24/06/2025
কোম্পানির কথা উঠলেই অনেকে ভয় পায়। ওরে বাবা, কোম্পানি! মনে হয় শুধু কোট টাই পরে কথা বলতে হয়। আসলে কোম্পানি মানে কোট টাই না, কীভাবে আয় করবো আর কীভাবে দায় মেটাবো, এই চিন্তার একটা ফরম্যাট।
সৌদি আরবের কোম্পানি আইনে এই ফরম্যাটগুলো খুব গুছিয়ে রাখা আছে। যেন কেউ হাঁটতে শিখে দৌড় না দেয়।
চলুন একবার দেখে নিই কত রকম কোম্পানি হয় সৌদি আরবে:
১. Sole Proprietorship একক মালিকানার কোম্পানি। একজন মানুষ। তার একটা দোকান। সকালে খুলে, রাতে বন্ধ করে। লাভ হলে তার, লোকসান হলেও তার। এই কোম্পানির নাম কাগজে লেখা হয় একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। সরকার শুধু বলে ঠিক আছে ভাই, একা খেলো, কিন্তু লাইসেন্স নিও।
২. General Partnership অংশীদারি ব্যবসা। দুজন মানুষ একজন টাকা দেয়, আরেকজন মাথা খাটায়। লাভ হলে দুজনেই চা খায়, হালিম খায়, আর মনে মনে ভাবে, এটাই তো চাচ্ছিলাম।
৩. Limited Liability Company (LLC) সীমিত দায়বদ্ধতার কোম্পানি। এটা মাঝারি খেলার মাঠ। ধরুন ৫ জন মিলে কোম্পানি খোলে। কিন্তু কেউ কারো দেনা শোধ করবে না।"তোর শেয়ার তোর দায়, আমার শেয়ার আমার দায়।" এই কোম্পানি হলো সেই বন্ধু যে বলেছে, চল সবাই মিলি, কিন্তু ঝামেলা হলে আমি আমারটা সামলাবো, তুই তোরটা।
৪. Joint Stock Company (Public or Closed) শেয়ারভিত্তিক কোম্পানি। এখানে গল্প জমে। কোম্পানি হয় পাবলিক, কিংবা বন্ধ (Closed)।
Closed Joint Stock Company: মাত্র কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার। বাইরের কেউ ঢুকতে পারে না। কিছুটা “আমাদের ছেলেরা” টাইপ ব্যাপার।
Public Joint Stock Company, এইটা নাটকের ক্লাইম্যাক্স। Aramco হলো এই ধরন। শেয়ার বাজারে নাম লিখায়। সারা দেশের মানুষ শেয়ার কিনে বলে “আমি ওর অংশীদার!”
তখন কোম্পানি বলে, “আমরা এখন আর শুধু একটা ব্যবসা না, আমরা দেশের প্রতিচ্ছবি।”
৫. Joint Venture – যৌথ উদ্যোগ। দুইটা কোম্পানি।
একটা সৌদির, একটা বাইরের। বলল “চল একসাথে কিছু করি।” একজন জায়গা দিলো, আরেকজন প্রযুক্তি।
এই ধরনের কোম্পানি হলো কোলাবোরেশনের রুমাল পেঁচানো চুক্তি, যেখানে লাভ হলে দুপক্ষ হাসে, আর লোকসান হলে চুক্তিপত্র খুঁজে দেখা হয় "কে বেশি দায়ী?"
৬. Foreign Company Branch – বিদেশি কোম্পানির শাখা, ধরুন, একটা মালয়েশিয়ান কোম্পানি চায় সৌদিতে ব্যবসা করতে। তারা মূল কোম্পানি রেখে, এখানে একটা Branch খুলে। নাম সেই, কাগজপত্র সেই, শুধু ঠিকানা বদলেছে।
এটা সেই আত্মীয়, যে বিদেশে থাকে কিন্তু ঈদের দিন বাসায় চলে আসে একটু থিতু হতে।
৭. Holding Company – মূল কোম্পানি যা অন্য কোম্পানির মালিক। এইটা সেই ধনী চাচা যে নিজে কিছু করে না, শুধু অন্যদের মালিক। "এই কোম্পানিটার ৬০% আমার, ওইটার ৪০% আমার, আমি শুধু লাভ দেখি।" একধরনের অভিভাবক কোম্পানি।
কোম্পানি গুলো মানুষদের মতো। কেউ একা থাকে, কেউ বন্ধুর সাথে, কেউ আবার পুরো জাতির সামনে দাঁড়িয়ে বলে, আমি তোমাদের কোম্পানি!
যদি ব্যবসার শুরুটা হয় সাহস দিয়ে, তাহলে কাঠামোটা ঠিক করা উচিত বোঝাপড়া দিয়ে। আর কোম্পানি বেছে নেওয়ার সময় মনে রাখতে হবে, সবাই আরামকো হতে পারে না, কিন্তু সবাই শুরু করতে পারে একটা লাইসেন্স দিয়ে।