06/04/2025
আমরা ভীষণ খাচ্ছি-দাচ্ছি। সোনার চামচে তুলে নিচ্ছি গরম খাবার, মাংসের সুগন্ধ ভাসছে বাতাসে, পানির গ্লাসে কাঁচের প্রতিফলন জ্বলজ্বল করছে; আমাদের টেবিলে আলো জ্বলছে, আমাদের জানালায় বসন্তের হাওয়া।
আর ওখানে, অনেক দূরে, একটা শহর আছে; যার রাত এখন আর কালো নয়, আগুনের লেলিহান শিখায় লাল হয়ে আছে আকাশ। সেখানে কারো টেবিল নেই, শুধু উল্টে যাওয়া থালার পাশে একজোড়া ছোট্ট হাত নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।
দুই শহরে আজানের সুর। এক শহরে- সুরের ঢেউ বয়ে যায় বাতাসে, শান্তিময় কণ্ঠ ভেসে আসে মিনার থেকে, আর আমরা তা শুনতে শুনতে চায়ের কাপে চুমুক দেই।
অন্য শহরে আজান ওঠে, কিন্তু ভেঙে পড়ে শব্দের শরীর। মিনারের পাশে এক বৃদ্ধ বসে থাকেন, তার কপালে রক্ত জমাট— আজান শেষ হবার আগেই আকাশ ফেটে পড়ে আগুনে। আজানের শব্দ মিলিয়ে যায় বো*মার বিস্ফোরণে, সেখানকার শিশুরা জানে না, আজান আগে আসে, না ধ্বং'স?
আমরা খাচ্ছি-দাচ্ছি, রেস্টুরেন্টের উজ্জ্বল আলোর নিচে হাসিমুখে কেউ বলে—"আজ খাবারের স্বাদ দারুণ!" কিন্তু গা'জা'র শিশুরা এখন আর স্বাদ বোঝে না, তারা শুধু জানে, মাটির নিচে কতটুকু জায়গা পেলে একজন মানুষ লুকিয়ে থাকতে পারে।
দুই শহর, কিন্তু একটায় রাত মানে বিশ্রাম, অন্যটায় রাত মানে- এটাই হয়তো শেষ রাত। একটায় ঘুম মানে স্বপ্ন দেখা, অন্যটায় ঘুম মানে– চিরতরে শুয়ে পড়া।
আমরা বাস করছি একটিতে, আর অন্যটি জ্বলছে, আমরা কেবল দেখতে পাচ্ছি ধোঁয়া, কিন্তু গন্ধ পাচ্ছি না পোড়া মাংসের। আমাদের রাত শেষে সকাল আসে, ওদের রাতের পরে আসে শোকের নতুন সংখ্যা।
দুই শহরে আজান হয়, একটায় প্রার্থনার জন্য, অন্যটায় বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে। সবার আকাশ একটাই, সবার আল্লাহ একজনই, তবু কেন এতো রক্ত ঝরে?
-