকে যখন সফল ভাবে জাহাজে তোলা সম্ভব হয় তখন জাহাজের সকল নাবিকেরা খুশিতে চিৎকার করে উঠে। একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর আনন্দে তারা আত্মহারা হয়ে যায়। একজন মৃত্যুপথযাত্রীকে জীবন ফিরে দেয়ার যে উত্তেজনা ভিডিওটি দেখলে আপনিও ফিল করতে পারবেন।
ধন্যবাদ এমভি জাওয়াদের ক্যপ্টেনকে। ধন্যবাদ এমভি জাওয়াদের সকল নাবিককে।
একজন মানব সন্তানকে জীবন ফিরিয়ে দিতে মানবতার যে উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তা পৃথিবীবাসীকে আরো বেশি মানবিক হতে শেখাবে ; মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলতে শেখাবে ; শেখাবে মানুষ হতে।