02/06/2025
আরাফা দিবস: মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম জাতির প্রতি বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ অফার🏵️🟪
নিঃসন্দেহে আরাফাত দিবস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম জাতির প্রতি বছরের শ্রেষ্ঠ অফার। অধিকাংশ আলেমের মতে, এটি বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন।
হাজিগণ এ দিন ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকবেন-যা হজের একটি রোকন। এ দিন আল্লাহ নিচের আসমানে নেমে এসে আরাফায় উপস্থিত হাজিদেরকে নিয়ে গর্ব করবেন এবং এত বিশাল পরিমাণ হাজিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি ঘোষণা করবেন যা বছরের আর কখনো করেন না।
◈ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِي بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ فَيَقُولُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ
“আরাফা দিবসের তুলনায় এমন কোন দিন নেই যেদিন আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক সংখ্যক লোককে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী হন, অতঃপর বান্দাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন এবং বলেন, তারা কী চায়?” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), অধ্যায়: ১৬। হজ, পরিচ্ছেদ: ৭৯. হজ, উমরা ও আরাফা দিবসের ফজিলত]
◈ অন্য একটি হাদিসে এসেছে, জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ومَاَ مِنْ يَوْم أفْضَلُ عِنْد الله مِنْ يَوم عَرَفةَ: يَنْزِلُ الله -تَبَارْكَ وتَعَالى- إلى السْمَاءِ الدُّنيا فَيُباهي بِأهْلِ الأرض أهَلْ السْمَاءِ، فيقول: انْظُروا إلى عِبَادِي جَاءوا شُعْثًا غُبْرًا حَاجِين جَاءْوا مِنْ كُلِ فجٍّ عَمِيقْ يَرجُونَ رَحْمَتي ولم يَروا عَذَابي، فَلَم يُرَ يومٌ أكثر عتيقًا مِنْ النَّار مِنْ يَوم عَرَفْة»
"আল্লাহর নিকট আরাফার দিন থেকে উত্তম কোন দিন নেই, আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন অতঃপর পৃথিবীবাসীদের নিয়ে আসমানবাসীদের সাথে গর্ব করেন। তিনি বলেন, "আমার বান্দাদের দেখ, তারা হজের জন্য এলোমেলো চুল ও ধুলো মলিন অবস্থায় দূর-দূরান্ত থেকে আগমন করেছে। তারা আমার রহমত আশা করে। অথচ তারা আমার আজাব (জাহান্নামের শাস্তি) দেখেনি।
ফলে এমন কোনো দিন দেখা যায় না যাতে আরাফার দিনের তুলনায় জাহান্নাম থেকে অধিক পরিমাণ মানুষ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করে।" [ইবনে হিব্বান। সহীহ হাদিসে কুদসি, অধ্যায়: ১/ বিবিধ হাদিসসমূহ, পরিচ্ছেদ: আরাফার দিনের ফজিলত ও হাজিদের নিয়ে আল্লাহর গর্ব করা। হাদিসটি হাসান লি গায়রিহি।]
হাজিগণ সে দিন রোজা রাখবেন না। কিন্তু যার হজে যাবে না তাদের জন্য করণীয় হলো, তারা সে দিন রোজা রাখবেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাদের পেছনের এবং সামনের মোট দু বছরের গুনাহ মোচন করেন। সুবহানাল্লাহ!
◈ আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالَّتِي بَعْدَهُ
“আমি আল্লাহর নিকট আরাফাত দিবসের রোজার এই সওয়াব আশা করি যে, তিনি তাঁর বিনিময়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।” [সহীহ ইবনে মাজাহ হা/১৭৩০]
তাই আমাদের কর্তব্য, এ দিনে রোজা রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
◈ আরাফা দিবসে দ্বীন ইসলামকে পূর্ণতা দান করা হয়েছে:
আরাফাত দিবসের অন্যতম একটি মর্যাদা হলো, আল্লাহ তাআলা এই দিন মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন আদর্শ ইসলামকে পূর্ণতা দান করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
"আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।" [মায়িদা: ৩]
ব্যাখ্যা:
তারিক ইবনু শিহাব রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ই*হুদি ব্যক্তি উমর রা. এর নিকট এসে বললো, হে আমিরুল মুমিনিন! আপনাদের কিতাবের মধ্যে এমন একটি আয়াত আপনারা পাঠ করে থাকেন। যদি তা আমাদের ই*হুদি সম্প্রদায় সম্পর্কে নাজিল হত তাহলে ঐ দিনটিকে আমরা উৎসব দিবস হিসাবে গ্রহণ করতাম। উমার রা. জিজ্ঞেস করলেন, আয়াতটি কী? সে বলল, আয়াতটি হল,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا
“আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং পূর্ণ করে দিলাম তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহকে।”
এ কথা শুনে উমার রা. বললেন, যে দিন, যে স্থানে আয়াতটি নাজিল হয়েছে অবশ্যই আমি তা জানি। আয়াতটি জুমার দিন আরাফাতের ময়দানে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৭/ তাফসির]
আল্লাহ তাআলা আল্লাহর মেহমানদেরকে সব ধরণের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন, তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন এবং দুনিয়ার সকল মুসলিমের জীবনের সকল গুনাহ মোচন করুন। আমিন।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল